Ajker Patrika

জলোচ্ছ্বাসে ৯ জেলার আড়াই হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ভেসে গেছে ৯০০ গবাদিপশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশ মুক্ত। তবে তার আগে এর প্রভাবে জোয়ারে দেশের উপকূলীয় নয় জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সচিবালয়ে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানান, অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলার লালমোহন উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন একজন।

শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাউসারা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পূর্ণিমার সময় এই ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় সেটির প্রভাবে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। এ জন্য উপকূলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর বাংলাদেশে আঘাত হানার কোনো ভয় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঝড়ের রেশ থাকবে। শুক্রবার পর্যন্ত জোরালো বাতাস থাকতে পারে, হতে পারে ভারী বৃষ্টি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, গতকাল বুধবার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বাংলাদেশে আসার কোনো সুযোগ নেই, এটা নিশ্চিত। আমাদের এখানে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেওয়া আছে, সেটি আমরা উপযুক্ত সময়ে তুলে নেব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করেছেন তারা। পরে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে। ২৭টি উপজেলায় কী কী ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়নি।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে জোয়ারের পানি বাড়ায় উপকূলীয় নয় জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাড়ে ১৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার গতকাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন বলে জানান এনামুর। তিনি বলেন, ঝড় আঘাত হানলে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সেগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভেঙে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি অনেকগুলো জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে, সেসব পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। বাঁধগুলো অনেক পুরোনো। এ জন্য ডেলটা প্ল্যানের আওতায় টেকসই বাঁধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এনামুর জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চর বেড়ি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ১০- ১২টি মাছের ঘের এবং কয়েক একর সবজি বাগান পানির নিচে চলে গেছে। ভোলার একটি চরে প্রায় ২৫০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জোয়ারের পানিতে ৯০০ গরু, মহিষ ভেসে গেছে।

এ ছাড়া জোয়ারের পানি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার ২০- ২১টি গ্রামে ঢোকায় দুই হাজার ৭০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠায় রাস্তাঘাট ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য দেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত