Ajker Patrika

নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রেস ব্রিফিং

রাখাইনে জাতিগত নিধন চললে ত্রাণ চ্যানেল নয়

  • করিডর নিয়ে সরকারের সঙ্গে কারও কথা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হবে না।
  • জাতিসংঘের অনুরোধে সীমান্ত পর্যন্ত ত্রাণ যাওয়ার বিষয় বিবেচনায় আছে।
  • ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর কোনো মতপার্থক্য নেই।
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি : পিআইডি
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি : পিআইডি

মিয়ানমারের রাখাইনে সশস্ত্র সংঘাত চলতে থাকলে এবং আরাকান আর্মি জাতিগত নিধন অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সেখানে মানবিক সহায়তা যেতে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার রাজি হবে না। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান গতকাল বুধবার এসব কথা জানিয়েছেন।

ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আজকের পত্রিকার এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মি যদি জাতিগত নিধন চালিয়ে যায়, জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা করে, আমরা কেন সাহায্য করব? ...প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি বলেন, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলতে থাকলেও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে কোনো সহায়তা যাবে না, এটাও পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য একটি ‘চ্যানেল’ খোলার বিষয় নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই প্রেস ব্রিফিং করলেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশের চাপে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার তাড়াহুড়া করছে কি না, আজকের পত্রিকার এই প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টার দাবি, তাড়াহুড়ার কোনো বিষয় নেই। রোহিঙ্গাদের টেকসই ব্যবস্থায় ফেরত পাঠানো ও তারা যাতে গেলে আবার চলে না আসে, সে জন্য এ ব্যবস্থা। এটা হতে হলে রাখাইনে প্রশাসন ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের আনুপাতিক উপস্থিতি দরকার হবে। তিনি বলেন, কেউ সরকারকে কোনো চাপ দেয়নি। আরাকান আর্মি অরাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ হওয়ায় জাতিসংঘকে মাঝে রেখে যুক্তরাষ্ট্র-চীনসহ যারা অংশীজন আছে, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে। সব পক্ষের সম্মতিতে যতক্ষণ পর্যন্ত না সবকিছু নির্ণীত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই লিখিত (চূড়ান্ত) হবে না।

ড. খলিলুর রহমানের দাবি, জাতিসংঘ রাখাইনে নিজস্ব সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে নিজেদের অর্থে ত্রাণ পৌঁছাবে। বাংলাদেশে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোর জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা থেকে রাখাইনে সহায়তার বিষয়টি পুরোপুরি আলাদা। যেহেতু রাখাইনে অন্যান্য সরবরাহ রুট দিয়ে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই জাতিসংঘের অনুরোধে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ত্রাণ যেতে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

রাখাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ‘করিডর’ স্থাপনের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডর নিয়ে সরকারের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হবে না। করিডরের ধারণা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এটি সাধারণত জরুরি পরিস্থিতিতে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইন থেকে কাউকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে মতভেদের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. খলিল দাবি করেন, ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সম্পর্কে আমরা একেবারে এক সমতলে। ...এখানে কোনো ফাঁকফোকর নেই।’

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছাড়া সাগরপথে কিংবা অন্য কোনো রুটে সুযোগ থাকলে, জাতিসংঘ সেসব রুটে রাখাইনে ত্রাণ নিতে চাইলে সরকার সহযোগিতা দেবে।

ইউএনডিপির একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। অন্যদিকে খাবার ও ওষুধের ব্যাপক অভাবে রাখাইনে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার ও ওষুধ না পেয়ে রোহিঙ্গাদের আরও অনেকের বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ আরাকান আর্মিকে জানিয়েছে যে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধক তৈরি করা যাবে না। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ সহায়তা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এই চ্যানেলে মাদক ও অস্ত্র আনা-নেওয়া হয় কি না, তার ওপর নজর রাখা হবে।

উপদেষ্টার ধারণা, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে রাজি আছে। রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে। তখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু করা সম্ভব হবে। প্রতিবেশী দেশের নিউজ পোর্টাল থেকে ‘করিডর’ এবং জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে ‘প্রক্সি যুদ্ধের’ প্রচারণা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রক্সি যুদ্ধ হলে চীন ও মিয়ানমারের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারা কিছু বলছে না। কিন্তু অন্য একটি দেশ থেকে অপপ্রচার চলছে।

২০১৭ সাল থেকে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা যাচাইয়ের জন্য মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই সম্পন্ন হয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। তারা মনে করে, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা যাবে। বাকি ৭০ হাজার রোহিঙ্গার ছবি ও কিছু তথ্যে ঝামেলা আছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে নিরসন করা হবে।

দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডার ও রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডারের মধ্যে কোনো আন্তসংযোগ নেই উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ কারণে রোহিঙ্গাদের কেউ এনআইডি ও পাসপোর্ট নিয়েছে কি না, তা যাচাই করা সম্ভব হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত