Ajker Patrika

এখন আইন দিয়েই অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়: বিচারপতি মতিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা জন্য তৈরি আইন দিয়েই মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন। আজ শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। 

সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস বন্ড লিগ্যাল রিসার্চের আয়োজনে ‘মানবাধিকারের ধারণা ও বাস্তবতা: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারটি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় বলে সংগঠনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। 

আবদুল মতিন বলেন, ‘সংবিধানের অনেক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকার অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই।’ 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অনেক আপত্তি থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইন তৈরি হয় মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য। কিন্তু আজ দেখা যায়, আইন দিয়ে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়।’ 

বিচারপতি মতিন বলেন, ‘পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়। নির্বাচনে এমনভাবে ‘ঠ্যাংগায়’ (পিটায়), যেন কেউ ভোট কেন্দ্রের আশপাশে আসতে না পারে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার দরকার।’ 

 ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা হয় না। কারণ নির্বাচনে মানুষ তার মৌলিক নাগরিক অধিকার ভোট প্রদান করতে পারে না।’ 

সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন বলেন, ‘দেশের জনগণ সবচেয়ে নিগৃহীত, নিপীড়িত আজ। দেশে আজ বাক-স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংসদের এমপিরা নির্বাচনের সময় রাস্তা-ঘাট করার কথা বলে, কিন্তু ভালো আইন প্রণয়নের করা বলে না। বিচারকদের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কাজ করার কথা। এত গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট থেকে সুয়োমোটো (আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা) হয় না।’ 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগাল রিসার্চের প্রধান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মাসদার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ প্রমুখ। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে—এমন কয়েকটি সংগঠনের তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৩১ জন। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ৬৩ জন ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে গুম হয়েছেন ৩২ জন। আর প্রথম ১১ মাসে হেফাজতে ৯৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।’ 

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজকরা যে সাহস করে এই দুর্দিনে মানবাধিকার নিয়ে সেমিনার করছে, তাদের ধন্যবাদ জানায়। আজ প্রশ্ন আসে বিচার ব্যবস্থা কি স্বাধীন। অথচ বিচার বিভাগ স্বাধীন হাওয়ার কথা ছিল। প্রত্যেক মানুষের সম্মানজনক মৃত্যু অধিকার আছে। প্রাকৃতিকভাবেই আল্লাহ প্রদত্ত অনেক অধিকার আছে মানুষের। রাসুল সা. বিদায় হজের ভাষণের সময় মানুষের জীবন রক্ত সম্মান পবিত্র ঘোষণা করেন। এটা মানুষের মৌলিক মানবাধিকারে সর্বউত্তম কথা। ১৯৪৮ সালে মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার আজ ৭৫ বছর পরও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নেই। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকার অধিকারের কথা বলা আছে এবং মানুষের অধিকার রক্ষা করার কথা বলা আছে। 

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ অবসরপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাসদার হোসেন বলেন, দেশের জনগণ সবচেয়ে নিগৃহীত নিপীড়িত আজ। আমরা মুক্ত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করলেও পদে পদে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হচ্ছে। দেশে আজ বাক-স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, সুশাসন, ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংসদের এমপিরা নির্বাচনের সময় রাস্তা ঘাট করার কথা কিন্তু ভালো আইন প্রনয়নের করা বলছে না। এত গুম খুন মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট থেকে সোমোট হয় না। বিচারকরা ভয়-ভীতির ওপেক্ষা করে কাজ করার কথা। বিচার বিভাগ স্বাধীন করা মনে হয় ভুল হয়েছে। বর্তমান বিভাগের অবস্থা থেকে কথা বললাম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বে যাঁরা আছে তাদের মানবাধিকার জ্ঞানের ঘাটতি আছে। রাষ্ট্র আজ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ভোট দেওয়া মৌলিক নাগরিক অধিকার। মানুষ ভোট দিতে পারছে না। নির্বাচন করারও অধিকার নাই। যে কারণে মানুষ আজ ভোট দিতে যায় না। 

অধ্যাপক নসরুল্লাহ বলেন, দেশের পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মানুষ নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত