বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে কিছু মানুষ শুধু নেতাই নন, তাঁরা হয়ে ওঠেন সময়ের প্রতিবিম্ব। ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান তেমনই একজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসক হিসেবে ডিগ্রি নিয়েও তিনি গোটা জীবন ব্যয় করেছেন শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ বা স্কপ গঠনের অন্যতম কারিগর তিনি। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন অনেক বছর ধরে। মে দিবসের প্রাক্কালে তাঁর সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার
মে দিবস সামনে। আপনি যদি বলেন, আমাদের কীভাবে শুরু করা উচিত?
আমার মতে, শুরুটা হওয়া উচিত ইতিহাস বোঝা দিয়ে। আজকাল অনেকেই মে দিবসকে শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখেন—লাল পতাকা, শোভাযাত্রা, বক্তৃতা। কিন্তু মে দিবস হচ্ছে এক ঐতিহাসিক শ্রমিক বিদ্রোহের প্রতীক, যা শিকাগোর হে মার্কেটের সেই রক্তাক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি নিয়ে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা মানবজাতির কর্মপরিবেশ বদলে দিতে চেয়েছিলেন। কাজেই মে দিবসের আবেদন শুধু স্মরণে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব প্রয়োগে যেতে হবে।
তাহলে আপনি কী ধরনের প্রস্তুতির কথা বলছেন?
প্রথমত, শ্রমিক সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। আজকের শ্রমিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা খাতে—গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন, কৃষি, সেবা খাত। অনেক জায়গায় ট্রেড ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয়, কোথাও আবার দমন-পীড়নের মুখে। মে দিবস সামনে রেখে এই অসংগঠিত শক্তিকে সংগঠনের আওতায় আনাই হবে বড় কাজ।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের বর্তমান সমস্যাগুলো নিয়ে মাঠে-ময়দানে আলোচনা করতে হবে—ন্যায্য মজুরি, ওভারটাইমে শোষণ, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ছাঁটাইয়ের হুমকি—এসব ইস্যু নিয়ে জনমত গড়া জরুরি কাজ।
বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
দুঃখজনকভাবে ট্রেড ইউনিয়ন আজ অনেকটাই প্রতীকী রূপে রয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক প্রভাব, আবার কোথাও মালিকপক্ষের চাপে সংগঠন ভেঙে পড়েছে। মে দিবসের আগে আমাদের দায়িত্ব হবে এই ইউনিয়নগুলোকে কার্যকরী করা, নেতৃত্বে সচেতনতা আনা। আমি বলি, ‘যেখানে শ্রমিক, সেখানেই সংগঠন’। এটা যদি বাস্তবে রূপ না নেয়, তাহলে মে দিবস কেবল গান-বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
আপনার কাছে মে দিবস মানে কী?
আমার কাছে মে দিবস হলো—সংগ্রামের শুরু, শেষ নয়।
চিকিৎসাবিদ্যার মতো একটি পেশা ছেড়ে আপনি শ্রমিক রাজনীতিতে এলেন—এটা তো অনেকটা ‘জীবন বদলে দেওয়া’ সিদ্ধান্ত। কেন এমন সিদ্ধান্ত?
এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে আসেনি। ১৯৬০-এর দশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় সমাজের চিত্র আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। দেখেছি, গার্মেন্টস ছিল না তখন, কিন্তু কলকারখানার শ্রমিকেরা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমজীবী-কর্মজীবীরা কী ভয়াবহ পরিবেশে কাজ করতেন। অন্যদিকে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ছাত্ররা অনেক সুবিধা পেতাম। প্রশ্ন জাগল—এই বৈষম্য কেন? তখন আমি বুঝলাম, চিকিৎসা দিয়ে শুধু শরীরের ক্ষত সারানো নয়, সমাজের ক্ষতও সারিয়ে তুলতে হবে। আর শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি ছাড়া সমাজের আরোগ্য অসম্ভব।
আপনাদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দর্শন ও পথচলা অন্যান্য সংগঠন থেকে কীভাবে আলাদা?
আমরা যেটা বলি, সেটা হলো—‘শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকের জন্য, কোনো দলের জন্য নয়’। বাংলাদেশে অনেক ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন আছে, যারা মূলত রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন। এতে করে শ্রমিকদের স্বার্থ বারবার দলীয় স্বার্থের বলি হয়। আমরা চাই এমন এক সংগঠন, যেখানে শ্রমিক তাঁর কর্মক্ষেত্র, জীবনমান ও মর্যাদা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সেই লক্ষ্যে কাজ করছে—নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং শ্রেণি-সচেতন সংগঠন হিসেবে।
আপনি প্রায় ছয় দশক ধরে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়ের মধ্যে কী কী বড় পরিবর্তন লক্ষ করেছেন?
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে অর্থনীতির কাঠামোতে। ৬০-এর দশকে আমরা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিল্প দেখেছি, ৮০-এর পরে উদারীকরণ, বিশ্বায়ন আর বেসরকারীকরণ। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শ্রমিক শুধু শ্রম নয়—আত্মসম্মানও হারাচ্ছেন। আগে শ্রমিকেরা সংগঠিত হতেন, দাবি জানাতেন, এখন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্র মিলে সংগঠনের পথটাই সংকুচিত করে ফেলেছে। আবার ডিজিটাল শ্রমিকের আবির্ভাবও হয়েছে, যাঁরা একেবারে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছেন।
নতুন প্রজন্মের শ্রমিকদের মধ্যে আপনি কী ধরনের মনোভাব দেখছেন? তাঁরা কি সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী?
এই প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের শ্রমিকেরা অনেক বেশি শিক্ষিত, সচেতন, কিন্তু একই সঙ্গে বিভ্রান্ত। তাঁরা ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের যুগে বাস করছেন। রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে অনেকটাই দূরে। কিন্তু যখন তাঁদের ওপর অন্যায় হয়—মজুরি না দেওয়া, ছাঁটাই, দুর্ঘটনা—তখন তাঁরা প্রতিবাদ করেন। এর মানে তাঁরা আগ্রহী, কিন্তু সংগঠনের পথটা তাঁদের কাছে অজানা। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই পথটা দেখানো, আধুনিক ভাষায়, প্রযুক্তির সহায়তায়।
আপনি বলছেন, সংগঠিত হওয়ার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে। কিন্তু সংবিধানে তো ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়?
সংবিধানে অধিকার আছে, কিন্তু বাস্তবে বাধা আছে। শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেতে গেলে নানা রকম প্রশাসনিক বাধা আসে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকনেতাদের হুমকি দেওয়া হয়, চাকরিচ্যুত করা হয়। বড় বড় শিল্পকারখানায় তো আপনি নামমাত্র ইউনিয়ন দেখতে পাবেন, যারা মালিকপক্ষের ছায়াতলে কাজ করে। সংবিধানের অধিকারকে বাস্তবের আইনি জালে আটকে রাখা হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতে শোষণ কি শুধু মজুরিসংক্রান্ত, নাকি এর বাইরেও কিছু আছে?
তৈরি পোশাক খাতে শোষণ বহুমাত্রিক। একদিকে নিম্ন মজুরি, অন্যদিকে কাজের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। ছাঁটাইয়ের ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, ওভারটাইমের অপব্যবহার—এসব প্রতিনিয়ত ঘটছে। এরপর আছে সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন। একজন পোশাকশ্রমিক তাঁর জীবন দিয়ে জাতীয় রপ্তানি আয়ে ভূমিকা রাখছেন, অথচ তিনি আজও বস্তিতে থাকেন, তাঁর শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত নয়। এই অসম্মানটা আসলে মানসিক শোষণ।
আপনি বলেছেন, আমরা সহিংসতার বিপক্ষে। কিন্তু যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও পুলিশি হামলা হয়? তখন শ্রমিকেরা কী করবেন?
আমাদের কৌশল হচ্ছে—আন্দোলনকে গণসংহতির আন্দোলনে রূপ দেওয়া। যদি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে অন্য শ্রেণির মানুষ, যেমন শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণি পাশে দাঁড়ায়, তখন সেই আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না। আমরা এটা শিখেছি—নির্জন রাস্তায় আন্দোলন করলে নির্যাতন সহজ হয়। কিন্তু জনতার রাস্তায় আন্দোলন হলে সে আন্দোলন দমন করা কঠিন।
আপনি চিকিৎসক ছিলেন, স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে ভালো জানেন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন, কিন্তু তাঁরই জন্য স্বাস্থ্যসেবা সবচেয়ে কম। শিল্প এলাকায় সরকারিভাবে কোনো বিশেষ শ্রমিক হাসপাতাল নেই বললেই চলে। যাঁদের আয় সীমিত, তাঁরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। দুর্ঘটনায় আহত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া তো দূরের কথা, মালিকেরা অনেক সময় পরিচয়ই অস্বীকার করেন। শ্রমিকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যনীতি, বিনা মূল্যে চিকিৎসা এবং দুর্ঘটনার পর স্বয়ংক্রিয় ক্ষতিপূরণ—এই তিনটি জরুরি।
আপনি একজন প্রবীণ নেতা। আপনার মতো আরেকজন ‘নতুন ওয়াজেদ’ কীভাবে তৈরি হবে? নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
নেতৃত্ব জন্মায় সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। আমি সব সময় তরুণদের বলি—তোমরা প্রশ্ন করো, প্রতিবাদ করো, নেতৃত্ব নিতে শেখো। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সংগঠন মানে শুধু মিটিং নয়, মানে দায়িত্ব। নেতৃত্ব মানে ত্যাগ। যারা তা নিতে সাহস করে, তাদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত।
আপনি ব্যক্তিগত জীবনে কখনো হতাশ হয়েছেন? কখনো মনে হয়েছে, সব চেষ্টা বৃথা?
মানুষ হিসেবে হতাশা আসে। যখন দেখি একজন নারী শ্রমিক তাঁর শিশুকে ফেলে ভোরবেলা কাজে যাচ্ছেন, অথচ তাঁর মালিক এক রাতেই কোটি টাকা আয় করছেন, তখন মন কাঁদে। কিন্তু আমি জানি—লড়াই কখনো বৃথা যায় না। যে চোখ প্রতিবাদ শিখেছে, তাকে আর দাসত্বে রাখা যায় না।
মে দিবস উপলক্ষে নতুন প্রজন্ম ও শ্রমিকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?
মে দিবস শুধু উদ্যাপনের বিষয় নয়, এটা একটি জীবনদর্শন। শ্রমিক মানে শুধুই হাতের কাজ নয়, শ্রমিক মানে এই সমাজের ভিত। তাই কেউ যদি বলে ‘তুমি শ্রমিক, তুমি নিচু শ্রেণি’—তাকে বলো, ‘আমার ঘামে এই শহর জ্বলে, আমার হাতে দেশ চলে।’ সংগঠিত হও, সচেতন হও, শ্রেণিসংগ্রামকে মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে নিয়ে যাও। তাহলে হয়তো একদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসবে—যেখানে মানুষ, তার শ্রম, আর তার স্বপ্ন—সবই অর্থবহ হবে।
দীর্ঘ জীবনে আপনি অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন দেখেছেন। এর মধ্যে কোনটা আপনাকে প্রভাবিত করেছে এবং কেন?
আমার জীবনে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে—যুদ্ধ, বিপ্লব, হত্যাকাণ্ড, অভ্যুত্থান। তবে দুটি ঘটনা আমাকে ভেতর থেকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথমটি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার অভ্যুদয়। দ্বিতীয়টি, বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা—একটি জাতি কীভাবে রক্ত দিয়ে নিজের পরিচয় গড়ে তোলে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তার ভেতরেই ছিল একটি শোষণহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা—যেখানে মানুষ শুধু জীবিত থাকবে না, মর্যাদার সঙ্গেও বাঁচবে।
কিন্তু আশির দশকের শেষ ভাগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটল, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠল—তখন মনে হয়েছিল, আমরা যেন এক বিশাল আদর্শিক পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, যেন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি বিশ্বাস ধসে পড়ল।
আমি নিজে শ্রমিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, সমাজতন্ত্রের মানবিক ও সাম্যবাদী বোধে আস্থাশীল ছিলাম। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনে সারা বিশ্বের শোষিত মানুষেরা যেন দিশেহারা হয়ে গেল। পুঁজিবাদের আগ্রাসন, করপোরেট লুট, মানুষের ওপর মানুষের শোষণ আবারও প্রবল হয়ে উঠল। তখন বুঝেছি—রাজনীতি শুধু সংখ্যার খেলা নয়, আদর্শ হারালে মানুষের আত্মবিশ্বাসও চূর্ণ হয়ে যায়।
এই দুই উত্থান-পতন—একটি স্বাধীনতার জয়ের আলো, আরেকটি আদর্শের ধ্বংস—আমাকে আমৃত্যু তাড়িয়ে বেড়াবে।
জীবনসায়াহ্নে কোন পরিবর্তনের খবর শুনলে বেশি স্বস্তি বোধ করবেন?
এই বয়সে এসে চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। কিন্তু অন্তরের ভেতর এক যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াই—আমরা কি আদর্শকে ধরে রাখতে পেরেছি? যেসব স্বপ্ন নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলাম, সেগুলোর কি কোনো বিকাশ ঘটল?
আমি সবচেয়ে স্বস্তি পাব যদি শুনি, বাংলাদেশে একটি মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে—যেখানে শ্রমজীবী মানুষ অপমানিত হয় না, যেখানে শিক্ষা ও চিকিৎসা পণ্য নয়, অধিকার। পুঁজির একচেটিয়া ক্ষমতা ভেঙে শ্রমিক-কৃষকের সম্মান ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আর যদি দেখি, বিশ্ব আবার সেই মানবিক সমাজতন্ত্রের ধারণার দিকে ফিরছে—শোষণের বদলে সহযোগিতা, প্রতিযোগিতার বদলে সহমর্মিতা, বাজার নয়, মানুষের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে—তবে মৃত্যুশয্যায় শুয়েও মনে শান্তি আসবে।
আমার স্বস্তির খবর হবে: পুঁজিবাদের করালগ্রাস ভেঙে এক নতুন মানবিক সভ্যতা গড়ে উঠছে, যার ভিত রচনা করছে নতুন প্রজন্ম।
তখনই হয়তো নিজের ভেতর বলতে পারব—আহা, এত দিন ধরে যা নিয়ে পথ চলেছি, তা একেবারে বৃথা যায়নি।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মে দিবস সামনে। আপনি যদি বলেন, আমাদের কীভাবে শুরু করা উচিত?
আমার মতে, শুরুটা হওয়া উচিত ইতিহাস বোঝা দিয়ে। আজকাল অনেকেই মে দিবসকে শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখেন—লাল পতাকা, শোভাযাত্রা, বক্তৃতা। কিন্তু মে দিবস হচ্ছে এক ঐতিহাসিক শ্রমিক বিদ্রোহের প্রতীক, যা শিকাগোর হে মার্কেটের সেই রক্তাক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি নিয়ে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা মানবজাতির কর্মপরিবেশ বদলে দিতে চেয়েছিলেন। কাজেই মে দিবসের আবেদন শুধু স্মরণে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব প্রয়োগে যেতে হবে।
তাহলে আপনি কী ধরনের প্রস্তুতির কথা বলছেন?
প্রথমত, শ্রমিক সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। আজকের শ্রমিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা খাতে—গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন, কৃষি, সেবা খাত। অনেক জায়গায় ট্রেড ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয়, কোথাও আবার দমন-পীড়নের মুখে। মে দিবস সামনে রেখে এই অসংগঠিত শক্তিকে সংগঠনের আওতায় আনাই হবে বড় কাজ।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের বর্তমান সমস্যাগুলো নিয়ে মাঠে-ময়দানে আলোচনা করতে হবে—ন্যায্য মজুরি, ওভারটাইমে শোষণ, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ছাঁটাইয়ের হুমকি—এসব ইস্যু নিয়ে জনমত গড়া জরুরি কাজ।
বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
দুঃখজনকভাবে ট্রেড ইউনিয়ন আজ অনেকটাই প্রতীকী রূপে রয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক প্রভাব, আবার কোথাও মালিকপক্ষের চাপে সংগঠন ভেঙে পড়েছে। মে দিবসের আগে আমাদের দায়িত্ব হবে এই ইউনিয়নগুলোকে কার্যকরী করা, নেতৃত্বে সচেতনতা আনা। আমি বলি, ‘যেখানে শ্রমিক, সেখানেই সংগঠন’। এটা যদি বাস্তবে রূপ না নেয়, তাহলে মে দিবস কেবল গান-বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
আপনার কাছে মে দিবস মানে কী?
আমার কাছে মে দিবস হলো—সংগ্রামের শুরু, শেষ নয়।
চিকিৎসাবিদ্যার মতো একটি পেশা ছেড়ে আপনি শ্রমিক রাজনীতিতে এলেন—এটা তো অনেকটা ‘জীবন বদলে দেওয়া’ সিদ্ধান্ত। কেন এমন সিদ্ধান্ত?
এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে আসেনি। ১৯৬০-এর দশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় সমাজের চিত্র আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। দেখেছি, গার্মেন্টস ছিল না তখন, কিন্তু কলকারখানার শ্রমিকেরা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমজীবী-কর্মজীবীরা কী ভয়াবহ পরিবেশে কাজ করতেন। অন্যদিকে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ছাত্ররা অনেক সুবিধা পেতাম। প্রশ্ন জাগল—এই বৈষম্য কেন? তখন আমি বুঝলাম, চিকিৎসা দিয়ে শুধু শরীরের ক্ষত সারানো নয়, সমাজের ক্ষতও সারিয়ে তুলতে হবে। আর শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি ছাড়া সমাজের আরোগ্য অসম্ভব।
আপনাদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দর্শন ও পথচলা অন্যান্য সংগঠন থেকে কীভাবে আলাদা?
আমরা যেটা বলি, সেটা হলো—‘শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকের জন্য, কোনো দলের জন্য নয়’। বাংলাদেশে অনেক ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন আছে, যারা মূলত রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন। এতে করে শ্রমিকদের স্বার্থ বারবার দলীয় স্বার্থের বলি হয়। আমরা চাই এমন এক সংগঠন, যেখানে শ্রমিক তাঁর কর্মক্ষেত্র, জীবনমান ও মর্যাদা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সেই লক্ষ্যে কাজ করছে—নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং শ্রেণি-সচেতন সংগঠন হিসেবে।
আপনি প্রায় ছয় দশক ধরে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়ের মধ্যে কী কী বড় পরিবর্তন লক্ষ করেছেন?
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে অর্থনীতির কাঠামোতে। ৬০-এর দশকে আমরা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিল্প দেখেছি, ৮০-এর পরে উদারীকরণ, বিশ্বায়ন আর বেসরকারীকরণ। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শ্রমিক শুধু শ্রম নয়—আত্মসম্মানও হারাচ্ছেন। আগে শ্রমিকেরা সংগঠিত হতেন, দাবি জানাতেন, এখন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্র মিলে সংগঠনের পথটাই সংকুচিত করে ফেলেছে। আবার ডিজিটাল শ্রমিকের আবির্ভাবও হয়েছে, যাঁরা একেবারে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছেন।
নতুন প্রজন্মের শ্রমিকদের মধ্যে আপনি কী ধরনের মনোভাব দেখছেন? তাঁরা কি সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী?
এই প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের শ্রমিকেরা অনেক বেশি শিক্ষিত, সচেতন, কিন্তু একই সঙ্গে বিভ্রান্ত। তাঁরা ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের যুগে বাস করছেন। রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে অনেকটাই দূরে। কিন্তু যখন তাঁদের ওপর অন্যায় হয়—মজুরি না দেওয়া, ছাঁটাই, দুর্ঘটনা—তখন তাঁরা প্রতিবাদ করেন। এর মানে তাঁরা আগ্রহী, কিন্তু সংগঠনের পথটা তাঁদের কাছে অজানা। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই পথটা দেখানো, আধুনিক ভাষায়, প্রযুক্তির সহায়তায়।
আপনি বলছেন, সংগঠিত হওয়ার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে। কিন্তু সংবিধানে তো ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়?
সংবিধানে অধিকার আছে, কিন্তু বাস্তবে বাধা আছে। শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেতে গেলে নানা রকম প্রশাসনিক বাধা আসে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকনেতাদের হুমকি দেওয়া হয়, চাকরিচ্যুত করা হয়। বড় বড় শিল্পকারখানায় তো আপনি নামমাত্র ইউনিয়ন দেখতে পাবেন, যারা মালিকপক্ষের ছায়াতলে কাজ করে। সংবিধানের অধিকারকে বাস্তবের আইনি জালে আটকে রাখা হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতে শোষণ কি শুধু মজুরিসংক্রান্ত, নাকি এর বাইরেও কিছু আছে?
তৈরি পোশাক খাতে শোষণ বহুমাত্রিক। একদিকে নিম্ন মজুরি, অন্যদিকে কাজের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। ছাঁটাইয়ের ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, ওভারটাইমের অপব্যবহার—এসব প্রতিনিয়ত ঘটছে। এরপর আছে সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন। একজন পোশাকশ্রমিক তাঁর জীবন দিয়ে জাতীয় রপ্তানি আয়ে ভূমিকা রাখছেন, অথচ তিনি আজও বস্তিতে থাকেন, তাঁর শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত নয়। এই অসম্মানটা আসলে মানসিক শোষণ।
আপনি বলেছেন, আমরা সহিংসতার বিপক্ষে। কিন্তু যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও পুলিশি হামলা হয়? তখন শ্রমিকেরা কী করবেন?
আমাদের কৌশল হচ্ছে—আন্দোলনকে গণসংহতির আন্দোলনে রূপ দেওয়া। যদি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে অন্য শ্রেণির মানুষ, যেমন শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণি পাশে দাঁড়ায়, তখন সেই আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না। আমরা এটা শিখেছি—নির্জন রাস্তায় আন্দোলন করলে নির্যাতন সহজ হয়। কিন্তু জনতার রাস্তায় আন্দোলন হলে সে আন্দোলন দমন করা কঠিন।
আপনি চিকিৎসক ছিলেন, স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে ভালো জানেন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন, কিন্তু তাঁরই জন্য স্বাস্থ্যসেবা সবচেয়ে কম। শিল্প এলাকায় সরকারিভাবে কোনো বিশেষ শ্রমিক হাসপাতাল নেই বললেই চলে। যাঁদের আয় সীমিত, তাঁরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। দুর্ঘটনায় আহত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া তো দূরের কথা, মালিকেরা অনেক সময় পরিচয়ই অস্বীকার করেন। শ্রমিকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যনীতি, বিনা মূল্যে চিকিৎসা এবং দুর্ঘটনার পর স্বয়ংক্রিয় ক্ষতিপূরণ—এই তিনটি জরুরি।
আপনি একজন প্রবীণ নেতা। আপনার মতো আরেকজন ‘নতুন ওয়াজেদ’ কীভাবে তৈরি হবে? নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
নেতৃত্ব জন্মায় সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। আমি সব সময় তরুণদের বলি—তোমরা প্রশ্ন করো, প্রতিবাদ করো, নেতৃত্ব নিতে শেখো। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সংগঠন মানে শুধু মিটিং নয়, মানে দায়িত্ব। নেতৃত্ব মানে ত্যাগ। যারা তা নিতে সাহস করে, তাদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত।
আপনি ব্যক্তিগত জীবনে কখনো হতাশ হয়েছেন? কখনো মনে হয়েছে, সব চেষ্টা বৃথা?
মানুষ হিসেবে হতাশা আসে। যখন দেখি একজন নারী শ্রমিক তাঁর শিশুকে ফেলে ভোরবেলা কাজে যাচ্ছেন, অথচ তাঁর মালিক এক রাতেই কোটি টাকা আয় করছেন, তখন মন কাঁদে। কিন্তু আমি জানি—লড়াই কখনো বৃথা যায় না। যে চোখ প্রতিবাদ শিখেছে, তাকে আর দাসত্বে রাখা যায় না।
মে দিবস উপলক্ষে নতুন প্রজন্ম ও শ্রমিকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?
মে দিবস শুধু উদ্যাপনের বিষয় নয়, এটা একটি জীবনদর্শন। শ্রমিক মানে শুধুই হাতের কাজ নয়, শ্রমিক মানে এই সমাজের ভিত। তাই কেউ যদি বলে ‘তুমি শ্রমিক, তুমি নিচু শ্রেণি’—তাকে বলো, ‘আমার ঘামে এই শহর জ্বলে, আমার হাতে দেশ চলে।’ সংগঠিত হও, সচেতন হও, শ্রেণিসংগ্রামকে মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে নিয়ে যাও। তাহলে হয়তো একদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসবে—যেখানে মানুষ, তার শ্রম, আর তার স্বপ্ন—সবই অর্থবহ হবে।
দীর্ঘ জীবনে আপনি অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন দেখেছেন। এর মধ্যে কোনটা আপনাকে প্রভাবিত করেছে এবং কেন?
আমার জীবনে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে—যুদ্ধ, বিপ্লব, হত্যাকাণ্ড, অভ্যুত্থান। তবে দুটি ঘটনা আমাকে ভেতর থেকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথমটি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার অভ্যুদয়। দ্বিতীয়টি, বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা—একটি জাতি কীভাবে রক্ত দিয়ে নিজের পরিচয় গড়ে তোলে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তার ভেতরেই ছিল একটি শোষণহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা—যেখানে মানুষ শুধু জীবিত থাকবে না, মর্যাদার সঙ্গেও বাঁচবে।
কিন্তু আশির দশকের শেষ ভাগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটল, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠল—তখন মনে হয়েছিল, আমরা যেন এক বিশাল আদর্শিক পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, যেন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি বিশ্বাস ধসে পড়ল।
আমি নিজে শ্রমিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, সমাজতন্ত্রের মানবিক ও সাম্যবাদী বোধে আস্থাশীল ছিলাম। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনে সারা বিশ্বের শোষিত মানুষেরা যেন দিশেহারা হয়ে গেল। পুঁজিবাদের আগ্রাসন, করপোরেট লুট, মানুষের ওপর মানুষের শোষণ আবারও প্রবল হয়ে উঠল। তখন বুঝেছি—রাজনীতি শুধু সংখ্যার খেলা নয়, আদর্শ হারালে মানুষের আত্মবিশ্বাসও চূর্ণ হয়ে যায়।
এই দুই উত্থান-পতন—একটি স্বাধীনতার জয়ের আলো, আরেকটি আদর্শের ধ্বংস—আমাকে আমৃত্যু তাড়িয়ে বেড়াবে।
জীবনসায়াহ্নে কোন পরিবর্তনের খবর শুনলে বেশি স্বস্তি বোধ করবেন?
এই বয়সে এসে চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। কিন্তু অন্তরের ভেতর এক যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াই—আমরা কি আদর্শকে ধরে রাখতে পেরেছি? যেসব স্বপ্ন নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলাম, সেগুলোর কি কোনো বিকাশ ঘটল?
আমি সবচেয়ে স্বস্তি পাব যদি শুনি, বাংলাদেশে একটি মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে—যেখানে শ্রমজীবী মানুষ অপমানিত হয় না, যেখানে শিক্ষা ও চিকিৎসা পণ্য নয়, অধিকার। পুঁজির একচেটিয়া ক্ষমতা ভেঙে শ্রমিক-কৃষকের সম্মান ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আর যদি দেখি, বিশ্ব আবার সেই মানবিক সমাজতন্ত্রের ধারণার দিকে ফিরছে—শোষণের বদলে সহযোগিতা, প্রতিযোগিতার বদলে সহমর্মিতা, বাজার নয়, মানুষের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে—তবে মৃত্যুশয্যায় শুয়েও মনে শান্তি আসবে।
আমার স্বস্তির খবর হবে: পুঁজিবাদের করালগ্রাস ভেঙে এক নতুন মানবিক সভ্যতা গড়ে উঠছে, যার ভিত রচনা করছে নতুন প্রজন্ম।
তখনই হয়তো নিজের ভেতর বলতে পারব—আহা, এত দিন ধরে যা নিয়ে পথ চলেছি, তা একেবারে বৃথা যায়নি।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, পাড়ার আড্ডায় এখন যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তার অনেকগুলোই রাজনীতিকেন্দ্রিক। তবে সব কথা অকুণ্ঠচিত্তে মানুষ বলে না। বোঝা যায়, একধরনের সেলফ সেন্সরশিপও আছে। ‘দেয়ালেরও কান আছে’—এ রকম যদি কেউ ভেবে থাকেন, তাহলে তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে না।
৫ ঘণ্টা আগেআয় নেই অথচ আয়কর দিতে হচ্ছে। কে কবে শুনেছে এমন ঘটনা! শুনতে অবাক লাগলেও বাংলাদেশে এই ঘটনা সত্যি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটা অন্যায্য, বৈষম্যমূলক ও বিড়ম্বনাপূর্ণ।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ কৃষি। স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশ গঠনে যাঁরা কৃষিকে কেন্দ্রে রেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন আজও পূর্ণতা পায়নি। এই দেশের মাটি এখনো সুফলা, মানুষ এখনো পরিশ্রমী।
৫ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও স্পষ্টভাবে তাঁদের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন—তাঁরা ডাকসু নির্বাচন চান, অবিলম্বে ও নিরপেক্ষভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত পরামর্শক কমিটির সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৭৪৩ শিক্ষার্থীর ৯৬ শতাংশই মনে করেন, ডাকসু ও হল সংসদ...
৫ ঘণ্টা আগে