Ajker Patrika

সাত মহাদেশে বাংলাদেশের জহির

পাসপোর্টে সিল পড়েছে ৭৬টি দেশের। ঘুরেছেন সাতটি মহাদেশ। কখনো স্কুবা ডাইভিং করে ডুব দিয়েছেন সাগরের নীল গভীরে, কখনো মেঘের রাজ্য ছুঁয়ে ৪০০ মিটার হাইকিং করেছেন অ্যান্টার্কটিকার বেসক্যাম্পে। এই পর্যটকের নাম জহির ইসলাম। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৩: ০৯
সাত মহাদেশে বাংলাদেশের জহির

জহির ইসলামের জন্ম ঢাকায়। তিন ভাই-বোন। বাবা ব্যবসা করেন। ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে জহির পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতক করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ড থেকে, ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন অ্যাংলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেকটি পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে তাঁর পরিবার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিজস্ব কমপ্লায়েন্স ফার্ম আছে তাঁর।

শুরু যেভাবে

আনুষ্ঠানিক ভ্রমণজীবনের শুরু ১৯৯৮ সালে, সিলেটের জাফলং সফরের মাধ্যমে। নৌ স্কাউটের সদস্য হিসেবে অনেক জায়গায় ক্যাম্প করেছেন তিনি। দেশের বাইরে তাঁর প্রথম ভ্রমণ ২০০৬ সালে, স্কটল্যান্ডে। ২০০৭ সালে প্যারিস ভ্রমণের পর দেশ-বিদেশ ঘোরার নেশাটা তাঁর মাথায় বেশ ভালোভাবে চেপে বসে। সে কারণে ওই সময়ে একদম একা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেন। জহির বলছিলেন, ‘এই পৃথিবী ঘুরে আমি যা শিখেছি, তা তিনটি ডিগ্রি আর সারা জীবন স্কুল থেকেও শিখতে পারিনি। এই ভ্রমণ আমাকে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।’

ভ্রমণ-অফিস একসঙ্গে

এই লেখার জন্য যখন তথ্য সংগ্রহ করছিলাম, সে সময় তখন জহির লাওসের রাজধানী ভিয়েন্টিন থেকে কম্বোডিয়ায় যাচ্ছিলেন। যেকোনো সফরে সঙ্গে ল্যাপটপ থাকায় অফিসের কাজও তাঁর হয়ে যায়। অ্যান্টার্কটিকায় বসেও তিনি ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং করেছেন। ভ্রমণে তাঁর স্ত্রী ছিলেন অন্যতম অনুপ্রেরণা ও সঙ্গী। দুজনে মিলে তাঁরা বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

হাইকিং

সর্বোচ্চ ৪০০ মিটার হাইকিং করেছেন তিনি। প্রথমটা ছিল সুইজারল্যান্ডের আল্পসে। দ্বিতীয়টা ছিল অ্যান্টার্কটিকার বেসক্যাম্পে। দ্বিতীয়বারের হাইকিং ছিল বেশ কষ্টকর। বরফ ঢাকা পাহাড়ে নিজেকে রশিতে বেঁধে সতর্ক পায়ে ট্রেক শেষ করতে হয়েছে। তবে পাহাড়ে উঠে পরিশ্রম সার্থক মনে হয় তাঁর।

জহির ইসলাম
জহির ইসলাম

অ্যান্টার্কটিকায়

অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের বিভিন্ন প্যাকেজ আছে। জহির বেছে নিয়েছিলেন বেসক্যাম্পে রাতে থাকা যায় এমন একটি প্যাকেজ। সেখানে রাতে ঘুমানোর আগে শাবল দিয়ে বরফ কেটে গর্ত খুঁড়তে হয়েছে। পোলার ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পেতে এই ব্যবস্থা। সেই বরফের গর্তে চার স্তরের পোশাক পরে নামতে হয়েছে। মুখের যেটুকু স্লিপিং ব্যাগ থেকে বের হয়ে ছিল, তাতে তিনি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলেন। সেই রাতের অনুভূতির বিষয়ে জহির বলেন, ‘সেই রাতে পরিষ্কার খোলা আকাশের নিচে প্রতিটা তারা জ্বলজ্বল করছিল। দূরে ডাকছিল পেঙ্গুইন। আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। মনে হয়েছিল, মানব জন্ম সার্থক।’

সাত মহাদেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা একেবারেই আলাদা। দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছিলেন তিনি অ্যান্টার্কটিকা সফরের জন্য। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। সে ভ্রমণের মুগ্ধতা জহির ছড়িয়ে দিতে চান অন্যদের মাঝে।

রোমাঞ্চকর স্কুবা ডাইভিং

স্কুবা ডাইভিংয়ে দুটি রোমাঞ্চকর মুহূর্তের কথা জহিরের মনে আজও দাগ কেটে আছে। প্রথমটি মিসরে। লোহিতসাগরের অতল জলরাশিতে ডুব দিয়ে বিশাল এক হোয়েল সার্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। কত বড় প্রাণী, কিন্তু কী আশ্চর্য শান্ত তার মেজাজ! দ্বিতীয়টি, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। একদম পায়ের সঙ্গে বিশাল এক সামুদ্রিক সাপ লেগে পড়েছিল। বিষধর সেই সাপ দেখে সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলেন জহির। আরেকবার থাইল্যান্ডের ফুকেটে ডাইভিংকালে এক জেলি ফিশ পায়ের সঙ্গে এমনভাবে লেগে ছিল, ডাইভিংয়ে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তখন আবার সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। তাই সেবার ডাইভিং আগেই শেষ করে ফিরে আসতে হয় জহিরদের।

লোহিতসাগরের ৩৫ মিটার গভীরে প্রায় শতবর্ষ ধরে ডুবে আছে এসএস থিসলেগর্ম নামে একটি জাহাজ। সেই জাহাজের খোলের ভেতর ঢুকে জহির আবিষ্কার করেন, সেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে ভিডিও করতে গিয়ে একটু বেখেয়ালে তিনি পুরো দল থেকে আলাদা হয়ে যান। ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাথা ঠান্ডা রেখে ধীরে ধীরে জাহাজের খোলের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে এসে অন্যদের দেখা পান। রোমাঞ্চকর সেই ডাইভিংয়ের কথা তিনি কোনো দিন ভুলবেন না বলে জানালেন। জহির মেরিন ফটোগ্রাফিতে দক্ষ। শখের বশে মেরিন ফটোগ্রাফি করেন। ডাইভিংয়ের সময় ছবি, ভিডিও করার জন্য দুটি ক্যামেরা প্রস্তুত থাকে তাঁর।

নামিব মরুভূমিতে

বয়স ৫৫ থেকে ৮০ মিলিয়ন বছর! জায়গাটার নাম নামিব মরুভূমি। সাগরের কোল ঘেঁষে পৃথিবীর পুরোনো এই মরুভূমির অবস্থান। আবহাওয়া এতটাই শুষ্ক যে নামিবিয়ার বিখ্যাত ডেডভ্লেইতে প্রায় ৯০০ বছরের পুরোনো গাছপালা শুকিয়ে মমিফাইড অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ওয়েলউইচিয়া নামে এক প্রকার গাছ আছে, যা এক হাজার বছরের বেশি বাঁচে। সেসব আশ্চর্য জগৎ ঘুরে জীবনের ভিন্ন অর্থ দাঁড় করান জহির।

জহির ইসলাম
জহির ইসলাম

ভ্রমণে যেসব ভুল করবেন না

ভ্রমণ করার জন্য সবার আগে চাই সুন্দর একটি পরিকল্পনা। কোথায় যাবেন, কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন—এসব বিষয়ে একদম পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই বলে জানান জহির। বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা হতে হবে। দুই দিন, তিন রাত এই ধরনের প্যাকেজে আসলে কতটুকু একটা দেশ দেখা যায়, তা ভাবতে হবে। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনে ভোলা যাবে না বলে জানান জহির।

চাই ই-ভিসা

পৃথিবীর সাত মহাদেশের অনেক দেশ ঘুরে বেড়ালেও জহিরের বুকে আছে এক টুকরা বাংলাদেশ। সে কারণে পর্যটনে বাংলাদেশ ভালো করুক, সেটা চান মনেপ্রাণে। বিদেশিদের বেশি বেশি এ দেশ ভ্রমণে উৎসাহিত করা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। আর এ সবকিছু সুন্দরমতো করতে ই-ভিসা চালু করার প্রস্তাব তাঁর। প্রযুক্তির এই যুগে কাউকে বাংলাদেশে আসতে ভিসার জন্য পাঁচ দিন ব্যয় করতে হবে, সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। পৃথিবীর সব দেশের জন্য না হলেও নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য ই-ভিসা চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন জহির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত