Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বেক্সিমকো ফার্মার ৮৬% শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের: সিএফও আলী নাওয়াজ

বেক্সিমকো ফার্মার ৮৬% শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের: সিএফও আলী নাওয়াজ

বেক্সিমকো ফার্মা গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে তাদের অবস্থান ঠিক স্বাভাবিক সময়ের মতো। যেখানে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার কথা, সেখানে প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে সুসংহত হচ্ছে, এত কিছু কীভাবে সম্ভব হচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ আলী নাওয়াজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক রোকন উদ্দীন

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪২

আজকের পত্রিকা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্রমিক ছাঁটাই হয়। সেই বাস্তবতায় বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড কীভাবে টিকে আছে?

আলী নাওয়াজ: সত্যি বলতে, বেক্সিমকো ফার্মার জন্য সময়টা ছিল ভয়াবহ। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে সুনামের ওপর। নামের আগে ‘বেক্সিমকো’ থাকায় অনেক নেতিবাচক প্রচার হয়েছে। অফিস ও ডিপোতে হামলা হয়েছে, ৪-৫টি ডিপো ও প্রধান কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আমাদের আরজেএসসিতে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার অ্যাকসেস বন্ধ রাখা হয়েছিল। ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে ছয় সপ্তাহ লেগেছে। এসব নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত এক বছরে বেক্সিমকো ফার্মা আরও এগিয়েছে। কারণ, বেক্সিমকো ফার্মা মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান। মালিকদের হাতে মাত্র ১৪ শতাংশ শেয়ার, বাকি ৮৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। আর কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থেকে আমরা চেষ্টা করেছি ফার্মার উৎপাদন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড এবং কর্মসংস্থান সব সময় সচল রাখার। এতে সরকারের প্রশাসনিক সহায়তাও আমরা পেয়েছি। ফলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেক্সিমকো ফার্মার প্রবৃদ্ধি হয়েছে। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতেও বেক্সিমকো ফার্মা সচল রাখার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

আজকের পত্রিকা: এত প্রতিকূল অবস্থায়ও কোম্পানি কীভাবে স্থিতিশীল থাকতে পেরেছে?

আলী নাওয়াজ: এর পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেক্সিমকো ফার্মার ম্যানেজমেন্ট সব সময় পেশাদারদের হাতেই থেকেছে। আমাদের বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা ছিল, তারা দৈনন্দিন কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। দ্বিতীয়ত, ফার্মার মার্কেটিং টিম মাঠে এই প্রতিকূল সময়ে দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছে এবং সবাইকে বুঝিয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ৮৬ শতাংশ শেয়ার ও বিনিয়োগই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে মাত্র ১৪ শতাংশ শেয়ার। তৃতীয়ত, ফার্মার ওষুধের মান আন্তর্জাতিক মানের; তাই রোগী ও চিকিৎসকদের আস্থা সব সময় একটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে। এর জন্য গত এক বছরে একজন কর্মীও চাকরি ছাড়েননি, ছাঁটাইয়ের প্রশ্নই ওঠেনি।

আজকের পত্রিকা: বেক্সিমকো গ্রুপের বিশাল ব্যাংকঋণ নিয়ে নানা অভিযোগ আছে। বেক্সিমকো ফার্মার ঋণ পরিস্থিতি কেমন?

আলী নাওয়াজ: আমাদের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ আছে; কিন্তু বাস্তবে সর্বোচ্চ ৬০০ কোটি টাকার কার্যকরী মূলধন ঋণ নিয়েছিলাম; যার থেকে ব্যবহার হয়েছিল ১০০ কোটির কম। বর্তমানে ঋণ নেমে এসেছে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটির মধ্যে। বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিক্রি হয়, তাই বেক্সিমকো ফার্মার কোনো ঋণের চাপ নেই।

আজকের পত্রিকা: বেক্সিমকো ফার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অর্জিত মুনাফা থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্য কোম্পানিকে অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সিএফও হিসেবে আপনার বক্তব্য কী?

আলী নাওয়াজ: অভিযোগটি আমরাও শুনেছি, যা সত্য নয়। কারণ, এটা সম্ভবও নয়। বেক্সিমকো ফার্মা গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তদুপরি বেক্সিমকো ফার্মা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত, যেখানে কঠোরভাবে আর্থিক স্বচ্ছতা মনিটর করা হয়।

আজকের পত্রিকা: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প কীভাবে বেড়েছে বলে মনে করেন?

আলী নাওয়াজ: ২০১০ সালের পর থেকে ওষুধশিল্প ধারাবাহিকভাবে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শুধু কোভিড-১৯ সময়টা ব্যতিক্রম। দেশের অর্থনীতি বেড়েছে, মানুষের আয় ও জীবনমান উন্নত হয়েছে, উপজেলা পর্যায়েও চিকিৎসাসেবা পৌঁছেছে। ফলে মানুষ ফুল কোর্সে ওষুধ কিনছে। প্রতিবছর বড় কোম্পানিগুলো ২০-৩০টি নতুন ওষুধ বাজারে আনছে। এখন বাজারের আকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার, যার ৯৮ শতাংশই স্থানীয় উৎপাদন।

আজকের পত্রিকা: রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো সীমিত। সমস্যাগুলো কোথায়?

আলী নাওয়াজ: ওষুধ রপ্তানি খুব জটিল প্রক্রিয়া। আফ্রিকার একটি দেশে যেতে হলেও এজেন্ট নিয়োগ, ডসিয়ার তৈরি, রেজিস্ট্রেশন, এমনকি ওষুধ কর্তৃপক্ষের কারখানা পরিদর্শন করতে হয়। অনুমোদন পেতে ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ, প্রায় সাড়ে তিন বছর লেগে যায়। খরচও বিপুল; শুধু মার্কিন নিবন্ধনের ফি মাঝারি কোম্পানির জন্য এক মিলিয়ন ডলারের বেশি। বেক্সিমকো ফার্মা প্রতিবছর লাইসেন্স ও অডিট বজায় রাখতেই দেড় মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে।

আজকের পত্রিকা: বর্তমানে বেক্সিমকো ফার্মার রপ্তানির অবস্থা কী?

আলী নাওয়াজ: আমরা ৬০টির বেশি দেশে প্রায় ২৫০ ধরনের ওষুধ রপ্তানি করি। সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে ২০টি ওষুধের নিবন্ধন আছে এবং ৮টি আমরা রপ্তানি করছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার। লাভজনক হতে হলে অন্তত ১০-১৫ মিলিয়নের ওপরে আয় করতে হয়; কারণ, খরচ বেশি। তবে একবার ইউএস এফডিএ সার্টিফিকেশন পাওয়া গেলে অন্য দেশে অনুমোদন পাওয়া সহজ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পর অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়া আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

আজকের পত্রিকা: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধ খাতের জন্য কী চ্যালেঞ্জ আসবে?

আলী নাওয়াজ: সবচেয়ে বড় সুবিধা, এখন আমরা পেটেন্ট ছাড় পাই। ফলে নতুন ওষুধ এলেই দ্রুত উৎপাদন করতে পারি। গ্র্যাজুয়েশনের পর সেটা থাকবে না, আবিষ্কারক কোম্পানির লাইসেন্স লাগবে। ইতিমধ্যে বাজারজাত করা পেটেন্টের ওষুধের জন্য রয়্যালটি দাবি করতে পারে। অনেক দেশ আমাদের জেনেরিক নিতে পারবে না, রপ্তানি কমে যাবে। দামও বাড়বে; কারণ, পেটেন্ট হোল্ডার কোম্পানিকে লাইসেন্স ফি ও রয়্যালটি দিতে হবে; অথবা তাদের নির্ধারিত দামে কাঁচামাল কিনতে হবে। আমরা সরকারকে এসব বিষয়ে জানাচ্ছি এবং শিল্প সমিতি থেকেও আলাপ চলছে। প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: সামনে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান ফোকাস কী হবে?

আলী নাওয়াজ: বেক্সিমকো ফার্মার মূল দৃষ্টি এখন বায়োলজিকসের দিকে; বিশেষ করে অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি ডায়াবেটিস ওষুধে। বিশ্বজুড়ে এগুলোই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আমরা চাই, বাংলাদেশে প্রথমেই এসব পণ্য আনতে। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব নতুন কিছু ওষুধ রেজিস্ট্রেশন করে রাখতে; যাতে বলা যায়, এগুলো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের আগেই বাজারে এসেছে। এ ছাড়া নোভিস্তা ফার্মা ও সাইনোভিয়া ফার্মা নামক দুটি বহুজাতিক কোম্পানির বাংলাদেশের শেয়ার আমরা কিনে নিয়েছি; যাতে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা বাংলাদেশের: সিইএএবি সভাপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা বাংলাদেশের: সিইএএবি সভাপতি

চীনা বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং শিল্প উৎপাদন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রপ্তানি কেন্দ্রে (গ্লোবাল এক্সপোর্ট হাব) পরিণত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রাখে। বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তৈরি পোশাক (আরএমজি) এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতে এই সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করে বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন (সিইএএবি)।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সিইএএবির সভাপতি হান কুন বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, বিশেষ করে বড় অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে।

হান কুন উল্লেখ করেন, শুধু বিদ্যুৎ খাতেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে, যার প্রায় ৫৪ শতাংশই চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসেছে। তিনি আরও জানান, চীনা সংস্থাগুলোর সরাসরি ভূমিকার কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা ২৭ থেকে ২৮ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো সাধারণত নিজেদের আড়ালে রাখতে পছন্দ করলেও, তাদের এই বিশাল বিনিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়ন খরচ কমাতে এবং পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বৃহৎ জাতীয় প্রকল্পে চীনা দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিত করে অবকাঠামোগত প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।

হান কুন মনে করেন, বাংলাদেশ এখন আর কেবল একটি অভ্যন্তরীণ বাজারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়—এটি রপ্তানিমুখী শিল্পকেন্দ্র হয়ে ওঠার সব উপাদান ধারণ করে। চীনা উৎপাদকদের কাছে বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় করার প্রধান কারণগুলো হলো: প্রতিযোগিতামূলক শ্রম ব্যয়; উন্নতমানের অবকাঠামো; আঞ্চলিক বাজারগুলোর কাছাকাছি কৌশলগত অবস্থান।

এছাড়া, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং স্বল্পব্যয়ী শ্রমশক্তির কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে।

সিইএএবি সভাপতি প্রস্তাবিত চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (এফটিএ) এই শিল্প রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শুল্ক, নীতি ও বিনিয়োগ কাঠামো সমন্বিত হলে চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন চীনের বাইরে বাংলাদেশে স্থানান্তর করে বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি করতে পারবে।

হান কুন যুক্তি দেন, বিশ্বের মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৩০ শতাংশ চীনের। এর কিছু অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পব্যয়ী ইনপুট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। এফটিএ কার্যকর হলে চীনা কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভুক্তিকে শক্তিশালী করবে—বিশেষ করে আরএমজি ও উৎপাদন খাতকে নতুন মাত্রা দেবে।

তবে তিনি নীতিগত স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দেন। তাঁর মতে, ‘নীতিতে হঠাৎ পরিবর্তন এলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন।’ তিনি বলেন, দরপত্র প্রস্তুতকরণ, কারিগরি সমীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যে বিপুল ব্যয় হয়, নীতি পরিবর্তনের ফলে প্রকল্প বাতিল হলে এই ব্যয় মুহূর্তেই ঝুঁকিতে পড়ে। তাই স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য নীতি কাঠামো নিশ্চিত করা আবশ্যক।

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সিইএএবি ২০০৯ সাল থেকে একটি নিবন্ধিত সংস্থা হিসেবে অফিস ও জনবলসহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো খাতে এবং ৩০ শতাংশ আরএমজি/টেক্সটাইল খাতে সক্রিয়। এই সংস্থাগুলো দুই দেশের অর্থনীতির মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা রাখছে এবং বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থান দিয়েছে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে হান কুন অবকাঠামো ও বিদ্যুতের বাইরেও নতুন জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, সরবরাহ এবং উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সঠিক নীতিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশ অচিরেই এশিয়ার অন্যতম রপ্তানি ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হতে পারবে। বর্তমানে ডিউটি-ফ্রি ও কোটা-ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সুবিধা সত্ত্বেও সীমিত রপ্তানি বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশ চীনে সুবিধাটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচিত সরকার এলে বিমার গ্রাহক বাড়বে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মো. কাজিম উদ্দিন।
মো. কাজিম উদ্দিন।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থিতিশীল সরকার না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, নতুন কর্মসংস্থানে ব্যাঘাত ঘটে। মানুষের আয় কমে বা স্থির থাকে, আর মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ক্রয়ক্ষমতাকে সীমিত করে। এর প্রভাব পড়ে উৎপাদন ও চাহিদার ওপর, যা শেষমেশ অর্থনৈতিক প্রবাহকে ধীর করে দেয়।

সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরাসরি দেশকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত করে। স্থিতিশীল ও গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে জীবনবিমার সম্পর্কও গভীরভাবে জড়িত। এই অনিশ্চয়তার ছায়া এখন নতুন বিমা গ্রহণে স্পষ্ট। মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চায়, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকে এখন আগের মতো বিমায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

একদিকে বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না। পাশাপাশি পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আবার কিছু বিমা কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে বিমার প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে এবং অনেকে আগের পলিসি বাতিল করছে।

বিশেষ করে, পাঁচ-সাতটি কোম্পানির কারণে গত দুই-তিন বছর নতুন পলিসি ইস্যু হয়নি, ফলে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। তবে মেটলাইফসহ বড় কোম্পানির পলিসি চলমান থাকায় প্রিমিয়াম আয় কিছুটা বেড়েছে; যা খাতের অস্থিরতার মাঝেও সামান্য সান্ত্বনা দেয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দাবি পরিশোধের হার বাড়বে, যা বিমা গ্রাহকের হারও পুনরায় বাড়াবে এবং এ খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। একই সঙ্গে খাতের শৃঙ্খলায়ও নজর দেওয়া জরুরি। কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে, প্রিমিয়াম সংগ্রহে এজেন্টের ওপর নির্ভর না করে অনলাইন ব্যাংক, নগদ, বিকাশ ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মো. কাজিম উদ্দিন,মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জীবনবিমা কোম্পানি: আড়াই বছরে কমেছে সোয়া ১০ লাখ বিমা

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৪
জীবনবিমা কোম্পানি: আড়াই বছরে কমেছে সোয়া ১০ লাখ বিমা

মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন হলো জীবনবিমা। কিন্তু দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়ম, বিনিয়োগে অস্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর দুর্বল তদারকি সে ভরসার ভিত্তি ক্রমেই সংকুচিত করেছে, বিশ্বাসের জায়গায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। গত আড়াই বছরের হিসাব স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে—খাতটিতে আস্থাহীনতা জমেছে, অসন্তোষ সঞ্চিত হয়েছে, আর এখন তা দৃশ্যমান সংকটে রূপ নিয়েছে। এ সময়ে সক্রিয় পলিসি কমেছে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯২৪টি, কমার হার ১৩.১৪ শতাংশ। এই ধারাবাহিক নিম্নগতি জীবনবিমা থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সেই কঠিন বার্তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

আইডিআরএর সর্বশেষ বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে মোট ৩৬টি জীবনবিমা কোম্পানি রয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় পলিসি ছিল ৭৮ লাখ ৯ হাজার ১২১টি। ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৬টিতে। এরপর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭টিতে, এক বছরে কমেছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৪টি পলিসি। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই, ২০২৫ সালের জুন শেষে পলিসির সংখ্যা আরও কমে ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে—অর্থাৎ এই অর্ধবছরেই কমেছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৮০টি পলিসি। অর্থাৎ নতুন পলিসি নেওয়ার বদলে অনেকে পুরোনো পলিসির টাকা তুলে নিচ্ছেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নতুন করে আর বিমার জালে জড়াচ্ছেন না কেউ।

আস্থাহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘মানুষ যখন বছরের পর বছর নিজের প্রাপ্য টাকা পায় না, তখন তাঁরা বিমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেই বাধ্য হন।’

আইডিআরএর তথ্যমতে, পলিসি কমার শীর্ষে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির বিমা কমেছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৮টি। ডেলটা লাইফের বিমা কমেছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৮টি। পপুলার লাইফের বিমা কমেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৯টি। এরপর যথাক্রমে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ, প্রগতি লাইফ এবং আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।

চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সিইও এস এম জিয়াউল হক মনে করেন, ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় পুরো খাতই একধরনের সংকটের মুখে। তাঁর মতে, বিনিয়োগ, দাবি নিষ্পত্তি, গ্রাহকসেবা—সবক্ষেত্রেই শক্তিশালী নীতিমালা প্রয়োগ জরুরি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটির (বিআইপিএস) সেক্রেটারি জেনারেল এ কে এম এহসানুল হক বলেন, অনেক সময় অনিয়মের তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা বাস্তবায়নের পর্যায়ে যথেষ্ট কঠোরতা থাকে না। এতে গ্রাহকের আস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইডিআরএর মানবসম্পদ, আইনগত কাঠামো ও তদারকি ক্ষমতা আরও শক্তিশালী না হলে সামগ্রিকভাবে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না।

তবে আইডিআরএর পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, খাতের বিচ্যুতি দূর করতে বিভিন্ন আইনি সংস্কার এখন প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, ‘দাবি নিষ্পত্তি দ্রুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নিয়মগুলো আরও স্পষ্ট করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু নির্দেশনা নয়—কার্যকর প্রয়োগই হবে মূল বিষয়। কারণ বিমা খাত টিকে থাকে মানুষের বিশ্বাসে। সে বিশ্বাস একবার নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। তাই দাবি নিষ্পত্তির সময়সীমা স্পষ্ট করা, বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ, স্বচ্ছ অডিট এবং শক্তিশালী নজরদারি—এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতেই হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনার দাম কমল ৫ হাজার ৫৪৬ টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

এবার দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ৫৪৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এখন থেকে দেশের বাজারে প্রতি ভরি ভালো মানের (২২ ক্যারেটের) সোনা বিক্রি হবে ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকায়। আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে সোনার নতুন এই দর কার্যকর হবে।

আজ শনিবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক বিজ্ঞপ্তিতে সোনার এ দাম কমার তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি (পিউর গোল্ড) সোনার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সে কারণে সোনার দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৭১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সোনার দাম কমলেও অপরিবর্তিত আছে রুপার দাম।

২২ ক্যারেটের রুপার ভরি ৪ হাজার ২৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি ৪ হাজার ৪৭ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬০১ টাকা।

এর আগে, সবশেষ ১৩ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে ৫ হাজার ২৪৮ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত