তোফায়েল আহমেদ

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন।
শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি এ দেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে স্বাধীনতার চেতনা।
প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।” (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যাঁরা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শামসুল হক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মার্চের ১১ থেকে ১৫—এই পাঁচ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন নেতারা। পাঁচ দিনের কারাজীবনের স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’—নানা ধরনের স্লোগান। এই সময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম, হক সাহেব ঐ দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব’।” (পৃষ্ঠা-৯৩, ৯৪)। বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! তখন কে জানত যে, ’৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন! কারণ তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন, লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি; একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।
’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গুলি ছুড়লে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালীরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সঙ্গে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (পৃষ্ঠা-১৯৮)। ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেশের গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামে গ্রামে মিছিল হতো। সেই মিছিলে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মনে আছে তখনকার স্লোগান, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হউক,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘আমার ভাষা তোমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’।
’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সন্ধ্যা আইন জারি করে। আমরা সন্ধ্যা আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে বিগত ১৭ বছরের সব দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীরা অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিষ্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম। কালো পতাকা উত্তোলন, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রভাতফেরি, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শহীদ মিনারের পাদদেশে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। ’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আজ একনায়কত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক-কৃষকের জনপ্রিয় ১১ দফার সংগ্রাম আজ তাই মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবল বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলাভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।’ শহীদ আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, আলমগীর, আনোয়ারা, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ ১১ দফা আন্দোলনের ৩৯ জন বীর শহীদ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের সার্থক উত্তরসূরি। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা তো নয়, যেন জনসমুদ্র। জনসমাবেশের তুলনায় সেদিনের পল্টন ময়দানের আয়তন কম মনে হয়েছে। চতুর্দিক থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে চরমপত্র ঘোষণা করে সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আগামী ৩রা মার্চের পূর্বে দেশবাসীর সার্বিক অধিকার কায়েম, আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার, ১১ দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সংবাদপত্র ও বাক-স্বাধীনতার উপর হতে সর্বপ্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভায় সভাপতির ভাষণে যা বলেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দিচ্ছি— ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯ সালে এই দিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইত্যাদি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল হতে নূতনতর যেসব বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে সেসব বিতর্ক ও এদের উত্থাপকদের সতর্ক করে বলছি, বাংলাদেশে জন্মজন্মান্তর বাস করেও যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে শিখে নাই, তাদের স্বরূপ আজ উদঘাটিত। এই শ্রেণীর লোকেরা বেঈমান। বাংলায় বেঈমানের কোনো স্থান হবে না এবং স্বাধিকারের সর্বাত্মক সংগ্রাম নিয়ে যদি তারা চিরন্তন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ঘুঁটি চালানোর প্রয়াস পান তবে আত্মরক্ষার পুরাতন প্রথা পরিত্যাগ করে প্রতি আক্রমণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলার অন্যতম বন্দী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলছি, এই মামলায় বন্দী আর কারো গায়ে যদি একটি আঁচড়ও লাগে তবে দেশব্যাপী দাবানল জ্বলে উঠবে। আর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলছি, শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে কেউ যেন নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না করেন।’ স্বৈরশাসকের প্রতি চরমপত্র ঘোষণার পর সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ২৩ তারিখ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ’৫২ ও ’৬৯-এর রক্তস্নাত পথ বেয়ে আসে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেসব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করবো। যে ষড়যন্ত্রকারী দুশমনের দল ১৯৫২ সাল হতে শুরু করে বারবার বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে হত্যা করেছে। যারা ২৩ বছর ধরে বাঙালির রক্ত-মাংস শুষে খেয়েছে, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন বানচালের জন্য, বাঙালীদের চিরতরে গোলাম করে রাখার জন্য তারা আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বলছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হইও না। স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী হতে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিবো। কিন্তু স্বাধিকারের দাবির প্রশ্নে কোন আপোষ নাই।’ অমর একুশে পালনে শহীদ মিনারে ব্যক্ত করা জাতির জনকের এই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি।
একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করছে। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রদানেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহান একুশের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশ বেগবান রাখবে—এই হোক এবারের একুশের অঙ্গীকার।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ।

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন।
শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি এ দেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে স্বাধীনতার চেতনা।
প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।” (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যাঁরা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শামসুল হক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মার্চের ১১ থেকে ১৫—এই পাঁচ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন নেতারা। পাঁচ দিনের কারাজীবনের স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’—নানা ধরনের স্লোগান। এই সময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম, হক সাহেব ঐ দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব’।” (পৃষ্ঠা-৯৩, ৯৪)। বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! তখন কে জানত যে, ’৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন! কারণ তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন, লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি; একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।
’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গুলি ছুড়লে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালীরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সঙ্গে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (পৃষ্ঠা-১৯৮)। ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেশের গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামে গ্রামে মিছিল হতো। সেই মিছিলে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মনে আছে তখনকার স্লোগান, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হউক,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘আমার ভাষা তোমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’।
’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সন্ধ্যা আইন জারি করে। আমরা সন্ধ্যা আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে বিগত ১৭ বছরের সব দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীরা অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিষ্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম। কালো পতাকা উত্তোলন, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রভাতফেরি, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শহীদ মিনারের পাদদেশে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। ’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আজ একনায়কত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক-কৃষকের জনপ্রিয় ১১ দফার সংগ্রাম আজ তাই মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবল বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলাভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।’ শহীদ আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, আলমগীর, আনোয়ারা, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ ১১ দফা আন্দোলনের ৩৯ জন বীর শহীদ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের সার্থক উত্তরসূরি। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা তো নয়, যেন জনসমুদ্র। জনসমাবেশের তুলনায় সেদিনের পল্টন ময়দানের আয়তন কম মনে হয়েছে। চতুর্দিক থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে চরমপত্র ঘোষণা করে সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আগামী ৩রা মার্চের পূর্বে দেশবাসীর সার্বিক অধিকার কায়েম, আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার, ১১ দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সংবাদপত্র ও বাক-স্বাধীনতার উপর হতে সর্বপ্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভায় সভাপতির ভাষণে যা বলেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দিচ্ছি— ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯ সালে এই দিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইত্যাদি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল হতে নূতনতর যেসব বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে সেসব বিতর্ক ও এদের উত্থাপকদের সতর্ক করে বলছি, বাংলাদেশে জন্মজন্মান্তর বাস করেও যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে শিখে নাই, তাদের স্বরূপ আজ উদঘাটিত। এই শ্রেণীর লোকেরা বেঈমান। বাংলায় বেঈমানের কোনো স্থান হবে না এবং স্বাধিকারের সর্বাত্মক সংগ্রাম নিয়ে যদি তারা চিরন্তন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ঘুঁটি চালানোর প্রয়াস পান তবে আত্মরক্ষার পুরাতন প্রথা পরিত্যাগ করে প্রতি আক্রমণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলার অন্যতম বন্দী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলছি, এই মামলায় বন্দী আর কারো গায়ে যদি একটি আঁচড়ও লাগে তবে দেশব্যাপী দাবানল জ্বলে উঠবে। আর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলছি, শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে কেউ যেন নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না করেন।’ স্বৈরশাসকের প্রতি চরমপত্র ঘোষণার পর সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ২৩ তারিখ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ’৫২ ও ’৬৯-এর রক্তস্নাত পথ বেয়ে আসে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেসব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করবো। যে ষড়যন্ত্রকারী দুশমনের দল ১৯৫২ সাল হতে শুরু করে বারবার বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে হত্যা করেছে। যারা ২৩ বছর ধরে বাঙালির রক্ত-মাংস শুষে খেয়েছে, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন বানচালের জন্য, বাঙালীদের চিরতরে গোলাম করে রাখার জন্য তারা আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বলছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হইও না। স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী হতে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিবো। কিন্তু স্বাধিকারের দাবির প্রশ্নে কোন আপোষ নাই।’ অমর একুশে পালনে শহীদ মিনারে ব্যক্ত করা জাতির জনকের এই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি।
একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করছে। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রদানেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহান একুশের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশ বেগবান রাখবে—এই হোক এবারের একুশের অঙ্গীকার।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ।
তোফায়েল আহমেদ

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন।
শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি এ দেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে স্বাধীনতার চেতনা।
প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।” (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যাঁরা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শামসুল হক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মার্চের ১১ থেকে ১৫—এই পাঁচ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন নেতারা। পাঁচ দিনের কারাজীবনের স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’—নানা ধরনের স্লোগান। এই সময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম, হক সাহেব ঐ দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব’।” (পৃষ্ঠা-৯৩, ৯৪)। বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! তখন কে জানত যে, ’৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন! কারণ তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন, লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি; একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।
’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গুলি ছুড়লে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালীরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সঙ্গে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (পৃষ্ঠা-১৯৮)। ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেশের গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামে গ্রামে মিছিল হতো। সেই মিছিলে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মনে আছে তখনকার স্লোগান, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হউক,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘আমার ভাষা তোমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’।
’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সন্ধ্যা আইন জারি করে। আমরা সন্ধ্যা আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে বিগত ১৭ বছরের সব দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীরা অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিষ্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম। কালো পতাকা উত্তোলন, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রভাতফেরি, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শহীদ মিনারের পাদদেশে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। ’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আজ একনায়কত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক-কৃষকের জনপ্রিয় ১১ দফার সংগ্রাম আজ তাই মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবল বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলাভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।’ শহীদ আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, আলমগীর, আনোয়ারা, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ ১১ দফা আন্দোলনের ৩৯ জন বীর শহীদ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের সার্থক উত্তরসূরি। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা তো নয়, যেন জনসমুদ্র। জনসমাবেশের তুলনায় সেদিনের পল্টন ময়দানের আয়তন কম মনে হয়েছে। চতুর্দিক থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে চরমপত্র ঘোষণা করে সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আগামী ৩রা মার্চের পূর্বে দেশবাসীর সার্বিক অধিকার কায়েম, আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার, ১১ দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সংবাদপত্র ও বাক-স্বাধীনতার উপর হতে সর্বপ্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভায় সভাপতির ভাষণে যা বলেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দিচ্ছি— ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯ সালে এই দিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইত্যাদি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল হতে নূতনতর যেসব বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে সেসব বিতর্ক ও এদের উত্থাপকদের সতর্ক করে বলছি, বাংলাদেশে জন্মজন্মান্তর বাস করেও যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে শিখে নাই, তাদের স্বরূপ আজ উদঘাটিত। এই শ্রেণীর লোকেরা বেঈমান। বাংলায় বেঈমানের কোনো স্থান হবে না এবং স্বাধিকারের সর্বাত্মক সংগ্রাম নিয়ে যদি তারা চিরন্তন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ঘুঁটি চালানোর প্রয়াস পান তবে আত্মরক্ষার পুরাতন প্রথা পরিত্যাগ করে প্রতি আক্রমণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলার অন্যতম বন্দী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলছি, এই মামলায় বন্দী আর কারো গায়ে যদি একটি আঁচড়ও লাগে তবে দেশব্যাপী দাবানল জ্বলে উঠবে। আর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলছি, শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে কেউ যেন নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না করেন।’ স্বৈরশাসকের প্রতি চরমপত্র ঘোষণার পর সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ২৩ তারিখ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ’৫২ ও ’৬৯-এর রক্তস্নাত পথ বেয়ে আসে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেসব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করবো। যে ষড়যন্ত্রকারী দুশমনের দল ১৯৫২ সাল হতে শুরু করে বারবার বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে হত্যা করেছে। যারা ২৩ বছর ধরে বাঙালির রক্ত-মাংস শুষে খেয়েছে, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন বানচালের জন্য, বাঙালীদের চিরতরে গোলাম করে রাখার জন্য তারা আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বলছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হইও না। স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী হতে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিবো। কিন্তু স্বাধিকারের দাবির প্রশ্নে কোন আপোষ নাই।’ অমর একুশে পালনে শহীদ মিনারে ব্যক্ত করা জাতির জনকের এই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি।
একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করছে। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রদানেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহান একুশের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশ বেগবান রাখবে—এই হোক এবারের একুশের অঙ্গীকার।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ।

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন।
শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি এ দেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে স্বাধীনতার চেতনা।
প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।” (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যাঁরা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শামসুল হক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মার্চের ১১ থেকে ১৫—এই পাঁচ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন নেতারা। পাঁচ দিনের কারাজীবনের স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’—নানা ধরনের স্লোগান। এই সময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম, হক সাহেব ঐ দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব’।” (পৃষ্ঠা-৯৩, ৯৪)। বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! তখন কে জানত যে, ’৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন! কারণ তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন, লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি; একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।
’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গুলি ছুড়লে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালীরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সঙ্গে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (পৃষ্ঠা-১৯৮)। ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেশের গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামে গ্রামে মিছিল হতো। সেই মিছিলে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মনে আছে তখনকার স্লোগান, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হউক,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘আমার ভাষা তোমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’।
’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সন্ধ্যা আইন জারি করে। আমরা সন্ধ্যা আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে বিগত ১৭ বছরের সব দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীরা অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিষ্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম। কালো পতাকা উত্তোলন, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রভাতফেরি, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শহীদ মিনারের পাদদেশে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। ’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আজ একনায়কত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক-কৃষকের জনপ্রিয় ১১ দফার সংগ্রাম আজ তাই মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবল বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলাভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।’ শহীদ আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, আলমগীর, আনোয়ারা, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ ১১ দফা আন্দোলনের ৩৯ জন বীর শহীদ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের সার্থক উত্তরসূরি। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা তো নয়, যেন জনসমুদ্র। জনসমাবেশের তুলনায় সেদিনের পল্টন ময়দানের আয়তন কম মনে হয়েছে। চতুর্দিক থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে চরমপত্র ঘোষণা করে সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আগামী ৩রা মার্চের পূর্বে দেশবাসীর সার্বিক অধিকার কায়েম, আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার, ১১ দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সংবাদপত্র ও বাক-স্বাধীনতার উপর হতে সর্বপ্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভায় সভাপতির ভাষণে যা বলেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দিচ্ছি— ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯ সালে এই দিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইত্যাদি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল হতে নূতনতর যেসব বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে সেসব বিতর্ক ও এদের উত্থাপকদের সতর্ক করে বলছি, বাংলাদেশে জন্মজন্মান্তর বাস করেও যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে শিখে নাই, তাদের স্বরূপ আজ উদঘাটিত। এই শ্রেণীর লোকেরা বেঈমান। বাংলায় বেঈমানের কোনো স্থান হবে না এবং স্বাধিকারের সর্বাত্মক সংগ্রাম নিয়ে যদি তারা চিরন্তন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ঘুঁটি চালানোর প্রয়াস পান তবে আত্মরক্ষার পুরাতন প্রথা পরিত্যাগ করে প্রতি আক্রমণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলার অন্যতম বন্দী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলছি, এই মামলায় বন্দী আর কারো গায়ে যদি একটি আঁচড়ও লাগে তবে দেশব্যাপী দাবানল জ্বলে উঠবে। আর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলছি, শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে কেউ যেন নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না করেন।’ স্বৈরশাসকের প্রতি চরমপত্র ঘোষণার পর সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ২৩ তারিখ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ’৫২ ও ’৬৯-এর রক্তস্নাত পথ বেয়ে আসে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেসব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করবো। যে ষড়যন্ত্রকারী দুশমনের দল ১৯৫২ সাল হতে শুরু করে বারবার বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে হত্যা করেছে। যারা ২৩ বছর ধরে বাঙালির রক্ত-মাংস শুষে খেয়েছে, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন বানচালের জন্য, বাঙালীদের চিরতরে গোলাম করে রাখার জন্য তারা আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বলছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হইও না। স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী হতে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিবো। কিন্তু স্বাধিকারের দাবির প্রশ্নে কোন আপোষ নাই।’ অমর একুশে পালনে শহীদ মিনারে ব্যক্ত করা জাতির জনকের এই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি।
একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করছে। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রদানেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহান একুশের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশ বেগবান রাখবে—এই হোক এবারের একুশের অঙ্গীকার।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৪ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৫ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৫ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৫ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৪ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৫ ঘণ্টা আগেহেনা শিকদার

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৪ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৫ ঘণ্টা আগেরিয়াদ হোসেন

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষাশহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাথা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৪ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৫ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৫ ঘণ্টা আগে