Ajker Patrika

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা ৪ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। ফাইল ছবি

ভোট কারচুপি, সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিকালে তাঁকে আদালতে হাজির করে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ। ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার।

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে নূরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় নূরুল হুদা মাথার হেলমেট খুলে ফেলেন, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ হাতের হাতকড়াও খোলা হয় তাঁর। এরপর আইনজীবীরা তাঁকে সালাম দিতে থাকেন। নূরুল হুদা ধন্যবাদ জানান। হাত নেড়ে সবাইকে হাসিমুখে ধন্যবাদ জানান। পরে বিকেল ৪টা ১৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন।

রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি শুনানিতে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট সরকার করতে যে কজন নির্বাচন কমিশনার কাজ করেছেন, কে এম নূরুল হুদা তাঁদের একজন। তিনিই নিশিরাতের ভোটের কারিগর। এই নির্বাচন কমিশনার মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। এ ধরনের নির্বাচন কীভাবে করলেন, কার ইন্ধনে করলেন, তা জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’

এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় মলিন মুখে শুনানি শুনতে দেখা যায় নূরুল হুদাকে।

গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে স্থানীয় জনগণ তাঁকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরা নূরুল হুদাকে যাঁরা আটক করেছেন তাঁরাই জুতার মালা পরিয়েছেন। মারধর করতেও দেখা যায়।

এর আগে গতকাল সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পরবর্তীতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খাইরুল হক দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকার অবৈধভাবে শপথ নেওয়ার পর তিনিসহ তাঁর মন্ত্রিপরিষদের ও সংসদ সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন শুরু করে।

ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করার জন্য ২০১৭ সালে নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নূরুল হুদার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায়, গায়েবি মামলায় জড়িয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয় এবং এলাকাছাড়া করা হয়।

ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তাঁরা কোনো প্রকার প্রচার চালাতে পারেনি এবং ভোটের মাঠে নামতে পারেনি। নূরুল হুদা ও তাঁর সহযোগী নির্বাচন কমিশনারদের সহযোগিতায় জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। নূরুল হুদার নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। তিনি এই কাজ করে সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেন। কোনোমতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নূরুল হুদা।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, আসামি নূরুল হুদা ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি উক্ত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি দেশকে গভীর সংকটে নিমজ্জিত করেছেন। তিনি প্রশাসনকে একটি পক্ষে ব্যবহার করেছেন, যাতে সংবিধান অমান্য হয়েছে।

দণ্ডবিধির ১৭১ ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী, নির্বাচনের ছদ্মবেশ ধারণ করে দিনের ভোট রাতে সম্পাদন করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করে নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন নূরুল হুদা কমিশন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশে সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, তরুণসমাজের ভোটারদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।

তিনি কার পরামর্শে বা কার নির্দেশে এসব কাজ করেছেন, কার কাছ থেকে কত টাকা ঘুষ নিয়েছেন, তা উদ্‌ঘাটন করার জন্য রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কার ইন্ধনে ও কী স্বার্থে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, তা জানা প্রয়োজন।

নির্বাচনের পাতানো কৌশল ও জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় জানার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। নির্বাচনের ফলাফলের সাজানো গেজেট জারি করেছেন কি না, তারও তথ্য উদ্‌ঘাটন করা প্রয়োজন। এজাহারনামীয় পলাতক ও অন্য সহযোগীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেপ্তারের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি পাতানো নির্বাচনের মূল রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত