Ajker Patrika

অস্বাভাবিক জীবনযাপনে ডায়াবেটিস বাড়ছে

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ১৩
অস্বাভাবিক জীবনযাপনে ডায়াবেটিস বাড়ছে

পনেরো বছর আগে পায়ের ব্যথা নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন মনোয়ারা বেগম ময়না (৪৫)। পারিবারিক কলহে বিয়ের পর থেকেই দুশ্চিন্তায় কেটেছে বহু বছর। ছোটবেলা থেকেই ভাতের প্রতি খুব আসক্তি ছিল। ফলে ওজন বেড়েছে নিয়মিত। একপর্যায়ে গলায়ও টনসিল দেখা দেয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর কিডনি, ফুসফুস ও লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে উচ্চ ডায়াবেটিস নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বারডেমে ছুটে এসেছেন বিক্রমপুরের এই নারী।

ময়নার মতো অনেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছেন। কেউ জানেন, কেউ জানেন না আবার কেউ জেনেও মানেন না। চিকিৎসকেরা বলছেন, সরকারি যেসব হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে যতটুকু চিকিৎসা দেওয়া হতো, করোনার কারণে তা-ও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তবে টিকাদানের পর আবার সেবা চালু হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।

বারডেম হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান বলেন, ‘সামনের দিনগুলোয় মহামারি রূপ নিতে পারে ডায়াবেটিস। এ জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসক তৈরি করা জরুরি। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবা সহজবোধ্য করার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ে সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনা ও ভাবনা থাকা দরকার। ডায়াবেটিস রোগীদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার, পাশাপাশি জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া আর কোনো হাসপাতালে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোনো শয্যা নেই।

দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দুই বছর আগে ডায়াবেটিক সমিতির চালানো এক পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ৭-৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০৪৫ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখে পৌঁছাবে। এই অবস্থার মধ্যে আজ সারা দেশে পালিত হবে ডায়াবেটিস সেবা দিবস। এ উপলক্ষে অনেক আলোচনা হয়তো হবে; কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা না বাড়লে এর প্রকোপ ঠেকানো কঠিন। তাঁদের মতে, অসচেতনতা ও অস্বাভাবিক জীবনযাপনের কারণে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য যেকোনো হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। এটি এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এর প্রভাব ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ছে। শুধু তাই নয়; কিডনি, লিভার ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কমছে আয়ু। একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে ৭০ বছর বাঁচলেও ডায়াবেটিস তা অন্তত ১০ বছর কমিয়ে আনছে।

মহামারি রূপ নিতে পারে ডায়াবেটিস। এ জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসক তৈরি করা জরুরি।
অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান
বারডেম হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘দেশে কী পরিমাণ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। এর মূলে কোনো ইনস্টিটিউট না থাকা। বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যতজনের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তার মাত্র অর্ধেক রোগী চিকিৎসার আওতায় আসছেন। এর থেকে স্পষ্ট হয়, একটি ইনস্টিটিউট কতটা দরকার।’

সারা দেশে বেসরকারিভাবে ৭০টি সেন্টার ও ১৫টি সাব-সেন্টারসহ মোট এক শর মতো সেবাকেন্দ্র চালু রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডায়াবেটিস বিভাগ রয়েছে, যদিও তা জেলা সদর হাসপাতালগুলোয় এখনো তেমনটা গড়ে ওঠেনি।

অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিবছর অন্তত ২০ জন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ বের হচ্ছেন। তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন এই সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ায় আবারও সেবা চালু করা হয়েছে। ফলে রোগীদের চাপও অনেক বেশি। তিনি বলেন, আলাদাভাবে ইনস্টিটিউট না থাকলেও চিকিৎসাসেবা থেমে নেই। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাব-সেন্টার রয়েছে। পাশাপাশি ঢামেক, সলিমুল্লাহ, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, চমেক ও বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে পুরোপুরি ডায়াবেটিসের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত কোনো ইনস্টিটিউট গড়ে না ওঠার পেছনে অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ‘আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা জানি। তাই এই মুহূর্তে আলাদা প্রতিষ্ঠান না করে সমিতিতে অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এ সংকট থেকে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। আর যদি সঠিক ব্যবস্থাপনা সেভাবে করা সম্ভব হয়, তাহলে অন্যান্য রোগের ন্যায় ডায়াবেটিক ইনস্টিটিউটও হওয়া উচিত।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত