Ajker Patrika

নির্বাচন-বিষয়ক জটিলতা

সম্পাদকীয়
নির্বাচন-বিষয়ক জটিলতা

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই—দৃঢ়তা দেখিয়ে এ রকম বক্তব্য রাখা হচ্ছে বটে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে প্রায়ই। বিভিন্ন নাম নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে হঠকারী ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, তা দূর থেকে দেখছে পুলিশ। তাতে মবকারীরা মদদ পাচ্ছে। তাদের কাছে এ রকম বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে যে, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হলেও সরকার থেকে কোনো বাধা আসবে না। বড়জোর তাণ্ডব ঘটানোর পর একটা মামুলি বিবৃতি দিয়ে সরকার তার দায় সারবে।

আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের এই শৈথিল্য জনগণকে মোটেই নির্ভরতা দিতে পারে না। রাজবাড়ীতে, রাজশাহীতে যে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এমনকি কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হলো, সে ব্যাপারে সত্যিকারের কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার? অথচ এসব ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় অবস্থান কাম্য, যেন জনগণ বুঝতে পারে, আইন নিজের হাতে তুলে নিলে সরকার তা সহ্য করবে না। ঢাকায় জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুরের সময়ও পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। মুশকিল হলো, এসব অরাজকতা ঘটছে পুলিশের চোখের সামনেই। হামলার ঘটনা ঘটার সময় পুলিশ নীরব থাকলে তার দায় কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে? পুলিশের চোখের সামনেই তো চলছে ভাঙচুর, তাহলে নির্দিষ্ট করে থানায় গিয়ে মামলা করতে হবে কেন? পুলিশ নিজ থেকেই কি কিছু করতে পারে না? পুলিশ বাহিনীকে সরকার কি কোনো দিকনির্দেশনা দেয় না?

গায়ের জোরে যদি যা খুশি তা করা যায়, তাহলে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেখে শুধু স্বস্তি পাওয়ার ভান করা যাবে। আদতে নির্বাচন হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত নির্বাচনের অনিশ্চয়তাবিষয়ক শঙ্কা বিরাজ করবে দেশে। এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। অনেকেই বলছেন, জামায়াত আর এনসিপি গণপরিষদের প্রশ্নে অনড় থাকলেও সেটা রাজনীতির মাঠের বক্তৃতা ছাড়া কিছু নয়। সময়মতো নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মত থাকলেও সেগুলো নিয়ে একটি সমন্বিত সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু তাতে অনিশ্চয়তা কাটবে তো?

সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে কি না, বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভাবা প্রয়োজন। একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা গেলে রাজনৈতিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণ ফিরে পাবে—এ রকম আশাবাদের মধ্যেও শঙ্কার জন্ম হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড অনেক নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া কিংবা চাঁদাবাজি, লুটপাটে অংশ নেওয়া, বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য রেখে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা সৃষ্টি করাসহ নানা কর্মকাণ্ডে জনগণ বিরক্ত হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি আয়নায় নিজেদের দেখে ভুলগুলো শুধরে না নেয়, তাহলে সাধারণ জনগণ কার ওপর নির্ভর করে স্বপ্ন দেখবে? আসন্ন নির্বাচনকে ফলবান করে তুলতে হলে জনগণের মনের ভাষা পড়তে হবে। সেই চেষ্টা কি আছে বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত