Ajker Patrika

হাওরে তিন দশকে জলাধার কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৯: ৪৯
Thumbnail image

দখল ও সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরের আয়তন অনেক কমে এসেছে। গত তিন দশকে হাওরের প্রকৃতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে দুই ধরনের ভূপ্রকৃতির (জলাধার ও অবকাঠামো) পরিবর্তন বেশি দেখা গেছে। ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জলাধারের পরিবর্তন প্রবণতা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। এ সময় হাওর এলাকা তার মূল জলাধারের প্রায় ৪০ শতাংশ হারিয়ে ফেলে। আর ২০২০ সালের মধ্যে হারিয়ে যায় ৮৭ শতাংশ।

অন্যদিকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নাগরিক স্থাপনা নির্মাণ এলাকা বেড়েছে প্রায় ২২০ শতাংশ। এটি প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় ৩৮৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)-এর ‘হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা’ শীর্ষক আলোচনায় এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রিফাত ও মারিয়া মেহরিন গবেষণাকর্মটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে শুরু করে ২০২২ সালের জুনে শেষ করেন। গবেষণাটি করতে স্যাটেলাইটের ছবি ও গুগল আর্থের সহযোগিতা নিয়েছেন এই দুই শিক্ষার্থী। গবেষণার সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাকিল আকতার। 

গবেষক ইনজামাম-উল-হক রিফাত বলেন, ‘হাওরের প্রায় ৯০ শতাংশ জলাভূমির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেখানে আর জলাভূমি নেই। ৩২ বছরে হাওরের আয়তন কমে দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে। জলাভূমির জায়গা ভরাট করে সেখানে রাস্তা, বসতঘর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।’

গবেষণার তথ্য বলছে, ১৯৮৮ সালে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওরে জলাধার ছিল ৩ হাজার ২৬ বর্গকিলোমিটার, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯৯ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাধারে গড়ে উঠেছে অবকাঠামো। ১৯৮৮ সালে হাওর অবকাঠামো আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৯৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ বর্গকিলোমিটার। এসব হাওর এলাকায় ১৯৮৮ সালে বনাঞ্চল ছিল চার বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার।

সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাওরে জলাধার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০১৩ থেকে ২০২০ সালে ভূমির ব্যবহারে বেশি পরিবর্তনের কারণ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টারপ্ল্যান।’ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘হাওরে এবারের বন্যার জন্য অনেকে অল ওয়েদার সড়কসহ নানা কারণের কথা বলছেন। তবে হাওর এলাকায় বন্যার মূল কারণ জল ধারণের জায়গা কমে যাওয়া।’ 

আইপিডির পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে হাওর এলাকায় প্রায়ই বন্যা হয়। হাওর অঞ্চলগুলোর জলাভূমিতে পানি ধারণক্ষমতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে।’ এ সময় আলোচনায় আরও অংশ নেন পরিকল্পনাবিদ চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ফরহাদ রেজা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত