স্বপ্না রেজা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভাইরাল নিউজ চোখে পড়ল। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ক্লিনার বকশিশ চেয়ে না পেয়ে অসুস্থ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে সেই শিশুর একপর্যায়ে করুণ মৃত্যু হয়। এমন অভিযোগ শিশুর মায়ের। যতদূর জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয় এবং এতে ক্লিনারকে দোষী সাব্যস্ত করার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে। এ ধরনের ঘটনা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন নয়, বরং প্রায়ই ঘটছে। কেন একজন ক্লিনার রোগীর অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলার এমন ধৃষ্টতা দেখাবেন, এই দুঃসাহস কোথা থেকেই-বা পেলেন। চিকিৎসক, নার্সরাই বা কী করছিলেন তখন, ক্লিনারদের দায়িত্ব কী—এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। খুব সহজেই বলা যায়, এই ধরনের ঘটনায় শুধু একজন ক্লিনার দায়ী হতে পারেন না এবং কোনোভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন করুণ ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। ক্লিনার শাস্তি পেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও শাস্তি পেতে হবে এবং সেই শাস্তি হতে হবে বড় ধরনের। এমন একটি ঘটনা বলে দেয়, ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান, প্রশাসনিক কাঠামো কতটা দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। যখন একটা হাসপাতাল রোগীর রোগ নিরাময়ের অন্যতম ভরসার জায়গা না হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং যে কারণটা হয় বকশিশ না পাওয়ায় মানুষ মেরে ফেলার মতো একটা ঘটনা, তখন বুঝতে হবে, পথেঘাটের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপগুলো চালিয়ে যাওয়া যেন এখন বেশি নিরাপদ হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে ছিনতাইয়ের জন্য দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না, অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেললেই হয়, চিকিৎসা দিতে অবহেলা করলেই হয়। কিংবা অতিরিক্ত টাকার বিল রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দিলেই হয়। তার সঙ্গে আছে ভুল চিকিৎসার রকমারি ঘটনাপ্রবাহ। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীর স্বজনেরা কসাইয়ের মতো আচরণ দেখতে পাচ্ছেন। এরপর দালালের খপ্পরেও পড়ছেন। প্রায় প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। বরং অভিযোগ আছে, এসব দালালের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের একটা সমন্বয় আছে।
দিন দিন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের চালচিত্র বদলে যাচ্ছে। দক্ষ জনবল ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, পরিবেশকে করছে দূষিত। ব্যবসায়িক মনোভাবের পাশাপাশি আরও একটি বড় ভয়ংকর দিক হলো, হাসপাতালের ভেতর সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার। অনেক সময় দেখা যায়, তাঁরা মোবাইল ফোনে কথা চালিয়ে কাজ করছেন। হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ থাকা জরুরি। এটা প্রতীয়মান যে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সীমাহীন সুযোগ, আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয় এই ডিভাইস। ফলে এর ব্যবহারে আসক্তি বেড়ে যায় তার নির্ধারিত দায় ও দায়িত্ব পালনের চেয়ে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দিন দিন সামাজিক সম্পর্কের কাঠামোই কেবল বদলে যাচ্ছে না, ভেঙে যাচ্ছে না, উপরন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব পালনে ব্যক্তিকে নিরুৎসাহিত করছে প্রচণ্ডভাবে। চিকিৎসাসেবার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় সংশ্লিষ্টদের আচরণের সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকা জরুরি, যা রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সুচিকিৎসাসেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেবে।
এ প্রসঙ্গে নিজের দেখা দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। চোখের সার্জারি করার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেছি। চিকিৎসক তাঁর সহকারীকে বললেন আমার চোখে ড্রপ দিতে। সহকারীর এক কানে মোবাইল ফোন ধরা। আরেক হাতে চোখের ওষুধ। চোখে ড্রপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। তাঁর মনোযোগ মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তে। বাধ্য হয়ে বললাম, প্লিজ কথা শেষ করে নিন, তারপর ড্রপ দিন। আমার কথা তাঁর পছন্দ হলো না। অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বললেন, ফোন ধরে রাখো একটু। চোখে ড্রপ দিয়ে আবার তিনি ব্যস্ত হন মোবাইল ফোনে। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোটেও যায় না। বয়সে তিনি তরুণ। যতক্ষণ অবস্থান করেছি ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি।
ঢাকার এক অভিজাত হাসপাতাল। নিকট আত্মীয়র সার্জারি হবে। নির্ধারিত সময়ে গিয়ে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হলো। অতঃপর সার্জারি শুরু হলো। অপারেশন থিয়েটারের সামনে পায়চারি করছি। অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলতে এগিয়ে যাচ্ছি রোগীর খবর নিতে। বলা হচ্ছে, অপারেশন চলছে। এরই মাঝে একজন ব্যক্তিকে হাতে একটা পার্সেল নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে আসতে দেখা গেল। অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন চিকিৎসক বেরিয়ে এসে সেই পার্সেল রিসিভ করলেন এবং পার্সেল নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করলেন। অপারেশন থিয়েটারের মতো একটি জীবাণুমুক্ত এলাকায় সহজে ও সরাসরি পার্সেল ঢুকে যাওয়ার ঘটনাটি শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। জীবাণুনাশক কোনো স্প্রে করা হলো না। এতটা দায়িত্বহীনতা এত নামকরা অভিজাত প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে, চিন্তা করা যায় না।
যে ক্লিনার বকশিশ না পেয়ে শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেছেন, তাঁর সঙ্গে এই চিকিৎসকের আচরণের তফাত দেখি না। এমন হাসপাতালে রোগীকে পকেটভর্তি টাকা নিয়ে ঢুকতে হয়। গলাকাটা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় রোগীর স্বজনকে। সেখানে এমনভাবে অপারেশন থিয়েটারে বাইরে থেকে আসা পার্সেল ঢুকে যাবে এবং ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে রোগীর, সেটা বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করবার মতোই ঘটনা।
আর্থিক দুর্নীতি, টাকা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জোর করে বকশিশ আদায়—এগুলো সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায় এবং ক্রমেই তা বাড়ছে। বলা যায়, এসব জাতিগত বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আদর্শচ্যুত ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চর্চা ইত্যাদির কারণে সামাজিক অবক্ষয় স্থায়ীরূপ ধারণ করছে, যা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন হয়ে সব সরকারই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, আইনের সুশাসনের কথা বলে, পরিবর্তনের কথা বলে, নিয়মনীতির কথা বলে কিন্তু বাস্তবে যা দৃশ্যমান হয় না, অধরাই থাকে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সাধারণ মানুষ।
বকশিশ না পেয়ে অসুস্থ শিশুর অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলার ঘটনাটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এই ঘটনা রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক ব্যর্থতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রশ্ন, সেই ব্যর্থতা আমরা স্বীকার করি কিংবা করব কি না। যদি স্বীকার করি, তাহলে ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, নতুবা ব্যর্থতার মোড়কে দেশের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কাই থেকে যাবে।
লেখক: স্বপ্না রেজা
কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভাইরাল নিউজ চোখে পড়ল। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ক্লিনার বকশিশ চেয়ে না পেয়ে অসুস্থ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে সেই শিশুর একপর্যায়ে করুণ মৃত্যু হয়। এমন অভিযোগ শিশুর মায়ের। যতদূর জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয় এবং এতে ক্লিনারকে দোষী সাব্যস্ত করার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে। এ ধরনের ঘটনা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন নয়, বরং প্রায়ই ঘটছে। কেন একজন ক্লিনার রোগীর অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলার এমন ধৃষ্টতা দেখাবেন, এই দুঃসাহস কোথা থেকেই-বা পেলেন। চিকিৎসক, নার্সরাই বা কী করছিলেন তখন, ক্লিনারদের দায়িত্ব কী—এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। খুব সহজেই বলা যায়, এই ধরনের ঘটনায় শুধু একজন ক্লিনার দায়ী হতে পারেন না এবং কোনোভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন করুণ ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। ক্লিনার শাস্তি পেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও শাস্তি পেতে হবে এবং সেই শাস্তি হতে হবে বড় ধরনের। এমন একটি ঘটনা বলে দেয়, ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান, প্রশাসনিক কাঠামো কতটা দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। যখন একটা হাসপাতাল রোগীর রোগ নিরাময়ের অন্যতম ভরসার জায়গা না হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং যে কারণটা হয় বকশিশ না পাওয়ায় মানুষ মেরে ফেলার মতো একটা ঘটনা, তখন বুঝতে হবে, পথেঘাটের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপগুলো চালিয়ে যাওয়া যেন এখন বেশি নিরাপদ হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে ছিনতাইয়ের জন্য দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না, অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেললেই হয়, চিকিৎসা দিতে অবহেলা করলেই হয়। কিংবা অতিরিক্ত টাকার বিল রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দিলেই হয়। তার সঙ্গে আছে ভুল চিকিৎসার রকমারি ঘটনাপ্রবাহ। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীর স্বজনেরা কসাইয়ের মতো আচরণ দেখতে পাচ্ছেন। এরপর দালালের খপ্পরেও পড়ছেন। প্রায় প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। বরং অভিযোগ আছে, এসব দালালের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের একটা সমন্বয় আছে।
দিন দিন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের চালচিত্র বদলে যাচ্ছে। দক্ষ জনবল ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, পরিবেশকে করছে দূষিত। ব্যবসায়িক মনোভাবের পাশাপাশি আরও একটি বড় ভয়ংকর দিক হলো, হাসপাতালের ভেতর সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার। অনেক সময় দেখা যায়, তাঁরা মোবাইল ফোনে কথা চালিয়ে কাজ করছেন। হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ থাকা জরুরি। এটা প্রতীয়মান যে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সীমাহীন সুযোগ, আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয় এই ডিভাইস। ফলে এর ব্যবহারে আসক্তি বেড়ে যায় তার নির্ধারিত দায় ও দায়িত্ব পালনের চেয়ে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দিন দিন সামাজিক সম্পর্কের কাঠামোই কেবল বদলে যাচ্ছে না, ভেঙে যাচ্ছে না, উপরন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব পালনে ব্যক্তিকে নিরুৎসাহিত করছে প্রচণ্ডভাবে। চিকিৎসাসেবার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় সংশ্লিষ্টদের আচরণের সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকা জরুরি, যা রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সুচিকিৎসাসেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেবে।
এ প্রসঙ্গে নিজের দেখা দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। চোখের সার্জারি করার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেছি। চিকিৎসক তাঁর সহকারীকে বললেন আমার চোখে ড্রপ দিতে। সহকারীর এক কানে মোবাইল ফোন ধরা। আরেক হাতে চোখের ওষুধ। চোখে ড্রপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। তাঁর মনোযোগ মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তে। বাধ্য হয়ে বললাম, প্লিজ কথা শেষ করে নিন, তারপর ড্রপ দিন। আমার কথা তাঁর পছন্দ হলো না। অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বললেন, ফোন ধরে রাখো একটু। চোখে ড্রপ দিয়ে আবার তিনি ব্যস্ত হন মোবাইল ফোনে। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোটেও যায় না। বয়সে তিনি তরুণ। যতক্ষণ অবস্থান করেছি ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি।
ঢাকার এক অভিজাত হাসপাতাল। নিকট আত্মীয়র সার্জারি হবে। নির্ধারিত সময়ে গিয়ে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হলো। অতঃপর সার্জারি শুরু হলো। অপারেশন থিয়েটারের সামনে পায়চারি করছি। অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলতে এগিয়ে যাচ্ছি রোগীর খবর নিতে। বলা হচ্ছে, অপারেশন চলছে। এরই মাঝে একজন ব্যক্তিকে হাতে একটা পার্সেল নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে আসতে দেখা গেল। অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন চিকিৎসক বেরিয়ে এসে সেই পার্সেল রিসিভ করলেন এবং পার্সেল নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করলেন। অপারেশন থিয়েটারের মতো একটি জীবাণুমুক্ত এলাকায় সহজে ও সরাসরি পার্সেল ঢুকে যাওয়ার ঘটনাটি শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। জীবাণুনাশক কোনো স্প্রে করা হলো না। এতটা দায়িত্বহীনতা এত নামকরা অভিজাত প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে, চিন্তা করা যায় না।
যে ক্লিনার বকশিশ না পেয়ে শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেছেন, তাঁর সঙ্গে এই চিকিৎসকের আচরণের তফাত দেখি না। এমন হাসপাতালে রোগীকে পকেটভর্তি টাকা নিয়ে ঢুকতে হয়। গলাকাটা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় রোগীর স্বজনকে। সেখানে এমনভাবে অপারেশন থিয়েটারে বাইরে থেকে আসা পার্সেল ঢুকে যাবে এবং ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে রোগীর, সেটা বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করবার মতোই ঘটনা।
আর্থিক দুর্নীতি, টাকা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জোর করে বকশিশ আদায়—এগুলো সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায় এবং ক্রমেই তা বাড়ছে। বলা যায়, এসব জাতিগত বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আদর্শচ্যুত ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চর্চা ইত্যাদির কারণে সামাজিক অবক্ষয় স্থায়ীরূপ ধারণ করছে, যা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন হয়ে সব সরকারই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, আইনের সুশাসনের কথা বলে, পরিবর্তনের কথা বলে, নিয়মনীতির কথা বলে কিন্তু বাস্তবে যা দৃশ্যমান হয় না, অধরাই থাকে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সাধারণ মানুষ।
বকশিশ না পেয়ে অসুস্থ শিশুর অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলার ঘটনাটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এই ঘটনা রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক ব্যর্থতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রশ্ন, সেই ব্যর্থতা আমরা স্বীকার করি কিংবা করব কি না। যদি স্বীকার করি, তাহলে ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, নতুবা ব্যর্থতার মোড়কে দেশের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কাই থেকে যাবে।
লেখক: স্বপ্না রেজা
কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
রাজনীতির মাঠে অশালীন শব্দ ব্যবহার করলে আর মিথ্যা কথা বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে—এ রকম বক্তব্যসহ সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের লেখা একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
৫ ঘণ্টা আগেবাগছাস নেতা এসে স্কুলের ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছেন—এটাকে কি রূপকথার গল্প বলে মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে কারও অলীক কল্পনা? চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ।
৫ ঘণ্টা আগেদেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে
১২ ঘণ্টা আগেযশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। কারণ, প্রায় চার দশক ধরে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এক অভিশপ্ত জলাবদ্ধতার শিকার। বছরের অধিকাংশ সময়ই তারা পানির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনোটাই তাদের জীবনে স্বস্তি বয়ে আনেনি।
১ দিন আগে