Ajker Patrika

সংসদ নির্বাচন

সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমতে পারে শহরের আসন

  • এ পর্যন্ত ৬৬ আসন থেকে ৪১৭ আবেদন
  • আবেদন ধরে ধরে কাজ করছে ইসি
  • ঢাকার আসন বাড়ায় কয়েকটি জেলার ভাগ কমেছে
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচনে বর্তমানের ৩০০ আসন ব্যবস্থাই বহাল থাকবে ধরে নিয়ে বিদ্যমান আইনমত কাজ করছেন ইসি কর্মকর্তারা। ইসির সূত্র জানিয়েছেন, সীমানা বদলানোর আবেদন, জনশুমারির ফল এবং প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিবেচনায় নিয়ে যে রদবদল হতে যাচ্ছে, তাতে এবার শহরের আসন কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে বাড়তে পারে গ্রামাঞ্চলের আসন।

সম্প্রতি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশ জারির পর জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে ইসি। সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত যত আবেদন জমা পড়েছে, তার প্রতিটি ধরে ধরে কাজ করছে ইসির এ-সংক্রান্ত কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবেদনকারীরা বিভিন্ন যুক্তি দিয়েছেন। সেখান থেকে যেগুলো গ্রহণযোগ্য, সেগুলো আমরা গ্রহণ করব।’

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৬টি আসন থেকে ইসিতে ৪১৭টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিদিনই আসন পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আবেদন জমা পড়ছে। বেশির ভাগ আবেদনে ২০০১ সালের সীমানায় ফেরার দাবি জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে বৈঠক করে এ-সংক্রান্ত কমিটি। সেখানে আবেদনগুলো নিষ্পত্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সীমানা রদবদলে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, তা-ও আলোচিত হয়।

আগে সাধারণত ইসি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই খসড়া তালিকার ওপর দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো। এরপর শুনানি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করত ইসি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসিতে জনগণের তরফ থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন আসতে থাকে।

অভিযোগ উঠেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে কম-বেশি দেড় শ আসনে হাত দেয় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এক উপজেলার অংশ কেটে যেমন অন্য আসনের সঙ্গে যোগ করা হয়, তেমনি বিএনপির ভোট বেশি এমন কিছু আসন কার্যত বিলুপ্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, কাজের সুবিধার্থে ইতিমধ্যে ২০০১, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে কোন আসনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, তার তুলনামূলক বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। যাতে কখন, কোন আসনে, কী ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে, তা বোঝা যায়।

২০০৮ সালের আগে ঢাকার দোহার উপজেলা নিয়ে ঢাকা-১ এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঢাকা-২ আসন ছিল। ২০০৮ সালে দুটি আসন মিলিয়ে একটি করা হয়েছে। ইসিতে আসা এক আবেদনে আসন দুটি পুনর্বহালের দাবি করা হয়েছে। এ দাবি জানিয়ে ইসিতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি এবং দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার পৃথক সংসদীয় আসন (ঢাকা-১ ও ২) পুনরুদ্ধার কমিটির পক্ষ থেকে ২৩টি আবেদন জমা পড়েছে।

ইসিতে এ বিষয়ে আবেদন জমা দেওয়া ঢাকা জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও দোহার উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে আলাদা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে দুটি আলাদা আসন ছিল। যেহেতু দুটি আসনই বিএনপির ছিল, তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে দুই উপজেলাকে মিলিয়ে একটি আসন করা হয়। তাই ২০০১ বা তার আগে আমাদের আসন যেমন ছিল, তেমনটি ফেরত চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি।’

মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে দোহার উপজেলা এবং ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা গঠিত। দুটি আসন এখন একটিতে পরিণত হওয়ায় দুই উপজেলায় সরকারি বরাদ্দ কমেছে। এ ছাড়া একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বিস্তৃত এলাকার সব অধিবাসীকে যথাযথভাবে সেবা দেওয়াও সম্ভব নয়।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছেন ঢাকার সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হাজী জামাল উদ্দিন সরকার। এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া, ভাকুর্তা ও আমিনবাজার নতুনভাবে তৈরি করা ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। অথচ আমরা বরাবর প্রশাসনিকভাবে সাভার উপজেলার মধ্যে। উপজেলা পরিষদ, থানা এবং সব প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনো সাভার উপজেলায় করতে হয়। জামাল উদ্দিন তেঁতুলঝোড়া, ভাকুর্তা ও আমিনবাজার—এই তিনটি ইউনিয়ন ঢাকা-২ আসন থেকে বাদ দিয়ে আগের মতো সাভার আসন করার দাবি জানান।

২০০৮ সালের আগে ঢাকায় ১৭টি সংসদীয় আসন ছিল। পরে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়। ইসি সূত্র জানায়, এ কারণে কয়েকটি জেলার আসন কমেছে। তাই এবার ইসি শহরের আসন কমাতে চায়।

যেসব সংসদীয় আসন থেকে ইসিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে আবেদন এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১, ২, ৭, ১২, ১৬ ও ১৯; নারায়ণগঞ্জ-১, ২, ৩, ৪ ও ৫; গাজীপুর-৩; মানিকগঞ্জ-২ ও ৩; কিশোরগঞ্জ-২; সিরাজগঞ্জ-২ ও ৫; গাইবান্ধা-৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ ও ৪; ফেনী-২ ও ৩; নোয়াখালী-১ ও ২; কুমিল্লা-১, ২, ৬, ৯ ও ১০; চট্টগ্রাম-৩, ৪, ৭ ও ৮; সিলেট-৩; চাঁদপুর-১, ২, ৩, ৪ ও ৫; ফরিদপুর-৪; রাজবাড়ী-১, ২ ও ৩; শরীয়তপুর-২; যশোর-২; ঝালকাঠি-২; বরগুনা-১ ও ২; পিরোজপুর-১ ও ২ ইত্যাদি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত