Ajker Patrika

মুখস্থ করার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে

শ্রেয়া ঘোষ
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ৫০
Thumbnail image

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছি কোনো কোচিং/প্রাইভেট ছাড়া, শুনতে অবাক লাগছে? সমাজ কিংবা পরিবারের চাপে পড়ে মাধ্যমিকে দু-একটা প্রাইভেট পড়তে হয়েছে বৈকি। কিন্তু আমি কোচিংয়ে ছিলাম ভীষণ অনিয়মিত; কারণ, আমার নিজে নিজে পড়তে বেশি ভালো লাগে, অনেক নতুন জিনিস উদ্ভাবন করার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, একটি নার্সারির শিশুর জন্যও কোচিংয়ের চাপ সৃষ্টি করা হয়, এতে তাদের মানসিক বিকাশেও বাধা এসে যায়। একটু বড় ক্লাসে পড়লে তো দৃশ্য আরও ভয়াবহ লক্ষ করা যায়। কার সন্তান কতগুলো প্রাইভেট/কোচিংয়ে পড়ে, এই নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে, সে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

নিজে পড়ার অভ্যাস করতে হবে
গল্পের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আমাদের অনেকেরই আছে; গল্পের বইয়ে যে আগ্রহ আমরা খুঁজে পাই, নিজে নিজে যেই কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, পাঠ্যবইয়েও ঠিক তেমনি করতে হবে। এখানে ওয়ান ম্যান আর্মির ভূমিকা পালন করতে হবে, নিজেই নিজের ইনস্ট্রাক্টর হতে হবে, আবার শিক্ষার্থীও হতে হবে। এখানে আমার ছোটবেলার একটা গল্প বলছি। আমি যখন অনেক ছোট—মনে হয় ৫-৬ বছর বয়স হবে। আমি তখন নিজে নিজে ম্যাডাম সাজতাম, মায়ের ওড়না দিয়ে শাড়ি পরে দেয়ালকে বানাতাম ব্ল্যাকবোর্ড। আমার এই আগ্রহ দেখে আমার বাবা সিক্স/সেভেনের বই এনে দিতেন। আমি সেগুলো দেখে দেখে পড়ানোর চেষ্টা করতাম। মজার ব্যাপার হলো, আমার শিক্ষার্থী কিন্তু তখন শুধু আমিই ছিলাম। এই অভ্যাস আমাকে এখন পর্যন্ত সাহায্য করছে নিজেকে নিজে পড়ানোর ক্ষেত্রে। এভাবে মজার ছলেও এই অভ্যাসকে আয়ত্ত করা যেতে পারে।

পড়াশোনার রুটিন তৈরি করা
একটা সুস্থ, স্বাভাবিক পড়াশোনার অভ্যাসের জন্য রুটিন মেনে চলার বিকল্প নেই। বেশির ভাগ তথাকথিত রুটিনে একটানা কয়েক ঘণ্টা পড়ার কথা বলা হয়, ব্রেনে এত চাপ দেওয়ার দরকার নেই। ব্রেক দিয়ে দিয়ে রুটিনমতো নিজে নিজে যদি পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন টপিক নিয়ে রিসার্চ করা যায়, তাহলে যেমন পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ হয়ে যাবে, ঠিক তেমনি পরবর্তী জীবনে তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে।

মুখস্থের প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে
আপনার জীবনের গোল যদি শুধু একটি সার্টিফিকেট অর্জন করা না হয়ে থাকে, তবে আজই আপনাকে মুখস্থ করা বাদ দিতে হবে। আমি স্কুলে কখনো প্রথম হইনি; যারা হয়েছে বেশির ভাগই তারা শুধু মুখস্থ করত এবং তাদের বেশ ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে ধরা হতো। হুবহু বই কপি করে না লেখাতে আমাকে অনেক শিক্ষক নম্বর কম দিতেন। কারণ, আমার মুখস্থ করার অভ্যাস ছিল না। ক্লাসের সেসব তথাকথিত ভালো স্টুডেন্ট অনেকেই নিজের গোলে পৌঁছাতে পারেনি; কারণ, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ভূমিকা রাখে জ্ঞান। মুখস্থ করে জ্ঞানার্জন করা যায় না। বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, না বুঝলে আবার পড়ুন, তখনো না হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন।

কোচিং নির্ভরশীলতা নয়
যখন আপনার মাঝে পরনির্ভরশীল প্রবণতা লক্ষ করা যায়, ঠিক তখনই আপনার মাঝের শক্তি এবং ইচ্ছাগুলো মরে যেতে শুরু করে। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই। অনেক জায়গায়ই দেখা যায়, কোচিং না করলে শিক্ষকেরা নম্বর দিতে চান না, কিংবা সোশ্যাল প্রেশারও এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জ্বালাতন করে। আমরা নিজে কোনো পড়া না বুঝলে আমাদের শ্রেণিশিক্ষকদের কাছে বুঝিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। কেউ আমাকে পড়িয়ে দেবে, সাজেশন দেবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন দেবে—এমন চিন্তাধারা থাকলে আমাদের ভেতরের প্রতিভাগুলো হারিয়ে যাবে। অভিভাবকের কষ্টে অর্জিত অর্থ অনেকেই স্রোতে গা ভাসিয়ে অন্যের সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একটার পর একটা কোচিংয়ে গিয়ে নষ্ট করছে, যা একদমই কাম্য নয়। কোচিংয়ের ওপর ভরসা না করে নিজে না পারলে স্কুল/কলেজের সাহায্য নিতে হবে।

ফাইনম্যান পদ্ধতি
মুখস্থ অথবা কোচিংয়ে না পড়লে অনেকেরই পড়া মনে থাকে, এর জন্য একটি সমাধান রয়েছে। পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পড়া মনে রাখার জন্য এই ফাইনম্যান পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতিতে নিজের পড়ার পর অন্য কাউকে সেটা বোঝানোর মাধ্যমে নিজের পড়া মনে থাকার অনেক সম্ভাবনা থাকে।

কখন অন্য কারও সাহায্য নেব
করোনার ভয়াল থাবায় যখন থমকে গিয়েছিল শিক্ষা, তখন আমার মনে হয়েছিল শিক্ষার্থীদের সঠিক গাইডলাইন দরকার। তাই আমি আমার অনলাইন লার্নিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলাম মেধাবীদের সাহায্য করার জন্য। মেন্টরশিপ অথবা গাইডলাইনের দরকার সবারই আছে, তবে সেটা প্রথম ধাপ নয়। নিজে পড়া বুঝতে ব্যর্থ হলে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ইউটিউবে অনেক অনেক ক্লাসের ভিডিও আছে, যা অনেক বেশি সহায়ক। সেগুলোতেও না বুঝলে বড় ভাই-বোন যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তাদের সাহায্য আমরা নিতে পারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত