Ajker Patrika

সবুজ পৃথিবীর জন্য টেকসই ফ্যাশন

মোশারফ হোসেন
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৪৯
সবুজ পৃথিবীর জন্য টেকসই ফ্যাশন

রোজ সকালে যেন সেই একই যুদ্ধ—পুরো আলমারি খুঁজে পরার জন্য এক সেট কাপড় পছন্দ করা। সেখানে ‘পরার মতো কোনো কাপড়’ পাওয়াটাই একটা ব্যাপার! হরহামেশা শপিং করার পরও কেন যে পরার মতো কাপড় খুঁজে পাওয়া যায় না, তা আসলেই বিস্ময়কর। তবে দু-একটা জুতসই কারণ খুঁজে বের করাও কিন্তু কঠিন ব্যাপার নয়। একটা উদাহরণ দিয়েই বলা যেতে পারে। ধরুন, এক জোড়া জুতা কিনতে গিয়ে ঝোঁকের বশে কিনে ফেললেন পোশাক, ব্যাগসহ আরও দু-একটা ফ্যাশন পণ্য। 

কিন্তু ঘরে আনার পর সেগুলোর কোনো কোনোটা কেবল হয়তো আলমারিতেই বন্দী রইল। ওই পোশাকটি হয়তো আপনাকে মানাচ্ছে না কিংবা সেগুলো পরার উপলক্ষ খুঁজে পাচ্ছেন না।পরিবেশবাদীরা টেকসই উন্নয়নের জন্য কেবল সবুজায়নের দিকেই নজর দিচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। তাঁদের নজর রয়েছে পৃথিবীবাসীর আলমারিতেও। কারণ, আপনার পরিধেয় পোশাকটি কোন উপাদানে তৈরি এবং তা পৃথিবীর বর্জ্য উৎপাদনে কতটা ভূমিকা রাখছে, তা-ও ভাবনার বিষয়। মানেটা সহজ—প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই কেনার দরকার নেই। কথাটা পরিধেয় পোশাক ও অনুষঙ্গের বেলায়ও খাটে। তাই তাঁদের ভাষ্য, ফ্যাশন পণ্যে ঠিক ততটুকুই খরচ করুন, যেটুকু না করলেই নয়। শুধু এতেই চলবে না। পাশাপাশি পোশাকের উপযোগিতা যত দিন থাকবে, তত দিন তা ব্যবহার করতে হবে। পরার উপযোগিতা হারালে সেই পোশাক ফেলে না দিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায়, সে কথাও ভাবতে উৎসাহী করছেন পরিবেশবাদীরা। একটু সচেতন হলেই আপনার আলমারিকে করে তুলতে পারেন সবুজবান্ধব। প্রয়োজন বুঝে ভালো পোশাক কিনুন কোনো পোশাক বা ফ্যাশন অনুষঙ্গ কেনার ক্ষেত্রে প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কী কিনছেন এবং কেন কিনছেন। আপনার আসলে কী প্রয়োজন। আপনি কি পোশাকটি কমপক্ষে ৩০ বার পরবেন; যা কিনতে চাইছেন, তা কি ইতিমধ্যে আপনার আলমারিতে আছে। যদি অনুষঙ্গ হয়, তা আদতেই কি আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায়, নাকি জিনিসটি সুন্দর বলেই কিনতে ইচ্ছে হচ্ছে। যদি উত্তরগুলোয় যথাযথ যুক্তি খুঁজে পান, তাহলে তা কিনে ফেলুন। নয়তো এ বেলায় সংযত হোন। বাড়তি খরচ ও আলমারিতে বাড়তি ফ্যাশন অনুষঙ্গ আপনাকে অসুবিধায় ফেলতে পারে। 

টেকসই ফ্যাশন ব্র্যান্ডে বিনিয়োগ করুন
ভালো মানের পোশাক কেনার অর্থ হলো, যেসব ডিজাইনার টেকসই পোশাক নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। বিভ্রান্ত না হয়ে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পোশাক কেনার মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে টেকসই চর্চা। কোনো কোনো ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড পণ্য় তৈরিতে পরিবেশবান্ধব কাঁচামাল ব্যবহার করে। অন্যদিকে শপিং ব্যাগটিও যাতে একাধিকবার ব্যবহার করা যায়, সেদিকেও থাকে তাদের মনোযোগ।

বিশেষ পোশাক বিশেষ ভাবনা
সমীক্ষা বলছে, যুক্তরাজ্যে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে একবার পরার জন্য প্রতিবছরের গ্রীষ্মে প্রায় ৫ কোটি পোশাক কেনা হয়! এ ধরনের অভ্যাস শুধু বহির্বিশ্বেই নয়, আমাদের দেশের ঘরে ঘরে আছে। নিজেই ভেবে দেখুন তো, বিয়ের বর-কনের শাড়ি, শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা কেনার পর তা কি দ্বিতীয়বার পরেছেন? পোশাকের অপব্যবহার ও যত্রতত্র কেনার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রতি সেকেন্ডে এক ট্রাক টেক্সটাইল বর্জ্য পোড়ানো হয়। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এখানেও পুনর্ব্যবহারের কথা বলা যায়। ধরুন, মায়ের বিয়ের ওড়না বা শাড়ি পুরোনো স্য়ুটকেসে বছরের পর বছর রেখে না দিয়ে যদি একটু ভ্যালু অ্যাড করে নিজের বিয়েতে পরা যায়, তাহলে পোশাক কেনার খরচ অনেকটাই কমে। এতে সবুজ পৃথিবী গড়তেও খানিকটা ভূমিকা রাখা যায়।

পোশাকের উপকরণ সম্পর্কে জানুন
টেকসই পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কোন উপকরণে পোশাক তৈরি হচ্ছে, তা জানা খুবই জরুরি। সিনথেটিক-জাতীয়, যেমন পলিয়েস্টারের পোশাক এড়িয়ে চলুন। বিশ্বে তৈরি হওয়া ৫৫ শতাংশ পোশাকই পলিয়েস্টারের। এগুলো তৈরিতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয় এবং পুরোনো অবস্থায় ফেলে দেওয়ার পর এগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যেতে অনেক সময় লাগে। জৈব তুলা উৎপাদনে অন্যান্য তুলার চেয়ে কম পানি লাগে এবং এতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। পোশাক কেনার সময় পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ আছে কি না, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

পোশাকের কারিগর বিষয়ে জানুন
মূল্যস্ফীতি ও যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পোশাকশিল্পে কাজ করা শ্রমিকেরা। তাই পোশাক যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁরা যেন ন্যায্য মজুরি ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ পান, তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে। কারখানার তথ্য, মজুরি এবং কাজের অবস্থা সম্পর্কে যেসব ব্র্যান্ড তথ্য প্রকাশ করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। 

মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এড়িয়ে চলুন
চাইলেই সিনথেটিক-জাতীয় পোশাক এড়িয়ে চলা পুরোপুরি সম্ভব নয়। এ ধরনের পোশাক ধোয়ার সময় হাজার হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক পানিতে মিশে নদী ও সাগরে সঙ্গে মিশে যায়। সামুদ্রিক জীব ও প্রাণী এ ধরনের সামান্য প্লাস্টিক খেয়েই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে মাইক্রোপ্লাস্টিক ফিল্টার, যেমন গাপ্পি ব্যাগ–এ ক্ষেত্রে ভালো সমাধান হতে পারে।

সূত্র: ভোগ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত