Ajker Patrika

আচারে মজুক মন

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ০৮: ৫৩
আচারে মজুক মন

পুরান ঢাকার দেবেন্দ্র দাস লেনে নিজ বাড়িতে থাকতেন বরেণ্য অভিনেতা আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। এ নামে তাঁকে চেনার কথা নয় বেশির ভাগ মানুষের। কিন্তু যদি বলি, মানুষটির নাম এ টি এম শামসুজ্জামান, তাহলে সবাই চিনে ফেলবেন এক নিমেষেই। একবার তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল কাজের উপলক্ষে। এ কথা-সে কথার ফাঁকে খাবারদাবার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি রসিক মানুষ। খাবারের বেলায়ও সমঝদার ছিলেন, বলাবাহুল্য। খাবারের অনেক গল্প বলে তিনি জানালেন, ‘আচার ছাড়া আমার কিন্তু চলে না বাপু।’ শুনলাম, অভিনয়ের জন্য আউটডোরে থাকলেও তাঁর খাবারে আচার থাকত উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যতিক্রম না হলে।

এই একই কথা বলতেন ক্লিওপেট্রা। না, ঠিক এ টি এম শামসুজ্জামানের মতোই হয়তো নয়, একটু ভিন্নভাবে হলেও কথাটা একই। তিনি নিয়মিত আচার খেতেন বলে জানা যায়। ক্লিওপেট্রা শুধু আচার খেতেনই না। তিনি বিশ্বাস করতেন, আচার খেলে সৌন্দর্য ঠিক থাকে। আর কে না জানেন, তাঁর সৌন্দর্য ভুবনবিখ্যাত। আচারই তাঁর সৌন্দর্যের গোপন রহস্য কি না আমরা জানি না। কিন্তু এত দিনে আমরা জেনে গেছি, আচার হলো পৃথিবীর প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূলত ফলমূল, সবজিসহ বিভিন্ন খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য আচার নামের এই মজাদার খাবারটির উদ্ভব ঘটে। ধারণা করা হয়, আচার ভারতীয় উপমহাদেশের খাবার। আচার করে সংরক্ষণ করা যায় না তেমন সবজি ও ফল সম্ভবত খুব কম আছে। শসা দিয়ে বানানো আচারই পৃথিবীর প্রাচীনতম আচার বলে অনুমান করা হয় বিভিন্ন গবেষণায়।

সামনেই আসছে আমের মৌসুম। তখন পড়বে আচার বানানোর ধুম। সম্ভবত এ দেশে ফলের মধ্যে আম দিয়েই সবচেয়ে বেশি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ আচার বানানো হয়। যেহেতু এখনো আমের মৌসুম আসেনি, তাই আপাতত সেটা থাক। এই মৌসুমে বানাতে পারেন তেঁতুল, বরই বা চালতার আচার। সবজির মধ্যে শসা, গাজর, বেগুন, টমেটো, বরবটি, আলু ইত্যাদির আচার। আর সারা বছর বানানো যায় মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা হলুদের আচার। তবে জানিয়ে রাখি, বরই দিয়ে আচার বানালে দেশি বরই কিনবেন। রসাল আপেল কুল বা বড় বড় বরই দিয়ে আচার ঠিক ভালো হবে না। ফল ও সবজি ছাড়া আচার তৈরির অন্য উপকরণগুলোর মধ্যে আছে মসলা হিসেবে পাঁচফোড়ন, সরিষার তেল, লবণ, চিনি। তবে সিরকাও দেওয়া যেতে পারে সংরক্ষণের জন্য।

বলা হয়ে থাকে, আচার ছাড়া ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার করা কঠিন ছিল। ১৪৯২ সালের আমেরিকা অভিযানে কলম্বাস তাঁর নাবিকদের রেশন হিসেবে দিয়েছিলেন আচার। সে আচার তাঁদের ভিটামিন সি-র অভাব মিটিয়ে স্কার্ভি রোগের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল বলে উল্লেখ করে থাকেন অনেক লেখক। কিন্তু কী দিয়ে সে আচার বানানো হয়েছিল, তা জানা যায় না।

বাড়ির দাওয়ায় কাচের বয়ামে আচার শুকানোর দৃশ্য আমাদের স্মৃতিকাতর করে তোলে। যাঁরা আচার বানাতে পারেন, তাঁরা সত্যই এক ধাপ ওপরের মানুষ। তাঁদের তুলনা হয় না। অনেকেই খাবার বানাতে পারলেও আচার সবাই বানাতে পারেন না। কিংবা সবার বানানো আচার সুস্বাদুও হয় না। এই বসন্তে পাওয়া সবজি বা বিভিন্ন ফল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মন মাতানো আচার।

আচার ভালো রাখতে

  • সিরকা ও সোডিয়াম বেনজোয়েট দিলে আচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
  • পানি ব্যবহার করলে আচার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
  • হাত দিয়ে আচার নাড়বেন না, চামচ ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন, চামচে যেন পানি না থাকে।
  • কাচের বয়ামে আচার রাখুন, ভালো থাকবে।
  • মাঝেমধ্যে আচার রোদে দিন।
  • তেলে আচার ডুবিয়ে রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
  • তেল কম হলে তা গরম করে ঠান্ডা ব্যবহার করুন, এতে গন্ধ হবে না।
  • যাঁদের আচার রোদে দেওয়ার মতো জায়গা নেই, তাঁরা নিশ্চিন্তে সেটিকে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। সে ক্ষেত্রে সিরকা ও সোডিয়াম বেনজোয়েট না দিলেও চলবে।

ছবি ও রেসিপি: ম্যাগডিলিনা মৃ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত