Ajker Patrika

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার চান ৮২% মানুষ

তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ১৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার দেখতে চান দেশের ৮২ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে ৬ শতাংশ মানুষ চান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যে ৪৫ শতাংশ মানুষ চান সরকারপ্রধানের ক্ষমতা। বিপরীতে ৩৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, রাষ্ট্রপতিকে আরও ক্ষমতা দেওয়া উচিত। অন্যদিকে দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত এক জনমত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে এ জরিপ চালায় সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ৫-১০ ডিসেম্বর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস। সংবিধান সংস্কার কমিশন ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ জরিপটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

জরিপের বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্নভাবে অংশীজনদের মতামত সংগ্রহ করলেও গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সমাজের সব স্তরের মানুষের মতামতের প্রতিফলনের নিশ্চয়তা বিধান করে না বলে কমিশনের পক্ষ থেকে সারা দেশে জরিপ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ জন্য বিবিএসের মাধ্যমে দেশব্যাপী জাতীয় জনমত জরিপ পরিচালনা করা হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ৪৯ শতাংশ মানুষ।

অন্যদিকে বিপরীত মত দিয়েছেন ৩৭ শতাংশ মানুষ। কমিশনের সুপারিশেও বিষয়টির প্রতিফলন দেখা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

বিবিএস দেশের ৬৪ জেলা থেকে নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ১৮-৭৫ বছরের ৬৪ হাজার ৮০০ নাগরিকের ওপর জরিপ চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৯২৫ জনের সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জরিপে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে পাঁচটি উত্তর থেকে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। তা ছিল, সর্বোচ্চ দুবার, শুধু পরপর দুবার, নির্দিষ্টের প্রয়োজন নেই, জানি না, উত্তর দিতে ইচ্ছুক নয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ সর্বোচ্চ দুবারের পক্ষে, ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন নেইর পক্ষে, শুধু পরপর দুবারের পক্ষে ১০ দশমিক ২, জানি না ৮ এবং উত্তর দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না ২ শতাংশ মানুষ। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনেও একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

জরিপের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যখন ওয়েবসাইটে সাধারণ জনগণের মতামত নিলাম, তখন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মতামত তুলে ধরেন। কিন্তু ওয়েবসাইটে যেকোনো মন্তব্য সংগ্রহ করা গবেষণার পদ্ধতিগতভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এমন একটি স্যাম্পল তৈরি করতে হবে, যাতে দেশের সব শ্রেণির জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে। তারই বিবেচনায় ১৮-৭৫ বয়সী জনগোষ্ঠীর ৪৬ হাজার হাউসহোল্ডে জরিপটি করি।’

জরিপে দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়। সেখানে ৩৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষ সংসদ চান বলে মত দেন। বিপরীতে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দুই কক্ষের পক্ষে মত দেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ নিজ বিভাগে হাইকোর্ট দেখতে চান এবং ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ উপজেলা স্তরে আদালত চান।

সংস্কারের সুপারিশ তৈরিতে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গত নভেম্বরে তিন সপ্তাহ সময় ধরে কমিশনের ওয়েবসাইটে মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ হাজার ৫৭৩ জনের মতামত পাওয়া যায় বলে কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার ৯২৪ সংবিধান সংস্কার, সংশোধন বা পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন। ৩ হাজার ৬৮৯ জন ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের আলোকে নতুন প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পক্ষে মত দেন। ইসলামি সংবিধান চান ৩ হাজার ৫৬৭ জন। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ রাখার পক্ষে মত দেন ১৫ হাজার ৫৭৮ জন। মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ সম্মানের আসীনের পক্ষে ১ হাজার ৬৬০ জন। দুই মেয়াদের বেশি কেউ বিরোধী দলের প্রধান বা সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা থাকতে পারবেন না বলে মত দেন ১ হাজার ৬৮০ জন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত ছিল ১৪ হাজার ৬৫৬ জনের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চিরস্থায়ী রূপ দেওয়ার পক্ষে মত দেন ৬ হাজার ৪২৩ জন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে মত ছিল ১ হাজার ৭১১ জন। ১৮ বছর না হলে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে আনা যাবে না এবং যে দলে কম বয়সী দেখা যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন ৪৮১ জন।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পক্ষে মত দেন ১৪ হাজার ৯৬৭ জন, বাদের পক্ষে ছিলেন ২৩৯১ জন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ রাখার মত দেন ১ হাজার ১৪০ জন। বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। কমিশন যেটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে অংশীজন ও কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। তাই কমিশন বিধানটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিষয়টিতে কমিশনের সব সদস্যরা একমত হননি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে মার্শাল ল হবে: নাগরিক ঐক্যের মান্না

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত