Ajker Patrika

বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হোক সেটিই চায় যুক্তরাজ্য। আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে এ কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। এ সময় ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিবসহ অন্য সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

হাইকমিশনার বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজ। যাতে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে জবাবদিহি ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশে একাধিক দলের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছ গণতন্ত্রের পক্ষে। যা বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে লেখা রয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় হয় তার জন্য যুক্তরাজ্য আহ্বান জানায়।’ 

বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘প্রথমত, সব দলকে সংগঠিত হতে দিতে হবে। আর নির্বাচনের আগে তাদের সবার কথা শুনতে হবে। যাতে করে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সব ভোটার যাতে মুক্তভাবে ভোট দিতে পারে। ভোট যাতে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতার মাধ্যমে গণনা করা হয়। আর সর্বশেষ হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য ফল। যাতে সব রাজনৈতিক দল এমনকি যে দল বিজয়ী হয়নি সেই দলও যাতে ফলকে মেনে নেয়।’ 

রবার্ট সি ডিকসন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ভবিষ্যৎ বোঝা যায়। সকল দলের প্রতিশ্রুতি থাকবে স্বাধীন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে সহযোগিতা করবে। সেই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক ও নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন আগামী বছর নির্বাচন প্রতিযোগিতার তদারকিতে কাজ করবে।’ 

স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, ‘শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা যে পরিমাণ সাহসিকতা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে আমি মুগ্ধ।’ 

গত অর্ধ শতকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেক বদলেছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন বলেন, ‘ব্রিট বাংলা বন্ধন-এর মাধ্যমে দুই দেশের বিদ্যমান সবকিছুর মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী। এ ছাড়া নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, করোনা, বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে দুই দেশ বন্ধু ও অংশীদারির মাধ্যমে কাজ করছে।’ 

তিনি বৈশ্বিক কৌশলের অংশকে মাথায় রেখে ব্রিটেন সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘গত বছর ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সমন্বিত পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করেছি। আর এর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল। যাতে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ 

দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার বিষয় উল্লেখ করে রবার্ট সি ডিকসন বলেন, ‘২০২১ সাল বাংলাদেশ ‍ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের জন্য খুবই ভালো বছর ছিল। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ডেভেলপমেন্টের (সিএসজি ২১) অংশ হিসেবে ১৩ বছর পর ব্রিটিশ রাজকীয় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। সে সময়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও চলতি সপ্তাহে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে কৌশলগত পর্যায়ের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য।’ 

আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশ কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে যাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হয়। তবে এখানে বড় শর্ত হচ্ছে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নয়ন।’ 

কোভ্যাক্সের আওতায় ৪১ লাখ কোভিড টিকা দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, ‘শিগগিরই আরও টিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে যুক্তরাজ্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত