স্বপ্না রেজা
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের ‘বাংলা’ ভাষা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন এ ভূখণ্ডের জনগণের মাতৃভাষা হিসেবে ‘বাংলা’কে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমরা তাই বাংলায় কথা বলি। শুধু তা-ই নয়, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের এক মহা মূলমন্ত্র, বড় হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জন, তার সূত্রপাত অনেকটা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই, এমনটাই দাবি কমবেশি সবার। যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক নৃশংসতার শিকার হয়েছেন, সর্বস্বান্ত হয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবিচ্ছিন্ন, অত্যন্ত শ্রদ্ধার, বড় প্রাপ্তি তো বটেই। তাঁরা ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা করে দেখে না। বরং ভাষা আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা আখ্যা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, দাবি করে, বিশ্বাস করে। তাঁরা মনে করে যে ভাষা বাংলা না হলে বাঙালি জাতি হয় কী করে। আবার বাঙালি জাতি না হলে তার দেশটা বাংলাদেশ হয় কী করে। গণিতের মতো পরিষ্কার যে, এক বিষয় আরেক বিষয়কে প্রস্ফুটিত করেছে, যুক্ত করেছে। স্বচ্ছতা এনে দিয়েছে। যদিও প্রাদেশিক চেতনাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা দ্বিমত প্রকাশ করে থাকেন। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যারা বাঙালি জাতির নির্দিষ্ট ভূখণ্ড জয়ের বিষয়টির বিরোধিতা করেছে, জয় মেনে নিতে পারেনি কখনো, এমনকি এখনো পারছে না, তারা কেন বাংলা ও বাঙালি জাতি এবং তার স্বাধীনতাকে মেনে নেবে? মেনে নেওয়ার কথা নয়।
যাহোক, প্রথমে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল বাঙালি জাতির। তারপর স্বাধিকারের দাবির মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, যার পরিণামে স্বাধীনতা অর্জন ও একটি পতাকা লাভ। বাংলা ভাষা ছিল বাঙালি জাতির বড় অস্ত্র, সব ধরনের আন্দোলনের ও বিজয়ের। বাঙালিরা তাঁর হৃদয়ের আকুতি, আবেগ, রাগ-অভিমান, অভিযোগ, ক্ষোভ প্রকাশ সবকিছুই তার নিজস্ব ভাষা বাংলায় করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই কেবল নয়, বাংলা ভাষা স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ার বিষয়কে সহজ করেছে, দেশকে সবার অনুকূলে পৌঁছে দিয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়, সম্পর্ক তৈরি করেছে। ঐক্য বুঝতে শিখিয়েছে। ফলে নিজের ভাষা ব্যবহার করে জনগণ অফিস-আদালতে যেতে পারে, শিক্ষা গ্রহণ করে, আয় কর্মসংস্থানে কর্মক্ষম হয়, সেবা গ্রহণ ও সেবা প্রদান প্রক্রিয়া চলে, ব্যক্তির মালিকানার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আরও কত কিছুই না হয়। যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে হৃদয়ের ভাষা বাংলা হলেও তাকে উর্দু ভাষায় সব আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হতো। ফলে তার সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি গৌণ হতো। ভাষা তাকে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের স্থান নির্ধারণ করে দিত।
এটা না বললেই নয় যে, এখন যে সংস্কারের মৌসুম চলছে, সেটাও সম্ভব হচ্ছে এই দেশ একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন ও এ দেশের মানুষের ভাষা বাংলা হওয়ার কারণেই, যে ভাষা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অর্জিত হয়েছে। একাত্তরে দেশটা স্বাধীন না হলে, দেশের মানুষের ভাষা বাংলা না হলে দেশটা নিয়ে চিন্তা, চেতনার মানুষের আবির্ভাব হতো না। পয়দা তো দূরের কথা। সোজা কথা, সেই সুযোগ মিলত না। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান কখনোই সেই সুযোগের পথ তৈরি হতে দিত না। ভুক্তভোগীদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের অবস্থা সম্পর্কে যথার্থ চিত্র উপস্থাপন করতে পারত। যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের কেউ কেউ দলীয় রাজনৈতিক চেতনায় মোহাচ্ছন্ন।
প্রতিটি দেশের, প্রতিটি ভাষার এক-একটা ইতিহাস থাকে। সেই ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানতে দেওয়া, পড়তে শেখানো উচিত। প্রকৃত ইতিহাস দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি তার নাগরিককে শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্বশীল করে তোলে। এককথায় দেশপ্রেম জাগ্রত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই দেশের ইতিহাস রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছেমতো রদবদল করেছে, ক্ষমতাসীন হয়ে থাকবার উপযোগী করে রেখেছে। যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তখন সে নিজের মনের মতো করে ইতিহাস তৈরি করে মুদ্রিত করেছে। ফলে সঠিক ইতিহাস নিয়ে সংশয়ের অবতারণা হয়েছে। সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই, যেটা বাংলাদেশে হয়েছে।
আর ভাষা কিন্তু কেবল মুখের বুলি নয়, ভাষা একটি দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, চেতনা, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমকে ধারণ করে, সংরক্ষণ করে, উজ্জীবিত করে। জনগণের ভেতর ঐক্য তৈরির অন্যতম কৌশল হলো তার নিজের ভাষা। না বললেই নয়, যুগ যুগ ধরে এই কৌশল অবলম্বনে অনেক দুর্বলতা, অবহেলা ও অমনোযোগিতা ছিল বইকি। বছরে একটি মাসকে ভাষার মাস হিসেবে বিবেচনার মধ্যেই ছিল ভাষার প্রতি দায়িত্বশীল দেখানোর অন্যতম আয়োজন, এমনকি দায়বদ্ধতা, যা এখনো অব্যাহত। একজন বলতে চাইল, বাংলা ভাষা মানেই কি কেবল বাংলা ভাষায় বই প্রকাশ এবং সেইসব বই নিয়ে বছরে একবার মেলার আয়োজন? বোধ হয় তা নয়। আমরা যে বাঙালি জাতি এবং এই জাতির যে কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সেটার তো শুদ্ধ ও ব্যাপক চর্চা দরকার, উদ্যাপন দরকার। করছি কী? উল্টো, জাতির ভেতর ধর্মের অজুহাতে বিভেদ তৈরি করার প্রবণতা চলে আসছে। আর ভাষা কি কেবল মুখের? বোধ হয় না। ভাষা তো থাকে শরীরে ও পোশাকেও। সেটাওবা কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসরণ করা হয়?
একটা দেশ তখনই উন্নত হতে পারে যখন সেই দেশের নিজস্ব ভাষার প্রয়োগ ও ব্যবহার যথাযথভাবে মর্যাদার সঙ্গে করা হবে। একটা সুস্থ সমাজ গঠন ও তার স্থায়িত্ব লাভ সম্ভব হয় প্রাথমিক পর্যায়ে মূলত ভাষার মাধ্যমেই। শব্দ উচ্চারণ বা কথা বলতে শেখার মধ্য দিয়ে একটি শিশু পরিবারে তার অবস্থান বুঝতে পারে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। সে যে ভাষাভাষীর হোক না কেন। জীবনাচরণের পাশাপাশি শিল্প, সংস্কৃতিতে বাংলা ভাষার যথার্থ ব্যবহার ও প্রয়োগ আদৌ হচ্ছে কি না কিংবা কতটা যত্নের সঙ্গে তা করা দরকার, সেই বিষয়ে কখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ হয়েছে বলে জানা নেই। হলে ভালো এবং তার প্রচার হওয়া জরুরি। একজন বাঙালি বাংলা ভাষায় নিজেকে যতটা পরিপূর্ণ ও সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারে, ভিন্ন ভাষায় তা পারা সম্ভব নয়। তিনি যতই ভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হোন না কেন। তা ছাড়া, ভাষার ভিন্নতার কারণে অন্যের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে না, হবে না সহজ যোগাযোগ ও সমন্বয়।
মাতৃভাষার অধিকার আমাদের শত্রুমুক্ত হতে, সম্পূর্ণ স্বাধীন জাতি হতে শক্তি জুগিয়েছে, একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের পতাকা দিতে সহায়ক হয়েছে। আসুন, সেই বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে, চেতনায় ধারণ করে বাংলা ভাষার ব্যবহারে যত্নশীল হই। ’৫২ ও ’৭১-এর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হই। ’৫২ ও ’৭১, এই মাটিতে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হতে বাঙালি জাতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আসুন, আমরা তার ইতিহাস অক্ষুণ্ন রেখে দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে বাড়িয়ে দিই।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের ‘বাংলা’ ভাষা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন এ ভূখণ্ডের জনগণের মাতৃভাষা হিসেবে ‘বাংলা’কে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমরা তাই বাংলায় কথা বলি। শুধু তা-ই নয়, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের এক মহা মূলমন্ত্র, বড় হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জন, তার সূত্রপাত অনেকটা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই, এমনটাই দাবি কমবেশি সবার। যাঁরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক নৃশংসতার শিকার হয়েছেন, সর্বস্বান্ত হয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবিচ্ছিন্ন, অত্যন্ত শ্রদ্ধার, বড় প্রাপ্তি তো বটেই। তাঁরা ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা করে দেখে না। বরং ভাষা আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা আখ্যা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, দাবি করে, বিশ্বাস করে। তাঁরা মনে করে যে ভাষা বাংলা না হলে বাঙালি জাতি হয় কী করে। আবার বাঙালি জাতি না হলে তার দেশটা বাংলাদেশ হয় কী করে। গণিতের মতো পরিষ্কার যে, এক বিষয় আরেক বিষয়কে প্রস্ফুটিত করেছে, যুক্ত করেছে। স্বচ্ছতা এনে দিয়েছে। যদিও প্রাদেশিক চেতনাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা দ্বিমত প্রকাশ করে থাকেন। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যারা বাঙালি জাতির নির্দিষ্ট ভূখণ্ড জয়ের বিষয়টির বিরোধিতা করেছে, জয় মেনে নিতে পারেনি কখনো, এমনকি এখনো পারছে না, তারা কেন বাংলা ও বাঙালি জাতি এবং তার স্বাধীনতাকে মেনে নেবে? মেনে নেওয়ার কথা নয়।
যাহোক, প্রথমে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল বাঙালি জাতির। তারপর স্বাধিকারের দাবির মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, যার পরিণামে স্বাধীনতা অর্জন ও একটি পতাকা লাভ। বাংলা ভাষা ছিল বাঙালি জাতির বড় অস্ত্র, সব ধরনের আন্দোলনের ও বিজয়ের। বাঙালিরা তাঁর হৃদয়ের আকুতি, আবেগ, রাগ-অভিমান, অভিযোগ, ক্ষোভ প্রকাশ সবকিছুই তার নিজস্ব ভাষা বাংলায় করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই কেবল নয়, বাংলা ভাষা স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ার বিষয়কে সহজ করেছে, দেশকে সবার অনুকূলে পৌঁছে দিয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়, সম্পর্ক তৈরি করেছে। ঐক্য বুঝতে শিখিয়েছে। ফলে নিজের ভাষা ব্যবহার করে জনগণ অফিস-আদালতে যেতে পারে, শিক্ষা গ্রহণ করে, আয় কর্মসংস্থানে কর্মক্ষম হয়, সেবা গ্রহণ ও সেবা প্রদান প্রক্রিয়া চলে, ব্যক্তির মালিকানার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আরও কত কিছুই না হয়। যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে হৃদয়ের ভাষা বাংলা হলেও তাকে উর্দু ভাষায় সব আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হতো। ফলে তার সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি গৌণ হতো। ভাষা তাকে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের স্থান নির্ধারণ করে দিত।
এটা না বললেই নয় যে, এখন যে সংস্কারের মৌসুম চলছে, সেটাও সম্ভব হচ্ছে এই দেশ একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন ও এ দেশের মানুষের ভাষা বাংলা হওয়ার কারণেই, যে ভাষা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অর্জিত হয়েছে। একাত্তরে দেশটা স্বাধীন না হলে, দেশের মানুষের ভাষা বাংলা না হলে দেশটা নিয়ে চিন্তা, চেতনার মানুষের আবির্ভাব হতো না। পয়দা তো দূরের কথা। সোজা কথা, সেই সুযোগ মিলত না। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান কখনোই সেই সুযোগের পথ তৈরি হতে দিত না। ভুক্তভোগীদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের অবস্থা সম্পর্কে যথার্থ চিত্র উপস্থাপন করতে পারত। যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের কেউ কেউ দলীয় রাজনৈতিক চেতনায় মোহাচ্ছন্ন।
প্রতিটি দেশের, প্রতিটি ভাষার এক-একটা ইতিহাস থাকে। সেই ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানতে দেওয়া, পড়তে শেখানো উচিত। প্রকৃত ইতিহাস দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি তার নাগরিককে শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্বশীল করে তোলে। এককথায় দেশপ্রেম জাগ্রত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই দেশের ইতিহাস রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছেমতো রদবদল করেছে, ক্ষমতাসীন হয়ে থাকবার উপযোগী করে রেখেছে। যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তখন সে নিজের মনের মতো করে ইতিহাস তৈরি করে মুদ্রিত করেছে। ফলে সঠিক ইতিহাস নিয়ে সংশয়ের অবতারণা হয়েছে। সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই, যেটা বাংলাদেশে হয়েছে।
আর ভাষা কিন্তু কেবল মুখের বুলি নয়, ভাষা একটি দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, চেতনা, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমকে ধারণ করে, সংরক্ষণ করে, উজ্জীবিত করে। জনগণের ভেতর ঐক্য তৈরির অন্যতম কৌশল হলো তার নিজের ভাষা। না বললেই নয়, যুগ যুগ ধরে এই কৌশল অবলম্বনে অনেক দুর্বলতা, অবহেলা ও অমনোযোগিতা ছিল বইকি। বছরে একটি মাসকে ভাষার মাস হিসেবে বিবেচনার মধ্যেই ছিল ভাষার প্রতি দায়িত্বশীল দেখানোর অন্যতম আয়োজন, এমনকি দায়বদ্ধতা, যা এখনো অব্যাহত। একজন বলতে চাইল, বাংলা ভাষা মানেই কি কেবল বাংলা ভাষায় বই প্রকাশ এবং সেইসব বই নিয়ে বছরে একবার মেলার আয়োজন? বোধ হয় তা নয়। আমরা যে বাঙালি জাতি এবং এই জাতির যে কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সেটার তো শুদ্ধ ও ব্যাপক চর্চা দরকার, উদ্যাপন দরকার। করছি কী? উল্টো, জাতির ভেতর ধর্মের অজুহাতে বিভেদ তৈরি করার প্রবণতা চলে আসছে। আর ভাষা কি কেবল মুখের? বোধ হয় না। ভাষা তো থাকে শরীরে ও পোশাকেও। সেটাওবা কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসরণ করা হয়?
একটা দেশ তখনই উন্নত হতে পারে যখন সেই দেশের নিজস্ব ভাষার প্রয়োগ ও ব্যবহার যথাযথভাবে মর্যাদার সঙ্গে করা হবে। একটা সুস্থ সমাজ গঠন ও তার স্থায়িত্ব লাভ সম্ভব হয় প্রাথমিক পর্যায়ে মূলত ভাষার মাধ্যমেই। শব্দ উচ্চারণ বা কথা বলতে শেখার মধ্য দিয়ে একটি শিশু পরিবারে তার অবস্থান বুঝতে পারে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। সে যে ভাষাভাষীর হোক না কেন। জীবনাচরণের পাশাপাশি শিল্প, সংস্কৃতিতে বাংলা ভাষার যথার্থ ব্যবহার ও প্রয়োগ আদৌ হচ্ছে কি না কিংবা কতটা যত্নের সঙ্গে তা করা দরকার, সেই বিষয়ে কখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ হয়েছে বলে জানা নেই। হলে ভালো এবং তার প্রচার হওয়া জরুরি। একজন বাঙালি বাংলা ভাষায় নিজেকে যতটা পরিপূর্ণ ও সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারে, ভিন্ন ভাষায় তা পারা সম্ভব নয়। তিনি যতই ভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হোন না কেন। তা ছাড়া, ভাষার ভিন্নতার কারণে অন্যের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে না, হবে না সহজ যোগাযোগ ও সমন্বয়।
মাতৃভাষার অধিকার আমাদের শত্রুমুক্ত হতে, সম্পূর্ণ স্বাধীন জাতি হতে শক্তি জুগিয়েছে, একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের পতাকা দিতে সহায়ক হয়েছে। আসুন, সেই বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে, চেতনায় ধারণ করে বাংলা ভাষার ব্যবহারে যত্নশীল হই। ’৫২ ও ’৭১-এর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হই। ’৫২ ও ’৭১, এই মাটিতে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হতে বাঙালি জাতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আসুন, আমরা তার ইতিহাস অক্ষুণ্ন রেখে দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে বাড়িয়ে দিই।
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
২ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
২ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে