Ajker Patrika

সংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে: সিএনএকে ড. ইউনূস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৫
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সিএনএ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। ছবি: স্ক্রিনশট
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সিএনএ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। ছবি: স্ক্রিনশট

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে প্রথম নির্বাচন। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কার ও ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিএনএ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংস্কারের মূল দায়িত্বে রয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সিএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে এর কোনো অর্থ নেই। আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি এসে গেছি। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, এর অপব্যবহার করা হয়েছে এবং বিকৃত করা হয়েছে, তাই অনেক কিছু সংস্কারের প্রয়োজন।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার ছিল গণ-অভ্যুত্থানের সময় জাতির যে আকাঙ্ক্ষা, তা নিশ্চিত করা। এগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।’

নির্বাচন প্রথম, তারপর সংস্কার; নাকি প্রথমে সংস্কার, তারপর নির্বাচন—এই প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যদি আমরা নির্বাচন দিয়ে শুরু করি, তাহলে আমাদের সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বিচারের প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাহলে সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে। কল্পনা করুন, অন্য দুটি কাজ না করে আপনার নির্বাচন হয়েছে। তখন আপনি আবার সেই পুরোনো সমস্যায় ফিরে যাবেন।’

গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। স্বৈরতন্ত্র, ব্যাপক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কঠোরভাবে ভিন্নমত দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তাঁর অনুপস্থিতিতেই বিচার চলছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে অনুরোধ করা হলেও ভারত এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সাড়া দেয়নি। এ ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।

এ ছাড়া শেখ হাসিনা অনলাইনে তাঁর সমর্থকদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানোর পর ঢাকা থেকে নয়াদিল্লিকে তাঁকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ‘(মোদি) ব্যাখ্যা করেছেন যে (ভারত) সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো যুদ্ধে নামছি না। আমরা বলেছি, আপনারা তাঁকে রাখতে পারেন, আমাদের বিচার চলবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে তাঁকে যেন বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেওয়া না হয়। তাঁর এখনো বাংলাদেশে অনেক অনুসারী রয়েছে, তারা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।’

শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ঢাকার আঞ্চলিক মিত্রতায় নয়াদিল্লি থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটি পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

গত মার্চে ড. ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে চীনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে তুলে ধরেন। ড. ইউনূস তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেছেন, সিদ্ধান্তগুলো অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বিনিয়োগে আগ্রহী যে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই।’ তিনি এটিকে ‘ব্যবসার একটি নিরপেক্ষ খেলা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এটি বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে, কেবল চীনের জন্য বিশেষ কিছু নয়। এই সুযোগ ভারতসহ অন্য যে কোনো দেশের জন্যও উন্মুক্ত।’

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস গণ-অভ্যুত্থানের পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি স্মরণ করেন, ‘ছাত্রনেতারা আমাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন যে এত রক্ত ঝরেছে...এই কথাগুলো আমাকে নাড়া দেয়...তারা এত আত্মত্যাগ করার পর আমারও কিছু করা উচিত। তাই আমি এ দায়িত্ব গ্রহণ করি।’

৮৫ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নির্বাচনের পর সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের মাঝেও তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর নেতৃত্ব একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে, এটি আর পথ হারাবে না। গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। তরুণদের উচিত তাদের ভোট ও আকাঙ্ক্ষা ব্যালট বাক্সে ঢেলে দেওয়া। আমি আশা করি একটি ভালো সরকার আসবে, যা গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলবে।’

ড. ইউনূস তাঁর তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই সফরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষা এবং এলএনজি, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শিবির নেতা, ছাত্রলীগ সন্দেহে মারধর করল ছাত্রদল

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: ভাতা দ্বিগুণ হয়ে ১২০০, ঘণ্টায় সম্মানী ২৫০০ থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত