Ajker Patrika

দেশে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৪টির রক্তে সিসা: জরিপ

  • ইউনিসেফ ও বিবিএসের যৌথ উদ্যোগ।
  • প্রায় ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর চালানো হয় জরিপ।
  • সব বিভাগ, জেলা এবং ৩ সিটি এলাকা সম্পর্কে ধারণা মিলবে।
  • এই প্রথম জরিপে রক্তস্বল্পতা এবং ভারী ধাতু দূষণ যুক্ত করা হলো।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বিবিএস ও ইউনিসেফের নতুন প্রকাশিত এমআইসিএস প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশ
বিবিএস ও ইউনিসেফের নতুন প্রকাশিত এমআইসিএস প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশ

দেশে প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে প্রায় ৪ জনের রক্তে ‘উদ্বেগজনক’ মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে ইউনিসেফ এবং বিবিএস এক জরিপে উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৩৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। আর অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের রক্তে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এই ধাতবের মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে।

চিকিৎসাবিদদের মতে, সিসাদূষণ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ বিভিন্নভাবে মানবদেহের ক্ষতি করে।

বাংলাদেশের শিশু ও নারীদের ওপর পরিচালিত এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিশদ জরিপ ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০২৫’ (এমআইসিএস ২০২৫)-এর প্রাথমিক ফলাফলে ওপরের তথ্যগুলো উঠে এসেছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং অন্যান্য অংশীদারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই জরিপ চালায়।

আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ইউনিসেফের ভাষ্য, সিসাদূষণের প্রভাব দেশের সব আর্থসামাজিক শ্রেণির ওপর পড়ছে। জরিপ অনুযায়ী, এতে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি ধনী এবং ৩০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে সিসাদূষণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু খেলনা, সিসামিশ্রিত রং, দূষিত মসলা, পুরোনো ব্যাটারি, কিছু রান্নার পাত্র এবং কলকারখানার দূষণ।

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর ভিত্তি করে এমআইসিএস ২০২৫ জরিপ চালানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যা নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়ক হবে। জরিপের ফলাফল শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা ও বিকাশে বিদ্যমান অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে। এ থেকে দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং তিনটি সিটি করপোরেশন এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এটি নীতিনির্ধারকদের বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।

জরিপে অপুষ্টি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। কম ওজনের শিশুর হার ২০১৯ সালে যেখানে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল, ২০২৫ সালে তা বেড়ে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মায়েদের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার হার এখনো অত্যন্ত উঁচু; ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিশোরী মায়ের হার (প্রতি হাজারে) ৮৩ থেকে বেড়ে ৯২ হয়েছে।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে শিশুশ্রমের হার এখন ৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে ৮৬ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সহিংস আচরণের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের হার ২০১৯ সালের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এখনো প্রায় অর্ধেক মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৫৯ শতাংশের জন্ম নিবন্ধিত হয়েছে। এটি অনেক শিশুকে আইনগত পরিচয় এবং সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।

জরিপের ফল অনুযায়ী, নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২২। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই নবজাতক। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক চাপ—উভয়ই বাড়াচ্ছে। মাত্র ৪৬ শতাংশ নারী গর্ভধারণের প্রথম চার মাসের মধ্যে প্রসব-পূর্ব সেবা গ্রহণ করেন।

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলেছেন, গর্ভধারণের প্রথম থেকে মাতৃসেবা জোরদার করা নবজাতকদের জন্য স্বাস্থ্যকর শুরু নিশ্চিত করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

জরিপে দেখা গেছে, স্যানিটেশন সেবা পাওয়ার সুযোগ বেড়ে ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু নিরাপদ উৎসের পানীয় জল প্রাপ্তির হার ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এর অর্থ হলো, দেশের ১০ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পানীয় জলের প্রায় অর্ধেক উৎস এবং গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ৮০ শতাংশের বেশি নমুনায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

গত বছরে জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত দুর্যোগ ১০ দশমিক ২ শতাংশ পানির উৎসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন-সহনশীল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির উচ্চ হার (৮০ শতাংশ) বজায় থাকলেও উচ্চতর স্তরে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ব্যাপকভাবে কমেছে। অনেক শিশু মৌলিক দক্ষতা অর্জন ছাড়াই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়সী শিশুদের ৬ থেকে ৭ শতাংশ স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে। শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি এবং মৌলিক লেখাপড়া নিশ্চিত করার জন্য ‘উদ্ভাবনী পদ্ধতির’ প্রয়োজন বলে মনে করছে ইউনিসেফ।

জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘জরিপটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকাশিত হলো। এতে অগ্রগতি ও চলমান চ্যালেঞ্জ—উভয়েরই প্রতিফলন ঘটেছে। বাল্যবিবাহ ও শিশুমৃত্যুর হার কমা প্রমাণ করেছে, অগ্রগতি সম্ভব। তবে সিসাদূষণ এবং শিশুশ্রমের মতো সংকট লাখ লাখ শিশুকে তাদের সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করছে। বেড়ে চলা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।’

আলেয়া আক্তার বলেন, এবারের এমআইসিএস আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও প্রাসঙ্গিক। কারণ, এতে প্রথমবারের মতো গর্ভবতী নারী এবং অল্পবয়সী শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) এবং ভারী ধাতু দূষণের মাত্রা পরীক্ষার নতুন মডিউল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...