Ajker Patrika

ভোটের মাঠে: প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি-জামায়াত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে আবর্তিত হয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—এই তিন দল ঘিরে। তবে গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। তাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

দল দুটির প্রার্থীরা উঠান বৈঠক, মিছিল, পথসভা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রাম থেকে শহরের সব জায়গায় ঝোলানো হয়েছে পোস্টার ও ব্যানার।

স্থানীয়দের মতে, এবার সিরাজগঞ্জের প্রায় সব আসনেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। বিশেষ করে উল্লাপাড়া ও বেলকুচি-চৌহালী আসনে ভোটারদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। তবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল বেড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সিরাজগঞ্জ-১: কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরের একাংশ নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা শাহিনুর আলম ইতিমধ্যেই সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। তবে এ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা। স্থানীয়দের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব না মিটলে এ আসনে জামায়াতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হবে।

সিরাজগঞ্জ-২: সদর ও কামারখন্দ নিয়ে গঠিত এ আসনে জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

সিরাজগঞ্জ-৩: রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির ঐতিহ্যবাহী আসন হিসেবে পরিচিত। পরপর চারবার (১৯৯১, ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারি ও জুন এবং ২০০১) এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান তালুকদার। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে রাহিদ মান্নান লেলিন মনোনয়ন চাইলেও দল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হককে। ফলে দলটির একটি অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে।

এদিকে এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সামাদকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।

সিরাজগঞ্জ-৪: উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি এম আকবর আলী। অন্যদিকে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, আকবর আলীকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হলে এটি হবে বিএনপি-জামায়াতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন। তবে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজাদ হোসেন সমর্থকেরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।

সিরাজগঞ্জ-৫: তাঁতশিল্প ও নদীভাঙনের জন্য আলোচিত বেলকুচি ও চৌহালী নিয়ে গঠিত এ আসন। এখানে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীমকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে দল। তবে এ আসন থেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) মনজুর কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তিনি মিটিং-মিছিলও করছেন।

এদিকে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ আলী আলম, যিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। স্থানীয়দের মতে, এই আসনেও বিএনপি-জামায়াতের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল না মিটলে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি হাজি শেখ মুহাম্মদ নুরুন নবী এবং গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী সোহরাওয়ার্দী হোসেনও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

সিরাজগঞ্জ-৬: শাহজাদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. এম এ মুহিত। তিনি সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের ছেলে। জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা মিজানুর রহমান। এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাঈদ মোস্তাফিজ এবং ইসলামী আন্দোলনের জেলা উপদেষ্টা মেসবাহ উদ্দিনও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত শাহজাদপুর, তবে স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে দলীয় কোন্দলে সংগঠন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ