Ajker Patrika

একটি অমানবিক গল্প

সম্পাদকীয়
একটি অমানবিক গল্প

আসুন, একটা অমানবিক গল্প বলি। ঘটনার জন্ম যশোর জেলায়। এই জেলায় প্রায়ই ঘটছে অটোরিকশা চুরির ঘটনা। অটোরিকশা বলতে শুধু এককালের বেবিট্যাক্সির কথা বলা হচ্ছে না। এখন তো ইজিবাইকের রমরমা। দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কেনা যায় তা। অটোভ্যান রয়েছে, যেগুলো কিনতে হলে লাগে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর রয়েছে রিকশা, যা পাওয়া যায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। টাকার হিসাবটা কেন দেওয়া হলো জানেন? দেওয়া হলো এ কথা বলতে যে দরিদ্র মানুষের পক্ষে একবারে এত টাকা জোগাড় করে এ রকম একটা যন্ত্রযান কেনার সামর্থ্য নেই। সামর্থ্য না থাকলে কিস্তিতে কিনতে হয়। সেই কিস্তির টাকা জোগাড় করাও খুব সহজ কাজ নয়।

এখানে এসেই আমাদের গল্প খানিকটা থমকে দাঁড়ায়। যে যন্ত্রযানগুলোয় রয়েছে ব্যাটারি, সেগুলোকেই টার্গেট করে একদল চোর। এদের চোর বলা হবে নাকি পেশিশক্তির অধিকারী মাস্তান বলা হবে, সেটা নির্ধারণ করা কঠিন। কিন্তু এরা জানে, কোনো একটা অটোরিকশা চুরি করতে পারলেই ব্যাটারি বিক্রি করে হাতিয়ে নেওয়া যায় অনেক টাকা। ব্যস! বিনা পুঁজির এই ব্যবসাটা চলছে যশোরজুড়ে। ধরুন, অভয়নগর উপজেলাকে। ভ্যানচালক লিমন শেখের গলায় কাপড় প্যাঁচানো লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল এ বছরের ১১ আগস্ট। কী দোষ ছিল তাঁর? না, চোর বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না লিমনের। রাজনৈতিক রেষারেষিরও শিকার হননি তিনি। বিল্লালের দৃষ্টি গিয়েছিল লিমনের ভ্যানটির দিকে। ভ্যানটি চুরি করার পর যদি ব্যাটারিগুলো বিক্রি করা যায়, তাহলেই তো কেল্লাফতে! ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রির সূত্র ধরেই বিল্লালকে খুঁজে পায় পুলিশ। জানতে পারে, যাত্রী সেজে বিল্লাল উঠেছিল লিমনের ভ্যানে। তারপর নির্জন এক এলাকায় এসে লিমনকে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর ভ্যান নিয়ে সে পালিয়ে যায়। ব্যাটারি চুরির জন্য একজন মানুষকে হত্যা করা যায়—এ রকম মানসিকতা যার, তাকে কি মানুষ বলা সম্ভব? লিমনের বাবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লিমনকে ভ্যানটি কিনে দিয়েছিলেন। ভ্যানের আয় থেকেই ঋণ পরিশোধ করতেন লিমন, মা-বাবাকে খাইয়ে-পরিয়ে রাখতেন। এখন এই পরিবারটি কী করে বাঁচবে?

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই আগস্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও অটোভ্যান ছিনতাইয়ের সময় পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে বটে, কিন্তু যে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেল, ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে গেল, তাদের কী হবে?

এ রকম অমানবিক ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে যাওয়ায় হত্যাকাণ্ডকেও মামুলি ব্যাপার বলে মনে করছে কেউ কেউ। ইন্টারনেটে নৃশংসতা দেখেও অনেকে এগুলো শিখে নিচ্ছে। ফলে, মানুষের জীবনের চেয়ে একটি ব্যাটারির মূল্য অনেক বেশি বলে মনে করছে এরা। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতার শিক্ষা যেমন দরকার, তেমনি স্থানীয় দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়াও জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত