Ajker Patrika

ছোট্ট একটি খবর

সম্পাদকীয়
ছোট্ট একটি খবর

খবরটা ছোট। কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হককে নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি প্রামাণ্যচিত্র। গুণী মানুষদের নিয়ে কাজটি হতেই পারে এবং তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে এই সংবাদটির সূত্রে আরও কিছু কথা এসে পড়ে।

গুণীদের কদর করা না হলে তেলে-জলে মিশে একাকার হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে,  যেকোনো মানুষকেই  ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ বলে তেলবাজি করার প্রবণতা আমাদের আছে। যারা এসব বিষয়ে পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন, তাঁদের অনেকেই এই কাণ্ডটি করে বসেন। তাই শিল্প-সংস্কৃতির গুরুত্ব অনেক সময়ই ঠিকভাবে উপলব্ধি না করেই যার যা প্রাপ্য, সেই স্বীকৃতিতে যেমন তাঁকে অনীহা, তেমনি যিনি যোগ্য নন, তিনিও হয়ে ওঠেন মহিরুহ।

আমাদের দেশে গুণী মানুষদের চিনে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট অনেক। প্রথমত, তাঁদের শৈল্পিক অবস্থান নিয়ে লেখালেখি হয় বড় কম। তাঁদের সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা হয় আরও কম। প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ তো বহু দূরের ব্যাপার। সেই সঙ্গে একটা আক্ষেপও থেকে যায়, আমাদের আলোকিত মানুষদের খুব কমসংখ্যক প্রতিনিধি আত্মজীবনী লিখে গেছেন। তাঁদের জীবনের গল্প অনেক ক্ষেত্রেই জানা হয়ে ওঠে না। গভীর মমতা না থাকলে তাঁদের জীবন ও দর্শন নিয়ে লেখালেখি করার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না।

পশ্চিমা বিশ্বে একজন খ্যাতিমান সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব অকপটে নিজের জীবনের কথা লিখতে পারেন। কবে, কোথায় কী করেছেন, জীবনে কোনো অন্যায় করেছেন কি না, কীভাবে কোনো সংকটের মোকাবিলা করেছেন ইত্যাদি তাঁরা সহজভাবেই লিখতে পারেন। সমাজ–বাস্তবতার কারণে আমাদের এদিকটায় অনেকেই লিখতে গিয়ে জীবনের অনেক কথাই গোপন করেন। তাই অনেক কিছু অজানা থেকে যায়।  বহু দেশেই খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে নানা গবেষণা হয়।  আমরা সে দিক থেকেও খানিকটা পিছিয়ে পড়া মানুষ।

বড় একটা আক্ষেপের বিষয় হলো,  নানা সমালোচনায় আমরা আমাদের দৃষ্টান্তমূলক মানুষদের বিতর্কিত করে ফেলি। তার যে মূল অর্জন, সেটাকে তার কোনো ব্যর্থতা দিয়ে ঢেকে দিই। আমাদের জাতীয় বীরদের আমরা অবজ্ঞা করি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ঘন ঘন প্রচার দিয়ে অযোগ্য মানুষকেও আমরা এমন কোনো আসনে বসিয়ে দিই, যা নিয়ে পরে নিজেরাও বিব্রত হই। এমনকি জাতীয় যে পুরস্কারগুলো আছে, সেখানেও যাঁদের নাম দেখা যায়, তাঁদের অনেককেই সেই পুরস্কারের যোগ্য বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকেও কয়েকজন কীর্তিমান মানুষকে নিয়ে তথ্যচিত্র করা হয়েছে। সত্যজিৎ রায় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও সুকুমার রায়কে নিয়ে। প্রসুন রহমান হাসান আজিজুল হককে নিয়ে তথ্যচিত্র করার আগে তানভীর মোকাম্মেল ও তারেক মাসুদকে নিয়ে দুটো তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। এ ধরনের কাজে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব প্রয়োজন। বহু খাতে বহু অর্থ খরচ করে সরকার। বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করলে তা অর্থের অপচয় হবে না।

বরং আগামী প্রজন্মের জন্য তা হয়ে উঠবে দৃষ্টান্ত।

কীর্তিমানদের নিয়ে লেখালেখি, অডিও-ভিডিও মাধ্যমে তাঁদের আনা খুবই প্রয়োজন।

বিষয়:

মতামত
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত