Ajker Patrika

বারনই নদ

সম্পাদকীয়
বারনই নদ

না, বারনই নদ বাঁচানোর কোনো মোক্ষম উপায় আমাদের জানা আছে, এ রকম কথা বলব না। যে নদকে বলা হতো বরেন্দ্র অঞ্চলের ‘প্রাণদায়িনী’, সে নদই এখন মৃত্যুশয্যায়। হাসপাতালের ভাষায় বলা যায়, নদটি এখন আইসিইউতে। যেকোনো সময় আসতে পারে তার মৃত্যুসংবাদ। সবাই জানে, কেন নদটির মরণদশা, অথচ কেউই তা ঠিক করার পরিকল্পিত উদ্যোগ নিচ্ছে না।

বারনই নদ মরে গেলে এর চারপাশের মানুষের জীবনেও তার প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে পড়তেও শুরু করেছে। রাজশাহী থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ময়লা-দুর্গন্ধে নদের কাছে যেতে পারছে না মানুষ। তার মানে, নদটি কি ক্লিনিক্যালি ডেথ হিসেবেই রয়েছে?

১৩ অক্টোবর ‘জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বারনই নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক একটি সভা হয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে। নওহাটার নদের পাড়ে হয় গম্ভীরার আয়োজন। নদ রক্ষায় একটি মানববন্ধনও হয়। এ যেন প্রায় মৃত একটি নদকে বাঁচানোর জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা। কিন্তু মেডিকেল বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত কি কার্যকর হবে?

আগে দেখা যাক, কারা এই নদের সর্বনাশ করল? নদের আশপাশের বসতির শৌচাগারগুলোর বর্জ্য এসে পড়ে ড্রেনে, ড্রেন থেকে আসে খালে, খাল থেকে চলে যায় নদে। কী অসাধারণ এক ব্যবস্থা! সরকারি মহলের কেউই বুঝি জানে না, মল এসে নদের পানিকে বিষাক্ত করে দিচ্ছে। কেউই বুঝি জানে না, এই পানির সংস্পর্শে এলে যেকোনো মানুষেরই চর্মরোগ হতে পারে। কেউই হয়তো জানে না, নদের পানি এমন মাত্রায় দূষিত হয়েছে যে মাছও বেঁচে থাকতে পারছে না! পবার দুয়ারি থেকে নওহাটা এলাকার মানুষের দুর্গন্ধের কারণে দরজা-জানালা সারাক্ষণ বন্ধ করে রাখতে হয়। আর দখলদারেরা? নির্বিঘ্নে তারা দখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে নদটি। এর সীমা কতটা আর কোনটা দখলদারেরা কবজা করে নিয়েছে, তা নিয়েও কারও মাথাব্যথা নেই। এই নদের সীমানা নির্ধারণ করে দখলদারদের উচ্ছেদ করা কি সম্ভব হবে? এলাকাবাসীর মল ও বর্জ্য যেন নদে গিয়ে না পড়ে, তার জন্য কি কোনো পরিকল্পনা করতে পারবে প্রশাসন?

দুঃখের বিষয়, নদ বাঁচলে এলাকাবাসীর জীবন বাঁচবে, এই কথা উপলব্ধি করতে পারে না মানুষ। শুধু নিজে ঠিকঠাকমতো বাঁচতে পারলেই হলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর জীবনের হদিস দিতে পারছে কি না, সেই ভাবনা না থাকলে আদতে কত দূর এগিয়ে যাওয়া যায়?

বারনই নদ ধুঁকছে। যে গম্ভীরা গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, সে গানও তো হুমকির মুখে। লোকজ সংস্কৃতি বাঁচানোর কার্যকর কোনো পথের দিশা কি দেখা যাচ্ছে কোথাও? নদটি বাঁচাতে হলে সবার আগে নদের এই দুর্দশা কেন হলো, সেটা খুঁজে বের করে তার প্রতিকার করতে হবে। নদটিকে ভালো না বাসলে এর ললাটে মৃত্যুই লেখা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত