Ajker Patrika

কঠিন প্রতিশোধের শপথ নিয়ে ইরান বলল, এই গল্পের শেষ অধ্যায় লিখবে তেহরান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১০: ০১
তেহরানে ইরানিদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
তেহরানে ইরানিদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা এবং তেহরানে সিনিয়র সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তারা বলেছে, প্রতিক্রিয়া হবে তীব্র এবং এই গল্পের শেষ অধ্যায় লিখবে ইরান।

প্রথম প্রতিশোধের লক্ষণ হিসেবে ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরান তাদের দিকে ১০০টি ড্রোন ছুড়েছে এবং সেগুলোকে ইসরায়েলি আকাশসীমার বাইরে থেকেই প্রতিহত করা হচ্ছে।

ইরাক জানিয়েছে, ১০০টির বেশি ইরানি ড্রোন তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে। এরপর প্রতিবেশী জর্ডান বলেছে, তাদের বিমানবাহিনী ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছে, যেগুলো তাদের ভূখণ্ডে পড়ার আশঙ্কা ছিল।

তবে ইরান এই ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তাদের প্রতিক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।

ইসরায়েলের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় ও গুরুতর হামলার জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘কঠোর শাস্তির’ হুমকি দিয়েছেন এবং দাবি করেছেন, আবাসিক এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলকে তার অজ্ঞ কাজের জন্য অনুশোচনা করতে বাধ্য করা হবে। সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘোষণা করে তিনি বলেন, এই হামলায় নারী ও শিশুরাও নিহত হয়েছে। ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শুধু তেহরান প্রদেশেই ৭৮ জন নিহত ও ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

এই হামলায় ইরানের সামরিক ও বিমানবাহিনীর বিশাল অংশের নেতৃত্ব ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে নিযুক্ত ছয়জন বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন।

ইরান এখনো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ইরানের নেতারা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য শুনেছেন। ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলার প্রশংসা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার পূর্বাভাস জানলেও সরাসরি অংশ নেয়নি।

এমন অবস্থায় ইরানকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনায় থাকবে কি না। ওমানের রাজধানী মাসকটে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের উপস্থিতিতে আলোচনার ষষ্ঠ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল রোববার।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা না করে বলেছেন, ইসরায়েল সব রকম সীমা লঙ্ঘন করেছে, এটিকে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা বলে মনে করেন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিরাপত্তা পরিষদে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত এবং ভবিষ্যতের হুমকি বিষয়ে ব্রিফিং দেবেন।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ নেতারা নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি, উচ্চপদস্থ রেভল্যুশনারি গার্ড কমান্ডার জেনারেল গোলামালি রাশিদ, পারমাণুবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি ও ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেইদুন আব্বাসি।

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের জায়গায় নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেজর জেনারেল আব্দুর রহিম মুসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ করা হয়েছে। মোহাম্মদ পাকপুরকে রেভল্যুশনারি গার্ডের নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তেহরানের আবাসিক ভবনগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কিছু ছবিতে দেখা যায়, উঁচু ভবনের নির্দিষ্ট তলায় হামলা হলেও আশপাশের তলাগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দেশজুড়ে সেনাঘাঁটিগুলোতেও হামলার খবর আসছে। তবে ইসফাহান অঞ্চলের গভর্নর জানিয়েছেন, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম লিক হয়নি। বিদ্যুৎ বা জ্বালানির স্থাপনায় হামলা হয়নি, কিন্তু ইসরায়েল ভবিষ্যতে ইরানের অর্থনৈতিক লক্ষ্যে হামলা করতে পারে।

ইরান সরকার জনগণকে কেবল সরকারি চ্যানেলগুলোর ওপর আস্থা রাখতে বলেছে এবং গুজব এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছে।

পরবর্তী আলোচনা রাউন্ডে ইরান জাতিসংঘ পারমাণবিক সংস্থার নজরদারিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সেটাই ছিল মূল ইস্যু।

ইরান বারবার বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ এবং এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য নয়। তবে আইএইএর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ইরানের কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি।

তেহরান মনে করে, ২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে দাঁড়ান এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তখন থেকে তারা নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে।

ইরান মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো শুরু থেকে আলোচনায় ধোঁকা দিচ্ছিল অথবা ইসরায়েলকে আক্রমণের স্বাধীনতা দিয়েছিল। যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছেন, ইরানের চোখে তিনি ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুই করেননি।

ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের হামলায় রাশিয়ার তৈরি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার পর।

ইরানে এখন প্রশ্ন উঠেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ধর্মীয় ফতোয়া তুলে নেওয়া উচিত কি না। বারবার ইসরায়েলের আঘাতে দুর্বল হয়ে পড়া প্রতিরোধ অক্ষের অনেকে মনে করছেন, ইরানকে এখন আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগোতেই হবে।

ইরান সাম্প্রতিক সময়ে কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে, তবে এসব দেশ সামরিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানকে সহায়তা করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত