Ajker Patrika

সম্পর্ক বৃদ্ধির তাগিদ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তির চিন্তা

তাসনিম মহসিন, ঢাকা
Thumbnail image

ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সামরিক বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনার আগ্রহ বেশ আগে থেকেই। তবে দেশটির অস্ত্রের দাম বেশি হওয়া ও সামরিক চুক্তির শর্ত জুড়ে দেওয়ায় অন্য দেশগুলো থেকে অস্ত্রের সংস্থান করা হচ্ছে। 

তবে এখন দেশটির সঙ্গে সামরিক চুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। বিষয়টি স্থান পেয়েছে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে। বৈঠক সূত্র এ তথ্য জানায়। 

আজ রোববার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০ মার্চের পর আসন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ‘অংশীদারি সংলাপ’-এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন। 

এবারের বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আর মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। 

বৈঠক সূত্র জানায়, করোনার কারণে প্রায় আড়াই বছর পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এবারের সংলাপে প্রাধান্য পাবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ইস্যু। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তি, রাজনৈতিক দিক থেকে আরও সফরের ব্যবস্থা ও সম্পর্ক বাড়ানো, জিএসপি ইস্যু, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা, সাইবার ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক, সুশাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হবে। 

সামরিক চুক্তির বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই র‍্যাব ইস্যুটি এখন থেকে সব বৈঠকে প্রাধান্য পাবে। আর এর সঙ্গে অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি সামরিক চুক্তির বিষয়টি এবার আন্তমন্ত্রণালয়ের আলোচনার টেবিলে এসেছে।’ 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনতে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে দুটি সামরিক চুক্তি। সামরিক চুক্তির অংশ হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্টের (এসিএসএ) প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। র‍্যাবের ‍ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করার পথ হিসেবে দেশটি থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছে ঢাকা। ফলে এ চুক্তি দুটি আলোচনায় এসেছে। 

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। এ ছাড়া সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি রয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে। মালদ্বীপের সঙ্গে ২০২০ সালে সামরিক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দেয় যে সামরিক চুক্তি ছাড়া ‘অ্যাডভান্সড মিলিটারি হার্ডওয়্যার’ বিক্রি করতে পারে না। 

কূটনীতিকেরা বলছেন, সমরাস্ত্র সংগ্রহে একক দেশ নির্ভরতা কাটাতে কাজ করছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র কেনায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। বরং এটি সম্পর্ক বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। সেই বিবেচনাটিই এখন জোরদার হয়েছে। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত