Ajker Patrika

চটের তৈরি বিয়ের পোশাক

সানজিদা সামরিন, ঢাকা
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৯
Thumbnail image

আপনি যেসব পোশাক পরছেন সেগুলো কোন উপকরণে তৈরি, আধুনিক ফ্যাশন চিন্তায় তা গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পোশাক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য যেসব ফেন্সি পোশাক কেনা হয়, সেগুলোর বেশির ভাগই সিনথেটিক উপকরণে তৈরি। অর্থাৎ, এসব পোশাক যখন পুরোনো ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়, আমাদের দেশে তখন সেগুলো উন্মুক্ত ভূমিতে ‘ময়লা’ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। সিনথেটিক বলে এগুলো পচে না। ফলে এগুলোর কারণে মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ, পশুপাখি ও উদ্ভিদ। কিন্তু এই ক্ষতি খালি চোখে দেখা যায় না।

পরিবেশ রক্ষার জন্য পুরো বিশ্বের পোশাক ইন্ডাস্ট্রি এখন নতুন করে ভাবছে। সে জন্য পরিবেশবান্ধব কাঁচামাল দিয়ে পোশাক তৈরির প্রচেষ্টা চলছে জোর কদমে। কাপড় থেকে শুরু করে রং, বোতাম ও অন্যান্য সজ্জা উপকরণে রাখা হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান। আমাদের দেশের অনেক তরুণ ডিজাইনারও পরিবেশবান্ধব পোশাক তৈরির কথা ভাবছেন। এমন পোশাকের কাঁচামাল কী হতে পারে, তা নিয়েও নিরীক্ষাধর্মী কাজ করছেন অনেকে। ফ্যাশন ডিজাইনার ও যাদুর বাক্সের স্বত্বাধিকারী মেহবুব যাদু। তিনি গামছার কাপড় দিয়ে পোশাক ও অনুষঙ্গ নকশা করেন। সম্প্রতি তিনি চটের কাপড় দিয়ে কয়েকটি নিরীক্ষাধর্মী পোশাকের নকশা করেছেন। মূলত ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ঘরানার বিয়ের পোশাকের নকশা করেছেন মেহবুব যাদু। তিনি বলেন, ‘সাধারণত বিয়ের পোশাক কেনার পর এক দিনই পরা হয়। এতে একে তো বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়, তার ওপর উপযোগিতাও থাকে না। তাই চেয়েছিলাম বিয়ের পোশাক তৈরির জন্য এমন কোনো কাঁচামাল ব্যবহার করতে, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, পর্যাপ্ততাও রয়েছে, দামে সাশ্রয়ী ও পচনশীল।’

মেহবুব যাদু বাদামি চট দিয়ে বিয়ের লেহেঙ্গা, শেরওয়ানি, পাগড়ি, গাউন ও ব্লেজার তৈরি করেছেন। এসব পোশাক তৈরিতে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর সবই পরিবেশবান্ধব। নারকেলের খোসা দিয়ে বোতাম, কাঠের পুঁতি, ক্রুশকাঁটায় তৈরি লেইস, চামড়ার পাইপিং, বেল্টসহ প্রতিটি উপকরণই পরিবেশবান্ধব। 
চটের তৈরি পোশাক এই আবহাওয়ায় পরার উপযোগী কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে যাদু বলেন, ‘প্রথমত এই ফেব্রিকস ভারী ও খসখসে। তাই একটু ঠান্ডা আবহাওয়ায় পরার উপযোগী।’

যাদু জানান, প্রথমে পুরো কাপড়ে আটা দিয়ে তৈরি গামের পাতলা প্রলেপ দিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নেওয়া হয়। এতে চটের উপরিভাগ মসৃণ হয়ে যায়। আর ভেতরে সুতি কাপড়ের লাইনিং দেওয়া হয়েছে, যাতে তা ত্বকের সংস্পর্শে এলে না চুলকায়। যাদু বলেন, ‘এটা নিরীক্ষামূলক কাজ। এখনো এটা নিয়ে বিস্তর কাজ করার আছে।’ চটের তৈরি পোশাকগুলোতে চাইলে ন্যাচারাল ডাই বা প্রাকৃতিক রং করা যাবে।

এসব পোশাকের উপযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই পোশাক কেউ যদি একবার ব্যবহারের পর আর না পরতে চায়, তাহলে তা দিয়ে সহজেই নিত্য় ব্যবহার্য অন্যান্য উপকরণ তৈরি করে নেওয়া যাবে বাড়িতেই। ফ্লোরম্যাট, ওয়ালম্যাট, টবের কভার, বাজারের ব্যাগ, টোটব্যাগ, পার্স ইত্যাদি তৈরি করে ফেলা যাবে। ফলে অপচয় হবে না। তা ছাড়া এসব কাপড় ব্যবহারের উপযোগিতা হারানোর পর যদি ফেলেও দেওয়া হয়, তা পরিবেশের দূষণ না করে সহজে মাটিতে মিশে যাবে।’

মেহবুব যাদুর তৈরি চট দিয়ে তৈরি ব্রাইডাল পোশাকের মূল্য প্রাথমিকভাবে সাধ্য়ের মধ্য়েই রাখা হয়েছে। চটের তৈরি ব্লেজার ৮ হাজার টাকা, গাউন ৫ হাজার টাকা, লেহেঙ্গা ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ও শেরওয়ানি সেট কিনতে চাইলে খরচ পড়বে ৯ হাজার ৫০০ টাকা।

ছবি সৌজন্য: যাদুর বাক্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত