Ajker Patrika

তারপর যেতে যেতে যেতে...আমিশদের গ্রাম

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৪, ১৭: ২৭
তারপর যেতে যেতে যেতে...আমিশদের গ্রাম

নিউ ইয়র্ক টু ল্যাংকেস্টার
পেন স্টেশন থেকে ল্যাংকেস্টারের ট্রেনে উঠতে হবে। সকাল ৯টা ৯ মিনিটে ট্রেন। সুতরাং বাস আর সাবওয়ের জন্য বেশ খানিকটা সময় বরাদ্দ রেখে আমি আর সনকা সকাল সোয়া সাতটায় কুইনস ভিলেজ থেকে বের হলাম। গন্তব্য আমিশ ভিলেজ। আরো স্পষ্ট করে বললে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাংকেস্টার কাউন্টির আমিশ ভিলেজ।

মে মাসের মাঝামাঝি। শীত নেই। কিন্তু আবহাওয়ার কথা আগে থেকে বলা যায় না। এই বৃষ্টি, এই রোদ। এই গরম, এই শীত। তাই ব্যাগে একটা সোয়েটারেরও জায়গা হলো।

নিউইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়ায় ট্রেনে বা বাসে যাওয়া যায় ২ ঘণ্টায়। পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ার নামই তো শুনে এসেছি এতকাল। কিন্তু সেখানে আমরা যাচ্ছি না। বললামই তো, আমিশদের গ্রামটি ল্যাংকেস্টার শহরে। ট্রেনে যেতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। সে কথা তো জানি। কিন্তু তার আগে যে ফিলাডেলফিয়ার কথা একটু বলে নিতে ইচ্ছে করছে।

নিউইয়র্ক থেকে পেনসিলভানিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ফিলাডেলফিয়ায় পৌঁছানো যায় দু ঘণ্টার মধ্যে। এই শহরের নামে টম হ্যাঙ্কস অভিনীত খুবই জনপ্রিয় একটি সিনেমা তৈরি হয়েছিল হলিউডে।

শহরটি তৈরি হয়েছিল ১৬৮২ সালে। উইলিয়াম পেনই শহরটির প্রতিষ্ঠাতা, পুরো পেনসিলভেনিয়াও তো তারই অবদান, তার নামের ‘পেন’ অংশটি যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্যটির নামেই লেপ্টে আছে।

সে যাই হোক, ফিলাডেলফিয়ায় কিছুটা সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু যেহেতু সময় কম, তাই ট্রেনে সরাসরি চলে যেতে হবে ল্যাংকেস্টারে। তবে চলতি ট্রেনে বসেই ফিলাডেলফিয়া নিয়ে খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে ইচ্ছে করছে। ফিলাডেলফিয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্স হলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের এক তাৎপর্যময় ভবন। ১৭৭৬ সালে এই হল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এখানেই ১৯৮৭ সালে তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।

ফিলাডেলফিয়া শহরের কয়েকজন শিল্পীর নাম এখানে বলে রাখা অন্যায় হবে না। ব্রাডলি কুপার, ইউল স্মিথ, গ্রেইস কেলি, রিচার্ড গির, আম্বার রোজ, কোবে ব্রায়ান্টেরা এই শহরেই সন্তান। সুতরাং হলিউড আর সংগীত জগৎকে এই শহর বিমুখ করেনি।

নিউইয়র্কে ট্রেনের ঘাঁটি পেন স্টেশনে এসে পৌঁছালাম যাত্রার অন্তত ৩০ মিনিট আগে। ছিমছাম পরিষ্কার স্টেশন। ডিজিটাল দুনিয়ায় একটা মোবাইল ফোনেই যাতায়াতের সকল খোঁজখবর থাকে, তাই সহজেই খুঁজে পাওয়া গেল পেন স্টেশন।

এবার আগের কথা বলি। আমাদের এই ভ্রমণটি তিন দেশে বসবাসরত ছয়জন মানুষের সৌহার্দ্যের প্রকাশ। কানাডার টরন্টো শহরে থাকে বন্ধু পলা আর রিপন। ওদের ছেলে নীর আর বোন নিন্তুকে নিয়ে ওদের বসবাস। সনকা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। আর আমি বাংলাদেশে।

আমি যখন ঢাকায়, তখনই নিউইয়র্কে সন্তানদের কাছে যাব, এ কথা ওদের জানা হয়ে গেছে। ওরা ভেবে রেখেছিল, এবার আমার নিউইয়র্ক সফরের সময় একটা চমক থাকবে আমার জন্য।

কীভাবে ওদের মাথায় ভাবনাটা এল, সেটাও বলে রাখি। ওরা নেট সার্চ করতে করতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বুফের সন্ধান পেয়ে যায় ল্যাংকেস্টারে। ‘শেডি মেপল স্মোরগ্যাসবোর্ড’ তার নাম। নেটে সেটা দেখতে দেখতেই ওরা জেনে যায়, ওর আশপাশেই রয়েছে আমিশ ভিলেজ। তখনই ওরা সিদ্ধান্ত নেয় রথ দেখা আর কলা বেচার কাজটি একই সঙ্গে সম্পন্ন করবে। ল্যাংকেস্টারই হবে ভ্রমণের আদর্শ স্থান!

এরপর ওরা আমাকে ফোন করে জেনে নিল কবে আসছি আমি। তারপর পরিকল্পনার কথা বলল।

মুশকিল হলো, যে সময়ের মধ্যে এই ভ্রমণটি সম্পন্ন করতে হবে, সে সময়ে আমরা যদি ল্যাংকেস্টারেই থাকি, তাহলে ওদের পক্ষে টরন্টো ফেরা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ওরা সরাসরি টরন্টো থেকে পেনসিলভানিয়ার এমন একটি শহরে উঠবে, যেটি সীমান্ত থেকে কয়েক ঘণ্টার পথ (সে শহরের নামটা বলব তখন, যখন সেটা জানব। আপাতত অজানাই থাকুক নামটা)। ওরা রাতে সে শহরে থাকবে। আমরা ল্যাংকেস্টারে নামব পরদিন দুপুর দেড়টার দিকে। ওরা সেই শহর থেকে ল্যাংকেস্টারে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আমিশ ভিলেজ দেখে, বুফে শেডি মেপলে রাতের খাবার খেয়ে (দুপুরে ছোটখাটো কিছু খাওয়া হবে) আমরা চলে যাব ওদের শহরে। সেখানে রাতে থেকে সকালের নাশতা করে আমরা যাব আরেকটি শহরে, যেখান থেকে আমি আর সনকা বাসে উঠব। এরপর ওরা চলে যাবে টরন্টোর পথে।

শুনতে যতটা গোলমেলে লাগছে, বাস্তবে ততটা জটিল নয় বিষয়টা। তবে ফেরার পথে আমাদের বাসযাত্রাটা হবে প্রায় সাত থেকে আট ঘণ্টা। সে কথা পরে বলব।

 ট্রেনের সময়জ্ঞান   
ভেবেছিলাম, পেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলোও আমাদের কমলাপুরে থাকা ট্রেনের মতো আলস্যে পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে। রোদ পোহাবে। তারপর জড়তা ভাঙা কণ্ঠে হয়তো বলে বসবে, অপেক্ষা করো বাছা, আমি লেট।

কিন্তু সে সুযোগ দিল না আমাদের ট্রেন। কিস্টোন অঞ্চলের ট্রেনটির নম্বর ৬৬৩। ৯টা ৯ মিনিটে হ্যারিসবার্গের উদ্দেশে সেটা যাত্রা করবে। আমরা পথিমধ্যে ল্যাংকেস্টারে নেমে পড়ব। এই হ্যারিসবার্গই পেনসিলভানিয়ার রাজধানী। আমি অন্তত এই প্রথম এই শহরটির নাম শুনলাম। আগে শুধু জানতাম ফিলাডেলফিয়ার নাম।

স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট পথে আমাদের নিয়ে আসা হলো ট্রেনটির কাছে। বিভিন্ন বগিতে সারিবদ্ধভাবে যাত্রীরা উঠছে। আমরা একেবারে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা বগিতে পাশাপাশি দুটো সিট পেয়ে গেলাম। যে যার মতো বসে পড়ল। আর ৯টা ৯ মিনিটে হঠাৎ ছোট্ট একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছেড়ে দিলো ট্রেন। হ্যাঁ, ভুল শোনেননি, এক সেকেন্ডও (সেকেন্ডের হিসেব না করে এক মিনিটও বললে বুঝি ভালো) এদিক-ওদিক হলো না, ট্রেন যাত্রা করল।

পলা বলেছিল, আমার হাতের রান্না গরুর মাংস খাওয়ার ইচ্ছে ওর। আমার সঙ্গে তাই আড়াই কেজি রান্না করা গরুর মাংস। করোলির মাংস কিনেছি। আগেও রান্না করে দেখেছি, করোলির মাংসের আলাদা একটা স্বাদ আছে। যদিও ঢাকার বাড়িতে আমি স্টেক, চাপ, পুট আর সিনার মাংস কিনি, কিন্তু নিউইয়র্কে করোলির মাংসটা রান্না করলে অপেক্ষাকৃত সুস্বাদু হয় বলে আমার ধারণা। যা হোক, সেই কন্টেইনারটিও রয়েছে আমার হাতে। পিঠে ছোট একটা ব্যাগ। এক রাত থাকার জন্য যতটা জামাকাপড় আর প্রসাধনীর প্রয়োজন, তার বাইরে কিছুই নেই তাতে।

ক’টা স্টেশন পার হলে আমরা ল্যাংকেস্টার পৌঁছাব, তা জানা আছে। স্টেশনগুলোয় যখন কিছু সময়ের জন্য থামছে ট্রেন, তখন যারা বের হবে, তারা দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে, যারা উঠবে, তারাও সময় নষ্ট করছে না। তাই সময়মতোই আবার রওনা হতে পারছে ট্রেন।

ট্রেনের কথা একটু বলতেই হয়। বাইরের কোনো আওয়াজ পাচ্ছিলাম না। কোনো ঝাঁকুনি নেই। চাইলে ট্রেনে বসে অনায়াসে বই পড়া যাবে, একটুও চোখ জ্বালা করবে না কিংবা মাথা ধরবে না।

ট্রেনে দুটো দুটো চারটি করে আসন। আমাদের এদিকে দুটো, মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথ, এরপর আবার দুটো আসন। অন্যদিকের জানালার ধারে একজন সুশ্রী মেয়ে বসে ছিল। ওর পাশে যে ছেলেটা এসে বসল, সে পরের দুটো স্টেশনজুড়ে বকবক করেই যেতে থাকল। মেয়েটা ঠান্ডা মাথায় মাঝে মধ্যে ‘হু হা’ করে যাচ্ছিল। আবার তারই মধ্যে মোবাইলে রাখছিল চোখ। যেন বোঝাতে চাইছিল, থামলে ভালো হয়, আমি ব্যস্ত আছি। কিন্তু কে বোঝে কার ইঙ্গিত। দুই স্টেশন পার হলে সেই ছেলেটা বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কথা বো থামাল না ছেলেটা। এবার যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল মেয়েটা। কিন্তু এরপর বহু সিট খালি থাকলেও ওই মেয়েটার পাশে এসে বসল আরেক তরুণ। তরুণীরা মনে হয় তরুণদের জাদুর মতো টেনে আনে নিজের দিকে। নাকি এ আমার অলস মস্তিষ্কের ভাবনা? পরের পথটুকুও নতুন আরেকজন ছেলের বকবক শুনতে হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু অবাক কাণ্ড! ট্রেন চলা শুরু করতেই ছেলেটা ঘুমিয়ে গেল নিমেষে। আমরা ল্যাংকেস্টারে নামার আগ পর্যন্ত ছেলেটার ঘুম আর ভাঙেনি। মেয়েটাও বুঝি তাতে ফেলেছিল স্বস্তির নিশ্বাস।

প্রায় যখন পৌঁছে গেছি ল্যংকেস্টারে, তখন অবধারিতভাবেই ফোন করতে হলো পলাদের খোঁজ নেওয়ার জন্য।

ফোন করল সনকা। নিন্তুকে। তখন ১২টা ১৫ অথবা ১২টা ২০ বাজে। দুপুর।

‘হ্যালো, নিন্তু মামা (সনকারা ওকে কেন যে নিন্তু মামা বলে তা আমার জানা নেই, কিন্তু সেই ডাকে মায়া আছে, সেটা বুঝি), তোমরা কতদূর?’

‘তোরা পৌঁছে গেছিস?’

‘না। আর একটু পরই পৌঁছে যাব।’

‘তোরা স্টেশনেই থাকিস। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়ব।’

 আমিশদের গ্রামের যাত্রী ছাওনি।এরপর আরও কিছু কথা হলো ওদের মধ্যে। ওরা যেখানে রাতে থেকেছে, সেখান থেকে রওনা হয়েছে। আমরা ল্যাংকেস্টারে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই ওরা পৌঁছে যাবে, এ রকম একটা হিসাব করে বেরিয়েছে। এরপরই আমরা রওনা হব আমিশ ভিলেজের উদ্দেশে।

আমরা পৌঁছালাম ১২টা ৭ মিনিটে। ল্যাংকেস্টারের ট্রেন স্টেশনটি ছোট। আমাদের মফস্বল শহরে যেমন হয়, তেমনই। প্ল্যাটফর্ম থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে হয় স্টেশনে। স্টেশনের দোতলায় বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। যাত্রীদের বসার জায়গাও আছে। আছে রেস্ট রুম। রেস্টরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

যাত্রী সংখ্যা খুব বেশি নয়। তিন বুড়ি বসে গল্প করছেন কফি হাতে। এ ছাড়া আর কাউকে দেখা গেল না। দোকানিরাও কোথাও লুকিয়ে আছে। দেখা যাচ্ছে না তাদের। শুধু কফি তৈরি করছে যে মেয়েটা, তাকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে কফির পাত্রের কাছে, ক্রেতা না থাকলেও।

আমরা শহরের দিকের দরজা দিয়ে নিচে নেমে এলাম। যাত্রী যারা নেমেছিল, তাদের কেউ উবার ডাকল, কাউকে নিতে এল তাদের আত্মীয়রা।

একটু বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ মেঘে ঢাকা।

একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের দুই বর্ষীয়ান এসেছেন। গাড়িতে করে তাঁদের নিতে এল সম্ভবত তাদের মেয়ে। অথবা হতে পারে ছেলের বউ। মেয়েটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুই বর্ষীয়ানের কাছে এসে তাদের জড়িয়ে ধরল পরম মমতায়। আমরা বলে থাকি, ইউরোপ-আমেরিকায় শ্রদ্ধা-ভালোবাসা উবে গেছে। এই দৃশ্য দেখলে এ ধরনের বানানো কথা হয়তো বলতাম না আর। প্রতিটি সমাজে সামাজিক নিয়মেই গড়ে উঠেছে সংসারগুলো। কে কোথায় খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, সেটা তার গ্রহণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, এমন একটা সিদ্ধান্ত বোধ হয় নেওয়াই যায়। এই যে পরিবারটিকে দেখলাম, তাদের ভালোবাসার ভাষা কি আমাদের ভালোবাসার ভাষা থেকে ভিন্ন?

আমি সনকাকে বলি, আবার ফোন করতে। ওরা কত দূর আছে জানতে ইচ্ছে করে।

সনকা আমার এই আকুতিকে একেবারেই পাত্তা দেয় না। যেহেতু কথা হয়েছে, ওরা পৌঁছালেই তো ওদের দেখতে পাব। সুতরাং, আবার ওদের তাড়া দেওয়ার কোনো মানে নেই। বহু দূরের এক শহর থেকে ওরা আসছে, সুতরাং ফোন করে ওদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলার কোনো কারণ নেই।

কথাটা সত্য। এখন ফোন করলে ওদের মধ্যে একটা অস্বস্তি আসতে পারে। আমরা পৌঁছে অপেক্ষা করছি, এটা ভেবে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলে তা হবে বিপদের কারণ।

তাই সে সময় আমরা মৃদু বৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল হতে থাকলাম।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাংকেস্টার কাউন্টির আমিশ ভিলেজশুরু হলো ল্যাংকেস্টার ভ্রমণ
অবশেষে দেখা গেল সাদা গাড়িটা। আমরা জানি, এই গাড়িটা চালাচ্ছে রিপন। সঙ্গে আছে পলা, নিন্তু আর নীর। গাড়িটারও একটা ইতিহাস আছে, সেটা এখানে বলে রাখি।

এই গাড়িটা ভাড়া করা। যে শহরে এসে এয়ারবিএনবি ভাড়া করেছে ওরা, সেই শহরের বিমানবন্দরের কাছে এক রেন্ট-এ-কার থেকে এই গাড়িটি নেওয়া হয়েছে। কারণ, টরন্টো থেকে ওরা যে গাড়িতে এসেছে, তাতে মোট ৫ জন ভালোভাবে বসতে পারে। কিন্তু আমরা সব মিলে ছয়জন। চলাচল করতে হবে বিস্তর। তাই রেন্ট-এ-কারের হাওলায় নিজেদের গাড়ি রেখে এই বড় গাড়িটা ভাড়া করা হয়েছে।

হ্যাঁ, এবার ওই শহরটার নাম বলা যায়। লক হেভেন নামের শহরটায় ওরা উঠেছে। সন্ধ্যার পর আমরা সে শহরে পৌঁছাব। আপাতত দিনের বেলায় আমাদের ঠিকানা এই ল্যাংকেস্টারই।

গাড়ি থামার পরই হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার! পলা মানেই আনন্দের প্রতীক। পৃথিবীর সব কষ্টের ধকল সহ্য করেও পলা প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে চারদিকের পরিবেশ। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, দুঃখকে একফোটা জমিও ছেড়ে দেওয়া যাবে না। দুঃখ আসবে, তবে তা মোকাবিলা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এরপর আনন্দকে বেছে নিতে হবে জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে।

সনকা আর আমি সাদরে বরিত হলাম। নীরকে আলিঙ্গন করলাম। সনকা আর নীর দ্বিতীয় প্রজন্মের। বাকি ৪ জন প্রথম প্রজন্মের।

এই কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। আমরাও একসময় ছোট ছিলাম। এখন ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি, একে একে নিবিছে দেউটি। মাথার ওপরে ছায়া দেওয়ার মতো মানুষ নেই বললেই চলে।

চালকের পাশে এক আসন। পেছনে প্রথমে দুটো আসনে অনায়াসে পা ছড়িয়ে দুজন বসতে পারে। এরপর তৃতীয় সারিতে তিনটা আসন, যেখানেও পা ছড়িয়ে বসা যায়। অর্থাৎ, এই গাড়িতে ৭ জন মানুষ কোনো ধরনের জড়সড় হয়ে বসার বিড়ম্বনার দেখা পাবে না। যথেষ্ট পরিসর নিয়ে বানানো হয়েছে গাড়িটি।

গাড়িতে মোবাইলে আমিশ ভিলেজ নির্দিষ্ট করে রওনা হওয়া গেল। ম্যাপ জানাচ্ছে, ১৩ মাইল পথ পাড়ি দিলেই আমরা পৌঁছে যাব নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

ছোট্ট ছিমছাম ল্যাংকেস্টারের রাস্তা দিয়ে শুরু হলো যাত্রা। রিপন আর নীর সামনে, আমি আর পলা মাঝে। সনকা আর নিন্তু স্বেচ্ছায় বেছে নিল সর্বশেষ আসন। আমাদের জন্য ওদের এই ‘আত্মত্যাগ’।

আমরা যে পথ ধরে এগোচ্ছিলাম, সে পথে সত্যি বলতে কি কোনো শহর চোখে পড়েনি। হাইওয়ের দুপাশে কিছু দোকান দেখা গেল ঠিকই, আর দেখা গেল ফসলের ক্ষেত, কিন্তু শহরের আমেজ তাতে নেই। হয়তো বসতি একেবারে ভিন্ন কোনো দিকে। আমরা শহরের উল্টো দিকে চলেছি।

মনে পড়ল সুইডেনের স্টকহোমের কথা। দুবার গেছি সেখানে। আরল্যান্ডা বিমানবন্দর থেকে যখন বাসে করে স্টকহোমের দিকে যাচ্ছি, তখন অন্তত প্রথম ২৫ মিনিটে পথে কোনো মানুষই দেখিনি। এমনই জনবিরল ছিল সে পথ। তার তুলনায় ল্যাংকেস্টারের রাস্তা অনেক ভালো। বহু গাড়িই তো যাচ্ছে-আসছে। মনুষ্যহীন প্রান্তর নয় এটা।   

রিপনকে জিজ্ঞেস করা হলো, কতটা পথ পেরুলে তবে আমিশ দেখা যাবে?

রিপন হিসেব করে বলল, পনের মিনিটের পথ।

কিন্তু এরই মধ্যে ম্যাপের মেয়েটা (ওই যে, যে মেয়েটা আমাদের পথনির্দেশ দেয়, তার কথা বলা হচ্ছে) কিছু একটা গোলমাল করে ফেলায় ঠিক জায়গায় বাঁক নিতে না পারায় আমাদের চলার পথটা একটু দীর্ঘ হলো।

আমিশদের গ্রামের সৌন্দর্য।আমিশ ভিলেজ
খুব বেশি দীর্ঘ ছিল না সে পথ। একটা নির্জন রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই হাতের বাঁয়ে দেখলাম এক বাড়িতে বড় করে লেখা ‘আমিশ ভিলেজ’। রিপন আরো কিছু দূর গিয়ে ইউটার্ন নেওয়ার মতো জায়গা বের করে আবার ফিরে এল এখানে।

আমরা তো জানি না, আসলে আমিশ ভিলেজটা কোথায়। এখানে আসার পর বোঝা গেল, এটা আসলে একটা জাদুঘরের মতো। এখানে এলে আমিশ মানুষদের জীবনযাত্রা প্রণালির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। কিন্তু মূল আমিশ ভিলেজ খুঁজতে হলে প্রয়োজন আছে একটা বাসজার্নির। প্রতিজন ২৮ ডলার খরচ করে আমিশ ভিলেজ ভ্রমণের এই সুযোগটা পাওয়া যায় এখানেই।

যার ভ্রমণ-বাসে আমরা উঠলাম, তাঁর নাম ফ্রেড। মি. ফ্রেড। আমি ভিডিও করছি দেখে তিনি আমোদের সঙ্গে বললেন, ‘আমি তো এবার বিখ্যাত হয়ে যাব! আমার ছবি ঘুরে বেড়াবে ইন্টারনেট জগতে!’

আমরা ছয়জন ছাড়াও আরো যে তিনজন এই ভ্রমণে সঙ্গী হলেন, তারাও প্রবাসী বাঙালি। মোট নয়জনকে নিয়ে শুরু হলো ফ্রেডের আমিশ গ্রাম ভ্রমণ।

শুরুতেই ফ্রেড জানিয়ে দিলেন, আমিশ মানুষদের সঙ্গে তাঁর হৃদয়ের সম্পর্কের কথা। ওদের সমাজের হেন কোনো প্রশ্ন নেই, যার উত্তর ফ্রেডের অজানা। তিনি শুরুতেই অনুরোধ করলেন, আমিশরা প্রযুক্তির কাছ থেকে দূরে থাকে। তাই ওদের কারো সঙ্গে পরিচয় হলে কেউ যেন ছবি না তোলে। দূর থেকে ছবি তুললে ক্ষতি নেই। কিন্তু সামনাসামনি ছবি তোলা বারণ।

আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, আমিশদের আলাদা কোনো গ্রাম আছে বুঝি। কিন্তু এখানে আসার পর বোঝা গেল, সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যেই আমিশরা মিশে আছে। দশ-বারোটি সাধারণ বাড়ির পর হয়তো একটা আমিশ বাড়ির দেখা মিলবে। দশ-বারোটি খামারের পর হয়তো একটা আমিশ খামারের দেখা মিলবে।

আমিশদের চিনে নেওয়ার উপায় হলো, তাদের একেবারে সাদামাটা পোশাক। পরনে প্রায় সবার থাকে একই রকম অনাড়ম্বর পোশাক। যে কেউ তাদের দেখলে চিনতে পারবে—এরাই আমিশ। আমিশদের বাড়িগুলো আধুনিক প্রযুক্তির থেকে অনেক দূরে থাকে। ও সব বাড়িতে বিদ্যুৎ চালিত এসি, বাতি কিচ্ছু নেই। টেলিভিশন নেই। সোলার প্যানেল আর ব্যাটারি দিয়ে নিজেদের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওরা ইঞ্জিনের গাড়িতে চড়ে না। এখনও চলাচলের বাহন বলতে ঘোড়ার গাড়ি। খামারে গরু ঘোড়া চড়ে বেড়াতে দেখেছি। একটা আমিশ দোকানের পাশে পোক্ত মোরগ আর ছাগলেরও দেখা মিলেছিল।

মি. ফ্রেড গাড়ি চালাতে চালাতে মাইক্রোফোনে বর্ণনা করে চলেছিলেন। লাউড স্পিকারে ভেসে আসা তথ্যগুলো আমাদের সমৃদ্ধ করছিল।

আমরা একটা আমিশ স্কুল দেখলাম। সাধারণ স্কুলের সঙ্গে এই স্কুলের পার্থক্য হলো, একটা ঘরেই ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত ক্লাস চলে। আমিশরা ক্লাস এইট পর্যন্তই পড়াশোনা করে। এটাকে ওয়ান রুম স্কুল বলা হয়। বাস থেকেই সে রকম একটি স্কুল দেখলাম।

ক্লাস এইটের পর আমিশদের আর পড়াশোনা নয়।

আগে তো আমিশদের প্রায় সবাই খামারে কাজ করত, এখন খামারে অনেকে কাজ করলেও বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে বাড়ির অঙ্গসজ্জায় (ইন্টেরিয়ার) তাদের হাতযশ আছে। আমিশরা খুব ভালো আসবাবপত্র বানায়। এগুলো এতোটাই টেকসই যে বংশপরম্পরায় তা ব্যবহার করা চলে। এখন অবশ্য আমিশদের মধ্যে ব্যবসাও করছেন অনেকে। ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন, এমন আমিশও আছেন।

আমিশদের বাড়িতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বারণ। এমনকি ল্যান্ড ফোনও নেই বাড়িতে। কোনো ধরনের যান্ত্রিক ওয়েভ বাড়িতে অশুভের জন্ম দেয়। তাই বাড়িতে ফোনের দরকার নেই। গ্রামের কোথাও কোথাও টেলিফোন বুথ আছে। যদি খুব প্রয়োজন হয় কারো সঙ্গে কথা বলার, তাহলে অনুমতি নিয়ে সেই টেলিফোন বুথ ব্যবহার করে কথা বলে তারা।

ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ে আমিশরা। আমিশ শিক্ষকও এইট পাশ। তাই তাদের মধ্যে চিকিৎসক থাকার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এখন বড় ধরনের অসুখে পড়লে ইংরেজ ডাক্তার ডাকা হয়। রোগীকে জরুরি প্রয়োজনে বিমানে করে অন্য কোথাও নিতে হলে আমিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।

বাস থেকেই বেশ বিচিত্র কিছু দৃশ্য দেখলাম। প্রথমে কয়েকটি বাড়ি, যার সামনে দেখা যাচ্ছে প্রাইভেট কার। বৈদ্যুতিক তার। কিন্তু এরপর একটা বাড়ির সামনে ঘোড়ার গাড়ি। কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার সেখানে নেই। জানালায় সবুজ পর্দা।

রাস্তায় দূর থেকেই দেখা যায় কোনো ঘোড়ার গাড়ি আসছে। বাসের মধ্যে থাকায় ফোনের ক্যামেরায় সে দৃশ্য ভিডিও করি। দ্রুত বাসের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় সে গাড়ি। ক্ষণিকের জন্য আমরা দেখতে পাই আমিশ মানুষদের। হ্যাঁ, এই মানুষেরা মার্কিন নাগরিক বটে, কিন্তু ফুড স্ট্যাম্প বা বীমাজাতীয় কোনো কিছুর সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় পর্যায়ে হয়তো ভোট দিতে যায়, কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কোনো উৎসাহ এদের মধ্যে দেখা যায় না।

মি. ফ্রেড বলছিলেন, ‘পারিবারিক বন্ধনটাই আসল। এরা অকারণে বাইরে সময় কাটাতে পছন্দ করে না। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়ার মধ্যে তাদের সুখ। খাদ্যও খুব সাদামাটা। কিন্তু খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে বেক করা খাদ্যের খুব কদর এখানে।

ভুট্টা, সয়াবিন আর তামাক উৎপাদন করে আমিশরা। রোববার মানে ছুটি। সেদিন আমিশদের দোকানপাট খোলা হয় না, ক্ষেতের কাজেও কেউ যায় না। ছুটি মানে ছুটি।

আর একটা তথ্যও বিস্ময়কর। আমিশদের অনেকেই সারা জীবনে ল্যাংকেস্টারের বাইরে কোথাও যায়নি। নিজের এলাকাতেই থাকে তারা। সেখানেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়।

অতীত ভ্রমণ
চারদিক দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে সে সব দেখতে দেখতে এক সময় আমাদের মনে হয়, এই আমিশেরা যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে এল? নাকি এরা এখানকার আদিবাসী মানুষ? এই যে আমরা শুনলাম সাধারণ জীবনধারণ পদ্ধতি গ্রহণ করা, সরল পোশাক পরিধান করা আর প্রযুক্তির কাছ থেকে দূরে থাকার যে জীবন, সেটা তারা কোথায় পেল? আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার এই আমিশ ভিলেজেই সবচেয়ে বেশি আমিশদের বসবাস। তার মানে এই এলাকা ছাড়া আরও কিছু অঞ্চলে আমিশরা থাকে। এরা কি এখানকার আদিবাসী?

এ প্রশ্নের উত্তর যদিও অন্তর্জাল ঘাটলেই পাওয়া যায়, তবুও এই ভ্রমণকাহিনি যারা পড়ছেন, তাদের কেন আবার অন্তর্জালের সাহায্য নিতে বলব? এখানেই তার কিছুটা পরিচয় দেওয়া যাক।

আমিশরা আসলে এসেছে সুইজারল্যান্ড থেকে। ইতিহাস জানাচ্ছে, সুইজারল্যান্ডে ইয়াকব (জ্যাকব) আম্মান বলে একজন ভিন্ন মতাবলম্বী খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি সেখানকার মন্ত্রীও ছিলেন। সেই সুদূর ১৬৯৩ সালে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সঙ্গে তিনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি ‘প্রকৃত বাইবেলীয়’ জীবনধারা নিয়ে নিজের একটি মতবাদ তৈরি করেছিলেন। এই মতে যারা সায় দিয়েছিল, তারা পরিচিত হলো আমিশ বলে।

এই আমিশেরাই পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায়ও এল তাদের একটি অংশ। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় এরা স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে শুরু করল। তবে ওহাইও, নিউইয়র্ক, ইন্ডিয়ানা, মিশিগানসহ আরো কিছু অঙ্গরাজ্যে রয়েছে আমিশেরা।

ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, ১৭৩৬ সালে ডেটওয়েইলার ও সাইবার পরিবারের লোকেরা উত্তর আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার বার্কস কাউন্টির নর্থকিল ক্রিক ও আইরিশ ক্রিক এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। পরের বছরই অর্থাৎ ১৭৩৭ সালে চার্মিং ন্যান্সি ২১টি পরিবার নিয়ে উত্তর আমেরিকা যাত্রা করেন। এ সময় থেকেই আমিশ অভিবাসন শুরু হয়। ফরাসি এবং রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে নিরাপত্তার প্রশ্নে বার্কস কাউন্টি থেকে ল্যাংকেস্টার কাউন্টিতে চলে আসে অধিকাংশ আমিশ।

 আমিশদের গ্রামে লেখক ও তার পরিবার।আমিশেরা কী খায়?
আমরা একটি আমিশ দোকানে থেমেছিলাম। সেখানে কেনাকাটা, খাওয়ার কথা একটু পরে বলব। তার আগে বলতে চাই, আমিশদের খাবারের মধ্যে চিকেন রয়েছে। রোস্টেড চিকেন। সুস্বাদু ম্যাশড পটেটোর কথা না বললে নয়। সবজি, সদ্য ওভেন থেকে নেমে আসা রুটি আর ঘরে তৈরি জ্যাম—এতেই পেটের খিদে নিবারণ করতে পারে আমিশেরা।

আমিশদের তৈরি বিস্কুট (কুকিজ), রুটি, কেক এবং পাই খুবই নামকরা খাবার।

চলতে চলতে একসময় মি. ফ্রেড বললেন, ‘এবার আমরা একটা আমিশ দোকানে থামব। সেখানে আমিশদের তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়। কেউ ইচ্ছে করলে তা কিনতে পারে।’ তিনি জোর দিলেন প্রিটজেলে।

রুটির মতো এই খাদ্যটি যে এক সুস্বাদু হতে পারে, তা খাওয়ার আগে বুঝতে পারিনি। সেই দোকানটিতে নামার পর তিন বয়সী তিন আমিশ নারীর দেখা পাওয়া গেল। একজন বর্ষীয়ান, ষাট ছাড়িয়েছে। একজন তরুণী, অন্যজন বালিকা। বালিকা একটা প্লেটে করে প্রিটজেলের কিছু অংশ বিনে পয়সায় খেতে দিল। রিপন প্রত্যেকের জন্য একটি করে প্রিটজেল কিনল, নিন্তু কিনল কিছু আচার আর জ্যাম। বাসে উঠে গরম সেই প্রিটজেল খেয়ে মনে হলো, সত্যিই, আমিশদের এই খাবারের স্বাদ ভুলবার নয়।

বাসে কথা বলার সুযোগ ছিল না। মি. ফ্রেড একাই বক্তা। তাঁর একটি কথা খুব মনে ধরল। আমিশদের চোখে তারা নিজেরা ছাড়া আর সবাই ইংলিশম্যান। অর্থাৎ আমাদের মতো বাদামি, কালো রঙের চামড়ার মানুষেরাও সাদাদের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। আমরা সবাই ইংলিশম্যান। আর তাই আমিশদের সঙ্গে দূরত্বটা কেবল মার্কিন নাগরিক অথবা সাদাদেরই নয়, আমাদেরও। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমিশ না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পরিচয় ইংলিশম্যান। আমিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ আছে। ব্যাপ্টিস্ট চার্চে নিজেকে পরিবর্তন করে নিলে সেটা সম্ভব। কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই আমিশ হয়েছে এই তিন-চারশো বছরে। আধুনিক জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমিশ হওয়া খুব সহজ কথা নয়।

কথা শুনতে শুনতে পলা বলল, ‘এটা ওদের বাড়াবাড়ি। একটা মোবাইল ফোন হাতে থাকলে কী এমন ক্ষতি?’

নীর মায়ের কথার প্রতিবাদ করে বলে, ‘ওরা যদি আধুনিক জীবনকে দূরে রাখতে চায়, তাহলে রাখুক না।’

আমার মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথের চরণ, ‘দাও ফিরিয়ে এ অরণ্য, লহ হে নগর।’ বুড়ো নিশ্চয় আমিশদের কথা ভেবে তা লেখেননি। কিন্তু সেটা আমিশদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে যেন।

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে থাকা তিন আমিশ নারীর ছবি তোলার। কিন্তু মি. ফ্রেড আগেই নিষেধ করে দিয়েছিলেন। তাই ছবি তোলা হলো না। দোকানের পাশেই কাঠের দেয়াল দেওয়া ছোট্ট যে জমি আছে, আমি তখন সেখানে চলে গেলাম। সেখানে হৃষ্টপুষ্ট ছাগল আর রাগী কিছু মোরগ-মুরগি দেখার সৌভাগ্য হলো। এরা কৃত্রিম খাবার খায় না। প্রাকৃতিক খাবারের ওপর নির্ভর করেই এরা বেড়ে ওঠে। ফেরার পথে কৌশলে দোকানটার ছবি তুললাম। কিন্তু তখন দোকানে আমিশ তিন নারীর কেউ নেই। তারা এরই মধ্যে লুকিয়েছেন পেছনে। সম্ভবত তারা জানেন, বিদায়কালে কেউ কেউ তাদের ছবি তোলার চেষ্টা করতে পারে।

এখানে একটা কথা বলে রাখি। ছোট্ট বালিকাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল লরা ইঙ্গেলসের লেখা ‘লিটল হাউস অন দ্য প্রেইরি’র ছোট্ট লরা ইঙ্গেলসের কথা। এই মেয়েটির পোশাকও ছিল লরার মতো।

প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগল বাসে করে পুরো আমিশ গ্রামটি ঘুরে আসতে। এর মধ্যে আরেকটি দারুণ জায়গা আমরা দেখেছি। এখানেই ট্রেনের বাতিল ওয়াগন দিয়ে বানানো হয়েছে মোটেল। বাইরে থেকে পুরনো ওয়াগন, কিন্তু ভেতরে খুবই পরিপাটি। এটা আমিশদের নয় বলে বিশদ আলোচনায় গেলাম না। কিন্তু এটা তো এখানে বলাই যায় যে, ট্রেনের ওয়াগন দিয়ে রাতারাতি এই নিভৃতে পাঁচতারা হোটেল তৈরি করাও অভিনব বটে!

আমরা যখন ফিরে এসেছি আগের জায়গায়, তখন ভাবছিলাম, খিদে লাগছে না কেন? মনে পড়ল, আমিশদের দোকানে কেনা প্রিটজেল খেয়েই তো পেট ভরেছি, এখন কি আর খিদে লাগবে?

এরপর আমরা সাদী মেপলে (শ্যাডি বললেই ঠিক বলা হয়, ‘ছায়াচ্ছন্ন মেপল’ই তো) গিয়েছিলাম রাতের খাবার খেতে। সে গল্প অন্য কোনোখানে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বুফেতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা আলাদা করেই তো বলতে হবে। আপাতত আমিশ ভিলেজ ভ্রমণের আমেজ নিয়েই শেষ করি লেখাটা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুকেট ভ্রমণে মজার খাবার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ফুকেটে পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবার। ছবি: পেক্সেল
ফুকেটে পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবার। ছবি: পেক্সেল

পুরো থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য কোনো না কোনোভাবে সেজে থাকে। এই যেমন ফুকেটের কথা বলি। খাবারের জন্য দেশটির অন্য অনেক অঞ্চলের সুনাম থাকলেও, ফুকেট সবকিছু ছাপিয়ে আলাদা জায়গা দখল করে নিয়েছে বহু বছর থেকে। এখানে রয়েছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের সমারোহ। এ জন্য শহরটি ইউনেসকো থেকে ‘সিটি অব গ্যাস্ট্রোনমি’র স্বীকৃতি পেয়েছে। চায়নিজ-পেরানাকান, মুসলিম, দক্ষিণ থাই এবং ভারতীয় খাবার পাওয়া যায় এখানে। হক্কিয়েন নুডলস, প্যান্ডান চিকেন কারি, চা-চাক, ডিম সাম ও স্থানীয় স্ট্রিট ফুড, সবকিছুই যেন স্বাদে অনন্য।

ফুকেটে সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়। এর বিশেষত্ব হলো, চাইলে এসব খাবার কম বা বেশি ঝাল দিয়ে নিজের মতো করে খাওয়া যায়।

কাং ক্রাটি নুডলস। ছবি: পেক্সেলস
কাং ক্রাটি নুডলস। ছবি: পেক্সেলস

সকালের স্থানীয় খাবার

ফুকেটের সকালের শুরুটা করতে পারেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মন সম্প্রদায়ের তৈরি নুডলস দিয়ে। এটি সাধারণ নুডলসের মতো নয়। টক-মিষ্টি স্বাদের এই নুডলস থাই পরিবারগুলো সাধারণত বড় টেবিলে বসে একসঙ্গে খায়। নুডলসের সঙ্গে থাকে তরকারি। সবাই নিজের মতো করে তরকারির সঙ্গে নুডলস মিশিয়ে নেয়। কেউ একটু বেশি ঝাল পছন্দ করে, কেউ হালকা। ব্যাংককের লোকেরা এটাকে কানোম জিন নামইয়া বলে ডাকে। এ ছাড়া এই নুডলসের আরও একটি বিশেষ রেসিপি আছে। তাকে বলা হয়, কাং ক্রাটি। এটি নারকেলের দুধে তৈরি ক্রিমি তরকারির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে সবজি, সরিষাপাতার আচার, থাই বেসিল ও শুকনো সারডিন।

ঠান্ডা পানীয়

ফুকেটের জনপ্রিয় ঠান্ডা পানীয় চা-চাক। ভাবতে পারেন, চা আবার ঠান্ডা হয় কীভাবে! সেখানকার শ্রমিকেরা চিনি ছাড়া চা খেতে পারত না। তাই চায়ের তেতো স্বাদ কমানোর জন্য গরুর দুধ মিশিয়ে দেওয়া হতো। সেখান থেকে আজকের চা-চাক। এখন এটি হয় ক্রিমি ও মিষ্টি। অনেকটা ক্যারামেলের মতো স্বাদ এর। এতে সাধারণত বরফ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। তাই গরমের দিন এটির বেশ চাহিদা থাকে।

ফুকেটের জনপ্রিয় ঠান্ডা পানীয় চা-চাক। ছবি: পেক্সেলস
ফুকেটের জনপ্রিয় ঠান্ডা পানীয় চা-চাক। ছবি: পেক্সেলস

হক্কিয়েন নুডলস

ফুকেটের চুই-চুই নুডলস চীনের জনপ্রিয় খাবার। তবে চীনের মূল রেসিপি থেকে ফুকেটের রেসিপিতে পরিবর্তন রয়েছে। এখানকার চায়নিজ সম্প্রদায় এই নুডলস সামুদ্রিক খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করে। ছোট ছোট শামুক, ডিমের কুসুম, শুকনো পেঁয়াজ, সবুজ সবজি ও কালো মরিচ দিয়ে এ নুডলস রান্না করা হয়। এর সঙ্গে চুলায় রান্নার কারণে নুডলসে যোগ হয় ধোঁয়াটে স্বাদ। ফলে এই স্মোকি নুডলস হয়ে ওঠে আরও সুস্বাদু।

মিষ্টি ও ডেজার্ট

ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি অনেকের আকর্ষণ থাকে। ফুকেটে গেলে ওহ আউ খেয়ে দেখতে পারেন। এটি মূলত ঠান্ডা জেলিজাতীয় মিষ্টি। পাকা কলা, রেড বিন ও সামান্য চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এটি। ওপরে দেওয়া হয় বরফের কুচি। এই খাবার ফুকেটের সংস্কৃতির অংশ। সেখানকার বিভিন্ন দোকানে এটি পাওয়া যায় খুব সহজে। বিশেষ করে গরমের সময় এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয় ওঠে।

ঝাল ও টক স্বাদের স্যুপ

ফুকেটের বিশেষ স্যুপ তোম সোম প্লা। এটি তৈরি হয় কলাগাছের আঁশসমৃদ্ধ নরম কাণ্ড ব্যবহার করে। এটি স্যুপে যোগ করে হালকা মিষ্টি ও টক স্বাদ। এ স্যুপে থাকে কাজু বাদাম, সুইট গ্রুপার মাছ, বিভিন্ন স্থানীয় সবজি ও তেঁতুল। এটি প্রথম চুমুকেই আপনাকে সতেজ করে তুলবে। ফুকেটে সকালের বা মধ্যাহ্নভোজের জন্য এটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার।

ভেজিটেরিয়ান ও ভেগান

খাবারের জন্য জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন বাহারি ভেজিটেরিয়ান ও ভেগান খাবারের সমাহার চোখে পড়ে। ফুকেটেও এ ধরনের খাবারের অভাব নেই। অনেক রেস্টুরেন্টে নারকেলের স্যুপ, টফু ও সবজি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। হক্কিয়েন নুডলসও ভেজিটেরিয়ানদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়।

থাইল্যান্ডে যাঁরা দ্বীপ ভ্রমণে যেতে চান, তাঁদের অন্যতম গন্তব্য এই ফুকেট। পাশাপাশি বাহারি খাবারের জন্যও এটি বেশ জনপ্রিয়। তাই ভোজনরসিক পর্যটকেরা এখানে একের মধ্যে দুই আনন্দ উপভোগ করেন।

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আপনি যে ভুল ধারণাগুলো বিশ্বাস করে চলেছেন

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৫২
আপনি যে ভুল ধারণাগুলো বিশ্বাস করে চলেছেন

ব্রিটিশরা তাঁতিদের আঙুল কেটে দিত। বাংলাদেশের বহু মানুষ এই তথ্যে বিশ্বাস করে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব আছে বলে কোনো গবেষণায় এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু মানুষ সেই তথ্য বিশ্বাস করে। আবার ধরুন, ব্রিটিশ সেনাদের ধরে ধরে অন্ধকার কূপে নিক্ষেপ করেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। এমন বহু তথ্য আমাদের চারদিকে ঘুরে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। এসব তথ্য অনেকে ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাসও করেন। কিন্তু সেসব তথ্যের বাস্তবতাই খুব কম।

সে রকমই জনপ্রিয় কিছু ভুল ধারণা এবং সেগুলোর পিঠের সত্য তথ্যগুলো জেনে নিই।

ভুল ধারণা: প্রতিদিন ঠিক আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।

সত্য: এটি অপরিহার্যভাবে কোনো নিয়ম নয়। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য মতে, কারও প্রতিদিন কতটা পানি প্রয়োজন, তা সামগ্রিক স্বাস্থ্য, কার্যকলাপের স্তর এবং ভৌগোলিকভাবে কোথায় থাকেন ইত্যাদি শর্তের ওপর নির্ভর করে।

ভুল ধারণা: কিছু বিশেষ চা পান করলে শরীর ডিটক্স হয়।

সত্য: চা পান করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় না। ভক্স ডট কম তাদের একটি লেখায় জানিয়েছে, যদি আপনি কোনো ধরনের নেশাগ্রস্ত না হন বা অ্যালকোহল বিষক্রিয়ার ঝুঁকিতে না থাকেন, তাহলে আপনার ডিটক্সের প্রয়োজন নেই।

ভুল ধারণা: ভেজা চুলে বাইরে গেলে সর্দি-কাশি হয়।

সত্য: মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, সর্দি-কাশি ভাইরাসের মাধ্যমে হয়। এর মানে হলো, ভেজা চুলে বাইরে গেলেই সর্দি-কাশি হবে না। সর্দি-কাশি ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, ভেজা চুলের মাধ্যমে নয়।

ভুল ধারণা: মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে।

সত্য: স্নায়ুবিজ্ঞানী ব্যারি গর্ডন ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’কে জানিয়েছেন, মানুষ তাদের মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি অংশ ব্যবহার করে এবং এটি প্রায় সব সময় সক্রিয় থাকে।

ভুল ধারণা: চিনি শিশুদের বেশি চঞ্চল করে তোলে।

সত্য: যদিও অনেক বাবা-মা তাদের শিশুদের বেশি চঞ্চল হয়ে যাওয়ার ভয়ে চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার দেন না। এটি কেবল একটি গুজব। জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে চিনি শিশুদের আচরণ প্রভাবিত করে না।

ভুল ধারণা: মাথা ন্যাড়া করলে চুল ঘন হয়ে গজায়।

সত্য: মায়ো ক্লিনিকের তথ্য মতে, চুল শেভ করলে এর রং পরিবর্তন হয় না বা এর বৃদ্ধির হার অথবা ঘনত্বকেও প্রভাবিত করে না। ন্যাড়া করলে যা হয় তা হলো, চুলের প্রান্তটি ভোঁতা হয়ে যায় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে এটি গজানোর সময় বেশি মোটা মনে হতে পারে।

ভুল ধারণা: একই জায়গায় দুবার বজ্রপাত হয় না।

সত্য: ২০০৩ সালে, নাসা এই ভুল ধারণা খণ্ডন করে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, একই জায়গায় শুধু একাধিকবার বজ্রপাতই হয় না, বরং সেটি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময়ই ঘটে থাকে।

ভুল ধারণা: আঙুল ফোটালে বাতের ব্যথা হয়।

সত্য: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল জানিয়েছে, আঙুল ফোটালে বাতের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে না। আঙুল ফোটানোর শব্দ হয় গ্যাসের বুদ্‌বুদ ভেঙে যাওয়ার কারণে।

ভুল ধারণা: ব্যাঙ বা টাড থেকে আঁচিল হয়।

সত্য: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে, এই গুজব সম্ভবত এই তথ্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে যে ব্যাঙ বা টাডদের নিজেদের চামড়ায় আঁচিলের মতো গোটা থাকে। কিন্তু সেগুলো শুধু গ্রন্থি। সেগুলো এমন কোনো পদার্থ নিঃসরণ করে না, যা মানুষের ত্বকে আঁচিল সৃষ্টি করতে পারে। আঁচিল হয় হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস নামক একটি ভাইরাসের কারণে। সেটি সংক্রামিত মানুষের ত্বক থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছড়ায়।

ভুল ধারণা: মানুষের তৈরি একমাত্র বস্তু হিসেবে মহাকাশ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায়।

সত্য: নাসা এবং চীনা নভোচারী ইয়াং লিউয়েইর মতে, মহাকাশ থেকে আসলে এই কাঠামো দেখা যায় না।

ভুল ধারণা: লাল রং দেখলেই ষাঁড় রেগে যায়।

সত্য: সত্য জেনে আসলে অবাক হবেন! ষাঁড় ও অন্যান্য গবাদিপশু আসলে বর্ণান্ধ। লাইভ সায়েন্সের মতে, ষাঁড়ের লড়াইয়ে ম্যাটাডর যখন কেপ নাড়াচাড়া করে, তখন তার নড়াচড়ায় ষাঁড় সম্ভবত বিরক্ত হয়ে আক্রমণ করে। অন্য সময়ে গবাদিপশু বিরক্ত হলেই কেবল রেগে যায়, রং দেখে নয়।

ভুল ধারণা: আইনস্টাইন গণিতে ফেল করা খারাপ ছাত্র ছিলেন।

সত্য: এই বহুল প্রচলিত গুজব আইনস্টাইন নিজেই ১৯৩৫ সালে খণ্ডন করেছিলেন। তিনি প্রিন্সটনে এক ইহুদি শিক্ষককে বলেছিলেন, ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই তিনি ডিফারেনশিয়াল ও ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

ভুল ধারণা: মধ্যযুগের মানুষ বিশ্বাস করত যে পৃথিবী চ্যাপটা।

সত্য: ইতিহাসবিদ জেফ্রি বার্টন রাসেল বলেছেন, অত্যন্ত কম ব্যতিক্রম বাদে, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে পশ্চিমি সভ্যতার ইতিহাসে কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি পৃথিবী চ্যাপটা বলে বিশ্বাস করতেন না।

ভুল ধারণা: নেপোলিয়ন আকৃতিতে খাটো ছিলেন।

সত্য: নেপোলিয়ন সম্ভবত তাঁর সময়ের গড় উচ্চতার মানুষ ছিলেন। ইতিহাসবিদদের ধারণা, এই বিশেষ গুজব ১৮০০ সালের শুরুতে জেমস গিলরের আঁকা একটি কার্টুন থেকে এসেছে।

ভুল ধারণা: গোল্ডফিশের স্মৃতি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়।

সত্য: এই ধারণা একদম ভুল। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, গোল্ডফিশের স্মৃতি পাঁচ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে!

ভুল ধারণা: বাদুড় অন্ধ।

সত্য: বাদুড় আসলে দেখতে পারে। ব্যাট (বাদুড়) কনজারভেশন সংস্থার সাবেক নির্বাহী পরিচালক রব মাইসের মতে, বাদুড় মানুষের চেয়ে তিন গুণ ভালো দেখতে পারে।

ভুল ধারণা: মাছি মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাঁচে।

সত্য: প্রজাতি ও পরিবেশভেদে মাছির জীবনচক্র ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। প্রজাতি ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মাছি কয়েক দিন থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এমনকি সাধারণ মাছিও এক মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

ভুল ধারণা: মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজি বিষাক্ত।

সত্য: প্রক্রিয়াজাত খাবারে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজির ব্যবহার প্রচলিত কিন্তু এটি বিষাক্ত নয়। এটি প্রায়শই এমন খাবারে পাওয়া যায়, যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ‘খারাপ’ বলে মনে করা হয়। কারণ, সেসব খাবারে চর্বি ও সোডিয়াম বেশি থাকে। কিন্তু এমএসজি নিজে থেকে খারাপ নয়।

ভুল ধারণা: পানিতে লবণ দিলে তা দ্রুত ফুটতে থাকে।

সত্য: অধ্যাপক লেসলি-অ্যান গিল্ডিংস ও ‘লাইভসায়েন্স’র মতে, নোনাপানি বিশুদ্ধ পানির চেয়ে দ্রুত গরম হবে, তবু এর ভর বেশি হওয়ায় এটির স্ফুটনাঙ্ক বেশি থাকে। সোজা কথায়, পানিতে লবণ মেশালে তা দ্রুত ফোটে না।

সূত্র: বাজ ফিড, সিলিকন রিপাবলিক ডট কম, বেস্ট লাইফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: পুরোনো পাওনা ফেরত আসবে, তার আগে খরচের খাতও রেডি থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ২৭
আজকের রাশিফল: পুরোনো পাওনা ফেরত আসবে, তার আগে খরচের খাতও রেডি থাকবে

মেষ

আজ গ্রহরা আপনার জীবনে এক ‘লার্নিং সেশন’-এর আয়োজন করেছে। নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধানে! আর্থিক লেনদেনে একটু সংযত হোন, না হলে ‘শিক্ষানবিশ ফি’ হিসেবে কিছু টাকা বেরিয়ে যেতে পারে। প্রেমের সম্পর্কে একটা ছোট ‘টক শো’ হতে পারে, যেখানে আপনার পুরোনো ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা হবে—মানে, হয়তো আপনি আজও ওনার মেসেজের রিপ্লাই দেননি! মেডিটেশন করুন। না হলে এত উত্তেজনা সামাল দিতে পারবেন না। আর গাড়ি চালানোর সময় শুধু সামনের দিকে তাকান, পাশের বাড়ির জানালার দিকে নয়।

বৃষ

আপনার আজকের দিনটা খুব ‘ইতিবাচক’ হবে। আপনি মানুষের সঙ্গে খুব ‘সংযুক্ত’ বোধ করবেন। কিন্তু সমস্যা হলো, এই সংযুক্তির অনুভূতিটা বজায় রাখার জন্য আপনার পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা বেরিয়ে যেতে পারে—হয় বন্ধুদের খাওয়াবেন, না হয় অপ্রয়োজনীয় কিছু কিনবেন। পুরোনো পাওনা ফেরত আসতে পারে, কিন্তু সেটা আপনার হাতে আসার আগেই অন্য কোনো খরচের খাত রেডি হয়ে আছে। আজ আপনার দুর্বলতা কারও কাছে প্রকাশ করবেন না। বিশেষ করে, আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা যে দুর্বল, সেটা তো ভুলেও নয়!

মিথুন

আপনার যোগাযোগের দক্ষতা আজ তুঙ্গে! আপনি চাইলে আজ সাদা বস্তুকে কালো প্রমাণ করতে পারবেন। তবে সাবধান, এই বাড়তি বাগ্মিতার জন্য ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। পারিবারিক জীবনে শান্তি বজায় থাকবে। কারণ, সবাই ধরে নিয়েছে, আপনি কথা বলতে শুরু করলেই আর থামবেন না, তাই সবাই চুপ থাকবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ আসছে, তবে আপনার পার্টনারের মাধ্যমে আসতে পারে। একটু কম কথা বলুন। বিশ্বের সমস্যা সমাধান না করে বরং নিজের ডায়েটে মনোযোগ দিন।

কর্কট

কর্মক্ষেত্রে আপনার পদোন্নতি বা আর্থিক লাভের সম্ভাবনা জোরালো! খুবই আনন্দের খবর! কিন্তু সেই আনন্দের মধ্যে মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ, বাড়ির কোনো আইনি সমস্যা আর সবচেয়ে বড় চাপ—আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করার সম্ভাবনা। আপনি ধনী হয়েও বন্দী! বিশ্বস্ত কাউকে মনের কথা খুলে বলুন। তবে খুব সাবধানে, সেই বিশ্বস্ত লোক যেন আবার আপনার প্রমোশনের কথাটা নিয়ে বসকে হিংসা না করে। ধৈর্য রাখুন। প্রমোশনের টাকা দিয়ে উকিল আর ডাক্তার সামলাতে হবে।

সিংহ

আপনার আত্মবিশ্বাস আজ আকাশ ছুঁয়েছে, আপনি নিজেকে আজ বনের রাজা মনে করছেন! নতুন প্রকল্প হাতে নিতে পারেন, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাবধান, আর্থিক প্রতারণার শিকার হওয়ার সামান্য ঝুঁকিও রয়েছে। প্রেমে উষ্ণতা বাড়বে, যা আপনার বাড়তি আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে। তবে পেটের সমস্যায় ভোগার শঙ্কা আছে। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখুন। পেটে মোচড় দিলে অটোমেটিক আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।

কন্যা

দিনের বেশির ভাগ সময় মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই কাটবে। আপনি কী করবেন, কী পরবেন, কাকে ফোন করবেন—এই নিয়েই অর্ধেক দিন শেষ! কিন্তু কাজের জায়গায় আপনার দক্ষতা প্রদর্শনের চেষ্টা সফল হবে। পুরোনো পাওনা আদায়ে বিলম্ব হবে, যা আপনার আজকের ‘ব্যয় বৃদ্ধির’ খাতায় যোগ করবে। আপনার সুমিষ্ট কৌশল বা মিষ্টি কথা দিয়ে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। আজ মিষ্টি কথা বলার আগে আয়-ব্যয়ের হিসাবটা চট করে একবার মনে করে নিন। দেখবেন, মিষ্টি কথা অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তুলা

আজ আপনার সম্পর্কের উন্নতি হবে, সেটা জীবনসঙ্গী হোক বা আপনার বসের সঙ্গে। কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতা পাবেন, যা দিয়ে আপনি অনেক দিনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে ফেলবেন। আয়ের নতুন উৎস খুঁজে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নতুন ধারণা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উপকারী হবে। আপনি এতটাই ‘কুল’ থাকবেন যে শত্রুরাও আপনার সঙ্গে সেলফি তুলতে চাইবে। অনুকূল পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করুন। মানে, সুযোগ পেলে আজই নতুন ইনকামের পথটা পাকাপাকি করে ফেলুন!

বৃশ্চিক

আজকের দিনটি আপনার জন্য শক্তি এবং উৎসাহে পরিপূর্ণ! আপনি চাইলে আজ একটা পাহাড়ও টপকাতে পারেন। কিন্তু আপনার পরিকল্পনায় সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে। এই বাড়তি শক্তি আপনি হয়তো ব্যয় করবেন ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছানোর কাজে, যা আপনার কাজের থেকে বেশি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে হবে। কর্মক্ষেত্রে সুনাম বজায় থাকবে, কিন্তু আপনার দৃঢ়তা দেখলে সহকর্মীরা একটু ভয় পেতে পারে। আপনার এনার্জিটা কাজের দিকে রাখুন। পুরোনো ভুল-বোঝাবুঝি দূর করার জন্য এনার্জি খরচ করবেন না। কারণ, কিছু ভুল-বোঝাবুঝি থাকাই ভালো।

ধনু

ক্যারিয়ার ও পেশাদার জীবনে মনোযোগ দিন, যেকোনো নতুন শুরু সফল হতে পারে। ভ্রমণ ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজ লাভজনক হবে। আপনি হয়তো একটা জরুরি কাজে বাইরে যাবেন, আর সেই ভ্রমণ থেকেই মোটা টাকা উপার্জনের পথ খুলে যাবে। কিন্তু গ্রহরা আপনাকে স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিতে বলছে—হালকা ব্যায়াম এবং সঠিক ডায়েট! আপনার আজকের দিনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে—লাভজনক ভ্রমণে গিয়ে হোটেলের ফ্রি ব্রেকফাস্টের মিষ্টি অংশটুকু এড়িয়ে যাওয়া। শুভকামনা!

মকর

আজ আর্থিক বিষয়ে খুব সতর্ক থাকুন। যদিও পুরোনো দায়িত্ব পালন করা উপকারী হবে, তবু চাকরি বা ব্যবসায় হঠাৎ কোনো পরিবর্তন আসতে পারে। শান্ত থাকুন। আপনার এত দিনের স্থিতিশীল জীবনে হঠাৎ একটা ‘ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি’ হতে চলেছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি খুব কার্যকর হবেন। আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনায় ধৈর্য ধরুন। কারণ, তাদের কথা শুনলে আপনার খরচ আরও বাড়তে পারে। আপনার লক্ষ্য থেকে সরে যাবেন না। বিশেষ করে আপনার বাজেট থেকে তো একদমই না!

কুম্ভ

আজ আপনি সামাজিক ও পেশাদার বিষয়ে বেশ এগিয়ে যাবেন। বন্ধু এবং সহকর্মীরা আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকবেন এবং নতুন সুযোগের জন্য মন খোলা রাখবেন। আপনি আজ সবার নজরের কেন্দ্রে থাকবেন। তবে জ্যোতিষীরা আপনাকে ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে বলছে। কারণ, পাবলিক প্লেসে আপনার অতি-উৎসাহ দেখলে অন্যরা আপনাকে ভুল বুঝতে পারে। আপনি আজ বুদ্ধি খাটিয়ে সব সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, সব সমস্যার মূলে আপনি নিজেই!

মীন

আজ আপনার দিনটি মসৃণ ও শান্ত হবে। আধ্যাত্মিক কাজে সময় ব্যয় করা উপকারী। আপনি হয়তো মেডিটেশন করছেন বা কোনো ধর্মীয় বই পড়ছেন, আর ঠিক সেই সময় আপনার স্থগিত কোনো কাজ বা আর্থিক দিক থেকে একটা গোপন গতি আসবে। পুরোনো কাজ শেষ করার জন্য এটা সেরা সময়। ক্যারিয়ার আর আর্থিক বিষয়ে একটু ধৈর্য ধরুন—আপনার সাফল্যের খবরটা একটু পরে আসুক। আজ আপনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করবেন, যার জন্য কেউ আপনাকে তাগাদা দেয়নি। এই রহস্যজনক কর্মদক্ষতা বজায় রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমড়া দিয়ে ডিমের টক ঝোল

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আমড়া দিয়ে ডিমের টক ঝোল
আমড়া দিয়ে ডিমের টক ঝোল

সেদ্ধ ডিম ভুনা বা আলু দিয়ে ঝোল করে তো সব সময় রান্না করেন। এবার না-হয় একটু ভিন্নভাবে রাঁধলেন! আপনাদের জন্য আমড়া দিয়ে ডিমের টক ঝোলের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

আমড়া ২টি, কচুর মুখি ৩০০ গ্রাম, ডিম ৫টি, বেগুন ২টি, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ করে, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৫-৬টি, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি

আস্ত আমড়ার খোসা ছিলে কেটে নিন। কচুর মুখি ও বেগুন লম্বা করে কেটে ধুয়ে রাখুন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে আদা ও রসুনবাটা, হলুদ, মরিচ, ধনেগুঁড়া লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে কচুর মুখি কষিয়ে আবারও রান্না করুন ৫ থেকে ৭ মিনিট। পরে বেগুন দিয়ে কষিয়ে ঝোলের পানি দিন। ফুটে উঠলে আমড়া দিন। তারপর কাঁচা মরিচ ফালি আর ধনেপাতাকুচি, জিরাগুঁড়া ও সেদ্ধ ডিম দিয়ে রান্না করুন আরও ২-৩ মিনিট। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত