Ajker Patrika

লালন স্মরণোৎসব স্থগিত ও স্টলে হামলার প্রতিবাদে উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ

অনলাইন ডেস্ক
স্টলে হামলা ও  লালন স্মরণোৎসব স্থগিতের বিরুদ্ধে উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টলে হামলা ও লালন স্মরণোৎসব স্থগিতের বিরুদ্ধে উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সমস্ত অর্জন ধূলিসাৎ করে নতুন কোনো ফ্যাসিস্ট অপশক্তি যেন জন্ম না নিতে পারে, এ আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সাতক্ষীরার বইমেলায় উদীচীর স্টলে ভাঙচুর করে ব্যানার পোড়ানো, ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’র স্টলে হামলা এবং টাঙ্গাইলে হেফাজতে ইসলামের বাধার মুখে লালন স্মরণোৎসব স্থগিতের প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ আহ্বান জানান উদীচীর নেতৃবৃন্দ।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে উদীচী চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল উদীচী চত্বর থেকে বেরিয়ে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এই কর্মসূচিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, কাফরুল, মিরপুরসহ উদীচীর বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে, সেই একই বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ সালেও প্রাণ দিয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। কিন্তু, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। বাজার সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে, মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি, দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া লাখো কোটি টাকা ফেরত আনা যায়নি, এমনকি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার ও দলের উচ্চ পদস্থ যেসব ব্যক্তি সরাসরি গণহত্যার নির্দেশদাতা বা উসকানি দিয়েছিলেন, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা যায়নি।’

সাতক্ষীরায় আয়োজিত বইমেলায় উদীচীর স্টলে হামলা করে ব্যানার পুড়িয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুরো শাসনামল জুড়েই নানা অবিচার, অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল উদীচী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার দাবি, হত্যা-সন্ত্রাস বন্ধ করা, পাঠ্যপুস্তককে সাম্প্রদায়িকীকরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বারবারই রাজপথে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে উদীচীই প্রথম এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি এবং ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার দাবিতে বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করে।’

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন বলেন, ‘এত কিছুর পরও উদীচীর নামে নানা অপপ্রচার চালিয়ে উদীচীর কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরায় উদীচীর স্টলে হামলা যার সবশেষ উদাহরণ। কিন্তু, যত বাধাই আসুক, সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রাম থেকে উদীচীকে কখনোই বিচ্যুত করা যাবে না। এ সময় হামলার আশঙ্কার কথা বলে রাজধানীর উত্তরায় বসন্ত উৎসব আয়োজনে বাধা দেওয়ার তীব্র নিন্দাও জানান তিনি।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী একের পর এক ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পী, সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। মাজার ভাঙা হচ্ছে, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা করা হচ্ছে, বাউল গানের আসরসহ লোক সংস্কৃতি চর্চার সকল আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমনকি মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নামের নতুন পীড়নমূলক আইন পাসেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও বারবার সংস্কারের নামে সংবিধান, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতিচিহ্নগুলোর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, উদীচী স্পষ্ট করে বলতে চায়- লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে যারাই বেইমানি করার চেষ্টা করবে, সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিরোধ করবে। এক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিদায় হয়েছে, নতুন করে যেন আর কোনো ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টির রাখার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। বলেন, স্বৈরতন্ত্রের পথে যে-ই হাঁটবে, তাকেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিরোধ করবে দেশের আপামর জনসাধারণ।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি প্রবীর সরদার, বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হীরক রাজা, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ঢাকা মহানগর সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরশিকুল ইসলাম শিমুল, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু রায়হান, উদীচী কাফরুল শাখা সংসদের সভাপতি তারিক হোসেন মিঠুল, উদীচী বাড্ডা শাখা সংসদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাদশা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত