শরিফুল হাসান
আবারও একটা ভুল। আবারও হঠকারিতা। এ রকম একেকটা ভুলে কোভিড ছড়ায় বহুগুণে। না, আমি বলছি না যে, গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত ভুল। এটা ভুল, কী ঠিক—তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। জীবন আর জীবিকার এই দ্বন্দ্ব চলছেই এবং কখনোই শতভাগ লোক একমত হতে পারবেন না। কাজেই গার্মেন্টস খোলাকে ভুল বলতে নারাজ। এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু ৩০ তারিখে ঘোষণা দিয়ে ১ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভুল। মহাভুল।
ফলাফল দেখুন। শিমুলিয়া ঘাটে গতকাল থেকে ঢাকামুখী লাখো মানুষ। আরিচা, দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া, কাজিরহাট—সব ফেরি ঘাটেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। ফেরিগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মানুষের ভিড়ে ফেরিগুলোতে কোনো যানবাহন পার করা সম্ভব হয়নি। বরং একেকটা ফেরিতে তিন থেকে চার হাজার মানুষ পার হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানানো কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মহাসড়কে অটো, মাহেন্দ্রসহ ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা গেছে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশায়-অটোতে, আবার কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ফিরছেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরছে লাখ লাখ মানুষ।
পোশাক কারখানার কর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন ও কারখানা বন্ধের ঘোষণা আসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপদে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ফিরছেন। অনেক যাত্রী প্রশ্ন করেছেন, ‘সরকার লকডাউন দেয়, আবার লকডাউনের মধ্যে অফিসও খুলে দেয়, কেন?’
এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কে দেবে? এই যে পথে পথে ভোগান্তি, বাড়তি খরচ—এর দায় কার? নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা যদি খুলবেনই ঈদের আগে কেন বলেছিলেন ৫ আগস্টের আগে কিছু খুলবে না, এমনকি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাও না। এরপরও যখন খুলবেনই, ফেরার জন্য অন্তত ৫-৭টা দিন কি সময় দেবেন না? মানুষগুলো কি উড়ে উড়ে আসবে? সরকার মালিকদের তাহলে কেন বলেনি—আপনারা বাস বা গাড়ি করে সব শ্রমিকদের নিয়ে আসেন। এই যে দুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ আসা–যাওয়া, এর ফলে মহামারি যে আরও ছড়াবে, তার দায় কে নেবে?
আবার গার্মেন্টস খোলার পর কঠোর লকডাউন বহাল রাখা তো আরেক বোকামি। এখন তো লাখ লাখ লোক ফিরবে। কী দিয়ে আটকাবেন তাদের? যেহেতু কারখানা খোলা, রোজ এই লাখ লাখ মানুষ পোশাক কারখানায় যাবে, আবার ফিরবে। আটকাবেন কোন যুক্তি দিয়ে? মূলত এই ঘোষণায় লকডাউনই কার্যত অচল হয়ে গেল।
অবশ্য শুধু এবারই নয়। প্রতিবারই একটা ঘটনা ঘটছে। গত দেড় বছর ধরে আমরা এই সমন্বয়হীনতার মধ্যেই আছি। আসলে দেশে কোভিডের এই দুরবস্থার জন্য জনগণের অসচেতনতা যেমন দায়ী, তেমনি নীতিনির্ধারকদের বারবার ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া—দুটোই দায়ী।
প্রথমত বারবার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ভুল করছি। কখনো লকডাউন, কখনো সীমিত লকডাউন, কখনো কঠোর লকডাউন, এগুলো এবার আসলেই কঠোর লকডাউন সবই দিন শেষে ব্যর্থ হচ্ছে। এই যে এপ্রিল থেকে কম–বেশি লকডাউন তো চলছেই। কিন্তু পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে? এ নিয়ে সরকারের কোনো বিশ্লেষণ আছে কি?
সরকার যেমন নানা সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করছে, তেমনি জনগণের একটা বড় অংশও সচেতন নয়। গত দেড় বছরে বারবার বলার পরও আমরা জনগণ মাস্ক পরছি না। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছি। গ্রামে-গঞ্জে বারবার বলার পরও লোকজন সচেতন হননি। যথাসময়ে টিকা নেয়নি। এখনো টিকা নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা আছে।
এভাবে কখনো নীতিনির্ধারকের, আবার কখনো জনগণের ভুলে মহামারি কিন্তু ছড়াচ্ছে। রোজ দুই থেকে আড়াই শ মানুষ মরছে। একদিকে স্বজনহারাদের বেদনা, আরেক দিকে হাসপাতালগুলোতে ছোটাছুটি। বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
আবার দেখুন সমস্যার জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছেন। সরকারের বা ক্ষমতায় যারা আছেন, তাঁরা শুধু জনগণকে দায়ী করেন। আবার যারা সমালোচক, তাঁরা শুধু সরকারের সমালোচনা করেন।
আসলে দুই পক্ষই যে আমরা প্রতিনিয়ত ভুল করছি এবং দিনশেষে জনগণের প্রতিনিধিরাই যে সরকার আর সরকারের প্রতিনিধিরাও যে জনগণ—সেটা আমরা ভুলে যাই। ফলে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দিয়ে সব উদ্ধার করতে চাই।
আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, একটা দেশ ঠিক করতে হলে নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ববোধ যেমন জরুরি, তেমনি দরকার সাধারণ মানুষের দায়িত্ববোধ। দুটো একসঙ্গে না হলে কখনোই দেশ এগোবে না। আর একটি ছাড়া অন্যটির সৃষ্টি হয় না, টিকেও থাকে না। কাজেই নীতিনির্ধারক আর জনগণ—দুই পক্ষকেই একসঙ্গে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেটা কবে হবে? আর কবে?
শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আবারও একটা ভুল। আবারও হঠকারিতা। এ রকম একেকটা ভুলে কোভিড ছড়ায় বহুগুণে। না, আমি বলছি না যে, গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত ভুল। এটা ভুল, কী ঠিক—তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। জীবন আর জীবিকার এই দ্বন্দ্ব চলছেই এবং কখনোই শতভাগ লোক একমত হতে পারবেন না। কাজেই গার্মেন্টস খোলাকে ভুল বলতে নারাজ। এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু ৩০ তারিখে ঘোষণা দিয়ে ১ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভুল। মহাভুল।
ফলাফল দেখুন। শিমুলিয়া ঘাটে গতকাল থেকে ঢাকামুখী লাখো মানুষ। আরিচা, দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া, কাজিরহাট—সব ফেরি ঘাটেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। ফেরিগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মানুষের ভিড়ে ফেরিগুলোতে কোনো যানবাহন পার করা সম্ভব হয়নি। বরং একেকটা ফেরিতে তিন থেকে চার হাজার মানুষ পার হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানানো কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মহাসড়কে অটো, মাহেন্দ্রসহ ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা গেছে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশায়-অটোতে, আবার কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ফিরছেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরছে লাখ লাখ মানুষ।
পোশাক কারখানার কর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন ও কারখানা বন্ধের ঘোষণা আসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপদে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ফিরছেন। অনেক যাত্রী প্রশ্ন করেছেন, ‘সরকার লকডাউন দেয়, আবার লকডাউনের মধ্যে অফিসও খুলে দেয়, কেন?’
এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কে দেবে? এই যে পথে পথে ভোগান্তি, বাড়তি খরচ—এর দায় কার? নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা যদি খুলবেনই ঈদের আগে কেন বলেছিলেন ৫ আগস্টের আগে কিছু খুলবে না, এমনকি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাও না। এরপরও যখন খুলবেনই, ফেরার জন্য অন্তত ৫-৭টা দিন কি সময় দেবেন না? মানুষগুলো কি উড়ে উড়ে আসবে? সরকার মালিকদের তাহলে কেন বলেনি—আপনারা বাস বা গাড়ি করে সব শ্রমিকদের নিয়ে আসেন। এই যে দুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ আসা–যাওয়া, এর ফলে মহামারি যে আরও ছড়াবে, তার দায় কে নেবে?
আবার গার্মেন্টস খোলার পর কঠোর লকডাউন বহাল রাখা তো আরেক বোকামি। এখন তো লাখ লাখ লোক ফিরবে। কী দিয়ে আটকাবেন তাদের? যেহেতু কারখানা খোলা, রোজ এই লাখ লাখ মানুষ পোশাক কারখানায় যাবে, আবার ফিরবে। আটকাবেন কোন যুক্তি দিয়ে? মূলত এই ঘোষণায় লকডাউনই কার্যত অচল হয়ে গেল।
অবশ্য শুধু এবারই নয়। প্রতিবারই একটা ঘটনা ঘটছে। গত দেড় বছর ধরে আমরা এই সমন্বয়হীনতার মধ্যেই আছি। আসলে দেশে কোভিডের এই দুরবস্থার জন্য জনগণের অসচেতনতা যেমন দায়ী, তেমনি নীতিনির্ধারকদের বারবার ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া—দুটোই দায়ী।
প্রথমত বারবার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ভুল করছি। কখনো লকডাউন, কখনো সীমিত লকডাউন, কখনো কঠোর লকডাউন, এগুলো এবার আসলেই কঠোর লকডাউন সবই দিন শেষে ব্যর্থ হচ্ছে। এই যে এপ্রিল থেকে কম–বেশি লকডাউন তো চলছেই। কিন্তু পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে? এ নিয়ে সরকারের কোনো বিশ্লেষণ আছে কি?
সরকার যেমন নানা সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করছে, তেমনি জনগণের একটা বড় অংশও সচেতন নয়। গত দেড় বছরে বারবার বলার পরও আমরা জনগণ মাস্ক পরছি না। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছি। গ্রামে-গঞ্জে বারবার বলার পরও লোকজন সচেতন হননি। যথাসময়ে টিকা নেয়নি। এখনো টিকা নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা আছে।
এভাবে কখনো নীতিনির্ধারকের, আবার কখনো জনগণের ভুলে মহামারি কিন্তু ছড়াচ্ছে। রোজ দুই থেকে আড়াই শ মানুষ মরছে। একদিকে স্বজনহারাদের বেদনা, আরেক দিকে হাসপাতালগুলোতে ছোটাছুটি। বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
আবার দেখুন সমস্যার জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছেন। সরকারের বা ক্ষমতায় যারা আছেন, তাঁরা শুধু জনগণকে দায়ী করেন। আবার যারা সমালোচক, তাঁরা শুধু সরকারের সমালোচনা করেন।
আসলে দুই পক্ষই যে আমরা প্রতিনিয়ত ভুল করছি এবং দিনশেষে জনগণের প্রতিনিধিরাই যে সরকার আর সরকারের প্রতিনিধিরাও যে জনগণ—সেটা আমরা ভুলে যাই। ফলে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দিয়ে সব উদ্ধার করতে চাই।
আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, একটা দেশ ঠিক করতে হলে নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ববোধ যেমন জরুরি, তেমনি দরকার সাধারণ মানুষের দায়িত্ববোধ। দুটো একসঙ্গে না হলে কখনোই দেশ এগোবে না। আর একটি ছাড়া অন্যটির সৃষ্টি হয় না, টিকেও থাকে না। কাজেই নীতিনির্ধারক আর জনগণ—দুই পক্ষকেই একসঙ্গে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেটা কবে হবে? আর কবে?
শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট
রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১ দিন আগেদেশে প্রতিবছর বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের সময় মাঝে মাঝে সংবাদ চোখে পড়ে যে প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়ছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে, খাল ও জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, নির্মাণস্থলে নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এমনকি কোনো কোনো প্রকল্প গ্রহণের ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব...
১ দিন আগেপাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
১ দিন আগে১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২ দিন আগে