Ajker Patrika

ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল নাকি সাশ্রয়ী

ইয়াসির আরাফাত
ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল নাকি সাশ্রয়ী

এককথায় প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা ইস্তাম্বুলের কিছু বিষয় আছে ব্যয়বহুল, আবার কিছু বিষয় আছে তুলনামূলক খুবই সস্তা। আবার কিছু বিষয় আছে ফেয়ার প্রাইজ।

হোটেল ব্যয়

যেকোনো শহর ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রথমেইযেটা দরকার, তা হলো থাকার জায়গা বা অ্যাকোমোডেশন। ইস্তাম্বুল শহরে এক রাত থাকার জন্য হোটেলে কেমন ব্যয় হয়? এটিও এককথায় বলা সম্ভব নয়। ইস্তাম্বুল বিশাল আকারের একটি শহর। এর রয়েছে অসংখ্য মহল্লা। একেক মহল্লায় হোটেলের দামে ভিন্নতা রয়েছে।

তবে পর্যটকেরা সাধারণত ঐতিহাসিক জায়গাগুলো কিংবা তার আশপাশে থাকেন। তাই সেসব জায়গার কথাই উল্লেখ করছি।

আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে, তাহলে হোটেলের জন্য ইস্তাম্বুলের সেরা

দুটি জায়গার একটি হচ্ছে সুলতান আহমেত। এটি ইস্তাম্বুলের হিস্টোরিক সেন্টার। এখান থেকে হেঁটে অনেক জায়গা ভ্রমণ করা যায়। আরেকটি জায়গা হলো এমিনোনু। এটি ট্রাভেল হাব। ইস্তাম্বুলের যেদিকেই আপনি যাওয়া-আসা করুন না কেন, এই এলাকা হয়েই আপনাকে যেতে হবে। আমি ছিলাম সুলতান আহমেত এলাকায়। খুব ভালো মানের একটি হোটেলে পাঁচজন পূর্ণ বয়স্ক এবং একটি শিশুর জন্য দুটি রুম নিয়েছিলাম। প্রতি রাতের জন্য রুমগুলোর ভাড়া ছিল ৫৫ ইউরো। সঙ্গে ছিল কমপ্লিমেন্টারি সুস্বাদু নাশতা। খুঁজলে এর থেকেও সস্তা হোটেল পাওয়া যায় সেখানে। তবে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য মানসম্মত হোটেল বেছে নিতে হয়েছিল। একলা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে থাকার জন্য আরও কম ব্যয়ে সেখানে হোটেল রুম পাওয়া যায়।

পরিবহন ব্যয়

ভ্রমণে দ্বিতীয় ব্যয় হচ্ছে পরিবহন। ইস্তাম্বুলে এ খাতে খরচ বেশ সস্তা। আমার পরামর্শ হচ্ছে, ইস্তাম্বুলে নেমে একটি সিটি কার্ড করে নিন। সেই কার্ড টপ আপ করে ব্যবহার করতে থাকুন। প্রতিটি স্টেশনে টপ আপ করার জন্য সেলফ সার্ভিস মেশিন রয়েছে। এই একটি সিটি কার্ড ব্যবহার করে ইস্তাম্বুল শহরে বাস, ট্রাম, মেট্রো, ট্রেন, ফেরিসহ সব ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করা যায়। প্রতি রাইডে ভাড়া পড়বে মাত্র ৩৫ টার্কিশ লিরা অর্থাৎ ইউরোর ৭০ সেন্ট। এতে এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৯৫ টার্কিশ লিরা অর্থাৎ ২ ইউরোর কম দিয়ে মেট্রোরেলে সেন্টারে যাওয়া-আসা করতে পারবেন।

শপিং ব্যয়

শপিংয়ের জন্য ইস্তাম্বুল খুবই সুন্দর শহর। এটি বিখ্যাত বিভিন্ন ধরনের পাথরের গয়নার জন্য। এখানে খুব সুন্দর পাথরের গয়না পাওয়া যায় কম দামে। তা ছাড়া স্মারক হিসেবে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী নকশা দিয়ে তৈরি অনেক ধরনের জিনিস মোটামুটি সাশ্রয়ী দামেই পাওয়া যায়।

খাবারের ব্যয়

খাবারের ক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল শহর। তবে সস্তায়ও খাবার পাওয়া যায় শহরটিতে। সে ক্ষেত্রে ঘণ্টাখানেকের যাত্রা করে যেতে হবে সিটি সেন্টার থেকে অনেকটাই দূরে, সেটা আসলে বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। সেন্টারে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করলে প্রতিবেলা জনপ্রতি ব্যয় হবে ১৫ থেকে ২০ ইউরো। এ ক্ষেত্রে কিছুটা অর্থ সাশ্রয় করার জন্য পরামর্শ হলো, এমন হোটেলে উঠুন, যেখানে কমপ্লিমেন্টারি সকালের নাশতা পাওয়া যাবে। সকালে ভারী নাশতা করে বের হয়ে বিকেলে স্ন্যাকসজাতীয় কিছু খেয়ে নিয়ে রাতের খাবার খাবেন। ইস্তাম্বুলে স্ন্যাকসজাতীয় অনেক ধরনের খাবার পাওয়া যায় বেশ কম দামে। প্রতিদিন দুই বেলা রেস্টুরেন্টে খেতে হলে অনেক খরচ হবে।

টিকিটের দাম

এই শহরে ট্যুরিস্ট বিভিন্ন অ্যাট্রাকশনে প্রবেশ করার জন্য চড়া মূল্যের টিকিট কাটতে হয়। অ্যাট্রাকশন ভিজিটের জন্য ইস্তাম্বুল অনেক ব্যয়বহুল। সুলতানদের বাসস্থান তোপকাপি প্রাসাদে প্রবেশের টিকিট জনপ্রতি প্রায় ৫০ ইউরো, গালাতা টাওয়ারে ২৫ ইউরো, ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন ২৮ ইউরো, দোলমাবাচে প্রাসাদ ৩০ ইউরো এবং আয়া সোফিয়া দেখতে ৩০ ইউরো দিয়ে টিকিট কিনতে হবে। প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুল গেলে আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, ব্যক্তিগত আগ্রহে দু-একটি জায়গা দেখুন।

ঐতিহাসিক গন্তব্যগুলো দেখার টিকিটের দাম বেশি হলেও বিভিন্ন ট্যুর অ্যাকটিভিটি বেশ সস্তা। বসফরাসে শিপে করে বিভিন্ন লাইভ শোসহ তিন ঘণ্টার ডিনার ক্রুজের মূল্য মাত্র ২০ ইউরো, বসফরাসে দুই ঘণ্টার সানসেট ক্রুজ ৫ থেকে ৬ ইউরো, দুই ঘণ্টার সুফি সামা নাচের শো মাত্র ২০ ইউরো। এ ছাড়া এমন অনেক অ্যাকটিভিটি রয়েছে, যেগুলো মোটামুটি সাশ্রয়ী মূল্যে আপনি দেখতে পারবেন।

সব বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, ইস্তাম্বুল যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি সাশ্রয়ীও বটে। তাই এই শহরকে ‘বাই ডিফল্ট ব্যয়বহুল ডেস্টিনেশন’ বলা যায় না। তবে তা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত