Ajker Patrika

ভূস্বর্গ কাশ্মীর

ফাতিমা জাহান
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪, ০৮: ১২
ভূস্বর্গ কাশ্মীর

কাশ্মীর এক স্বর্গের নাম!

কাশ্মীরের ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ সবুজ সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি আর তার চিনার, দেবদারুগাছের ফাঁকে আটকে থাকে অপার মায়া।

রাজধানী শ্রীনগরের প্রাণ ডাল লেক। বিশাল আয়তনের এই লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা। এর ভেতরে আছে অনেক নয়নাভিরাম জায়গা। এই লেকের বড় নৌকায় বসবাস করে অনেক পরিবার। তাদের আলাদা সমাজ আছে। এই সমাজের প্রায় সবাই নৌকা বা হাউসবোট ভাড়া দেয়। ডাল লেকের ভেতরেও আছে প্রচুর ভাসমান দোকান এবং একটি বাজার।

শ্রীনগর ছিল মোগল সম্রাটদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনকেন্দ্র। এ সময় এখানকার আবহাওয়া থাকে মনোরম। গ্রীষ্মে শ্রীনগর থেকে রাজকার্য পরিচালনার জন্য শহরটিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দুর্গ, মনোরম উদ্যান, বাগানবাড়ি, মসজিদ ইত্যাদি। ফলে এই শহরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে তাদের রেখে যাওয়া নিদর্শন। মোগলদের তৈরি করা এসব স্থাপনা শ্রীনগরের দেখার অন্যতম গন্তব্য।

কাশ্মীরে জীবিকার মূল উৎস কৃষিকাজ। কয়েক বছর আগেও তা সীমাবদ্ধ ছিল ধান চাষে। এখন চাষিদের আপেল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের আয়ের আরেকটি বড় উৎস পর্যটন। বিভিন্ন হোটেল, ট্যুর গাইড, পর্যটন-সম্পর্কিত ব্যবসার ওপর অনেকের জীবিকা নির্ভরশীল। ডাল লেক ভ্রমণের সহজ যান শিকারা বা ছোট নৌকা। এগুলোতে করেই ফেরিওয়ালারা নানা জিনিস ফেরি করে বেড়ান ডাল লেকে বসবাসকারীদের কাছে।

ডাল লেকে নৌকা। ছবি: লেখককাশ্মীরের অধিবাসীরা মিষ্টভাষী। কাশ্মীরি ভাষা শুনতেও ভীষণ মিষ্টি। ভাষাটির নিজস্ব কোনো বর্ণ নেই বলে সাধারণত উর্দু হরফে লেখা হয়।

হস্ত ও কারুশিল্পের এক বিশাল ভান্ডার কাশ্মীর। ডাল লেকের ভাসমান বাজার বা লেকের ধারের দোকানগুলোয় এখানকার ঐতিহ্যবাহী হাতের কাজ করা শাল, জামাকাপড়, বেডকভার, ব্যাগ, পশমিনা চাদর, ঘর সাজানোর কাঠের তৈরি উপকরণ ইত্যাদি অনেক কিছু পাওয়া যায়। আর এখান থেকে দেখা যায় সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য।

একেক ঋতুতে কাশ্মীরের পরিবেশ একেক রং ধারণ করে। গ্রীষ্মে সবুজ, হেমন্তে হলুদ, শীতে তুষারশুভ্র, বসন্তে রঙিন।

Handicraftsশ্রীনগরের বাইরে সোনমার্গ, গুলমার্গ, পেহেলগাম, কারগিল ইত্যাদি জায়গায় দর্শনার্থীর ভিড় থাকে সারা বছর। নিখাদ প্রকৃতি দেখার আনন্দ পেতে চায় ভ্রমণকারীরা। গ্রীষ্মকালে এশিয়া অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এলেও বরফে আনন্দময় সময় কাটাতে এখানে আসে ইউরোপ বা আমেরিকার ভ্রমণকারীরা। তখন ডাল লেকসহ অন্যান্য নদীর জল জমে বরফ হয়ে যায়। স্থানীয় কিশোর-তরুণেরা সেই বরফের ওপর ফুটবল খেলায় মেতে ওঠে।

পাহাড়ঘেরা জলাধার, মানুষের সরল জীবনযাপন আর আতিথেয়তা, কম জনসংখ্যা এবং পরিচ্ছন্ন পথঘাট কাশ্মীরকে অনন্য করে তুলেছে। তারা বিশ্বাস করে, আশ্রয়প্রার্থী পর্যটক তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। এখানকার মানুষজনের জীবনযাপন সরল ও বাহুল্যবর্জিত। এই রাজ্যে কোনো শপিং মল নেই, নেই কোনো সিনেমা হল। ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি এখানে এখনো প্রবেশ করেনি। তাই কাশ্মীরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির মধ্যে বিলীন হয়নি।

IMG_20240708_200456বাইরের রাজ্যে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীরা ছাড়া বেশির ভাগ কাশ্মীরি বাইরের জগৎ দেখেনি! অল্প কয়েকটি সরকারি ব্যাংক আর সরকারি অফিস ছাড়া বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে অনুপস্থিত এখনো।

সবুজ পাহাড়, তিরতির করে বয়ে যাওয়া রুপালি সরু নদী, পাখির গান, চিনার, পাইন, দেবদারুগাছের পাতার হাওয়া, দূরের পাহাড়ের মাথার তুষার ভূষণ, বায়ু ও শব্দদূষণহীন পরিবেশ—এসব থাকলে ঝাঁ-চকচকে নাগরিক জীবনকে এক নিমেষে আল বিদা বলে ফেলা যায়।

কাশ্মীরে শীতের শুভ্রতা। ছবি: লেখককাশ্মীরের গ্রামগুলো মাটির আরও কাছাকাছি। এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া পড়েনি কোথাও কোথাও। অনেকে চার চাকার মোটর গাড়ি আর বাস ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চোখেই দেখেনি। সাধারণ পাকা ঘর ও চারচালা এসবেস্টসের ছাদ করা বাড়ি আছে প্রতিটি গ্রামে। সবার একটা করে সবজির বাগান আছে। নারীরা ভীষণ কর্মঠ। যাদের বাড়িতে গ্যাসের ব্যবস্থা নেই, তারা কাঠ ব্যবহার করে। পানি সংগ্রহ করে পাশের নদী থেকে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। শীতকালে পুরুষেরা পশুপালন করে আর নারীরা হস্তশিল্পে মনোযোগ দেয়। বরফ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয় মাঝে মাঝে।

আমাদের মতো কাশ্মীরের মানুষও ভাত, সবজি ও মাংস খায়। এখানকার খাবার খুব অল্প মসলায় রান্না হয় বলে স্বাস্থ্যসম্মত। বিয়েবাড়িতে ৩৬ পদের খাবার পরিবেশন করা হয়। একে বলে ওয়াজওয়ান। ৩৬ পদের বেশির ভাগই রান্না হয় মাটন বা মুরগির মাংস দিয়ে। কাশ্মীরের খাবারে মধ্য এশিয়া ও পারসিয়ান খাবারের প্রভাব রয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য খাবার হলো রোগান জোশ বা ভেড়ার মাংসের লাল রঙের তরকারি, মোদুর পোলাও বা বিভিন্ন তাজা ফল ও শুকনো ফল দিয়ে তৈরি পোলাও, মাশগান্দ বা ভেড়ার মাংসের কোফতা কারি, দম ওলাভ বা কাশ্মীরি আলুর দম, মুজি গাদ বা মাছের তরকারি, গোশতাবা বা দই দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংসের কোফতা, ইয়াখনি বা দই দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পোশাকের পর অস্ত্র প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত এডিরা

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

গ্যাসের চুলা থেকে ছড়ায় বেনজিন, ক্যানসারসহ নানা রোগের ঝুঁকি: গবেষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত