আমীন আল রশীদ
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকার যাতে বেশি দিন ক্ষমতায় না থাকে, সে বিষয়ে সোচ্চার বিএনপি। এমনকি সরকার যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোও নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে দলটি মনে করে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যত দ্রুত নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। কেননা, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না। কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে তারা মনে করে, দ্রুত নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ভরসা পাবেন। তাতে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঠিক হবে।
নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির এই তাড়ার পেছনে মূল কারণ বোধ হয় এই যে, তারা আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর এবং তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরসহ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে। আর যেহেতু এখন মাঠে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত এবং গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়ায় তাদের খুব দ্রুতই স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন, ফলে রাজনীতির স্বাভাবিক হিসাব অনুযায়ী বিএনপি মনে করছে এবং বিশ্বাস করছে যে নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপির সাম্প্রতিক দূরত্ব বেশ স্পষ্ট। কেননা, বিএনপি মনে করছে, মাঠের ও ভোটের রাজনীতিতে এখন জামায়াতকে না হলেও চলবে। ফলে তারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে মূলত তিন কারণে। ১. দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকার ও সরকারি দলের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতা-কর্মীরা ঘুরে দাঁড়াতে চান; ২. নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়বে। তৃণমূলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নানাবিধ জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাদের ভোট কমবে এবং ৩. নির্বাচন বিলম্বিত করার মধ্য দিয়ে সরকার তার পছন্দের লোকদের দিয়ে নতুন দল গঠন করিয়ে শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছে যে, জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের আসনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ৫ আগস্টের পরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি (যেখানেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতা রয়েছেন) একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। এ মাসের মাঝামাঝি সেই নতুন দলের ঘোষণা আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।
যখন কোনো দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি তথা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে, তখন সেটি ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। বিগত এক-এগারোর সময়েও এ রকম কিংস পার্টি গড়ে উঠেছিল। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি সেখান থেকে সরে আসেন।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে রাজনৈতিক দল গঠনের ভাবনা মাথায় রেখে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে যে সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়, সেখানেও ‘নাগরিক’ শব্দটি রয়েছে। কিন্তু নতুন এই দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে এখনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, দলের নাম যা-ই হোক না কেন, সেখানে ‘নাগরিক’ শব্দটি থাকবে।
এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে ‘নাগরিক’ শব্দযুক্ত একটি দল রয়েছে, সেটি হলো মাহমুদুর রহমান মান্নার ‘নাগরিক ঐক্য’। সুতরাং নতুন রাজনৈতিক দলের নাম যে নাগরিক ঐক্য বা নাগরিক শক্তি হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এই দলের নাম যা-ই হোক না কেন, কারা এই দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, সেটি এখন মোটামুটি স্পষ্ট।
শুরুতে অনেকের ধারণা ছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আলাদা আলাদা দল গঠন করবে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে যে, এ দুটি সংগঠনের নেতারাই একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং এই দলে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আখতার হোসেনসহ জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্রন্টলাইনে থাকা নেতাদের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ যুক্ত থাকবেন। সে কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দল গঠন করলে উপদেষ্টারা যেন সরকার থেকে বেরিয়ে দল গঠন করেন। না হলে এটি কিংস পার্টি হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা আরেক ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নতুন দলে যুক্ত হবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভাবনা আছে। কেননা, আগামী নির্বাচন যখনই হোক না কেন, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী নন—এমনও অনেকে যে নতুন দলে যুক্ত হবেন, এটিই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মানুষ কি নতুন কোনো দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে?
রাজনীতিতে একটি কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে, এবার হয়তো অতীতে ক্ষমতায় থাকা তিনটি দলের (বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি) বাইরে নতুন কেউ ক্ষমতায় আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারও হয়তো সেটিই চায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে কি নতুন এই দলকে কিংবা জামায়াতে ইসলামী অথবা যদি ইসলামি দলগুলো মিলে একটি জোটও করে, তার পরেও কি মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে? বিষয়টা হয়তো তত সহজ হবে না।
বিএনপি মনে করছে যে নির্বাচন দ্রুত হলেই তারা ক্ষমতায় চলে আসবে, সেই পথও খুব মসৃণ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি অংশ নিতে না-ও পারে; যদি কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হয়, তার পরও বিএনপির জন্য মাঠ যে খুব মসৃণ থাকবে, সেটি বলার সুযোগ নেই। কেননা, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে প্রধানত ইসলামি দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াত এবং তাদের নেতৃত্বে যদি কোনো জোট হয়, সেই জোট এবং ছাত্রদের নতুন দলকে মোকাবিলা করতে হবে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে জামায়াতের জোট হলে সেটি অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও তাদের বিরাট ভোটব্যাংক রয়েছে। ফলে তারাও যদি ইসলামি জোটকে সমর্থন দেয় এবং ছাত্রদের নতুন দলও যদি এই জোটের সঙ্গে এক হয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলে, সে ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য নির্বাচনী লড়াই অনেক কঠিন হবে। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই হয়তো সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের বৈঠক হয়েছে এবং তাঁরা ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছেন।
অতএব, ছাত্রদের নতুন দল আগামী নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেবে; এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে, নাকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট করে বিএনপিবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে যে, বিগত দিনে যেসব নির্বাচন তুলনামূলকভাবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেছে, সেই সব নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট এবং রাজনীতির যে সাধারণ হিসাব, তাতে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারুক বা না পারুক, তাদের যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট আছে বলে মনে করা হয়, সেই ভোটাররা কোথায় যাবেন? তাঁরা কাকে ভোট দেবেন? বিএনপিকে নাকি ছাত্রদের দল অথবা ইসলামি দলকে?
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকার যাতে বেশি দিন ক্ষমতায় না থাকে, সে বিষয়ে সোচ্চার বিএনপি। এমনকি সরকার যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোও নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে দলটি মনে করে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যত দ্রুত নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। কেননা, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না। কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে তারা মনে করে, দ্রুত নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ভরসা পাবেন। তাতে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঠিক হবে।
নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির এই তাড়ার পেছনে মূল কারণ বোধ হয় এই যে, তারা আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর এবং তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরসহ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে। আর যেহেতু এখন মাঠে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত এবং গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়ায় তাদের খুব দ্রুতই স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন, ফলে রাজনীতির স্বাভাবিক হিসাব অনুযায়ী বিএনপি মনে করছে এবং বিশ্বাস করছে যে নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপির সাম্প্রতিক দূরত্ব বেশ স্পষ্ট। কেননা, বিএনপি মনে করছে, মাঠের ও ভোটের রাজনীতিতে এখন জামায়াতকে না হলেও চলবে। ফলে তারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে মূলত তিন কারণে। ১. দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকার ও সরকারি দলের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতা-কর্মীরা ঘুরে দাঁড়াতে চান; ২. নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়বে। তৃণমূলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নানাবিধ জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাদের ভোট কমবে এবং ৩. নির্বাচন বিলম্বিত করার মধ্য দিয়ে সরকার তার পছন্দের লোকদের দিয়ে নতুন দল গঠন করিয়ে শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছে যে, জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের আসনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ৫ আগস্টের পরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি (যেখানেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতা রয়েছেন) একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। এ মাসের মাঝামাঝি সেই নতুন দলের ঘোষণা আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।
যখন কোনো দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি তথা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে, তখন সেটি ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। বিগত এক-এগারোর সময়েও এ রকম কিংস পার্টি গড়ে উঠেছিল। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি সেখান থেকে সরে আসেন।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে রাজনৈতিক দল গঠনের ভাবনা মাথায় রেখে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে যে সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়, সেখানেও ‘নাগরিক’ শব্দটি রয়েছে। কিন্তু নতুন এই দলের নাম কী হবে, সে বিষয়ে এখনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, দলের নাম যা-ই হোক না কেন, সেখানে ‘নাগরিক’ শব্দটি থাকবে।
এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে ‘নাগরিক’ শব্দযুক্ত একটি দল রয়েছে, সেটি হলো মাহমুদুর রহমান মান্নার ‘নাগরিক ঐক্য’। সুতরাং নতুন রাজনৈতিক দলের নাম যে নাগরিক ঐক্য বা নাগরিক শক্তি হবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এই দলের নাম যা-ই হোক না কেন, কারা এই দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, সেটি এখন মোটামুটি স্পষ্ট।
শুরুতে অনেকের ধারণা ছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আলাদা আলাদা দল গঠন করবে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে যে, এ দুটি সংগঠনের নেতারাই একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং এই দলে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আখতার হোসেনসহ জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্রন্টলাইনে থাকা নেতাদের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ যুক্ত থাকবেন। সে কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দল গঠন করলে উপদেষ্টারা যেন সরকার থেকে বেরিয়ে দল গঠন করেন। না হলে এটি কিংস পার্টি হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা আরেক ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নতুন দলে যুক্ত হবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভাবনা আছে। কেননা, আগামী নির্বাচন যখনই হোক না কেন, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী নন—এমনও অনেকে যে নতুন দলে যুক্ত হবেন, এটিই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মানুষ কি নতুন কোনো দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে?
রাজনীতিতে একটি কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে, এবার হয়তো অতীতে ক্ষমতায় থাকা তিনটি দলের (বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি) বাইরে নতুন কেউ ক্ষমতায় আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারও হয়তো সেটিই চায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে কি নতুন এই দলকে কিংবা জামায়াতে ইসলামী অথবা যদি ইসলামি দলগুলো মিলে একটি জোটও করে, তার পরেও কি মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে? বিষয়টা হয়তো তত সহজ হবে না।
বিএনপি মনে করছে যে নির্বাচন দ্রুত হলেই তারা ক্ষমতায় চলে আসবে, সেই পথও খুব মসৃণ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি অংশ নিতে না-ও পারে; যদি কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হয়, তার পরও বিএনপির জন্য মাঠ যে খুব মসৃণ থাকবে, সেটি বলার সুযোগ নেই। কেননা, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে প্রধানত ইসলামি দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াত এবং তাদের নেতৃত্বে যদি কোনো জোট হয়, সেই জোট এবং ছাত্রদের নতুন দলকে মোকাবিলা করতে হবে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে জামায়াতের জোট হলে সেটি অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও তাদের বিরাট ভোটব্যাংক রয়েছে। ফলে তারাও যদি ইসলামি জোটকে সমর্থন দেয় এবং ছাত্রদের নতুন দলও যদি এই জোটের সঙ্গে এক হয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলে, সে ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য নির্বাচনী লড়াই অনেক কঠিন হবে। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই হয়তো সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের বৈঠক হয়েছে এবং তাঁরা ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছেন।
অতএব, ছাত্রদের নতুন দল আগামী নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেবে; এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে, নাকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট করে বিএনপিবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে যে, বিগত দিনে যেসব নির্বাচন তুলনামূলকভাবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেছে, সেই সব নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট এবং রাজনীতির যে সাধারণ হিসাব, তাতে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারুক বা না পারুক, তাদের যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট আছে বলে মনে করা হয়, সেই ভোটাররা কোথায় যাবেন? তাঁরা কাকে ভোট দেবেন? বিএনপিকে নাকি ছাত্রদের দল অথবা ইসলামি দলকে?
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট। তিনি ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরপিবি)-এর প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেজয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে, সে ঘটনায় আর যাই হোক আক্কেলের কোনো পরিচয় দেখা যাচ্ছে না। সোজা কথায়, এটা বেআক্কেলি কর্মকাণ্ড। জয়পুরহাট ও রংপুরের নারী ফুটবল দলের মধ্যে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি।
৪ ঘণ্টা আগেজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) যে তদন্ত করেছে, ২৭ জানুয়ারি সে তদন্তের ৫৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে...
১ দিন আগেবাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি একটি অনন্য মাস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য যে পথ রচনা করে দিয়েছে, সেই পথই দেশকে পৌঁছে দিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। প্রকৃতপক্ষে এ দেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে সেই পথকে করেছে মসৃণ...
১ দিন আগে