Ajker Patrika

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মিলেছে আশ্বাস, জানালেন সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৪৩
Thumbnail image

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিভিন্ন সংগঠনের ৪০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। 

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলেছে, যা এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় অব্যাহত আছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক। 

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, তবে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে আমরা মাঠে থাকব। নানা সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু তা পূরণ হয় না। তাই পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য মাঠে থাকব।’ 

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘আমরা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটি দাবি করেছি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এক দিন সরকারি ছুটি দাবি করেছি। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে উপলক্ষে আমরা এক দিনের ছুটি দাবি করেছি।’ 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্র‍ত চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ওই সময়ে তো কোনো সরকার ছিল না, সেটাকে নিবৃত করার মতো কোনো ম্যাকানিজম ছিল না। তাঁরা শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখতে চায় না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তিনি রাখতে চান এবং দেখতে চান। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যত ক্ষোভ আছে তা দূর করব এবং পাশে থাকব।’ 

ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দন দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। উনি আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ওনার কথা বিশ্বাস করি। উনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বলেছেন শুরু করে দেব ভালো কিছু করার জন্য। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা সুখে শান্তিতে থাকবেন এই আশ্বাস উনি দিয়েছেন।’ 

আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওনার আশ্বাস যদি পূরণ না হয় তাহলে আমরা বিবেচনা করে দেখব পরবর্তীতে।’ 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন সংখ্যালঘু বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ছবি: পিআইডির সৌজন্যেবাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, উনি এমন একটা রাষ্ট্র করতে চান যেখানে আর কোনো দিন মন্দির পাহারা দিতে হবে না। আমরা আশান্বিত আমাদের দাবি-দাওয়া যাতে বাস্তবায়িত হয়। আমরা আরেকটা কথা বলেছি যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিচার হয় না। উনি আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’ 

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অর্থী দে বলেন, ‘আমাদের সকল দাবি বাস্তবায়নের জন্য আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তাঁদের এই সময়টুকু দেব। আমরা খুব দ্রুত সুষ্ঠু সমাধানের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি বিচার-বিবেচনা করে দেব। তাঁরাও আমাদের বলেছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানে আসবে।’ 

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৮ দফা

১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক। 
২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা হোক। 
৩. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে অনতিবিলম্বে প্রত্যর্পণ করা হোক। 
৪. জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারে, সংসদে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। 
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতিমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)। 
৬. বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতিমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)। 
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা হোক। 
৮. হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী— এ তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হোক। 

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের ৮ দফা

১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
২. অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। 
৩. সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। 
৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। 
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। 
৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে। 
৭. সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করতে হবে। 
৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত