Ajker Patrika

বাকৃবিতে গবেষণা: সমুদ্রে ভাসমান খাঁচায় কৃত্রিম খাদ্যে ভেটকি চাষে সফলতা

বাকৃবি সংবাদদাতা
খাঁচায় চাষ করা ভেটকি মাছ হাতে কয়েকজন নারী চাষি। সৌজন্য ছবি
খাঁচায় চাষ করা ভেটকি মাছ হাতে কয়েকজন নারী চাষি। সৌজন্য ছবি

স্বাদ ও পুষ্টির কারণে উচ্চ মূল্যের মাছ হিসেবে পরিচিত ভেটকি বা কোরাল। দেশে এর চাষ সীমিত। কারণ এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত পোনা ও কৃত্রিম খাদ্যের অভাব বড় বাধা। এবার সেই বাধা দূর করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকেরা। তাঁরা সমুদ্রের বুকে ভাসমান খাঁচায় কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য খাইয়ে ভেটকি চাষের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বাকৃবি ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ও মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের (এসসিএমএফপি) আওতায় এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জাবেদ হাসান।

ফিশ ইকোফিজিওলজি ল্যাবরেটরিতে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের উপকূলীয় তিনটি অঞ্চলে (সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, কক্সবাজারের মহেশখালী ও ভোলার চর কুকরি-মুকরি) গবেষণার মাঠপর্যায়ের কাজ হয়। এ জন্য কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে প্রথমে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে নার্সিং (প্রাক-পর্যায় চাষ) এবং পরে খাঁচায় মাছ বড় করা হয়। কৃত্রিম খাদ্যে মাছের বৃদ্ধি বা পুষ্টিগুণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

অধ্যাপক শাহজাহান জানান, এক বছর শেষে প্রতিটি খাঁচায় ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে উৎপাদন হয়েছে ১৩ থেকে ১৭ কেজি। যেখানে পুকুর বা ঘেরে প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ৬০০ থেকে ১৫০০ কেজি। খাঁচায় চাষ করা মাছের গড় আমিষের পরিমাণ ১৯ গ্রাম, যেখানে সাধারণ কোরালে এই পরিমাণ ১৭ গ্রাম।

সমুদ্র উপকূলে খাঁচায় ভেটকি মাছ চাষ। সৌজন্য ছবি
সমুদ্র উপকূলে খাঁচায় ভেটকি মাছ চাষ। সৌজন্য ছবি

গবেষণায় হিসাব ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, খাঁচায় এই মাছ চাষে ১ টাকা বিনিয়োগে প্রায় ১ দশমিক ৭০ টাকা আয় নিশ্চিত করা সম্ভব। তা ছাড়া জমির ভাড়া দিতে না হওয়ায় কৃষকদের খরচও কমে আসে। ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত একটি খাঁচা ব্যবহারযোগ্য, যেখানে প্রতিবারে প্রায় ১ হাজার কেজি মাছ চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে খাঁচা তৈরি করা হলেও প্রান্তিক চাষিরা চাইলে বাঁশ বা সাধারণ মাছ ধরার জাল দিয়েও কম খরচে এটি তৈরি করতে পারবেন।

অধ্যাপক শাহজাহান জানান, এই পদ্ধতিতে মাছে রোগবালাইয়ের আশঙ্কা কম, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম এবং মাছের একে অপরকে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনাও থাকে না। ০ থেকে ৩৫ পিপিটি (পার্টস পার মিলিয়ন) লবণাক্ত পানিতেও এই মাছ টিকে থাকতে পারে, যা একে উপকূলে চাষের জন্য উপযোগী করে তুলেছে।

সমুদ্র উপকূলে খাঁচায় ভেটকি মাছ চাষ। সৌজন্য ছবি
সমুদ্র উপকূলে খাঁচায় ভেটকি মাছ চাষ। সৌজন্য ছবি

প্রধান গবেষক বলেন, খাঁচায় ভেটকি চাষ শুধু মাছ উৎপাদন বাড়াবে না, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে মেরিকালচারের (সামুদ্রিক মাছ চাষ) বিকাশে একটি টেকসই পথ দেখাবে এই প্রযুক্তি। গবেষণার সফলতা প্রমাণ করেছে, সামুদ্রিক মাছকে খাঁচায় ও কৃত্রিম খাদ্যে অভ্যস্ত করিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব। এতে দেশে মৎস্য উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে এবং ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ জোরদার হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত