শাইখ সিরাজ
বিশ্বের যত রাষ্ট্র তার ঐতিহ্যকে সম্পদে রূপান্তর করেছে, চীন এর অন্যতম। দেশটি তার ঐতিহ্যকে শুধু ধারণই করেনি, পৃথিবীব্যাপী সেই ঐতিহ্যের বাণিজ্যিক রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে। সেঞ্চুরি এগ চীনের পুরোনো ঐতিহ্যের একটি। আগের দিনে এটিকে ডিম সংরক্ষণের একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করলেও এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের চাহিদায় পরিণত হয়েছে সেঞ্চুরি এগ। চীন তো বটেই, এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনের বাইরেও।
গত বছর মে মাসে আমার সুযোগ হয়েছিল চীনের গোয়াংডং প্রদেশের কাইপিং পোলট্রিশিল্প এলাকা ঘুরে দেখার। এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে গোয়াংজু শহর থেকে যাত্রা শুরু করলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার সহকর্মী তানভীর আশিক, রাসেল শাহ এবং আমাদের সহযোগী চীনের মেয়ে আলবা। আলবা চমৎকার একটি মেয়ে। বাংলাদেশি একজনকে বিয়ে করেছে সে। ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। আমাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করছিল সে। আলবা বলল, ‘চীনে সেঞ্চুরি এগ খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে পুষ্টি বিবেচনায় তরুণেরা সেঞ্চুরি এগ খুব পছন্দ করে। আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি চীনের সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানি।’
চীনের রাস্তাঘাট খুবই সুন্দর। পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে আমরা ছুটছিলাম। চীন উন্নত হয়েছে কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষায় তারা বেশ সচেতন। ফলে রাস্তার দুই পাশেই সবুজের সমারোহ। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম সেখানকার সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানিতে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মিস উয়া এবং ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য মিস ট্রেসি আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর প্রজেক্টরে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁদের কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা দিলেন। প্রতিষ্ঠানটি বেশ গোছানো ও আধুনিক। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অংশের স্পষ্ট ধারণা দিলেন তাঁরা। কোথায় কোন ধরনের কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কেও ধারণা দিলেন মিস উয়া।
মিস উয়া আমাদের জানালেন চীনে কীভাবে শুরু হয়েছিল সেঞ্চুরি ডিমের ব্যবহার। সে অনেক আগের কথা। চীন তখন মিং সাম্রাজ্যের আওতায়। সে সময় এক কৃষক চা-পাতা সেদ্ধ করা পানি ফেলে দিয়েছিলেন গাদা করে রাখা ছাইয়ের ওপর। সেখানে এক হাঁস দুটি ডিম পেড়ে যায়। ছাইয়ের সঙ্গে চা-পাতার পানি মিশে ডিম দুটি মাখামাখি হয়ে সেখানেই রয়ে যায় বেশ কিছু দিন। মাস তিনেক পর কৃষক যখন ছাই পরিষ্কার করতে যান, আবিষ্কার করেন হাঁসের ডিম দুটিকে। দেখেন যে ডিম দুটি তখনো তাজা। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরটা দেখে বিস্মিত হন কৃষক। দারুণ এক ব্যাপার। এক ভিন্ন রকমের ডিম। স্বাদও পাল্টে গেছে। আর বহুদিন ডিম সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা এই পদ্ধতিটিই ব্যবহার করতে শেখেন। কথিত আছে, এভাবেই শুরু হয় সেঞ্চুরি এগ তৈরি। ধারণা করা হতো এভাবে সংরক্ষণ করলে ডিম ১০০ বছর পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে।
মিস উয়ার কথা শুনতে শুনতে আমরা এগিয়ে গেলাম তাঁদের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের দিকে। মিস ট্রেসি ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে সেঞ্চুরি ডিম প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সে বিষয়টি।
সেঞ্চুরি ডিম তৈরিতে সাধারণত হাঁসের ডিম ব্যবহার করা হয়, তবে মুরগি বা কোয়েলের ডিমও ব্যবহার করা যায়। প্রথমে চুন (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড), ছাই, লবণ, চা-পাতা, চালের তুষ বা কাদা দিয়ে ঘন পেস্ট বা মিশ্রণ তৈরি করা হয়। প্রতিটি ডিম মিশ্রণে ডুবিয়ে পুরোপুরি মোড়ানো হয়, যাতে ডিমের খোলস সম্পূর্ণরূপে ঢেকে যায়। মোড়ানো ডিমগুলোকে একটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয়। এভাবেই ডিমকে সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বা কখনো কখনো কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়। এই সময়ে ক্ষারীয় মিশ্রণটি ডিমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ডিমের প্রোটিন ও ফ্যাটকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে। নির্দিষ্ট সময় পরে ডিমের সাদা অংশটি একটি জেলির মতো হয়ে যায় এবং গাঢ় বাদামি বা কালো রং ধারণ করে। আর ডিমের কুসুমটি ক্রিমি এবং সবুজ-ধূসর রঙের হয়। সংরক্ষণের সময় শেষ হলে, ডিমগুলোকে মিশ্রণ থেকে বের করে খোলস পরিষ্কার করা হয়।
সেঞ্চুরি ডিম সাধারণত কাঁচা বা হালকা সেদ্ধ অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। এটি সরাসরি খাওয়া যায় বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে বা সালাদে মিশিয়েও খাওয়া হয়। আমি প্রদর্শনী কেন্দ্রে রাখা সেঞ্চুরি ডিমের প্যাকেট খুলে একটি ডিমের খোসা ছাড়ালাম। খোসা ছাড়ানোর পর কালো রঙের একটি ডিম বের হয়ে এল। কালো জেলের মতো ডিমের গায়ে চমৎকার কারুকাজ। রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় ডিমের এই ধরনের কারুকাজ ফুটে ওঠে। দেখতে খুব সুন্দর। মিস ট্রেসি জানালেন সেঞ্চুরি ডিমের পুষ্টিগুণের কথা:
‘সেঞ্চুরি এগ একটি খাদ্য পরিপূরক যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। সেঞ্চুরি এগে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে। এতে আছে ভিটামিন এ, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই আছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া এতে বিটা-ক্যারোটিন, আয়রন এবং বিভিন্ন মিনারেলস রয়েছে, যা আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এটি চীনে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এটিকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।’
কথা শেষ করে মিস ট্রেসি একটি সেঞ্চুরি এগ কেটে সসের সঙ্গে পরিবেশন করলেন। মুখে দিয়ে ততটা সুস্বাদু মনে হলো না। তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করে খাওয়া যেতে পারে। ট্রেসি জানালেন, সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা হলে স্বাদ ততটা খারাপ লাগে না। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়ন ঘটিয়েছে অপ্রত্যাশিত দ্রুততার সঙ্গে। গোয়াংডং প্রদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। বলা যায় পুরো চীনের মাঝে সেঞ্চুরি ডিম উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে পুরো চীনের চাহিদার শতকরা ৫০ ভাগই তারা উৎপাদন করে। মিস উয়া আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের নানান দিক তুলে ধরেন। বলেন, গোয়াংডং প্রদেশের ৭০ ভাগ সেঞ্চুরি ডিমই তাঁরা উৎপাদন করেন।
এবার সেঞ্চুরি ডিম তৈরির কারখানা ঘুরে দেখার পালা। তবে জৈবনিরাপত্তার খাতিরে আমরা পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করিনি। কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে দেখছিলাম তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ। হাজার হাজার ডিম প্রক্রিয়াকরণ চলছে। মেশিন আর মানুষ মিলেমিশে কাজ করছে। এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
খামারে শুধু ডিম উৎপাদন করে যে মূল্য পাওয়া যেত, তার চেয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহুগুণ লাভ গুনছে এই প্রতিষ্ঠান। আমাদের হাওর ও চরাঞ্চলে প্রচুর হাঁসের ডিম উৎপাদন হয়। আমাদের যে সেঞ্চুরি এগই তৈরি করতে হবে, এমন কথা নেই। উৎপাদিত ডিমের মূল্য সংযোজন জরুরি। আমাদের দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ভাবতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমেই বিকশিত হতে পারে আমাদের কৃষিশিল্প। আশার কথা, বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারাও কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। আগামীর পৃথিবী ও টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে আমরা যদি কৃষিশিল্প খাতকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে পারি, তবে কৃষি ও কৃষিশিল্পই হতে পারে বেকার সমস্যার সমাধান।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
বিশ্বের যত রাষ্ট্র তার ঐতিহ্যকে সম্পদে রূপান্তর করেছে, চীন এর অন্যতম। দেশটি তার ঐতিহ্যকে শুধু ধারণই করেনি, পৃথিবীব্যাপী সেই ঐতিহ্যের বাণিজ্যিক রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে। সেঞ্চুরি এগ চীনের পুরোনো ঐতিহ্যের একটি। আগের দিনে এটিকে ডিম সংরক্ষণের একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করলেও এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের চাহিদায় পরিণত হয়েছে সেঞ্চুরি এগ। চীন তো বটেই, এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনের বাইরেও।
গত বছর মে মাসে আমার সুযোগ হয়েছিল চীনের গোয়াংডং প্রদেশের কাইপিং পোলট্রিশিল্প এলাকা ঘুরে দেখার। এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে গোয়াংজু শহর থেকে যাত্রা শুরু করলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার সহকর্মী তানভীর আশিক, রাসেল শাহ এবং আমাদের সহযোগী চীনের মেয়ে আলবা। আলবা চমৎকার একটি মেয়ে। বাংলাদেশি একজনকে বিয়ে করেছে সে। ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। আমাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করছিল সে। আলবা বলল, ‘চীনে সেঞ্চুরি এগ খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে পুষ্টি বিবেচনায় তরুণেরা সেঞ্চুরি এগ খুব পছন্দ করে। আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি চীনের সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানি।’
চীনের রাস্তাঘাট খুবই সুন্দর। পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে আমরা ছুটছিলাম। চীন উন্নত হয়েছে কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষায় তারা বেশ সচেতন। ফলে রাস্তার দুই পাশেই সবুজের সমারোহ। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম সেখানকার সবচেয়ে বড় সেঞ্চুরি এগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শুরি এগস প্রোডাক্টস কোম্পানিতে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মিস উয়া এবং ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য মিস ট্রেসি আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর প্রজেক্টরে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁদের কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা দিলেন। প্রতিষ্ঠানটি বেশ গোছানো ও আধুনিক। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অংশের স্পষ্ট ধারণা দিলেন তাঁরা। কোথায় কোন ধরনের কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কেও ধারণা দিলেন মিস উয়া।
মিস উয়া আমাদের জানালেন চীনে কীভাবে শুরু হয়েছিল সেঞ্চুরি ডিমের ব্যবহার। সে অনেক আগের কথা। চীন তখন মিং সাম্রাজ্যের আওতায়। সে সময় এক কৃষক চা-পাতা সেদ্ধ করা পানি ফেলে দিয়েছিলেন গাদা করে রাখা ছাইয়ের ওপর। সেখানে এক হাঁস দুটি ডিম পেড়ে যায়। ছাইয়ের সঙ্গে চা-পাতার পানি মিশে ডিম দুটি মাখামাখি হয়ে সেখানেই রয়ে যায় বেশ কিছু দিন। মাস তিনেক পর কৃষক যখন ছাই পরিষ্কার করতে যান, আবিষ্কার করেন হাঁসের ডিম দুটিকে। দেখেন যে ডিম দুটি তখনো তাজা। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরটা দেখে বিস্মিত হন কৃষক। দারুণ এক ব্যাপার। এক ভিন্ন রকমের ডিম। স্বাদও পাল্টে গেছে। আর বহুদিন ডিম সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা এই পদ্ধতিটিই ব্যবহার করতে শেখেন। কথিত আছে, এভাবেই শুরু হয় সেঞ্চুরি এগ তৈরি। ধারণা করা হতো এভাবে সংরক্ষণ করলে ডিম ১০০ বছর পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে।
মিস উয়ার কথা শুনতে শুনতে আমরা এগিয়ে গেলাম তাঁদের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের দিকে। মিস ট্রেসি ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে সেঞ্চুরি ডিম প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সে বিষয়টি।
সেঞ্চুরি ডিম তৈরিতে সাধারণত হাঁসের ডিম ব্যবহার করা হয়, তবে মুরগি বা কোয়েলের ডিমও ব্যবহার করা যায়। প্রথমে চুন (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড), ছাই, লবণ, চা-পাতা, চালের তুষ বা কাদা দিয়ে ঘন পেস্ট বা মিশ্রণ তৈরি করা হয়। প্রতিটি ডিম মিশ্রণে ডুবিয়ে পুরোপুরি মোড়ানো হয়, যাতে ডিমের খোলস সম্পূর্ণরূপে ঢেকে যায়। মোড়ানো ডিমগুলোকে একটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয়। এভাবেই ডিমকে সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বা কখনো কখনো কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়। এই সময়ে ক্ষারীয় মিশ্রণটি ডিমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ডিমের প্রোটিন ও ফ্যাটকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে। নির্দিষ্ট সময় পরে ডিমের সাদা অংশটি একটি জেলির মতো হয়ে যায় এবং গাঢ় বাদামি বা কালো রং ধারণ করে। আর ডিমের কুসুমটি ক্রিমি এবং সবুজ-ধূসর রঙের হয়। সংরক্ষণের সময় শেষ হলে, ডিমগুলোকে মিশ্রণ থেকে বের করে খোলস পরিষ্কার করা হয়।
সেঞ্চুরি ডিম সাধারণত কাঁচা বা হালকা সেদ্ধ অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। এটি সরাসরি খাওয়া যায় বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে বা সালাদে মিশিয়েও খাওয়া হয়। আমি প্রদর্শনী কেন্দ্রে রাখা সেঞ্চুরি ডিমের প্যাকেট খুলে একটি ডিমের খোসা ছাড়ালাম। খোসা ছাড়ানোর পর কালো রঙের একটি ডিম বের হয়ে এল। কালো জেলের মতো ডিমের গায়ে চমৎকার কারুকাজ। রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় ডিমের এই ধরনের কারুকাজ ফুটে ওঠে। দেখতে খুব সুন্দর। মিস ট্রেসি জানালেন সেঞ্চুরি ডিমের পুষ্টিগুণের কথা:
‘সেঞ্চুরি এগ একটি খাদ্য পরিপূরক যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। সেঞ্চুরি এগে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে। এতে আছে ভিটামিন এ, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই আছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া এতে বিটা-ক্যারোটিন, আয়রন এবং বিভিন্ন মিনারেলস রয়েছে, যা আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এটি চীনে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এটিকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।’
কথা শেষ করে মিস ট্রেসি একটি সেঞ্চুরি এগ কেটে সসের সঙ্গে পরিবেশন করলেন। মুখে দিয়ে ততটা সুস্বাদু মনে হলো না। তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করে খাওয়া যেতে পারে। ট্রেসি জানালেন, সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা হলে স্বাদ ততটা খারাপ লাগে না। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়ন ঘটিয়েছে অপ্রত্যাশিত দ্রুততার সঙ্গে। গোয়াংডং প্রদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। বলা যায় পুরো চীনের মাঝে সেঞ্চুরি ডিম উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে পুরো চীনের চাহিদার শতকরা ৫০ ভাগই তারা উৎপাদন করে। মিস উয়া আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের নানান দিক তুলে ধরেন। বলেন, গোয়াংডং প্রদেশের ৭০ ভাগ সেঞ্চুরি ডিমই তাঁরা উৎপাদন করেন।
এবার সেঞ্চুরি ডিম তৈরির কারখানা ঘুরে দেখার পালা। তবে জৈবনিরাপত্তার খাতিরে আমরা পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করিনি। কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে দেখছিলাম তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ। হাজার হাজার ডিম প্রক্রিয়াকরণ চলছে। মেশিন আর মানুষ মিলেমিশে কাজ করছে। এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
খামারে শুধু ডিম উৎপাদন করে যে মূল্য পাওয়া যেত, তার চেয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহুগুণ লাভ গুনছে এই প্রতিষ্ঠান। আমাদের হাওর ও চরাঞ্চলে প্রচুর হাঁসের ডিম উৎপাদন হয়। আমাদের যে সেঞ্চুরি এগই তৈরি করতে হবে, এমন কথা নেই। উৎপাদিত ডিমের মূল্য সংযোজন জরুরি। আমাদের দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ভাবতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমেই বিকশিত হতে পারে আমাদের কৃষিশিল্প। আশার কথা, বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারাও কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। আগামীর পৃথিবী ও টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে আমরা যদি কৃষিশিল্প খাতকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে পারি, তবে কৃষি ও কৃষিশিল্পই হতে পারে বেকার সমস্যার সমাধান।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
২ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
২ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে