ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ
একজন সাধারণ গৃহিণী হয়েও বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা উজ্জ্বল। তিনি বাঙালির স্বপ্নজয়ের একজন সারথি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে নয়, সংসারের অন্তরালে থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন দক্ষ নীরব সংগঠকরূপে।
সাংসারিক নানা টানাপোড়েন মোকাবিলা করে দুর্দিনে আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করেছেন। আজীবন ছায়ার মতো পাশে থেকে স্বামী শেখ মুজিবকে অধিষ্ঠিত করেছেন হিমালয়সম আসনে।
এভাবেই ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া ফজিলাতুন্নেছা বাংলার মানুষের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের।
অন্তরালের প্রেরণাদায়ী স্ত্রীকে বঙ্গবন্ধু ডাকতেন ‘রেণু’ বলে। মাত্র ১১ বছর বয়সে কিশোর শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এ বিষয়ে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘আমার যখন বিবাহ হয়, তখন আমার বয়স বার-তের বছর হতে পারে।...রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধ হয় তিন বছর হবে।’
এদিকে বিয়ে হলেও শেখ মুজিবের এন্ট্রান্স পাসের পর মূলত তাঁদের সংসারজীবন শুরু হয়। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। আর তখন বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে সময় কাটত শেখ ফজিলাতুন্নেছার।
পড়াশোনায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা বড় ডিগ্রিধারী ছিলেন না, কিন্তু মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে বড় হৃদয়ের অধিকারী। দুর্দিনে মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ও আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। সব সময় দেশের প্রয়োজনকেই বড় করে দেখতেন তিনি। নিজে শয্যাশায়ী থেকেও স্বামীকে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গায় আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি; বরং উৎসাহ দিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার কাজে যান।...আল্লাহর উপরে আমার ভার ছেড়ে দিন।’
শৈশবে মা-বাবাকে হারানোর পর ফজিলাতুন্নেছা বেড়ে ওঠেন দাদা শেখ কাশেমের কাছে। তাঁকে মাতৃস্নেহে আগলে রাখেন চাচি এবং পরে শাশুড়ি শেখ মুজিবের মা সায়েরা খাতুন। পিতার অভাব বুঝতে দেননি বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানও।
সূক্ষ্ম প্রতিভাসম্পন্ন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল এই নারী জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লেখার ক্ষেত্রেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ দিয়েছেন। স্ত্রীর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ এক অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বলেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি।
জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলে-মেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে।’
শেখ ফজিলাতুন্নেছা প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় দেখা করার সময় বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করতেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ শুনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের তা জানাতেন বেগম মুজিব। কারাগারে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেও সহযোগিতা করতেন তিনি।
একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন তিনি। তাঁর বাড়িতে কোনো বিলাসী আসবাব ছিল না, ছিল না তাঁর কোনো অহংবোধ। ছেলেমেয়েকেও গড়েছেন সেভাবেই। পালন করে গেছেন পিতা-মাতা উভয়ের কর্তব্য।
তবে ইতিহাসে এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে খুব সামান্যই; অথচ নেপথ্যে থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বেই বিশ্বস্ত সারথির মতো অশেষ ক্লেশ স্বীকার করেও বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন ও পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন; বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর পতনোন্মুখ আইয়ুব খান টিকে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকের যে প্রস্তাব দেন, সে ব্যাপারে বেগম মুজিব যে ভূমিকা নেন, তা ছিল ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কারান্তরীণ স্বামীর প্যারোলে মুক্তির চেয়ে আন্দোলনের সাফল্য ও ব্যক্তি মুজিবের মর্যাদা রক্ষাই ছিল তাঁর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন, কিন্তু আলোচনার শর্ত হিসেবে ‘নিঃশর্ত মুক্তি’র পক্ষে দৃঢ় থাকার জন্য বঙ্গবন্ধুকে জেলখানায় চিরকুট পাঠিয়েছিলেন বেগম মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বেগম মুজিব যে কতটা প্রভাবশালী অনুঘটকের মতো কাজ করেছিলেন, তা আরেকটি ঘটনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়। ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জনসভা ঘিরে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মুজিব কি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন? চারদিকে টান টান উত্তেজনা। কী বলবেন তিনি? ছাত্ররা চায় তিনি ওই দিনই স্বাধীনতা ঘোষণা করুন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে, তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু শেষ করে দেবেন না। ‘অপারেশন ব্লিৎস’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে: বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে উপস্থিত জনতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে; রেসকোর্স ময়দানের আকাশে সে জন্য চক্কর দিচ্ছে সামরিক হেলিকপ্টার।
বঙ্গবন্ধুর শরীরও অসুস্থ, ঈষৎ জ্বর। কিন্তু বেগম মুজিব ছিলেন ধীর, স্থির। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘...এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যা আসবে, সেটাই তুমি বলবা।’ এরপরই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন তাঁর অনবদ্য ঐতিহাসিক ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। যে ভাষণের জন্য তিনি স্বীকৃতি পেলেন ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে। এই ভাষণ এখন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, যা শুনলে বাঙালি মাত্রই শিহরিত হয়।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন সংগ্রামী নারী, বাংলার স্নিগ্ধ নারী। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সবার সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করে ঘাতকের দল। তবে ফজিলাতুন্নেছা বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে-আদর্শে, শক্তি এবং মমতাময়ীরূপে বাংলার ঘরে ঘরে। ৯২তম জন্মদিনে বাঙালির এই স্বপ্নজয়ের সারথির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
একজন সাধারণ গৃহিণী হয়েও বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা উজ্জ্বল। তিনি বাঙালির স্বপ্নজয়ের একজন সারথি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে নয়, সংসারের অন্তরালে থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন দক্ষ নীরব সংগঠকরূপে।
সাংসারিক নানা টানাপোড়েন মোকাবিলা করে দুর্দিনে আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করেছেন। আজীবন ছায়ার মতো পাশে থেকে স্বামী শেখ মুজিবকে অধিষ্ঠিত করেছেন হিমালয়সম আসনে।
এভাবেই ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া ফজিলাতুন্নেছা বাংলার মানুষের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের।
অন্তরালের প্রেরণাদায়ী স্ত্রীকে বঙ্গবন্ধু ডাকতেন ‘রেণু’ বলে। মাত্র ১১ বছর বয়সে কিশোর শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এ বিষয়ে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘আমার যখন বিবাহ হয়, তখন আমার বয়স বার-তের বছর হতে পারে।...রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধ হয় তিন বছর হবে।’
এদিকে বিয়ে হলেও শেখ মুজিবের এন্ট্রান্স পাসের পর মূলত তাঁদের সংসারজীবন শুরু হয়। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। আর তখন বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে সময় কাটত শেখ ফজিলাতুন্নেছার।
পড়াশোনায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা বড় ডিগ্রিধারী ছিলেন না, কিন্তু মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে বড় হৃদয়ের অধিকারী। দুর্দিনে মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ও আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। সব সময় দেশের প্রয়োজনকেই বড় করে দেখতেন তিনি। নিজে শয্যাশায়ী থেকেও স্বামীকে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গায় আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি; বরং উৎসাহ দিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার কাজে যান।...আল্লাহর উপরে আমার ভার ছেড়ে দিন।’
শৈশবে মা-বাবাকে হারানোর পর ফজিলাতুন্নেছা বেড়ে ওঠেন দাদা শেখ কাশেমের কাছে। তাঁকে মাতৃস্নেহে আগলে রাখেন চাচি এবং পরে শাশুড়ি শেখ মুজিবের মা সায়েরা খাতুন। পিতার অভাব বুঝতে দেননি বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানও।
সূক্ষ্ম প্রতিভাসম্পন্ন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল এই নারী জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লেখার ক্ষেত্রেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ দিয়েছেন। স্ত্রীর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ এক অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বলেন, ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি।
জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলে-মেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে।’
শেখ ফজিলাতুন্নেছা প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় দেখা করার সময় বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করতেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ শুনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের তা জানাতেন বেগম মুজিব। কারাগারে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেও সহযোগিতা করতেন তিনি।
একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন তিনি। তাঁর বাড়িতে কোনো বিলাসী আসবাব ছিল না, ছিল না তাঁর কোনো অহংবোধ। ছেলেমেয়েকেও গড়েছেন সেভাবেই। পালন করে গেছেন পিতা-মাতা উভয়ের কর্তব্য।
তবে ইতিহাসে এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে খুব সামান্যই; অথচ নেপথ্যে থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বেই বিশ্বস্ত সারথির মতো অশেষ ক্লেশ স্বীকার করেও বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন ও পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন; বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর পতনোন্মুখ আইয়ুব খান টিকে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকের যে প্রস্তাব দেন, সে ব্যাপারে বেগম মুজিব যে ভূমিকা নেন, তা ছিল ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কারান্তরীণ স্বামীর প্যারোলে মুক্তির চেয়ে আন্দোলনের সাফল্য ও ব্যক্তি মুজিবের মর্যাদা রক্ষাই ছিল তাঁর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন, কিন্তু আলোচনার শর্ত হিসেবে ‘নিঃশর্ত মুক্তি’র পক্ষে দৃঢ় থাকার জন্য বঙ্গবন্ধুকে জেলখানায় চিরকুট পাঠিয়েছিলেন বেগম মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বেগম মুজিব যে কতটা প্রভাবশালী অনুঘটকের মতো কাজ করেছিলেন, তা আরেকটি ঘটনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়। ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জনসভা ঘিরে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মুজিব কি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন? চারদিকে টান টান উত্তেজনা। কী বলবেন তিনি? ছাত্ররা চায় তিনি ওই দিনই স্বাধীনতা ঘোষণা করুন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে, তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে অনুরোধ করেছেন, সবকিছু শেষ করে দেবেন না। ‘অপারেশন ব্লিৎস’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে: বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে উপস্থিত জনতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে; রেসকোর্স ময়দানের আকাশে সে জন্য চক্কর দিচ্ছে সামরিক হেলিকপ্টার।
বঙ্গবন্ধুর শরীরও অসুস্থ, ঈষৎ জ্বর। কিন্তু বেগম মুজিব ছিলেন ধীর, স্থির। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘...এই মানুষগুলির জন্য তোমার মনে যা আসবে, সেটাই তুমি বলবা।’ এরপরই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন তাঁর অনবদ্য ঐতিহাসিক ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। যে ভাষণের জন্য তিনি স্বীকৃতি পেলেন ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে। এই ভাষণ এখন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, যা শুনলে বাঙালি মাত্রই শিহরিত হয়।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন সংগ্রামী নারী, বাংলার স্নিগ্ধ নারী। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সবার সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করে ঘাতকের দল। তবে ফজিলাতুন্নেছা বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে-আদর্শে, শক্তি এবং মমতাময়ীরূপে বাংলার ঘরে ঘরে। ৯২তম জন্মদিনে বাঙালির এই স্বপ্নজয়ের সারথির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মানুষ স্বভাবতই স্মৃতিকাতর। মার্চ মাস এলে আমিও স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। মনে পড়ে, একাত্তরের উত্তাল মার্চের দিনগুলোর কথা এবং পরের ৯ মাসের কথা। একাত্তরের গণহত্যা কেমন ভয়ংকর আর বীভৎস ছিল, তা আমাদের সবারই জানা। মেহেরুন্নেসা নামে এক নারী কবিতা লিখতেন। তাঁর কথা কেউ এখন আর মনে করে না। গণহত্যার
১৪ ঘণ্টা আগেগাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ছয় সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, তবে এটি সত্যিকারের যুদ্ধবিরতি বলার চেয়ে বরং ‘অগ্নিকাণ্ড হ্রাস করা’ বলা বেশি যথাযথ হবে। এখনো বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, যা যেকোনো পরিস্থিতিতেই যথেষ্ট উদ্বেগজনক। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্রের মতে, ১৯ জানুয়ারির পর থেকে
১৪ ঘণ্টা আগে৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন। কন্যাদের উন্নয়নের এমন দিনে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে শিশুদের আর্তনাদের চিত্র ছিল নিরাপত্তাহীন জীবনের প্রশ্নের আরেক নাম। গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলোতে
১৪ ঘণ্টা আগেআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির খবরগুলোর ভিড়ে দুর্নীতির একটি খবর যেকোনো সচেতন মানুষকে হতবিহ্বল করে তুলতে পারে। সিলেটের কানাইঘাটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (ইউএফপিএ) পদে কর্মরত মো. জাহাঙ্গীর আলম একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও ১৭ বছরে বাড়ি-গাড়িসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন
১৪ ঘণ্টা আগে