Ajker Patrika

ইউনূস-তারেকের লন্ডন বৈঠক

প্রস্তুতি শেষ হলে ভোট রোজার আগেই

  • ভোটের জন্য প্রয়োজন সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতি
  • যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সংস্কার সেগুলোতে
  • জুলাই সনদ করা হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
লন্ডনে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। ছবি: প্রেস উইং
লন্ডনে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। ছবি: প্রেস উইং

ডিসেম্বর-জুনের পর মাঝে এসেছিল এপ্রিলের কথা। আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হতে পারে, এ নিয়ে টানাটানি চলছিল সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আলোচনা-সমঝোতায় অবশেষে একটি সমাধান সূত্র পাওয়া গেছে বলে মনে হচ্ছে। আলোচিত লন্ডন বৈঠকে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, সব প্রস্তুতি শেষ হলে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।

আগামী বছর রোজা শুরু হতে পারে ১৯ বা ২০ ফেব্রুয়ারির দিকে। সে হিসাবে ধরে নেওয়া যায়, ভোট হলে তা হবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের শেষ দিকে।

সরকারের একটি সূত্র বলছে, রমজানের আগে দু-তিন দিন হাতে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গতকাল শুক্রবার বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা ছাড়াও জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বিষয়ে বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলেছে বলে জানা গেছে।

পূর্বনির্ধারিত সময়েই (স্থানীয় সময় সকাল ৯টা) লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে দুই পক্ষের বৈঠক শুরু হয়। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের ওই বৈঠক শুরুর আধা ঘণ্টা প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাড়াও দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরের ৪০ মিনিট একান্তে বৈঠক করেন ড. ইউনূস ও তারেক রহমান। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানায় দুই পক্ষই।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে আগামী বছরের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন তারেক রহমান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে তো এরই মধ্যে আলোচনা চলেছে দেশে। এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে। সংস্কারের বিষয়ে একই উত্তর আমাকে দিতে হয়, ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংস্কার এবং জুলাই সনদ দুটোই করব। সবার ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি নিশ্চিত, খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা সে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

এ বিষয়ে সব দল একমত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত হবে তা স্বাক্ষরিত তো হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।’

নির্বাচনের সঠিক তারিখ নির্ধারণে সমস্যা কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে আজকে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুই পক্ষই এবং আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’

শুধু নির্বাচন, না কি অন্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হবে, এটা তো স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সে কাজটা করব।’

সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা সবাই (প্রধান উপদেষ্টা, তারেক রহমান) বলছি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতে সংস্কার হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, এমন না যে, সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগেও কিছু সংস্কার হবে, যেখানে ঐকমত্য হবে, আর নির্বাচনের পরও সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখন ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন সময়মতো।’

শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়া নির্বাচনী রূপরেখায় প্রভাব ফেলবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে উত্তর দেওয়া হয়েছে। সংস্কার এবং বিচার দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী, এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব।’

সব দলের সম্মতি নিয়েই নির্বাচন হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সে রকমই চাচ্ছি।’

বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অবশ্যই সন্তুষ্ট। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

আর খলিলুর রহমানের জবাব, সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসত না।’

জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা তো নির্বাচন-পরবর্তী সিদ্ধান্ত। যাঁরা যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত। এখানে আলোচনা হওয়ার কিছু নেই।’

সত্যিকার অর্থেই টার্নিং পয়েন্ট: ফখরুল

লন্ডনে ইউনূস-তারেকের বৈঠকের পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘চতুর্দিকে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। অনেকে অনেক কথা বলেছেন বিভিন্নভাবে। আজকে এই দুই নেতা প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং সে হিসেবেই বাংলাদেশের মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সম্পর্কে গোটা জাতি উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমি তো আগেই বলেছিলাম, এই বৈঠকটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। সত্যিকার অর্থেই এ বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত