Ajker Patrika

নাগরিকের তথ্য ফাঁস

তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে ইসি

  • তথ্য ফাঁস ঠেকাতে তোড়জোড় ইসির
  • ‘হিট’ নিয়ন্ত্রণে সীমা বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি
  • এনআইডির তথ্য নয়, চালু হচ্ছে ম্যাচ-নো ম্যাচ
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

একের পর এক নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁসের ঘটনার পর যেন টনক নড়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তথ্য ফাঁস বন্ধে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ‘হিট’ নিয়ন্ত্রণে ‘ক্যাপিং’, অর্থাৎ ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি চালু করার কথা ভাবছে কমিশন। এ ছাড়া চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এনআইডির বিশদ তথ্য দেখতে না দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য যাচাইয়ের সুযোগের পরিবর্তে শুধু এনআইডি নম্বর সঠিক কি না, তা যাচাই করতে পারবে।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় প্রতিনিয়ত জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে থাকা নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হচ্ছে।

ইসির সূত্র বলছে, ক্যাপিং পদ্ধতি চালু করা হলে, তথ্য যাচাইয়ে নির্ধারিত সংখ্যকের বেশি হিট হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সেবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এমন হলে পরবর্তী সময়ে ইসিকে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে সে প্রতিষ্ঠান আবার এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন পদ্ধতিতে এনআইডি নম্বর দিয়ে খোঁজ করলে নাগরিকের তথ্য সঠিক থাকলে ‘ম্যাচ’ আর সঠিক না থাকলে ‘নো ম্যাচ’ দেখাবে। হিটের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া আর শুধু নম্বর যাচাইয়ের সুযোগ রাখা—এ পদ্ধতি দুটি কার্যকর হলে তথ্য ফাঁসের ঘটনা কমবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

সূত্র জানায়, হিটের সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি চুক্তিপত্রের নীতিমালায় সংযুক্ত করা হবে। এটি কার্যকর হলে চুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চাওয়া হবে, প্রতিদিন কত তথ্য যাচাই করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এনআইডি যাচাই সেবা নিচ্ছে, তাদের কাছে এটি জানতে চাওয়া হতে পারে কিংবা গত কয়েক মাসের তথ্য যাচাইয়ের পরিমাণ বা সংখ্যা দেখে, সেখান থেকে গড় ঠিক করে দেওয়া হতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, ১৫ মে থেকে ম্যাচ-নো ম্যাচ পদ্ধতি বাস্তবায়নে যেতে চেয়েছিল ইসি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এটি বাস্তবায়নের জন্য এখনই পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য ইসির কাছে সময় চেয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্যাপিং সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা হিট লিমিট করে দেব। ধরুন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য যাচাইয়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার হিট করা হলে, সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে বলা থাকবে ১৪ হাজার থেকে ২০ হাজার। যদি কোনো দিন এ সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। ইসির কাছে আবেদন না করা পর্যন্ত তা আর ওপেন হবে না। আমরা এভাবে চিন্তা করছি।’

গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকেও তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ বিষয়ে তাঁরা কী বা কতটুকু ব্যবস্থা নেবেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাও হয়তো আগে এদিকে নজর দিইনি অথবা যাঁরা আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, তাঁরাও নজর দেননি। মনোযোগ না দেওয়ার কারণে এগুলো হচ্ছিল। যারা দুষ্টু, তারা তো ফাঁকফোকর খোঁজে। এখন আমার চাওয়া হচ্ছে, সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত তাদের সিস্টেম মনিটরিং, অডিট ফলোআপ করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাগত নিশ্চয়তা লাগবে বলেও জানিয়েছেন এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘যারা সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করেছে, তাদের নাম-ঠিকানা আমার কাছে থাকবে। যাতে বোঝা যায়, তথ্য কোথা থেকে ফাঁস হচ্ছে। ধরুন, একটি কোম্পানি দেশের ১০০টি জায়গায় সিস্টেম চালু করেছে। সেখানকার কোনো একটি ফাঁস হলে আমরা তাকে ধরব।’

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, তাঁরা আলোচনা করে সেরা ধারণাগুলো নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যেও ত্রুটি থাকতে পারে। নজরদারির মধ্যে থাকলে যেখানে ত্রুটি দেখা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করা হবে।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা আলোচনায় আসে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে মূলত জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন-সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের (ওআরজিবিডিআর) ওয়েবসাইট থেকে। ৭ মে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ব্র্যাক ব্যাংক থেকে তথ্য ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি। এ কারণে প্রতিষ্ঠান দুটির এনআইডি যাচাই সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে শর্ত সাপেক্ষে ব্র্যাক ব্যাংকের এনআইডি যাচাই সেবা চালু করেছে কমিশন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছে ইসি। এ ছাড়া ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সেবা বন্ধ করার পর তা পুনরায় চালু করা হয়েছে। আর চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও ডিজিকনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে ইসি। বর্তমানে ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান ইসির কাছ থেকে তথ্য যাচাই সেবা নিতে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত