Ajker Patrika

নির্বাচনের সময় নিয়ে নানা মত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
Thumbnail image

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্র সংস্কার। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে ছয়টি কমিশনও গঠন করা হয়েছে। সরকার এসব কমিশনের মাধ্যমে সংস্কারের একটি রূপরেখা দাঁড় করিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি পথরেখা দেবে, এমন দাবি তুলছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে ঠিক কত দিনের মধ্যে সরকার সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে নির্বাচন দিতে পারবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা।

নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে সরকার, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন মহল থেকে যা বলা হচ্ছে, তাতে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিউইয়র্ক রওনা হওয়ার দিন গত ২৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন। তিনিও এ-ও বলেন, এ জন্য তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবেন। 

সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের পর নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের  নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের আলোচনা সামনে চলে আসে। এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্যটি তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’। 

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য তুলে ধরে ভয়েস অব আমেরিকা ড. ইউনূসের কাছে জানতে চায়, এটা কি ধরে নেওয়া যায় যে এই সরকারের মেয়াদ ১৮ মাস? এর উত্তরে ইউনূস বলেন, ‘এটা সরকারের মত না। সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে, সেটা সরকারকে বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, তখন সেটাই হবে তারিখ।’ 

গতকাল মঙ্গলবার ভয়েস অব আমেরিকা বাংলায় সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে। এতে ড. ইউনূস জানান, উপদেষ্টা পরিষদে এটা (সরকারের মেয়াদ) নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে সেনাপ্রধান সাক্ষাৎ করেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্ক থেকে ফিরে গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাঁরা ঠিক কী আলাপ করেছেন, তা কোনো পক্ষ প্রকাশ করেনি। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, একটি পরিবর্তনের পর নতুন রাজনৈতিক সরকার গঠিত হবে। এমন প্রত্যাশা থেকেই সবাই এ বিষয়গুলো জানতে চাইবে, এটা স্বাভাবিক। 

আজকের পত্রিকাকে গতকাল সাব্বীর আহমেদ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর সেনাপ্রধান একটি অবস্থান থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্যকে গুরুত্বহীন মনে করার কোনো কারণ নেই। 

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিএনপি তখন সরকারকে সংস্কারের জন্য যতটা প্রয়োজন, ততটা সময় দেওয়ার কথা জানায়। পরে দলটি এই অবস্থান সংশোধন করে। 

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যতটা দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলে বলেন, সংবিধান সংশোধনসহ বড় ধরনের সংস্কারগুলো এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচিত জাতীয় সংসদের। 

ড. ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গেলে সেখানেও প্রায় সবাই তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর কী চিন্তাভাবনা? 

বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়েছে, সেই কমিশনগুলোর রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় পরামর্শমূলক সভা শেষে জাতীয় নির্বাচনের পথরেখা (রোডম্যাপ) দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। 

গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা  বলেন, ‘ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা ডিসেম্বরের শুরুতে অথবা জানুয়ারির শুরুতে তাদের সুপারিশগুলো দেবে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আরও কিছু আলোচনার প্রয়োজন আছে। তখনই কিন্তু রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে। তার আগে রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে না।’ 

উপদেষ্টা বলেন, নিউইয়র্কে সবাই জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে যাচ্ছে। তাঁদের বলা হয়েছে, যুবসমাজ সংস্কার চায়। সংস্কারের পর নির্বাচন দিয়ে সরে যাবে। এক দিনও বাড়তি থাকবে না। 

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, সরকারের সংস্কারসহ অনেক কাজ বাকি। তাই সেনাপ্রধান যা বলেছেন, তা থেকে কম সময় নেওয়ার সুযোগ হয়তো সরকারের নেই। আবার নির্বাচন খুব বেশি পেছাতেও তারা পারবে না। সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কাজ অন্তর্বর্তী সরকার হাতে নিয়েছে, তা শেষ করতে না পারাটা সরকারের জন্য একটি বড় ব্যর্থতা বলে গণ্য হওয়ার ঝুঁকি আছে, এমনটাই মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত