Ajker Patrika

দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক ভাঙা

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ১৯
দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক ভাঙা
বরগুনার সড়কে বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৪৭৮ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বর্তমানে ভাঙাচোরা। খানাখন্দ, পিচ-পাথর উঠে যাওয়া ও ছোট-বড় গর্তে ভরা সড়কে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। যাত্রায় সময়ও লাগছে বেশি। ভাঙা সড়কের কারণে ঢাকা থেকে সিলেট ও রংপুর যাতায়াতে সময় লাগছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিম্নমানের নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ভার বহনকারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে প্রায় ২ হাজার ৯০৭ কোটি ২১ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। তবে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ে মেরামতের পর সেই সড়ক টেকসই হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার টাকা খরচ করে স্থায়ী সমাধান না এলে জনগণের করের টাকার অপচয় হবে।

সওজ সূত্র জানায়, ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে; প্রায় ২২৯ কিলোমিটার। রংপুর সড়ক বিভাগে ১৯৪ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগে ১৮৬, কুমিল্লা সড়ক বিভাগে ১৬৭, ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগে ১৫০, সিলেট সড়ক বিভাগে ১৪৮, ঢাকা সড়ক বিভাগে ১৪৩, বরিশাল সড়ক বিভাগে ১১৯, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগে ৭০ এবং খুলনা সড়ক বিভাগে ৬৮ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল।

সওজের তথ্য বলছে, সারা দেশে ২২ হাজার ৭১৯ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৪ হাজার ২৯৩ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক ৫ হাজার ৩৯ কিলোমিটার। জেলা মহাসড়ক আছে ১৩ হাজার ৩৮৫ কিলোমিটার।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান ১১ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, সড়ক মেরামতের জন্য নতুনভাবে যে প্রস্তাব দেওয়া হবে, সেখানে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। তবে মেরামতের ব্যয় কী রকম হবে, এটা এখনই বলা ঠিক হবে না। এখনো মূল্যায়ন চলছে। মেরামত প্রস্তাব অনুমোদন হলে সাংবাদিকেরা জানতে পারবেন।

ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার বাসের চালকেরা। চালকেরা জানান, খানাখন্দের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে, যানজট তৈরি হচ্ছে। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জটে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সড়ক খারাপ হওয়ায় ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে।

শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, গর্ত ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হয়, মেরামত খরচ বেড়ে যায় এবং যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে অনেক গন্তব্যে যাত্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। বিশেষ করে সিলেট ও রংপুর রুটে। এতে যাত্রীদের অসন্তোষ বাড়ছে, পরিবহন কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে।

সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, মূলত তিনটি কারণে সড়ক দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো হলো—অতিরিক্ত ভার বহনকারী (ওভারলোডেড) যানবাহন, নকশাগত দুর্বলতা ও নিম্নমানের নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় সড়ক দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঙ্গে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক কয়েক বছরেই ভেঙে যায়।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে জানানো হয়েছে, এবার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় পানি জমে বেশি ক্ষতি হয়, সেখানে কংক্রিট ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়কগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার শুরু হবে। পরে আঞ্চলিক মহাসড়ক। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু সংস্কার করলেই হবে না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার এবং নির্মাণে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে বছর বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জনদুর্ভোগ কমবে না। রিজিড পেভমেন্ট বা কনক্রিট সড়কের দিকে যেতে হবে। এতে সড়ক নির্মাণের ব্যয় বেশি হবে, কিন্তু সেটা একবারই হবে, বারবার মেরামত করতে হবে না।

সওজ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অনেক মহাসড়ক নির্মাণের দুই-তিন বছরের মধ্যেই বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। অথচ উন্নত দেশে একবার সড়ক নির্মাণ করলে টানা ১৫-২০ বছর টেকসই থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নমানের কাজ, দুর্নীতি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়ক টিকছে না। একই সড়ক বারবার মেরামত করতেও বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কর্মীরা ঠিকাদারিতে নামায় প্রকৃত ঠিকাদার কাজ পাচ্ছেন না। অপেশাদার ঠিকাদার নামমাত্র কাজ করে ভুয়া বিল বানিয়ে বিপুল টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে সড়কে প্রতিবছর বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হলেও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। উন্নত ও টেকসই সড়ক ছাড়া অর্থনীতি, বাণিজ্য ও জনজীবনের গতি ফিরবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ