Ajker Patrika

ঢাকাকে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগর কৌশলে সহযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ জাপানি রাষ্ট্রদূতের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ঢাকা ও টোকিওর সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে (আইপিএস) সহযোগিতা বাড়ানো পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক নিয়ে এক সেমিনারে তিনি এ পরামর্শ দেন।

আজ রোববার রাতে ‘বাংলাদেশ-জাপান রিলেশন: প্রোগনোসিস ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে কসমস গ্রুপের কসমস ফাউন্ডেশন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

এ ছাড়া ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিশেষ দূত মো. আবুল কালাম আজাদ, জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি হায়াকাওয়া ইউহু, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, টোকিওর সেক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাকি ওহাশি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব পাবলিক পলিসির ডিন অধ্যাপক তাকাহারা আকিও, কসমস ফাউন্ডেশনের সম্মানীয় উপদেষ্টা সাবকে রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম এতে উপস্থিত ছিলেন। ওয়েবিনারে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

ওয়েবিনারে জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তিনি বলেন, সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে এবং আরও উচ্চ পর্যায়ে নিতে দুই দেশকেই একত্রে কাজ করতে হবে। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই দেশকে সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিতে হবে, ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় করতে হবে, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, বাংলাদেশের মর্যাদা অঞ্চল ও অঞ্চল ছাড়িয়ে বিস্তৃত করার জন্য কাজ করতে হবে এবং মুক্ত ও অবাধ আইপিএসে অংশীদার হিসেবে সহযোগিতা বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্ককে অংশীদারি সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কে উত্তরণে ২০২২ সাল একটি বিশেষ সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও জাপানের বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বা বিগ–বি শুধু বাংলাদেশকেই সমৃদ্ধি এনে দেবে না, এ অঞ্চলের শান্তি স্থিতিশীলতাকে সহযোগিতা করবে।

উল্লেখ্য, চীনের প্রভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) গ্রহণ করে। এই অঞ্চলে মিত্র হিসেবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই এই কৌশল বাস্তবায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ এই জোট থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশের তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে নির্ধারণ করে রেখেছে জাপান। তবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলটি জাপানের বিনিয়োগের জন্য সফল হলেই পরবর্তী দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে জাপান। এ ছাড়া মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৩ হাজার একর ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। আর মহেশখালী-মাতারবাড়িতে আরও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

আড়াইহাজারকে এশিয়ার সেরা অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এর মাধ্যমে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে বাংলাদেশ। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল আগামী বছরের শেষের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে। এতে এক শর বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় বলেও জানান ইতো নাওকি। তিনি বলেন, জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স নিয়ে খুব একটা খুশি নয়। এখানে প্রচুর সময় ব্যয় হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই কষ্টকর। এ ছাড়া বাণিজ্য অর্থায়ন বিশেষ করে লেটার অব ক্রেডিটের প্রক্রিয়া খুবই ধীর এবং টেলিফোনে অর্থ স্থানান্তর করা যায় না। এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তান ও বাংলাদেশেই টেলিফোনে অর্থ স্থানান্তর করা যায় না।

রোহিঙ্গা ইস্যুটির দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ইতো নাওকি। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে মিয়ানমার ও তার সেনা বাহিনীকে রোহিঙ্গার মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি সমাধানের জন্য বলবে জাপান। আর রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাধ্যমতো করবে জাপান।

জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার কে চালাচ্ছে তা বলা মুশকিল। মিয়ানমার কোন দিকে যাচ্ছে তার কোনো পরিষ্কার চিত্র কারও কাছে নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত