এই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্যম ও সামাজিক চেতনা মৃত নয়। জনগণ এখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে পারে। শুধু প্রয়োজন, এই চেতনার সাংগঠনিক রূপ দেওয়া। প্রয়োজন গণতন্ত্রের একটি নতুন সংজ্ঞা, যা জনগণকে কেবল ভোটার হিসেবে নয়, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখবে।
বিভুরঞ্জন সরকার
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই। এই এক বছরের হিসাবনিকাশ অনেকেই করতে শুরু করেছেন—কী চেয়ে কী পেলাম। এক বছর আগে যে গণ-অভ্যুত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তা নিছক একটি সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এমন একটি সামাজিক বিস্ফোরণ, যেখানে বহুদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, বঞ্চনা, অসন্তোষ এবং অবদমন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। এমন বিস্ফোরণ রাজনৈতিক অঙ্গনে হুটহাট ঘটে না। ’২৪-এর অভ্যুত্থান ছিল মূলত ছাত্রদের নেতৃত্বে নানা সামাজিক শক্তির সম্মিলিত উদ্যোগ, যেখানে রাজনৈতিক দল শুধু প্রান্তিক চরিত্রে অবস্থান করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তা কি সত্যি কোনো গণমুখী রাষ্ট্র গঠনের পথে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে? নাকি আবার পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি?
এই প্রশ্নগুলো খুব জরুরি। কারণ, গণ-অভ্যুত্থান কোনো ফাঁকা আবেগের নাম নয়। এটা একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক মুহূর্ত, যেখানে জনগণ তাদের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করে। তারা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয় প্রবেশ করতে চায়, রাষ্ট্রের গতিপথ নির্ধারণে অংশ নিতে চায়। এক বছর পেরিয়ে এসে প্রশ্ন, সেই সুযোগ কি তারা পেয়েছে?
গণ-অভ্যুত্থান তো আসলে হয়েছিল মানুষের মধ্যে নানামুখী অসন্তুষ্টির ফলে। এই অসন্তুষ্টি ছিল ভোটাধিকার হরণ, উন্নয়নের নামে লুটপাট, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমনপীড়ন, হত্যা, গুম, প্রশাসনিক দুর্নীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। মানুষ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, জীবন দিয়েছে, ভবিষ্যৎ বিপন্ন করেছে। বিনিময়ে তারা চেয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সমতা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সেই জনগণের অংশগ্রহণ ছিল সামান্য। বরং এটাকে বলা যায়, পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরই একধরনের রদবদল।
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কতটা গণতান্ত্রিক ছিল, সেটা নিয়ে লম্বা বিতর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন সমন্বয়ক, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও কিছু রাজনৈতিক নেতার বোঝাপড়ার মাধ্যমেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি নতুন সরকার। যারা আগে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, তাদের একটি বড় অংশ সরে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের জায়গায় নতুন যারা এসেছে, তারা ক্ষমতার খেলায় সমানভাবে পারদর্শী না হলেও তারা মূলত সেই পুরোনো শাসনব্যবস্থারই কোনো না কোনোভাবে সুবিধাভোগী বা সুবিধাবঞ্চিত। শাসকের শুধু মুখাবয়ব বদলেছে, শাসনের চরিত্র বদলায়নি।
এখানেই প্রশ্ন, গণ-অভ্যুত্থান কি তাহলে ব্যর্থ হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব এত সহজ বা এক কথায় দেওয়া ঠিক নয়। কারণ, এই অভ্যুত্থান অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি রাজনৈতিক পরিপক্বতার বিষয় আমাদের সামনে এনেছে। জনগণ অন্তত এটা বুঝিয়েছে যে রাষ্ট্র যদি নাগরিকের সম্মান রক্ষা না করে, তবে জনগণ নিজেরাই পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে পারে, তারা ক্ষমতাবানদের একচ্ছত্র দাপট কিছুকাল মেনে নিলেও চিরকাল মেনে নেয় না।
জুলাই আন্দোলনের অবশ্যই ব্যর্থতা রয়েছে। বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এই যে জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তা রূপ পায়নি বা হাতছাড়া হয়েছে। অভ্যুত্থান একটি প্রবল রাজনৈতিক ঝড়ের মতো এসে, রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর জমে থাকা আগের ভোগদখলকারীদের ইমারতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই ফাঁকা জায়গায় গণমানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক কাঠামো না গড়ে, পুরোনো ধারাতেই চুনকাম শুরু হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে একধরনের হিসাবি রাজনীতি।
যেসব ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, মফস্বলের মানুষ এই আন্দোলনের চালিকাশক্তি ছিল, তারাই এখন সবচেয়ে উপেক্ষিত। আমরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন এবং কার্যক্রম লক্ষ করি, তাহলে দেখব এই সামাজিক শক্তিগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বরং সরকার গঠনে একটি পরিষ্কার ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ নীতি কাজ করেছে। এর মানে হলো, সরকার নিজেই ঠিক করেছে কারা গ্রহণযোগ্য এবং কারা নয়। যার ফলে সত্যিকারের কোনো সামাজিক দাবিদারেরা জায়গা পাননি, বরং কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা নমনীয় ‘সুশীল’ ব্যক্তিরা জায়গা পেয়েছেন।
ফলে দেশে আবার একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিকে সামাজিক শক্তিগুলো রাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র নিজের মতো করে সুবিধাজনক অংশীদার বেছে নিচ্ছে, যারা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়বদ্ধতাগুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলে না। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একধরনের দমননীতি সমান্তরালভাবে চলতে শুরু করেছে। প্রতিবাদী কণ্ঠ দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রশাসন, পুলিশ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অথবা রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম। আবার কেউ কেউ যখন রাষ্ট্রের মৌলিক অবস্থান অর্থাৎ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, তখন তাকেও সরকার স্বাগত জানাচ্ছে অথবা জায়গা করে দিচ্ছে শুধু রাজনৈতিক সুবিধার জন্য।
এই দ্বিচারিতা সামাজিক আন্দোলনের ভবিষ্যতের জন্য এক অশনিসংকেত। গণ-অভ্যুত্থানের সময় যাঁরা সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন হতাশ। তাঁরা হয় নিষ্ক্রিয়, নয়তো মব-শক্তির অংশ হয়ে উঠছেন। কারণ তাঁরা দেখছেন, যুক্তির জায়গা নেই, অংশগ্রহণের জায়গা নেই, ন্যায়ের জায়গা নেই। ফলে অনেকে রাস্তায় সরাসরি প্রতিশোধ বা জবরদস্তির পথে হাঁটছেন। এই পরিস্থিতিতে মবের উত্থান আর মবকে এলিটের ছায়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা এখন বাস্তব সত্য।
এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ, রাষ্ট্রযন্ত্র যখন যুক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু সুবিধাজনক কণ্ঠগুলোকেই জায়গা দেয়, তখন গণতন্ত্র শুধু আওড়ানো বুলি হয়ে যায়। তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে এলিটনির্ভর, সুবিধাবাদী এবং একরকম মুখোশধারী আধিপত্যের প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ নাগরিক, বঞ্চিত গোষ্ঠী, প্রান্তিক মানুষ বা বিকল্প মতধারার কেউ থাকতে পারে না। গণতন্ত্র তখন একটি লোকদেখানো সাজসজ্জামাত্র হয়ে দাঁড়ায়।
অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাটা ছিল অনেক বড়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে ছাত্ররা রাজপথে এসেছিল, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করেছিল, তারা ছিল ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধি। তারা এমন কোনো রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র ছিল না, যাদের অতীত কলঙ্কিত ইতিহাস রয়েছে। তারা এসেছিল এক নতুন রাজনৈতিক কল্পনা নিয়ে। তারা চেয়েছিল রাষ্ট্র যেন নাগরিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়—শুধু ভোটের সময় নয়, প্রতিদিনের জীবনে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে এই আন্দোলনের কাঠামো রাজনৈতিকভাবে পরিণত হয়ে উঠতে পারেনি, সংগঠিত হতে পারেনি এবং সে জন্যই শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত হতে না পারায় তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।
এটা ঠিক, সামাজিক আন্দোলনের একটা ধরন থাকে। সেটা হয় সময় নেয়, কিংবা দ্রুত রূপান্তরিত হয়।
তবে এটা ঠিক, যে রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেটা কাজে লাগালে সুফল পাওয়া যেত। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে এই সামাজিক শক্তিগুলোকে মূলধারায় আনতে পারত। চাইলে রাজনৈতিক সংস্কারে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারত। সেটা না করে সরকার আবার সেই পুরোনো রাস্তা ধরেছে—ক্ষমতার কেন্দ্রে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বসানো, যারা প্রথাগত ক্ষমতার ভাষা বোঝে এবং গণ-আবেগ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।
এই নীতির ফলে দেশে একটা গভীর রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। যারা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে, তারা এখন রাষ্ট্র থেকে ছিটকে পড়েছে। যারা মব শক্তি, তারা আবার নানা জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। একদিকে নিরাশা, অন্যদিকে উগ্রতা—এই দুইয়ের মধ্যেই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ হাঁটছে। রাজনৈতিক সংস্কারের যে সম্ভাবনা ছিল, তা অনেকটাই সীমিত হয়ে গেছে।
তবু আশাবাদের একটা জায়গা আছে। এই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্যম ও সামাজিক চেতনা মৃত নয়। জনগণ এখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে পারে। শুধু প্রয়োজন, এই চেতনার সাংগঠনিক রূপ দেওয়া। প্রয়োজন গণতন্ত্রের একটি নতুন সংজ্ঞা, যা জনগণকে কেবল ভোটার হিসেবে নয়, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখবে। প্রয়োজন এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে এলিটের বোঝাপড়ার বাইরে সাধারণ মানুষও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
গণ-অভ্যুত্থান কোনো শেষ ব্যবস্থা নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া। এটি রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পথ তৈরি করে। এটি রাষ্ট্রকে বাধ্য করে নতুন প্রশ্ন শুনতে, নতুন দাবির মুখোমুখি হতে। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে না, যদি আমাদের সামনে যেসব প্রশ্ন এসেছে—আমরা যদি সেগুলোর উত্তর বা সমাধান দিতে পারি। প্রশ্নগুলো হচ্ছে, কীভাবে এই রাজনৈতিক মুহূর্তকে গণতন্ত্রে পরিণত করব? এলিট বনাম জনতা, কেন্দ্র বনাম প্রান্ত, ক্ষমতা বনাম অধিকার—এই দ্বন্দ্বগুলোকে কীভাবে আমরা সমন্বয় করব?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের অবশ্যই খুঁজে নিতে হবে। সমাজকে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র কেবল একটি কাঠামো নয়, এটি একটি ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সরকারকে বুঝতে হবে, এলিটদের মধ্যে সমঝোতা করে রাষ্ট্র টিকবে না। বরং জনগণের প্রকৃত স্বার্থকে ধারণ না করলে, আবার অন্য একটি অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সুতরাং এখনই সময়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের ভেতরে গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর। এখনই সময় সামাজিক শক্তিগুলোকে সংগঠিতভাবে রাজনৈতিক কাঠামোয় যুক্ত করার। সুযোগ বারবার আসে না। যদি এবার সুযোগ আমরা হারাই, তাহলে রাষ্ট্রের কাঠামো আর জনগণের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে পুষিয়ে দেওয়া কঠিন হবে।
রাষ্ট্রকে এবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে না দিলে ইতিহাস আবার সাক্ষ্য দেবে—গণ-অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তিত ব্যবস্থায় গণমানুষের জায়গা তৈরি হয়নি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই। এই এক বছরের হিসাবনিকাশ অনেকেই করতে শুরু করেছেন—কী চেয়ে কী পেলাম। এক বছর আগে যে গণ-অভ্যুত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তা নিছক একটি সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এমন একটি সামাজিক বিস্ফোরণ, যেখানে বহুদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, বঞ্চনা, অসন্তোষ এবং অবদমন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছে। এমন বিস্ফোরণ রাজনৈতিক অঙ্গনে হুটহাট ঘটে না। ’২৪-এর অভ্যুত্থান ছিল মূলত ছাত্রদের নেতৃত্বে নানা সামাজিক শক্তির সম্মিলিত উদ্যোগ, যেখানে রাজনৈতিক দল শুধু প্রান্তিক চরিত্রে অবস্থান করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তা কি সত্যি কোনো গণমুখী রাষ্ট্র গঠনের পথে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে? নাকি আবার পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি?
এই প্রশ্নগুলো খুব জরুরি। কারণ, গণ-অভ্যুত্থান কোনো ফাঁকা আবেগের নাম নয়। এটা একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক মুহূর্ত, যেখানে জনগণ তাদের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করে। তারা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয় প্রবেশ করতে চায়, রাষ্ট্রের গতিপথ নির্ধারণে অংশ নিতে চায়। এক বছর পেরিয়ে এসে প্রশ্ন, সেই সুযোগ কি তারা পেয়েছে?
গণ-অভ্যুত্থান তো আসলে হয়েছিল মানুষের মধ্যে নানামুখী অসন্তুষ্টির ফলে। এই অসন্তুষ্টি ছিল ভোটাধিকার হরণ, উন্নয়নের নামে লুটপাট, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমনপীড়ন, হত্যা, গুম, প্রশাসনিক দুর্নীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। মানুষ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, জীবন দিয়েছে, ভবিষ্যৎ বিপন্ন করেছে। বিনিময়ে তারা চেয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সমতা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সেই জনগণের অংশগ্রহণ ছিল সামান্য। বরং এটাকে বলা যায়, পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরই একধরনের রদবদল।
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কতটা গণতান্ত্রিক ছিল, সেটা নিয়ে লম্বা বিতর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন সমন্বয়ক, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও কিছু রাজনৈতিক নেতার বোঝাপড়ার মাধ্যমেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি নতুন সরকার। যারা আগে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, তাদের একটি বড় অংশ সরে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের জায়গায় নতুন যারা এসেছে, তারা ক্ষমতার খেলায় সমানভাবে পারদর্শী না হলেও তারা মূলত সেই পুরোনো শাসনব্যবস্থারই কোনো না কোনোভাবে সুবিধাভোগী বা সুবিধাবঞ্চিত। শাসকের শুধু মুখাবয়ব বদলেছে, শাসনের চরিত্র বদলায়নি।
এখানেই প্রশ্ন, গণ-অভ্যুত্থান কি তাহলে ব্যর্থ হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব এত সহজ বা এক কথায় দেওয়া ঠিক নয়। কারণ, এই অভ্যুত্থান অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি রাজনৈতিক পরিপক্বতার বিষয় আমাদের সামনে এনেছে। জনগণ অন্তত এটা বুঝিয়েছে যে রাষ্ট্র যদি নাগরিকের সম্মান রক্ষা না করে, তবে জনগণ নিজেরাই পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে পারে, তারা ক্ষমতাবানদের একচ্ছত্র দাপট কিছুকাল মেনে নিলেও চিরকাল মেনে নেয় না।
জুলাই আন্দোলনের অবশ্যই ব্যর্থতা রয়েছে। বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এই যে জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তা রূপ পায়নি বা হাতছাড়া হয়েছে। অভ্যুত্থান একটি প্রবল রাজনৈতিক ঝড়ের মতো এসে, রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর জমে থাকা আগের ভোগদখলকারীদের ইমারতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই ফাঁকা জায়গায় গণমানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক কাঠামো না গড়ে, পুরোনো ধারাতেই চুনকাম শুরু হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে একধরনের হিসাবি রাজনীতি।
যেসব ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, মফস্বলের মানুষ এই আন্দোলনের চালিকাশক্তি ছিল, তারাই এখন সবচেয়ে উপেক্ষিত। আমরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন এবং কার্যক্রম লক্ষ করি, তাহলে দেখব এই সামাজিক শক্তিগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বরং সরকার গঠনে একটি পরিষ্কার ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ নীতি কাজ করেছে। এর মানে হলো, সরকার নিজেই ঠিক করেছে কারা গ্রহণযোগ্য এবং কারা নয়। যার ফলে সত্যিকারের কোনো সামাজিক দাবিদারেরা জায়গা পাননি, বরং কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা নমনীয় ‘সুশীল’ ব্যক্তিরা জায়গা পেয়েছেন।
ফলে দেশে আবার একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিকে সামাজিক শক্তিগুলো রাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র নিজের মতো করে সুবিধাজনক অংশীদার বেছে নিচ্ছে, যারা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়বদ্ধতাগুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলে না। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একধরনের দমননীতি সমান্তরালভাবে চলতে শুরু করেছে। প্রতিবাদী কণ্ঠ দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রশাসন, পুলিশ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অথবা রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম। আবার কেউ কেউ যখন রাষ্ট্রের মৌলিক অবস্থান অর্থাৎ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, তখন তাকেও সরকার স্বাগত জানাচ্ছে অথবা জায়গা করে দিচ্ছে শুধু রাজনৈতিক সুবিধার জন্য।
এই দ্বিচারিতা সামাজিক আন্দোলনের ভবিষ্যতের জন্য এক অশনিসংকেত। গণ-অভ্যুত্থানের সময় যাঁরা সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন হতাশ। তাঁরা হয় নিষ্ক্রিয়, নয়তো মব-শক্তির অংশ হয়ে উঠছেন। কারণ তাঁরা দেখছেন, যুক্তির জায়গা নেই, অংশগ্রহণের জায়গা নেই, ন্যায়ের জায়গা নেই। ফলে অনেকে রাস্তায় সরাসরি প্রতিশোধ বা জবরদস্তির পথে হাঁটছেন। এই পরিস্থিতিতে মবের উত্থান আর মবকে এলিটের ছায়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা এখন বাস্তব সত্য।
এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ, রাষ্ট্রযন্ত্র যখন যুক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু সুবিধাজনক কণ্ঠগুলোকেই জায়গা দেয়, তখন গণতন্ত্র শুধু আওড়ানো বুলি হয়ে যায়। তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে এলিটনির্ভর, সুবিধাবাদী এবং একরকম মুখোশধারী আধিপত্যের প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সাধারণ নাগরিক, বঞ্চিত গোষ্ঠী, প্রান্তিক মানুষ বা বিকল্প মতধারার কেউ থাকতে পারে না। গণতন্ত্র তখন একটি লোকদেখানো সাজসজ্জামাত্র হয়ে দাঁড়ায়।
অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাটা ছিল অনেক বড়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে ছাত্ররা রাজপথে এসেছিল, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করেছিল, তারা ছিল ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধি। তারা এমন কোনো রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র ছিল না, যাদের অতীত কলঙ্কিত ইতিহাস রয়েছে। তারা এসেছিল এক নতুন রাজনৈতিক কল্পনা নিয়ে। তারা চেয়েছিল রাষ্ট্র যেন নাগরিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়—শুধু ভোটের সময় নয়, প্রতিদিনের জীবনে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে এই আন্দোলনের কাঠামো রাজনৈতিকভাবে পরিণত হয়ে উঠতে পারেনি, সংগঠিত হতে পারেনি এবং সে জন্যই শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত হতে না পারায় তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।
এটা ঠিক, সামাজিক আন্দোলনের একটা ধরন থাকে। সেটা হয় সময় নেয়, কিংবা দ্রুত রূপান্তরিত হয়।
তবে এটা ঠিক, যে রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেটা কাজে লাগালে সুফল পাওয়া যেত। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে এই সামাজিক শক্তিগুলোকে মূলধারায় আনতে পারত। চাইলে রাজনৈতিক সংস্কারে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারত। সেটা না করে সরকার আবার সেই পুরোনো রাস্তা ধরেছে—ক্ষমতার কেন্দ্রে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বসানো, যারা প্রথাগত ক্ষমতার ভাষা বোঝে এবং গণ-আবেগ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।
এই নীতির ফলে দেশে একটা গভীর রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। যারা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে, তারা এখন রাষ্ট্র থেকে ছিটকে পড়েছে। যারা মব শক্তি, তারা আবার নানা জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। একদিকে নিরাশা, অন্যদিকে উগ্রতা—এই দুইয়ের মধ্যেই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ হাঁটছে। রাজনৈতিক সংস্কারের যে সম্ভাবনা ছিল, তা অনেকটাই সীমিত হয়ে গেছে।
তবু আশাবাদের একটা জায়গা আছে। এই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্যম ও সামাজিক চেতনা মৃত নয়। জনগণ এখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে পারে। শুধু প্রয়োজন, এই চেতনার সাংগঠনিক রূপ দেওয়া। প্রয়োজন গণতন্ত্রের একটি নতুন সংজ্ঞা, যা জনগণকে কেবল ভোটার হিসেবে নয়, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখবে। প্রয়োজন এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে এলিটের বোঝাপড়ার বাইরে সাধারণ মানুষও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
গণ-অভ্যুত্থান কোনো শেষ ব্যবস্থা নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া। এটি রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পথ তৈরি করে। এটি রাষ্ট্রকে বাধ্য করে নতুন প্রশ্ন শুনতে, নতুন দাবির মুখোমুখি হতে। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে না, যদি আমাদের সামনে যেসব প্রশ্ন এসেছে—আমরা যদি সেগুলোর উত্তর বা সমাধান দিতে পারি। প্রশ্নগুলো হচ্ছে, কীভাবে এই রাজনৈতিক মুহূর্তকে গণতন্ত্রে পরিণত করব? এলিট বনাম জনতা, কেন্দ্র বনাম প্রান্ত, ক্ষমতা বনাম অধিকার—এই দ্বন্দ্বগুলোকে কীভাবে আমরা সমন্বয় করব?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের অবশ্যই খুঁজে নিতে হবে। সমাজকে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র কেবল একটি কাঠামো নয়, এটি একটি ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সরকারকে বুঝতে হবে, এলিটদের মধ্যে সমঝোতা করে রাষ্ট্র টিকবে না। বরং জনগণের প্রকৃত স্বার্থকে ধারণ না করলে, আবার অন্য একটি অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সুতরাং এখনই সময়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের ভেতরে গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর। এখনই সময় সামাজিক শক্তিগুলোকে সংগঠিতভাবে রাজনৈতিক কাঠামোয় যুক্ত করার। সুযোগ বারবার আসে না। যদি এবার সুযোগ আমরা হারাই, তাহলে রাষ্ট্রের কাঠামো আর জনগণের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে পুষিয়ে দেওয়া কঠিন হবে।
রাষ্ট্রকে এবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে না দিলে ইতিহাস আবার সাক্ষ্য দেবে—গণ-অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তিত ব্যবস্থায় গণমানুষের জায়গা তৈরি হয়নি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিবিসি বাংলার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘৫ আগস্টে যাত্রাবাড়ীতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫২ জন আন্দোলনকারী নিহত’ শিরোনামে যে বর্ণনা তুলে ধরেছে, তা সামাজিক মাধ্যমে যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা নিয়েও এক নতুন বিতর্ক উত্থাপন করেছে। প্রতিবেদনটি শুধু ৫ আগস্টের ঘটনাকে আলাদা করে তুলে ধরেছে
২ ঘণ্টা আগেজোসেফ গোয়েবলস ছিলেন হিটলারের নাৎসি জার্মানির তথ্য ও প্রচারবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি ছিলেন মিথ্যাকে ‘সত্য’ বানানোর এক ভয়ংকর কৌশলের রূপকার। গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, ‘একটি বড় মিথ্যাকে বারবার বললে মানুষ একসময় সেটিকে সত্য বলে মেনে নেয়।’ তাঁর এই নীতি দিয়েই নাৎসি জার্মানি কোটি মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেছিল...
৩ ঘণ্টা আগেগত বছর জুলাইয়ের আন্দোলনে একটি স্লোগান শুনে আমি পুলকিত বোধ করেছিলাম। স্লোগানটা ছিল—‘কোটা না মেধা মেধা, মেধা মেধা’। এই স্লোগানের আরেকটি সমার্থক প্রবাদ বাক্য আছে আমাদের সমাজে—‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’। আপনি কার ছেলে বা মেয়ে, কার নাতি বা নাতনি অর্থাৎ পিতা-মাতা বা দাদা-দাদির পরিচয় সূত্রে আপনি...
৩ ঘণ্টা আগেসেই উনিশ শ সাতাশি সালের এক শীতের সকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরে ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়েছিল একদল বিদেশি শিক্ষার্থী। কুবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল এরা। ছুটির দিনে ভ্রমণে যাচ্ছিল। দুটো বাস প্রস্তুত। কয়েকজন শিক্ষক আর অনেকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বাস ছুটল তাগানরোগের দিকে...
৩ ঘণ্টা আগে