Ajker Patrika

ভিসা বাণিজ্য: সৌদি আরবে দুই কূটনীতিকসহ ৮ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
ভিসা বাণিজ্য: সৌদি আরবে দুই কূটনীতিকসহ ৮ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

সৌদিগামী কর্মীদের ভিসা দেওয়ার সময় ঘুষ নেওয়াসহ নানান গুরুতর অভিযোগে ঢাকার সৌদি দূতাবাসে কাজ করে যাওয়া দুই ঊর্ধ্বতন কূটনীতিককে সে দেশে এক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আট প্রবাসী বাংলাদেশিকে। 

গ্রেপ্তার হওয়া দুই সৌদি কূটনীতিক হলেন দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সাবেক প্রধান ও উপ-রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ফালাহ মুধি আল-শামারি ও উপ-প্রধান খালিদ নাসের আয়াদ আল-কাহতানি। দুবাই থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক আল আরাবিয়ার তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই কূটনীতিক দূতাবাসে দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভিসা দেওয়ার বিনিময়ে ধাপে ধাপে প্রায় এক কোটি ৪৪ লাখ ডলার নিয়েছেন।

দুই কূটনীতিক ছাড়াও এই চক্রে থাকা দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার দুর্নীতি দমন বিভাগ নাজাহা।

তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন যে, ওই ডলারগুলোর ‘একটি অংশ’ তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে সৌদি আরবেই গ্রহণ করেছেন এবং তা দেশটির বাইরে বিনিয়োগ করেছেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষ এক টুইটে বলেছে, গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কয়েকজনের বাড়ি থেকে থেকে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার, স্বর্ণ ও গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সৌদি আরবের কাজের ভিসা বিক্রির মাধ্যমে এই টাকা পেয়েছে বলে দুর্নীতি দমন বিভাগ মনে করছে।

এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার অন্য দুই সৌদি কর্মকর্তা হলেন রিয়াদের পুলিশ আদালতের মেতাব সাদ আল ঘনউম ও বিশেষ মিশন বাহিনীর হাতেম মাস্তুর সাদ বিন তাইয়েব। একই অভিযানে ফিলিস্তিনি বিনিয়োগকারী সালেহ মোহাম্মদ সালেহ আল-সালাউতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া আট বাংলাদেশি হলেন—আশরাফ আল-দীন আকন্দ, মুঘির হুসেন খান, শফিক আল-ইসলাম, শাহ জাহান, মুহাম্মদ নাসিরউদ্দিন নূর, আল-আমিন খান, শহীদুল্লাহ খান, জেড ইউ সাইদ মফি, আবুল আল কালাম মুহাম্মদ রফিক আল-ইসলাম ও আজিজ আল-হক মুসলিম আল-দীন। এই চক্রে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলে যে কোনো ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে বিভাগটি উল্লেখ করেছে। 

এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে প্রবাসী সূত্রগুলো জানিয়েছে। 

২০২২ সালের শুরু থেকে দূতাবাসের কয়েক সৌদি কর্মকর্তা ও বাংলাদেশিদের একটি চক্র প্রতি ভিসার জন্য ২২০ থেকে ২৫০ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছে বলে অভিযোগ অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বিষয়টি নিয়ে সরাসরি ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলানের সঙ্গে কথা বলেন।

দূতাবাসে ঘুষ নিয়ে বেশ হইচই ও সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ডলারে ঘুষ নেওয়া বন্ধ হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি। তবে সৌদি আরব বড় শ্রমবাজার বলে দেশটি নিয়ে বেশ স্পর্শকাতরতা থাকায় সরকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেনি। 

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে শুধু ২০২২ সালেই সৌদি আরবে গেছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন শ্রমিক। আর ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৮৫ হাজার ৩১৯ জন।

রিয়াদে গ্রেপ্তার হওয়া জেড ইউ সাইদ (জসিম উদ্দিন সাইদ) ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বলে আজকের পত্রিকার দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি জানান। তাঁর বাড়ি উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের নেয়াজপুর গ্রামে।

জসিম উদ্দীন স্থানীয়ভাবে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দীন সাইদের ছোট ভাই মেজবাহ উদ্দীন সাইদ দাবি করেন, তাঁর ভাই গ্রেপ্তার হননি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।

জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি আবুল বাসার বলেন, আর্থিক বিষয়ে জড়িত থাকার কারণে চাইলেও জসিম উদ্দীন সাইদকে  কোনো প্রকার সহযোগিতা করা সম্ভব না। তবে তাঁকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একেএম শহীদুল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয় তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত