সম্পাদকীয়
শুনলে মনে হয় রসিকতা। কিন্তু বাস্তবটা এতটাই তিক্ত যে চোখ কপালে ওঠে। গাজীপুরের শ্রীপুরে এক্স সিরামিকস লিমিটেড নামের একটি কারখানা, যাদের বিরুদ্ধে নদী দখল ও দূষণের একাধিক অভিযোগ প্রমাণসহ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নথিতে, তারা কিনা পেয়েছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন—পরিবেশবান্ধব শিল্পের সম্মাননা! এই দেশে সম্ভবত আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে কুমিরদের মাঝেও শাকাহারীর খেতাব বিলিয়ে দেওয়া হয়।
আজকের পত্রিকায় ২৮ জুন ‘খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, লবলঙ্গ নদ, একসময় যা ছিল শ্রীপুর অঞ্চলের প্রাণ, আজ তা শুধু মানচিত্রে নামমাত্র টিকে আছে। কারণ, এক্স সিরামিকস কারখানা তাদের প্রাচীর টানতে টানতেই নদের বুকের ওপর দিয়ে চলেছে। নদের গতিপথ পরিবর্তন, দখল, কালভার্ট নির্মাণ এবং চাষযোগ্য জমি অনাবাদি করে তোলা—সবই হয়েছে চোখের সামনে, প্রশাসনের নাকের ডগায়। এলাকার মানুষ, পরিবেশকর্মী, নদী আন্দোলনকারী সবাই বারবার প্রতিবাদ করেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে বলেছে, ‘হ্যাঁ, দখল ও দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’ এরপরও এই কারখানা কীভাবে ‘পরিবেশবান্ধব’ হয়ে উঠল?
শুধু কি সম্মাননা দেওয়া হয়েছে? তা-ও আবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে, ফুলেল শুভেচ্ছা, হাততালি, টুপি-চশমা পরে অভিজাত মেজাজে। উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। পুরস্কার গ্রহণ করছে সেই কারখানা, যাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নথিতে ‘নদ গিলে ফেলার’ অভিযোগ উঠেছে। যেন বাঘকে পাঁঠার দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে শান্তির প্রতীক বানানো হলো।
এই ‘গ্রিন অ্যাওয়ার্ড’ আসলে কিসের প্রতীক? পরিবেশ রক্ষার, নাকি ঢাকঢোল পিটিয়ে দায়মুক্তির উৎসবের? পুরস্কার কমিটিতে কারা ছিলেন, তাঁরা কার হয়ে কাজ করেছেন, কোন নথি তাঁরা দেখেছেন—এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া কি জরুরি নয়? নাকি এখন থেকে দখল-দূষণ করেও সম্মাননা পাওয়ার পথটাই হবে নতুন ‘টেকসই’ মডেল?
আরও অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, যখন পরিবেশ অধিদপ্তর রিপোর্ট দিচ্ছে, তখন এক্স সিরামিকস কর্তৃপক্ষ ফোন ধরছে না, কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না। তাদের ছাড়পত্র স্থগিত রাখা হয়েছে, নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তবু জবাব নেই। তাহলে কি পুরস্কার পেলেই তারা দায়মুক্ত? এই প্রশ্ন শুধু লবলঙ্গ নয়, দেশের প্রতিটি নদ-নদী, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পরিবেশকর্মীর কণ্ঠে এখন।
সামাজিক মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। ‘রিভার ফাউন্ডেশন’, ‘নদী পরিব্রাজক দল’, ‘রিভার অ্যান্ড ন্যাচার ফাউন্ডেশন’সহ একাধিক সংগঠনের শীর্ষস্থানীয়রা লিখেছেন, তাঁরা হতবাক, ক্ষুব্ধ এবং অপমানিত। এ যেন ঠিক আগুন লাগিয়ে দেওয়া লোককে আগুন নেভানোর পদক দেওয়া।
আমরা চাই, যে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জনসমক্ষে আসুক। যদি ভুল হয়ে থাকে, তা সংশোধন করা হোক। যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তবে জবাবদিহি করা হোক। না হলে ‘পরিবেশবান্ধব শিল্প’ শব্দটি একদিন ‘পরিবেশ-বিদ্রূপ শিল্প’ হিসেবেই ইতিহাসে ঠাঁই পাবে।
শুনলে মনে হয় রসিকতা। কিন্তু বাস্তবটা এতটাই তিক্ত যে চোখ কপালে ওঠে। গাজীপুরের শ্রীপুরে এক্স সিরামিকস লিমিটেড নামের একটি কারখানা, যাদের বিরুদ্ধে নদী দখল ও দূষণের একাধিক অভিযোগ প্রমাণসহ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নথিতে, তারা কিনা পেয়েছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন—পরিবেশবান্ধব শিল্পের সম্মাননা! এই দেশে সম্ভবত আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে কুমিরদের মাঝেও শাকাহারীর খেতাব বিলিয়ে দেওয়া হয়।
আজকের পত্রিকায় ২৮ জুন ‘খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, লবলঙ্গ নদ, একসময় যা ছিল শ্রীপুর অঞ্চলের প্রাণ, আজ তা শুধু মানচিত্রে নামমাত্র টিকে আছে। কারণ, এক্স সিরামিকস কারখানা তাদের প্রাচীর টানতে টানতেই নদের বুকের ওপর দিয়ে চলেছে। নদের গতিপথ পরিবর্তন, দখল, কালভার্ট নির্মাণ এবং চাষযোগ্য জমি অনাবাদি করে তোলা—সবই হয়েছে চোখের সামনে, প্রশাসনের নাকের ডগায়। এলাকার মানুষ, পরিবেশকর্মী, নদী আন্দোলনকারী সবাই বারবার প্রতিবাদ করেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে বলেছে, ‘হ্যাঁ, দখল ও দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’ এরপরও এই কারখানা কীভাবে ‘পরিবেশবান্ধব’ হয়ে উঠল?
শুধু কি সম্মাননা দেওয়া হয়েছে? তা-ও আবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে, ফুলেল শুভেচ্ছা, হাততালি, টুপি-চশমা পরে অভিজাত মেজাজে। উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। পুরস্কার গ্রহণ করছে সেই কারখানা, যাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নথিতে ‘নদ গিলে ফেলার’ অভিযোগ উঠেছে। যেন বাঘকে পাঁঠার দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে শান্তির প্রতীক বানানো হলো।
এই ‘গ্রিন অ্যাওয়ার্ড’ আসলে কিসের প্রতীক? পরিবেশ রক্ষার, নাকি ঢাকঢোল পিটিয়ে দায়মুক্তির উৎসবের? পুরস্কার কমিটিতে কারা ছিলেন, তাঁরা কার হয়ে কাজ করেছেন, কোন নথি তাঁরা দেখেছেন—এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া কি জরুরি নয়? নাকি এখন থেকে দখল-দূষণ করেও সম্মাননা পাওয়ার পথটাই হবে নতুন ‘টেকসই’ মডেল?
আরও অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, যখন পরিবেশ অধিদপ্তর রিপোর্ট দিচ্ছে, তখন এক্স সিরামিকস কর্তৃপক্ষ ফোন ধরছে না, কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না। তাদের ছাড়পত্র স্থগিত রাখা হয়েছে, নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তবু জবাব নেই। তাহলে কি পুরস্কার পেলেই তারা দায়মুক্ত? এই প্রশ্ন শুধু লবলঙ্গ নয়, দেশের প্রতিটি নদ-নদী, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পরিবেশকর্মীর কণ্ঠে এখন।
সামাজিক মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। ‘রিভার ফাউন্ডেশন’, ‘নদী পরিব্রাজক দল’, ‘রিভার অ্যান্ড ন্যাচার ফাউন্ডেশন’সহ একাধিক সংগঠনের শীর্ষস্থানীয়রা লিখেছেন, তাঁরা হতবাক, ক্ষুব্ধ এবং অপমানিত। এ যেন ঠিক আগুন লাগিয়ে দেওয়া লোককে আগুন নেভানোর পদক দেওয়া।
আমরা চাই, যে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জনসমক্ষে আসুক। যদি ভুল হয়ে থাকে, তা সংশোধন করা হোক। যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তবে জবাবদিহি করা হোক। না হলে ‘পরিবেশবান্ধব শিল্প’ শব্দটি একদিন ‘পরিবেশ-বিদ্রূপ শিল্প’ হিসেবেই ইতিহাসে ঠাঁই পাবে।
মব ভায়োলেন্স তথা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ সহিংসতাই যেন কথিত নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের পথ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে উল্টো এর সাফাই গাওয়ায় এমন ধারণার উদ্রেক হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক? মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের...
১৫ ঘণ্টা আগেউত্তেজনা একটি রোগ। এটি সংক্রামকও বটে। হঠাৎ করে আমাদের দেশ ও সমাজে উত্তেজনা এত বেড়েছে যে শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না। আমরা বাস করি দেশের বাইরে অথচ এই দূরদেশেও সে উত্তেজনার আঁচ দেখতে পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে, নিজেদের ভেতর অশান্তি আর গন্ডগোল যেন বেড়েই চলেছে। এর নিরসন কোথায় বা কীভাবে তা সম্ভব...
১৫ ঘণ্টা আগেবর্তমান সময়ে ঢাকা মহানগরীসহ যেকোনো শহর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা যেভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, তাতে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পায়ে চালিত রিকশাকে জাদুঘরে দেখতে যাওয়ার সময় চলে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তর্ক বা বিতর্কে যাওয়া যেতেই পারে, তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য এর কোনোটিই...
১৫ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২ দিন আগে