Ajker Patrika

ডিজিটাল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবস্থাপনা: কাজ না করেই পকেটে ৭ কোটি টাকা

  • কাজ পেয়েছিল সাবেক সচিবের প্রতিষ্ঠান।
  • সমস্যা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের নজরদারিতে।
  • চার মাসেও শুরু হয়নি তদন্তের কাজ।
আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৯: ১৮
ডিজিটাল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবস্থাপনা: কাজ না করেই পকেটে ৭ কোটি টাকা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগ্নেয়াস্ত্রের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কাজ শেষ না করেই প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মদদে এই দুর্নীতি হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এটিসহ অন্য কিছু বিষয় তদন্তে কমিটি গঠন করা হলেও এর কাজ থেমে আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের স্মার্ট লাইসেন্স তৈরি, অস্ত্রের সঠিক হিসাব রাখাসহ এর ব্যবস্থাপনা সহজ করতে ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিএএমএস) চালুর কাজ হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তৎকালীন সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এসজেট এন্টারপ্রাইজ নামের একটি অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে এ কাজ দেন। প্রতিষ্ঠানটি সামান্য কাজ করেই পুরো বিল ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৪১০ টাকা তুলে নেয়। এই আংশিক কাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আবার সলিউশন ওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও সফট বিডি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন নিজেই এসজেট এন্টারপ্রাইজের মালিক ছিলেন। তাঁর এক নিকটাত্মীয় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সাবেক এই সচিবের নামে একাধিক মামলা থাকায় গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

আগ্নেয়াস্ত্রের নজরদারিতে বিঘ্ন

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত) বেসামরিক ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ করা সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেকেই তা মানেননি। কিন্তু সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাটি চালু না থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের তথ্য পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থাটি চালু থাকলে তাঁরা মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের চাহিদামতো তথ্য পাঠাতে পারতেন।

সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তা বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্যও অনেক গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। অথচ আগ্নেয়াস্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ের তথ্য সরকারের ডিজিটাল অবকাঠামোয় নেই।

স্মার্ট লাইসেন্স উদ্যোগের প্রেক্ষাপট

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম মূলত আগ্নেয়াস্ত্রবিষয়ক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের হিসাব রাখাসহ ব্যবস্থাপনা সহজ করা। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন এবং ডেটাবেইস তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। এর আওতায় জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে সারা দেশের বৈধ অস্ত্রের ডিজিটাল তালিকা তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রথম চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের স্মার্ট লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রাম আইটি সলিউশন লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় অনলাইন সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মধ্যে ছিল ওয়ান স্টপ পদ্ধতিতে লাইসেন্সধারীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ, যাচাই ব্যবস্থা এবং ১৪ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড তৈরি করা। তবে স্পেকট্রাম আইটি সলিউশনের কাছ থেকে কারিগরি জ্ঞান নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। কাজ দেওয়া হয় তখনকার জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হালনাগাদে ভেন্ডর নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ক্রয়ের শর্তাবলি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মূল কাজের জন্য অর্থ নেওয়া এসজেট এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার সাদাত রুকনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ করা হয়নি। পরে তাঁর মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা দেওয়া হয়। তারও জবাব পাওয়া যায়নি।

রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পাওয়া সলিউশন ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ইবনে নূরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান মাত্র ছয় মাসের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেয়েছিল। তিন মাস কাজ করার জন্য তাদের ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সফট বিডি নামের আরেক প্রতিষ্ঠানকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমানের কাছে ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরিতে অনিয়ম ও অচলাবস্থার অভিযোগ নিয়ে জানতে চেয়েছিল আজকের পত্রিকা। তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকলে প্রতিবেদন করুন। প্রয়োজনে আমাকেও তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন।’

থমকে আছে তদন্ত

সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য যন্ত্রপাতি কেনায় অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে। গত মার্চ মাসে ওই কমিটিকে ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অনিয়ম তদন্তেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটিতে পুলিশ সদর দপ্তর ও বুয়েটের প্রতিনিধিসহ সাত সদস্য রয়েছেন। চার মাসেও তাঁরা তদন্তকাজ শুরু করেননি। কমিটির প্রধান গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানান কাজের কারণে এখনো তদন্তকাজ শুরু করতে পারিনি।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, আরপিও সংশোধন অনুমোদন

এলাকার খবর
Loading...