নাজনীন আহমেদ
বৈশ্বিক মরণব্যাধি কোভিড-১৯ বা করোনা গত দেড় বছরে বিশ্বব্যাপী যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এর আগে কোনো মহামারিকালে এমন হয়নি। কারণ, এখন পৃথিবী বিচ্ছিন্ন নয়। এক প্রান্তের ঘটনা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে এবং মানুষকে নাড়া দিতে বেশি সময় লাগে না।
আমরা সবাই এখন জানি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার টিকা। আর এটিও জানা আছে যে সারা দুনিয়ায় টিকা নিয়ে নানা রকম বৈষম্য চলছে। ধনী দেশের বেশির ভাগ মানুষই যেখানে ইতিমধ্যে টিকার আওতায় চলে এসেছে, দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের ১০ শতাংশ মানুষকেও এখনো টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ নানাভাবে চেষ্টা করছে টিকার আওতায় আনতে। এই মুহূর্তে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তার পরও জনবহুল এই দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে আরও অনেক টিকা লাগবে। তাই খুবই জরুরি হচ্ছে সতর্ক থাকা, যেন টিকার কোনো অপচয় না হয়। আমরা যদি টিকার অপচয় না করি, তাহলে বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার সুরক্ষা দেওয়া যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সেখানকার কিছু কিছু রাজ্যে যেমন ঝাড়খন্ডে টিকার অপচয় ৩৭.৩ শতাংশ। যেখানে বিশ্বের সব মানুষের জন্য টিকাপ্রাপ্তি এখনো অনিশ্চিত, সেখানে এরূপ অপচয় খুবই দুঃখজনক। আবার ভারতের কেরালা রাজ্যে টিকার অপচয় তো হয়ইনি, বরং এখানকার সাফল্য শতভাগের বেশি। প্রশ্ন আসতে পারে, শতভাগের বেশি সাফল্য কী
করে সম্ভব?
সাধারণভাবে টিকার একটি অ্যাম্পুল থেকে যে কয়টি টিকা দেওয়া সম্ভব, তার চেয়েও একটু বেশি ওষুধ থাকে। এ জন্য যে অ্যাম্পুল থেকে সিরিঞ্জে টিকার ওষুধ ভরার সময় কিছু কমবেশি হতে পারে। দক্ষতার সঙ্গে দেওয়া গেলে একটি অ্যাম্পুলের গায়ে যা লেখা থাকে, তার চেয়েও টিকা বেশি দেওয়া সম্ভব।
কেরালা রাজ্যের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরা সেটাই করেছেন। ফলে তাঁদের দেওয়া অ্যাম্পুল থেকে যেখানে ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬০ ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব ছিল, সেখানে তাঁরা দিতে পেরেছেন ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ শট।
কেরালা রাজ্যের এই সাফল্য থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। ১০০ শতাংশের ওপরে সফলতা লাভ সম্ভব না হলেও অন্তত অপচয় যেন না হয়, তার চেষ্টা তো আমরা করতেই পারি। যেহেতু প্রয়োজনীয়সংখ্যক টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এক বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে এর অপচয় একেবারেই কাম্য নয়। তাই টিকার অপচয় রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি। টিকার অপচয় রোধে এর সংরক্ষণ, পরিবহন ও টিকাদানের যথাযথ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা খুবই জরুরি। বিভিন্ন এলাকায় টিকাদানকর্মীদের দক্ষতার দিকে যেমন মনোযোগ দিতে হবে, তেমনি টিকা সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। আবার কোথাও অ্যাম্পুল খোলার পর কোনো কারণে টিকা দেওয়া না গেলে অথবা টিকার অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সেই প্রস্তুতিও থাকা দরকার। যেমন কোনো এলাকায় এরূপ অবস্থা যদি তৈরি হয়, তাহলে দ্রুত মাইকিং করে লোকজনকে এক জায়গায় জড়ো করে টিকা দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের এই গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা স্থানে টিকা সংরক্ষণ এবং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পরিবহনের সময় উপযুক্ত যানবাহন খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম—এমন বিশেষ যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। আবার টিকাদানকেন্দ্রে টিকা সংরক্ষণ করতে হয় অনুরূপ ঠান্ডা জায়গায়। টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারলে তা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে যেমন সহায়ক হবে, তেমনি অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক হবে। কারণ, যত দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনার ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারব আমরা, ততই অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব হবে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়া। তাই উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে আগানো গেলে আগামী কয়েক মাস ধরে যে টিকাদান কর্মসূচি চলবে, তা বেশিসংখ্যক মানুষের উপকারে আসবে, সম্পদের সাশ্রয় হবে। বিষয়টি জরুরি, তাই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি।
লেখক: কান্ট্রি ইকোনমিস্ট, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)
বৈশ্বিক মরণব্যাধি কোভিড-১৯ বা করোনা গত দেড় বছরে বিশ্বব্যাপী যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এর আগে কোনো মহামারিকালে এমন হয়নি। কারণ, এখন পৃথিবী বিচ্ছিন্ন নয়। এক প্রান্তের ঘটনা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে এবং মানুষকে নাড়া দিতে বেশি সময় লাগে না।
আমরা সবাই এখন জানি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার টিকা। আর এটিও জানা আছে যে সারা দুনিয়ায় টিকা নিয়ে নানা রকম বৈষম্য চলছে। ধনী দেশের বেশির ভাগ মানুষই যেখানে ইতিমধ্যে টিকার আওতায় চলে এসেছে, দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের ১০ শতাংশ মানুষকেও এখনো টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ নানাভাবে চেষ্টা করছে টিকার আওতায় আনতে। এই মুহূর্তে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তার পরও জনবহুল এই দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে আরও অনেক টিকা লাগবে। তাই খুবই জরুরি হচ্ছে সতর্ক থাকা, যেন টিকার কোনো অপচয় না হয়। আমরা যদি টিকার অপচয় না করি, তাহলে বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার সুরক্ষা দেওয়া যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সেখানকার কিছু কিছু রাজ্যে যেমন ঝাড়খন্ডে টিকার অপচয় ৩৭.৩ শতাংশ। যেখানে বিশ্বের সব মানুষের জন্য টিকাপ্রাপ্তি এখনো অনিশ্চিত, সেখানে এরূপ অপচয় খুবই দুঃখজনক। আবার ভারতের কেরালা রাজ্যে টিকার অপচয় তো হয়ইনি, বরং এখানকার সাফল্য শতভাগের বেশি। প্রশ্ন আসতে পারে, শতভাগের বেশি সাফল্য কী
করে সম্ভব?
সাধারণভাবে টিকার একটি অ্যাম্পুল থেকে যে কয়টি টিকা দেওয়া সম্ভব, তার চেয়েও একটু বেশি ওষুধ থাকে। এ জন্য যে অ্যাম্পুল থেকে সিরিঞ্জে টিকার ওষুধ ভরার সময় কিছু কমবেশি হতে পারে। দক্ষতার সঙ্গে দেওয়া গেলে একটি অ্যাম্পুলের গায়ে যা লেখা থাকে, তার চেয়েও টিকা বেশি দেওয়া সম্ভব।
কেরালা রাজ্যের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরা সেটাই করেছেন। ফলে তাঁদের দেওয়া অ্যাম্পুল থেকে যেখানে ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬০ ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব ছিল, সেখানে তাঁরা দিতে পেরেছেন ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ শট।
কেরালা রাজ্যের এই সাফল্য থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। ১০০ শতাংশের ওপরে সফলতা লাভ সম্ভব না হলেও অন্তত অপচয় যেন না হয়, তার চেষ্টা তো আমরা করতেই পারি। যেহেতু প্রয়োজনীয়সংখ্যক টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এক বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে এর অপচয় একেবারেই কাম্য নয়। তাই টিকার অপচয় রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি। টিকার অপচয় রোধে এর সংরক্ষণ, পরিবহন ও টিকাদানের যথাযথ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা খুবই জরুরি। বিভিন্ন এলাকায় টিকাদানকর্মীদের দক্ষতার দিকে যেমন মনোযোগ দিতে হবে, তেমনি টিকা সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। আবার কোথাও অ্যাম্পুল খোলার পর কোনো কারণে টিকা দেওয়া না গেলে অথবা টিকার অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সেই প্রস্তুতিও থাকা দরকার। যেমন কোনো এলাকায় এরূপ অবস্থা যদি তৈরি হয়, তাহলে দ্রুত মাইকিং করে লোকজনকে এক জায়গায় জড়ো করে টিকা দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের এই গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা স্থানে টিকা সংরক্ষণ এবং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পরিবহনের সময় উপযুক্ত যানবাহন খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম—এমন বিশেষ যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। আবার টিকাদানকেন্দ্রে টিকা সংরক্ষণ করতে হয় অনুরূপ ঠান্ডা জায়গায়। টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারলে তা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে যেমন সহায়ক হবে, তেমনি অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক হবে। কারণ, যত দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনার ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারব আমরা, ততই অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব হবে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়া। তাই উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে আগানো গেলে আগামী কয়েক মাস ধরে যে টিকাদান কর্মসূচি চলবে, তা বেশিসংখ্যক মানুষের উপকারে আসবে, সম্পদের সাশ্রয় হবে। বিষয়টি জরুরি, তাই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি।
লেখক: কান্ট্রি ইকোনমিস্ট, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)
রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৩ ঘণ্টা আগেদেশে প্রতিবছর বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের সময় মাঝে মাঝে সংবাদ চোখে পড়ে যে প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়ছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে, খাল ও জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, নির্মাণস্থলে নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এমনকি কোনো কোনো প্রকল্প গ্রহণের ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব...
৩ ঘণ্টা আগেপাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
৩ ঘণ্টা আগে১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
১ দিন আগে