Ajker Patrika

৫৮১ কোটি টাকা আত্মসাৎ: সাবেক এমপি পোটনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে দুদক

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন। ফাইল ছবি
নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আমদানি করা ৫৮১ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৭১ হাজার টন সার আত্মসাতের মামলায় এবার নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনসহ অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর সার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক এমপি পোটনসহ অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান (পরিচালক)। মামলার দেড় বছর পর তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিতে যাচ্ছে কমিশন।

সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের দুই মহাব্যবস্থাপক মো. শাহাদত হোসেন (নিপু) ও প্রতিষ্ঠানটির মো. নাজমুল আলম (বাদল), উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি মো. সোহরাব হোসেন ও খুলনা ও নওয়াপাড়া প্রতিনিধি মো. আতাউর রহমান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিসিআইসি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সৌদি আরব, কাতার ও ইউএই থেকে ৩ লাখ ৯৩ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করে। আমদানি করা সার খালাসের পর সরকারি গুদামে পৌঁছাতে স্থানীয় ১৩টি পরিবহনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার সাতটি চুক্তি হয় সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের মালিকানাধীন পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের সঙ্গে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই সাত চুক্তির আলোকে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৭ টন সার সরকারি গুদামে পৌঁছে দেওয়ার কথা। এর থেকে পোটন ট্রেডার্স ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২৫৮ টন সার পৌঁছে দেয়। বাকি ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ টন সার সংশ্লিষ্ট গুদামে সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করা হয়; যার বাজারমূল্য ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা।

পোটন ট্রেডার্সের হিসাবে তাদের গুদামে সার থাকার কথা ৬৬ হাজার ২২২ টন। তবে বিসিআইসি সার আত্মসাতের ঘটনায় যে তিনটি পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে, তারা সরেজমিনে খুলনা-নোয়াপাড়া শিরোমণি, বাঘাবাড়ী ঘাট ও বরিশাল—এই তিন গুদামে অনুসন্ধান করে মাত্র ১ হাজার ৩০৭ টন সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের মালিক কামরুল আশরাফ খান (পোটন) সাবেক সংসদ সদস্য ও সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি।

এ ছাড়া সার আত্মসাতের বিষয়টির বিসিআইসির অভ্যন্তরীণ দুটি পৃথক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মের মধ্যে সার খালাসের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর গত এক বছরেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।

বিসিআইসির তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পোটন ট্রেডার্স গত ২০২২ সালের অক্টোবরের শুরুতে জানিয়েছিল, তাদের ৬টি গুদামে ৬৬ হাজার টন সার মজুত রয়েছে। তা যাচাই করতে গত ১০ নভেম্বর বিসিআইসি তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গুদামে মাত্র ১ হাজার ৩০৭ টন ব্যবহারের অনুপযোগী সার পায়।

প্রসঙ্গত, কামরুল আশরাফ খান (পোটন) ২০১৪ সালে নরসিংদী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১২ ডিসেম্বর বিসিআইসির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সাবেক এই সংসদ সদস্যের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া বিষয়ে। সে সময় বিসিআইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি সার আত্মসাতের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত রুল ইস্যু করেন। এই অভিযোগের বিষয়ে আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে আদালতে দাখিলের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর কমিশন এই অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর গত ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ দুদকের উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে। অনুসন্ধান দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও মো. আবুল কালাম আজাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত