Ajker Patrika

পরিবহন সেক্টরে ৮০ ভাগ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে, দাবি শাহজাহান খানের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পরিবহন সেক্টরে ৮০ ভাগ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে, দাবি শাহজাহান খানের

পরিবহন সেক্টরে প্রায় ৮০ ভাগ চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাহজাহান খান। আজ বুধবার সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির পঞ্চম সভায় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘অবশিষ্ট চাঁদাবাজি বন্ধ করার বিষয়ে আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ 

শাহজাহান খান বলেন, ‘বৈঠকে আইজিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা সেভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেব। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নামে চাঁদাবাজি অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। তবে নতুন করে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা যারা সড়ক-মহাসড়ক থেকে টোলের নামে টাকা নিচ্ছে। অথচ ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করা যাবে না। শুধু টার্মিনাল থেকে টোল নিতে পারবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে পত্র নিয়ে অবিলম্বে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যে চাঁদা আদায় হচ্ছে টোলের নামে, তা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ 

শাহজাহান খান বলেন, ‘মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লায়, আন্তজেলায় রাইডশেয়ারিং হবে না। আজও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে মোট দুর্ঘটনায় হতাহতের মধ্যে ৪৫ শতাংশই ঘটছে মোটরসাইকেলে। সুতরাং মোটরসাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ 

স্থায়ীভাবে দূরপাল্লায় রাইডশেয়ারিং বন্ধের বিষয়ে শাহজাহান খান বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এটাকে বাস্তবায়নের জন্য বৈঠকে বলা হয়েছে। তবে এখনো স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ 

বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে শাজাহান খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে চালকদের ডোপ টেস্ট করে লাইসেন্স নবায়ন করা বা নতুন লাইসেন্স দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ডোপ টেস্ট সেন্টারের স্বল্পতা রয়েছে। এগুলোর সংখ্যা বাড়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ডোপ টেস্টের ফি কমানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চালকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ও আলোচনা হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) জনবলের সংকট তুলে ধরে শাহজাহান খান বলেন, ‘বিআরটিএ’র মোট জনবল কাঠামো রয়েছে ৯৩১ জনের। এর মধ্যে ১২২টি পদ এখনো খালি রয়েছে। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া এবং পদসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।’ 

শাহজাহান খান বলেন, হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজন আট হাজারের ওপরে। বর্তমানে সেখানে দুই হাজারের কিছু বেশি রয়েছে। এটাও যাতে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো খুবই দরকার। 

শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একটা বিরোধ রয়েছে। এটি আলোচনা করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস মালিক-শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন এবং কমিটিকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি। 

পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্রের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, শ্রমিকেরা নিয়োগপত্র পাচ্ছেন না। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে মালিক ও শ্রমিকেরা এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন। নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন ভার্চুয়ালি সারা দেশে একসঙ্গে নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়টি উদ্বোধন করবেন। 

ঢাকা শহরে এখনো বাসগুলো প্রতিযোগিতা করে চলাচল করছে, একটি বাস আরেকটি বাসের গতি রোধ করে যাত্রী তুলছে—এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় শ্রমিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। শ্রমিকেরা মালিকদের কাছ থেকে বাস ইজারা নেয়। ধীরে ধীরে ইজারা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। 

সড়ক পরিবহনে ১১১ সুপারিশের মধ্যে কতগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান খান বলেন, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরা, ট্রাকের বাম্পার-অ্যাঙ্গেল অবসারণ করা হয়েছে। 

শাহজাহান খান জানান, দেশে মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। উত্তরায় বা অন্য জায়গায় প্রচুর অবৈধ স্কুল আছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেইভ প্রকল্পের অধীনে চালকের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তিন-চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নগদ ১০ হাজার টাকা এবং বিনামূল্যে লাইসেন্স করে দেওয়া হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত